Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

অধিকার রক্ষায় ভোটের লাইনে শাহিন-জামিয়া

আগামী দিনে খুদেদের যাতে এ দেশেই খাবার জোটে, অধিকার জন্মায় ইভিএমে আঙুল ছোঁয়ানোর, তা নিশ্চিত করার শপথ নিয়ে এ দিন সকাল থেকে ভোটের লাইনেও দাঁড়িয়েছে শাহিন বাগ।

ভোটের দিনে শাহিন বাগ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

ভোটের দিনে শাহিন বাগ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২৬
Share: Save:

ভোটের দিন মাঝদুপুরে লম্বা লাইন শাহিন বাগে। যার সামনে অন্তত জনা বিশেক ধুলোমাখা, ছেঁড়া পোশাকের কচিকাঁচা! পঞ্জাবের ভাতিন্ডা থেকে প্রতিবাদে যোগ দিতে আসা শিখ চাষিদের লঙ্গরে। রুটি-তরকারির প্রতীক্ষায়।

তবে হ্যাঁ, আগামী দিনে এই খুদেদের যাতে এ দেশেই খাবার জোটে, অধিকার জন্মায় ইভিএমে আঙুল ছোঁয়ানোর, তা নিশ্চিত করার শপথ নিয়ে এ দিন সকাল থেকে ভোটের লাইনেও দাঁড়িয়েছে শাহিন বাগ। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সামনে বন্দুকবাজের গুলি চালানোর ক্ষত শুকোয়নি বলে বুথমুখী হওয়ার বাড়তি তাগিদ কাজ করেছে জামিয়া নগরেও।

সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে টানা ৫০ দিনেরও বেশি বিক্ষোভ-প্রতিবাদে সামিল এই সমস্ত মহল্লায় অধিকাংশ ভোট কোন দলের বিরুদ্ধে পড়বে, তা বুঝতে সমঝদারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু কার পক্ষে তা বেশি পড়ছে, আর তার ফায়দা যাবে কার ঘরে, সে বিষয়ে দিনভর চর্চা চলল ওখলা বিধানসভার বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের আশেপাশে। শাহিন বাগ এবং জামিয়া— দুই জায়গাই যার মধ্যে।

আরও পড়ুন: ‘রাম রাজ্যে’ ঠাঁই নিয়ে কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ খুব চিন্তায়

শাহিনবাগের প্রতিবাদস্থলের কাছেই শাহিন পাবলিক স্কুল। কড়া পাহারায় ভোট হচ্ছে সেখানে। কিছুটা দূরে বেঞ্চে বসে মহম্মদ আহমেদ খান বলছিলেন, ‘‘অনেক বয়স্ক মানুষ সাড়ে ছ’টার মধ্যে বুথের কাছে চলে এসেছেন। সাতটা থেকে শুরু হয়েছে লাইন। ভোট শুরু হয়েছে আটটা নাগাদ।’’ সাপের মতো এঁকেবেঁকে যাওয়া লাইন দেখিয়ে মহম্মদ সাদিক শুধু বললেন, ‘‘বোঝেনই তো।’’

ক্রমে টের পাওয়া গেল, আসলে তা বোঝা শক্ত। এ তল্লাটে বুথের কাছে বিজেপি কর্মী দেয়নি। প্রার্থী কারা জিজ্ঞাসা করায়, পদ্মের প্রার্থী ব্রহ্ম সিংহের নাম বলতে পারলেন না অনেকে। শোনা গেল আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রার্থী তথা বিধায়ক আমানাতুল্লা খান ও কংগ্রেসের পারভেজ হাশমির কথা। কিন্তু কংগ্রেস ও আপ সমর্থকদের মধ্যে যে ভাবে বার বার সংঘাত হচ্ছিল, তাতে প্রশ্ন ওঠে, এখানে সনিয়া গাঁধীদের ভাল ভোট আছে নাকি? তবে যে শোনা যায় বাকি দিল্লির মতো এই পুরনো গড়েও পায়ের তলার মাটি হারিয়ে ফেলেছে হাত চিহ্ন?

মহম্মদ সামির বললেন, ‘‘অনেকেই জানেন, কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপির সুবিধা। আপের ভোট কাটা যাবে তাতে। তবু অনেকে দেবেন বলে আমার ধারণা।’’ যুক্তি, দু’মাসের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো এই আন্দোলনের পক্ষে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী মুখ খুলেছেন মোটে এক বার। এসপি-র কর্ণধার অখিলেশ যাদব আসেননি। ১৫ ডিসেম্বর আন্দোলন শুরুর সময়ে আমানাতুল্লা দৌড়াদৌড়ি করলেও, দলের নির্দেশে পরে চুপ করে যেতে হয়েছে তাঁকে। আগাগোড়া আন্দোলন থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন অরবিন্দ কেজরীবালরা। সামিরের দাবি, ‘‘বিজেপির পাতা ফাঁদে পা না-দিতেই যে ওই সিদ্ধান্ত, ওখলা তা বোঝে। তবু এই বাজারেও যে কংগ্রেস তাদের একাধিক নেতাকে শাহিন বাগের মঞ্চে আসতে বাধা দেয়নি, সে কথাও মনে গেঁথে রয়েছে অনেকের।’’ তবে তল্লাটের অন্যান্য ভোট কেন্দ্র, যেমন আবুল কালাম আজাদ পাবিলক স্কুল, ওখলা পাবলিক স্কুল কিংবা এসডিএমসি প্রতিভা স্কুলের বুথের আশেপাশে কেজরীবালের দলের দেওয়া সাদা টুপিই সংখ্যায় বেশি।

ভোটের দিনে প্রতিবাদের প্যান্ডেলে লোক কম। জনা পঞ্চাশেক পালা করে যাচ্ছেন ভোট দিতে। পিছনে পেল্লাই কড়াইয়ে ফুলকপির তরকারি চড়িয়েছেন পাগড়ি বাঁধা শিখ কৃষক। এক সঙ্গে রুটি সেঁকছেন মুসলিম ও শিখ মহিলারা। একটু দূরেই টিন কেটে তৈরি হচ্ছে ‘ইন্ডিয়া গেট’। প্রতিবাদী মা ভোট দিতে গিয়েছেন বলে মঞ্চের পাশেই অপটু হাতে বাচ্চা সামলাচ্ছেন বাবা। তেরঙা তুলির টান দু’জনেরই গালে। খাবারের প্লেট হাতে এক কিশোরীর ছবি তুলতেই তার মা বললেন, ‘‘তুলেই নিন ছবি। এর পরে তো পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবে।’’ যে ওখলায় ভোটারদের প্রায় ৪০% মুসলিম, সেখানে সিএএ-এনআরসির এই ভরা সময়ে বিজেপি প্রার্থীর কোণঠাসা থাকা আশ্চর্যের নয়। কিন্তু বাকি দিল্লি কী বলে, সে দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে তাঁরা।

দিল্লি ভোটে বিজেপি হারলে কি তা শাহিন বাগের জয়?

এক মুসলিম তরুণ উত্তর দিলেন, ‘‘কাজ করলে যে কাউকে ধর্মের খেলায় হারানো যায় না, তা প্রমাণের জন্যই বিজেপির পরাজয় জরুরি। তবে একটি বিষয়ে আমি অন্তত মোদীর কাছে কৃতজ্ঞ!’’ সেটা কী? লাল টি শার্ট উত্তর দিলেন, ‘‘গত দু’মাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, বরাবর আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করে এসেছে বাকি রাজনৈতিক দলও। শুধু মাদ্রাসা-জুম্মার নমাজ-বিরিয়ানি-ফেজ টুপির ভাবমূর্তিতেই আটকে ফেলা হয়েছে অধিকাংশ জনকে। চাওয়া হয়েছে শুধু ভোট।’’ তাঁর বক্তব্য, ধর্ম নিজের জায়গায় থাকুক। কিন্তু মুসলিমরা নতুন করে নিজেদের চিনতে চাইলে, তবেই শাহিন বাগের জয়। ভোট তো হতেই থাকবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE