Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাধারণ মানুষের কম্পিউটার-স্মার্টফোনে কেন্দ্রের নজরদারিকেই নজরবন্দি করল সুপ্রিম কোর্ট

গোটা দেশকে নজরবন্দি করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে নিজেই নজরবন্দি নরেন্দ্র মোদী সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৫
Share: Save:

গোটা দেশকে নজরবন্দি করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে নিজেই নজরবন্দি নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রের ১০টি গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাকে সাধারণ মানুষের কম্পিউটার স্মার্ট ফোন বা যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রে নজরদারি চালানো এবং আড়ি পাতার খোলা ছাড়পত্র দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সুপ্রিম কোর্ট আজ জানিয়ে দিল, ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে। ছ’সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট নোটিস জারি করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত ২০ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা করেছিল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (আইবি), র, সিবিআই, ইডি, এনআইএ, দিল্লি পুলিশ, রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর, আয়কর দফতর, দিল্লি পুলিশ-সহ ১০টি সংস্থা নাগরিকদের বা সরকারি বা যে কোনও সংস্থার কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন বা যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রে নজরদারি চালাতে, আড়ি পাততে ও তথ্য নিতে পারবে। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠোকে ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন। মামলা করেন তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্র, আইনজীবী অমিত সাহনী, এম এল শর্মা ও শ্রেয়া সিঙ্ঘলও।

বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, লোকসভা ভোটের আগে আমজনতা তথা বিরোধীদের উপর নজরদারি চালাতে চায় মোদী সরকার। অরুণ জেটলির মতো মন্ত্রীরা তখন যুক্তি দেন, ২০০৯ থেকেই নিয়মটা রয়েছে। নতুন করে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কোনও ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈও আজ মামলাকারীদের কাছে জানতে চান, এই নিয়ম ২০০৯ থেকেই রয়েছে। এখন তাঁরা কোর্টে আসছেন কেন?

আরও পড়ুন: নজরদারি এখন অনেক কম, দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের

মামলাকারীদের হয়ে মুকুল রোহতগি, কে ভি বিশ্বনাথনরা যুক্তি দেন, ব্যক্তিপরিসরের অধিকারকে সংবিধানের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২০০৯-এ তথ্য-প্রযুক্তি আইনের আওতায় নজরদারির নিয়ম তৈরি হলেও, এখন ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টিকে দেখতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তি আইনে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন সংস্থাকে আড়ি পাতার ক্ষমতা দিতেই পারে কেন্দ্র। কিন্তু তার জন্য কারণ নথিভুক্ত করতে হবে। ২০ ডিসেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে সেই শর্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মতে, এই নির্দেশিকা অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের উপর আক্রমণ। দেশের সব নাগরিকের উপর নজরদারি সংবিধান-বিরোধী। সুপ্রিম কোর্টের রায়েরও বিপরীত।

মামলাকারীদের অন্যতম শ্রেয়া এর আগে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। যে ধারায় কলকাতায় অম্বিকেশ মহাপাত্র গ্রেফতার হয়েছিলেন। শ্রেয়া এ দিন বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা ব্যক্তিপরিসরের অধিকারে হস্তক্ষেপ। আমরা এখনই এর উপরে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলাম।’’ সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এখনই স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হয়নি। ছ’সপ্তাহ পরে কেন্দ্রের বক্তব্য শুনেই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE