উদ্ধব ঠাকরে।—ছবি রয়টার্স।
গোটা নির্বাচনী প্রচারে তাঁর নাম কোথাও ওঠেনি। এমনকি চলতি রাজনৈতিক টানাপড়েনেও বেশ খানিকটা আড়ালেই ছিলেন তিনি। প্রচারের আলোর বৃত্তের বাইরে থাকা সেই উদ্ধব ঠাকরেই আজ বসলেন মহারাষ্ট্রের মসনদে। সরকারি পদে অভিষেক হল ঠাকরে পরিবারের।
অথচ, ভোটের ফল প্রকাশের দিনও শিবসেনা নেতৃত্বের ধারণা ছিল, বিজেপি অনায়াসে ক্ষমতায় আসবে। খুব বেশি হলে ছেলে আদিত্যর জন্য উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে দরাদরি করাই লক্ষ্য ছিল উদ্ধবের। কিন্তু বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে ৪০টি আসন কম পেতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, শিবসেনাকে ছাড়া সরকার গড়া সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। আর তখনই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি তোলে শিবসেনা। রাজি হয়নি বিজেপি।
এর পর সরকার গড়া নিয়ে কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে শিবসেনা। কিন্তু রাজনীতিতে আনকোরা আদিত্যকে মুখ্যমন্ত্রী মানতে রাজি হননি শরদ পওয়ারেরা। আর তখনই উঠে আসে উদ্ধবের নাম। উপায়ন্তর না দেখে রাজি হতে হয় তাঁকে। অথচ, উদ্ধব সম্পর্কে বলা হয়, পারিবারিক সূত্রে রক্তে রাজনীতি থাকলেও, তাঁর আসল নেশা ফটো তোলা। বিশেষ করে বন্য প্রাণীর ফটো তোলাই উদ্ধবের প্যাশন। ফটোগ্রাফির সূত্রেই আশির দশকের শেষ দিকে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থা খুলেছিলেন তরুণ উদ্ধব। সেখানেই খুড়তুতো বোন জয়জয়ন্তীর বন্ধু রেশমী পটনঙ্করের সঙ্গে আলাপ। ১৯৮৯ সালে বিয়ে করেন দু’জনে। তাঁদের বড় ছেলে আদিত্য এ বার ওরলি কেন্দ্র থেকে জিতেছেন। ছোট ছেলে তেজস আমেরিকায় পড়াশুনোয় ব্যস্ত। শিবসেনা সূত্রের মতে, ঠাকরে পরিবার যে এ বার নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ করল, তার পিছনে রয়েছেন রেশমী।
জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আজ উদ্ধবের শপথ জন্ম দিয়েছে একাধিক প্রশ্ন। ২০০২ সাল থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা উদ্ধব এ যাবৎ দল পরিচালনা করেছেন মাতুশ্রীতে বসে। অমিত শাহের মতো নেতারাও মাতুশ্রীতে এসে দেখা করতেন তাঁর সঙ্গে। ফলে ঘর থেকে দল পরিচালনায় বিশ্বাসী উদ্ধবের পক্ষে পাঁচ বছর এমন অসম জোট টানা কি সম্ভব? সরকার চালানোর প্রশ্নেও উদ্ধবের অভিজ্ঞতা শূন্য। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সেনা নেতারাও। ফলে আসল চাবিকাঠি যে শরদ পওয়ারের হাতে থাকতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই।
রাজনৈতিক শিবিরের অনেকের মতে, ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে তিন দলই মহারাষ্ট্রে নিজের নিজের শক্তি বৃদ্ধিতে জোর দেবে। তাতেই স্বার্থের সংঘাত বাধার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
পাশাপাশি, বিজেপির মোকাবিলাও করতে হবে উদ্ধবকে। অতীতে শিবসেনার হাত ধরে মহারাষ্ট্রের পা রেখেছিল বিজেপি। পরে তারাই বড় দল হয়ে দাঁড়ায়। এখন শিবসেনার প্রধান লক্ষ্য হবে বিজেপি-কে রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল করে হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু আগামী দিনে মহারাষ্ট্রে হিন্দুত্বের প্রশ্নে সুর চড়ানোর পক্ষপাতী বিজেপি। অথচ কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে জোটে যাওয়া শিবসেনার পক্ষে হিন্দুত্বের লাইন আঁকড়ে থাকা কার্যত অসম্ভব। এই অবস্থায় বিজেপি-কাঁটার মোকাবিলা কী ভাবে করেন উদ্ধব, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy