Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দুর্ঘটনা এড়াতে নয়া প্রযুক্তির কামরা রেলে

দুর্ঘটনাগ্রস্ত পর পর তিনটি ট্রেনের কামরার অবস্থা দেখে পুরনো প্রযুক্তির কামরা (কনভেনশনাল কোচ) তৈরি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল বোর্ড। দেশের সব ট্রেনেই এ বার ধীরে ধীরে পুরনো কামরা পাল্টে (লিঙ্ক হফম্যান বুশ বা এলএইচবি) প্রযুক্তির উন্নত কামরা লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তারা।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত পর পর তিনটি ট্রেনের কামরার অবস্থা দেখে পুরনো প্রযুক্তির কামরা (কনভেনশনাল কোচ) তৈরি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল বোর্ড। দেশের সব ট্রেনেই এ বার ধীরে ধীরে পুরনো কামরা পাল্টে (লিঙ্ক হফম্যান বুশ বা এলএইচবি) প্রযুক্তির উন্নত কামরা লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্তারা। রেল সূত্রের খবর, নতুন প্রযুক্তির ওই কামরার জোগান বাড়াতে আপাতত চেন্নাইয়ের ‘ইন্ট্রিগ্রাল কোচ ফ্যাকট্রিতে’ শুধু এলএইচবি কামরা তৈরি করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে রেল বোর্ড।

কানপুরের পর পর দু’টি এবং সর্বশেষ অন্ধ্রপ্রদেশে হীরাকুন্ড এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরে রেল বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, তিনটি ট্রেনেই ছিল পুরনো প্রযুক্তির কামরা (কনভেনশনাল কোচ)। কামরাগুলি লাইনচ্যুত হওয়ার সময় সামান্য ঝাঁকুনিতেই অনেক বেশি উল্টে পাল্টে গিয়েছিল। রেল বিশেষজ্ঞদের দাবি, দুর্ঘটনার সামান্য প্রতিঘাতেই কামরাগুলি অনেক বেশি মাত্রায় এ দিক ও দিক ছিটকে উল্টেপাল্টে যাওয়াতেই বেড়ে যায় মৃত্যুর সংখ্যাও। কানপুরের অজমের এক্সপ্রেস এবং অন্ধ্রপ্রদেশের হীরাকুণ্ড এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরাগুলি যে ভাবে উল্টে পাল্টে গিয়েছিল, সেটা দেখে রেল কর্তারা এখন বলছেন, ট্রেনটিতে এলএইচবি কামরা থাকলে দুর্ঘটনার প্রতিঘাত এত বেশি হতো না।

কিন্তু দেশের সব ট্রেনে এলএইবি কামরা লাগাতে যে সংখ্যক কামরা প্রয়োজন, তা রেলের হাতে নেই। রেল কর্তারা বলছেন, এখন রেলের সব ক’টি কারখানায় যাতে দ্রুত ওই কামরা তৈরি করা যায় তার ব্যবস্থাই করছে রেল বোর্ড। গত বছরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ভারতীয় রেলে আস্তে আস্তে সব ট্রেনেই লাগানো হবে এলএইচবি কামরা। কিন্তু তিনটি দুর্ঘটনা পুরনো কামরার ত্রুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ায়, এখন খুব তাড়াতাড়ি যাতে ট্রেনগুলির পুরনো কামরা পাল্টে রাজধানীর মতো উন্নত প্রযুক্তির কামরা লাগানো যায়, তার চেষ্টাই শুরু হয়েছে।

এ বছর বাজেটেও যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টিতে অতিরিক্ত জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বাজেটে ‘রেল সুরক্ষা কোষ’ নামে একটি তহবিল গড়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। এলএইচবি কামরার গুণাগুণ সম্পর্কে রেল কর্তারা প্রথম থেকেই ওয়াকিবহাল। কিন্তু তার পরেও এই বিষয়টিতে জোর দেওয়া হল না কেন? রেল কর্তারা বলেছেন, ‘বেশি সংখ্যায় এলএইচবি কামরা তৈরির ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থও প্রয়োজন। যা রেলের হাতে এত দিন ছিল না। বাজেটে সুরক্ষার খাতে অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় এ বার আর অসুবিধা হবে না।’

কী বিশেষত্ব রয়েছে ওই কামরায়? রেল কর্তারা বলছেন, সামনাসামনি দুই ট্রেনের ধাক্কা লাগলে একটি কামরা আর একটি কামরায় ঢুকে যাবে না। এমনকী একটি কামরা আর একটির উপরে উঠেও যাবে না। ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে গেলে কামরাগুলি যেমন তেমন ভাবে উল্টে পাল্টে যাবে না।

রেল কর্তারা বলছেন, দেশের সব ক’টি কারখানা থেকেই ধীরে ধীরে ওই পুরনো প্রযুক্তির কনভেনশনাল কোচ তৈরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ২০১৬-১৭-র মধ্যেই আরও ২ হাজার ৩৮৪টি এলএইচবি কামরা আসবে। ২০১৭-১৮-য় আসবে আরও ৩ হাজার ২৫টি। তখন অনেক ট্রেনেই এলএইচবি কামরা দেওয়া হবে। তবে কনভেনশনাল কামরাগুলি যাতে ঠিকঠাক চলাচল করতে পারে তার জন্যও বেশ কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চালানো হচ্ছে নজরদারিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railway Passengers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE