প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ওলা-উবেরে এত গাড়ি চলছে। তাতে কি কারও রোজগার হয়নি? পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রকের ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস (এনএসএসও)-এর সমীক্ষাকারীরা বলছেন, ‘‘আমাদের সমীক্ষায় তো এ সব হিসেব ছিল। তা হলে কেন সমীক্ষা প্রকাশ হল না!’’
প্রধানমন্ত্রী মোদীর দাবি, মুদ্রা যোজনায় যারা ঋণ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে প্রথম ঋণ নিয়েছেন। যার অর্থ, সকলেই নতুন স্বনির্ভর হয়ে রোজগার শুরু করেছেন। এনএসএসও-র সমীক্ষাকারীরা বলছেন, এই হিসেবও তাঁরা কষেছিলেন।
অসংগঠিত ক্ষেত্রে কত লোক কাজ পেয়েছে, তা বোঝাতে লোকসভায় মোদী যুক্তি দিয়েছেন, ৩৬ লক্ষ বড় ট্রাক, ১ কোটি ৫০ লক্ষ যাত্রিবাহী গাড়ি, ২৭ লক্ষ নতুন অটো রাস্তায় নেমেছে। এদের চালকেরা সকলেই কাজ পেয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কত মানুষ কাজ পেয়েছেন, তার হিসেবও ছিল এনএসএসও-র সমীক্ষায়।
সংগঠিত ক্ষেত্রে কত চাকরি হয়েছে, তা বোঝাতে প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসেব দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ২০১৭-র সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮-র নভেম্বর— এই ১৫ মাসে ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ প্রভিডেন্ট ফান্ডের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। যাদের ৬৪ শতাংশর বয়স ২৮ বছরের কম। অর্থাৎ, তাঁরা নতুন চাকরি পেয়েছেন। এনএসএসও সূত্রের দাবি, দেশে বেকারত্বের হার জানতে প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইএসআই, পিএফ সব পরিসংখ্যানই নেওয়া হয়েছিল। প্রতি বারই এ সব নেওয়া হয়ে থাকে। এই সব হিসেব কষেই এনএসএসও রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। আর তাতেই দেখা গিয়েছে, নোট বাতিলের পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭-১৮-তে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশে পৌঁছয়। যা ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ।
কিন্তু সেই রিপোর্ট মোদী সরকার প্রকাশ করেনি। গত কাল লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, দেশে কত কর্মসংস্থান হচ্ছে, তা মাপার ঠিকঠাক ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এনএসএসও বলছে, কত রোজগার হচ্ছে, তা বোঝাতে প্রধানমন্ত্রী যে সব ক্ষেত্রের কথা বলেছেন, সেই সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে কত রোজগার হয়েছে, মুদ্রা বা মনরেগা-র কী প্রভাব পড়েছে— সব দিক দেখেই রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল।
কংগ্রেসের অভিযোগ, নোটবন্দির পরে বেকারত্ব চরমে উঠেছিল বলেই মোদী সরকার রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। যদিও পরিসংখ্যান মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়ার
দাবি, নতুন কত চাকরি হয়েছে, তা একটি সমীক্ষায় স্পষ্ট হয় না। ২০১৭-র ৬ মাসের সমীক্ষার সঙ্গে ২০১৮-র সমীক্ষা তুলনা করে দেখা হচ্ছে। তাতে স্পষ্ট হবে, নতুন রোজগার কত।
সেই তুলনার পরেই বেকারত্বের হার নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসবে। তথ্য প্রকাশে বিলম্বের প্রতিবাদ করে ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন পি সি মোহনন। তিনি আজ স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, ‘‘এনএসএসও-র রিপোর্টটি আদৌ খসড়া নয়। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গত ৫ ডিসেম্বরই আমরা অনুমোদন দিয়েছিলাম ওতে। রিপোর্টটি চূড়ান্তই।’’
কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে বেকারত্ব নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ পাবে কি? নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ রাজীব কুমারের আশ্বাস, মার্চেই তা হবে।
ক’দিন আগে মোহনন বলেছেন, ‘‘পছন্দ হোক বা না-হোক, সরকারি তথ্য সময়ে প্রকাশ না করলে গোটা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায়।’’
আজ একই সুরে কংগ্রেসের মনীশ তিওয়ারির মন্তব্য, ‘‘সরকার সব প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে দিয়েছে। সাজানো রিপোর্ট প্রকাশ করে যতই কর্মসংস্থানের সুন্দর ছবি তুলে ধরা হোক, কেউ বিশ্বাস করবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy