Advertisement
E-Paper

স্বার্থের অঙ্কেই ভারত-চিন দ্বন্দ্ব মেটাতে সক্রিয় রাশিয়া 

গত দু’সপ্তাহ ধরেই চিন প্রশ্নে রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে চলছে সাউথ ব্লক।

অগ্নি রায় 

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০৪:৩৫
রাশিয়া কেন এতটা উৎসাহ নিচ্ছে ভারত-চিন বিবাদে? —ছবি সংগৃহীত।

রাশিয়া কেন এতটা উৎসাহ নিচ্ছে ভারত-চিন বিবাদে? —ছবি সংগৃহীত।

চিনের সঙ্গে সীমান্তে শান্তি ফেরানোর উদ্যোগে অদৃশ্য উপস্থিতি রয়েছে রাশিয়ার। গালওয়ান উপত্যকায় ১৫ জুন রক্তপাতের পরেই চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ফোনে কথাবার্তার পিছনেও প্রয়াস রয়েছে মস্কোর। কূটনৈতিক সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে।

গত দু’সপ্তাহ ধরেই চিন প্রশ্নে রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে চলছে সাউথ ব্লক। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে গত তিন সপ্তাহে বিভিন্ন স্তরে রাশিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং মস্কোয় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত। আজকের চিন-ভারত-রাশিয়া (রিক)-র বৈঠকটির পিছনেও সক্রিয়তা মস্কোরই। এই কোভিডের সঙ্কটের মধ্যেও সে দেশের বিজয় উৎসবে যোগ দিতে মস্কো পৌঁছেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এই বিজয় উৎসবে যোগ দিতে আগামিকাল রাশিয়া পৌঁছবেন চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। চিনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস রাজনাথের সঙ্গে চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করলেও ভারত তা উড়িয়ে দিয়েছে। বরং রাজনাথ এ দিন সক্রিয় ছিলেন রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী সরঞ্জাম আমদানি করার বিষয়টি নিয়ে। চলতি বছরের শেষে ওই সরঞ্জাম ভারতে আসার কথা। কিন্তু তা দ্রুত সরবরাহ করা নিয়ে আজ রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন রাজনাথ।

প্রশ্ন উঠছে, পুরনো বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ফের বাড়ানোর ফলে কি কৌশলগত অংশীদার আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য কিছুটা বিঘ্নিত হবে? গোটা বিষয়টি কী ভাবে দেখবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প? রাশিয়াই বা কেন এতটা উৎসাহ নিচ্ছে ভারত-চিন বিবাদে?

আরও পড়ুন: লাদাখ সফরে সেনাপ্রধান, সেনা সরাতে রাজি দু’দেশ

কূটনীতিবিদদের মতে, এখানে প্রত্যেকটি দেশ নিজের স্বার্থের জন্য অন্য দেশকে কাজে লাগাচ্ছে। এক একজনের স্বার্থ এক এক রকম। সেই স্বার্থ যেমন এক দিকে বাণিজ্যিক, পাশাপাশি ভূকৌশলের খেলাও তার সঙ্গে জড়িয়ে। গোটা বিষয়টিতে আমেরিকার খুশি হওয়ার কারণ নেই এটা ঠিকই। কিন্তু একে কেন্দ্র করে নতুন করে ভারত-আমেরিকা মনান্তর তৈরি হবে — এমনটাও মনে করা হচ্ছে না। দু’দিন আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন তিনি ভারত-চিনের এই সঙ্কটে মধ্যস্থতা করতে চান। এটা ঘটনা যে, ‘ডিল মেকিং’ ট্রাম্পের অত্যন্ত প্রিয় অভিষ্ট। এ ক্ষেত্রে তাঁকে অবজ্ঞা করে ভারতের রাশিয়া-সংযোগ তিনি যে ভাল চোখে দেখবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কূটনৈতিক শিবির এটাও বলছে, আমেরিকা-রাশিয়ার বর্তমান বৈরিতার আবহ থাকলেও ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিই চেয়ে এসেছেন। ফলে নয়াদিল্লি যদি কোনও বিষয়ভিত্তিক কারণে মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়, তা হলে পরে নিজেদের প্রয়োজনে রাশিয়ার কাছে পৌঁছতে ভারতকে কাজে লাগাতেই পারে আমেরিকা। এ বিষয়ে অতীতের উদাহরণ টেনে প্রাক্তন কূটনীতিক রণেন সেন বলছেন, আফগানিস্তান সমস্যার সমাধানের জন্য প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীকে অনুরোধ করেছিলেন, তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের সঙ্গে কথা বলতে। তবে কূটনীতিকদের মতে, যা করা হবে, তা আমেরিকাকে অন্ধকারে রেখে না করাটাই শ্রেয়। রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ভারত-রাশিয়া এস-৪০০ আমদানি চুক্তিটি পুরনো এবং তা করা হয়েছিল ওয়াশিংটনকে জানিয়েই। এই ধরনের সামরিক সরঞ্জাম আমেরিকার উৎপাদনও করে না, যে ভারতকে বিকল্প রফতানির প্রস্তাব দেবে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, এই নিয়ে তাই ট্রাম্প প্রশাসনের রক্তচাপ বাড়ার কোনও কারণ নেই।

আরও পড়ুন: চিনা পণ্য বর্জনে ঝোঁক, উপদেষ্টার কথা শোনে কে

অন্য দিকে নয়াদিল্লির যুক্তি, ভারত-চিন সম্পর্কের মধ্যে আমেরিকাকে টেনে আনলে বর্তমান পরিস্থিতিতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। ট্রাম্প এবং শি চিনফিং-এর সম্পর্ক এখন অহি-নকুলের। এখন যদি বেজিং কারও কথায় কিছুটা গুরুত্ব দেয়, তা হল মস্কো। দুদেশের বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য স্বার্থ একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি মস্কোও চায়, তাদের সামরিক পণ্যের বিশাল দুই ক্রেতা, ভারত এবং চিনের মধ্যে অস্থিরতা যেন মাত্রাছাড়া পর্যায়ে না পৌঁছয়। কারণটা যে শুধু বাণিজ্যিক তা-ই নয়, এর ভূকৌশলগত দিকও রয়েছে। এই মুহূর্তে রিক (রাশিয়া, চিন, ভারত), ব্রিকস (ব্রাজিল, ভারত, চিন দক্ষিণ আফ্রিকা) এবং এসসিও (সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন)-এর চলতি বছরের নেতৃত্ব মস্কোর হাতে। ভারত এবং চিন এই তিনটি গোষ্ঠীতেই রয়েছে। সূত্রের মতে, রাশিয়া আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষার্থে এই গোষ্ঠীগুলিকে কাজে লাগাতে উন্মুখ। সে ক্ষেত্রে ভারত-চিন সহাবস্থান মস্কোর জন্যও জরুরি।

India-China India China Russia Ladakh Vladimir Putin Xi Jinping Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy