Advertisement
E-Paper

‘রায় তো ঠিক আছে, মানসিকতার বদল চাই’

রক্ষণশীল মুসলিম পরিবার। বিয়ে হয়ে যায় মেয়েটির। বয়স তখন কত। তেরো কি চোদ্দো। মনে নেই শাকিলার । বিয়ে হওয়ার আগেই যদিও মা আর দিদির সঙ্গে চলে এসেছিল দিল্লিতে

রোশনি কুহু চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:০০
ছবি সৌজন্যে পরিচালক।

ছবি সৌজন্যে পরিচালক।

বেগুসরাই । বিহারের এই জেলারই প্রত্যন্ত গ্রাম রামপুর। সেখানেই জন্ম হয়েছিল শাকিনার।

রক্ষণশীল মুসলিম পরিবার। বিয়ে হয়ে যায় মেয়েটির। বয়স তখন কত। তেরো কি চোদ্দো। মনে নেই শাকিনার । বিয়ে হওয়ার আগেই যদিও মা আর দিদির সঙ্গে চলে এসেছিল দিল্লিতে। লোকের বাড়িতে কাজ করত। কিন্তু এতদিন হয়ে গেল শাকিলা তো এবার বড় হচ্ছে। বিয়েও হয়েছে। কিন্তু অন্য মেয়েদের মত বয়সন্ধি পেরিয়েও সেতো ঋতুমতী হয়নি। স্বামীর পরামর্শেই দেখানো হল ডাক্তার।

জানা গেল। ও আসলে মেয়ে নয়।

ডাক্তারি পরীক্ষা বলছে। ও হিজড়ে।

আরও খবর: সমকামের চিরায়ত ধারণা থেকে বলিউড কি এ বার বেরোতে পারবে?

সম্পূর্ণ নারী নয় ।

স্বামী বলেছিলেন বাড়িতে থাকতে। কিন্তু তিনি পারলেন কই। বেরিয়ে এলেন বাড়ি থেকে। কারণ তিনি তো নিজেকে নারী জানতেন। আজ বুঝতে পারলেন বাকিদের কাছে আর নারী নন তিনি। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে আবারও বিয়ে দেওয়া হবে তাঁর স্বামীর।

লাডলি, ছবি সৌজন্যে পরিচালক

শ্বশুর বাড়িতে জায়গা তার হবে না। স্বামী চাইলেও কীভাবে থাকবেন তিনি। আবারও যোগ দিলেন লোকের বাড়িতে কাজের জন্যে। আলাদা বাড়িতে থাকতে লাগলেন। নিজের মতোই আর পাঁচ জনের সঙ্গে পরিচয় হল।

আরও খবর: সমকাম অপরাধ নয়, ঐতিহাসিক রায় শীর্ষ আদালতের

বিয়েবাড়িতে গান কিংবা কারও ছেলে মেয়ে হলে তাঁর থেকে সামান্য যা আয়। কিন্তু তাতে চলে না সংসার।

ছোট থেকে যে পরিচয়ে বেড়ে উঠেছেন। একটা সময়ের পর সেই নারী পরিচয় নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে এবং তা বয়ঃসন্ধির পরে। শাকিনার পরিবারের সদস্যরাও বলেন, ছোটবেলাতে তাঁরা বুঝতেও পারেননি তিনি পরিপূর্ণ নারী নন। দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া থেকেছেন তিনি। ভাড়া পেতেও সমস্যা হত। আচমকাই নিজের সম্প্রদায়ের মানুষদের চেনা। সেখানেও বার বার আঘাত পেলেন। তারপর একটাই পথ খোলা ছিল তাঁর। শাকিনা হল লাডলি। দিল্লির একটি পতিতাপল্লিই তার কর্মসংস্থানের উপায় এখন। যদিও পতিতাপল্লিতে ঘর নেই তাঁর। থাকেন কালিন্দী কুঞ্জের ভাড়া ঘরে। শুরু হয় অন্য জীবন।

তিনি শুনেছেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা। বরাবর স্বাধীন প্রকৃতির মানুষ লাডলি। তিনি বলেছেন, আদালত তাঁর মতো মানুষের কথা বলার একটা জায়গা তৈরি করে দিল। কিন্তু মানসিকতা কবে বদলাবে। এখনও তো তাকে বাঁকা চোখেই তো দেখে মানুষ।

ছবির শুটিংয়ের সময়। ছবি সৌজন্যে পরিচালক

আর এই লাডলির পুরো জীবনকেই ফ্রেমবন্দি করেছেন তথ্যচিত্র নির্মাতা সুদীপ্ত কুন্ডু। বানিয়ে ফেলেছেন ‘লাডলি’ নামের একটি তথ্যচিত্রও। ছবিটি ইতিমধ্যেই চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসা পেয়েছে। উত্তর চব্বিশ পরগনার ছেলে সুদীপ্ত বাবু আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘লাডলি কিন্তু সময়ে নিজেকে নারী হিসাবেই পরিচয় দেন। আর কিছু নয়। মা বোন আর নিম্নবিত্ত পরিবারকে এভাবেই সাহায্য করে চলেছেন বাড়ির মেয়েটি।’’

এত জন মানুষকে দেখেছেন লাডলি। কাউকে কি কখনও ভালোবেসেছেন? শুটিংয়ের এই প্রশ্নের উত্তরে লাডলি সুদীপ্তকে বলেছিলেন, হ্যাঁ ভালবেসেছেন সম্প্রতি। আর ভালবাসতেই তো চান প্রত্যেকে।

দেখুন ভিডিয়ো:

সুপ্রিম কোর্ট সেই ভালবাসার স্বীকৃতিটাই দিল। লাডলি খুব স্বাধীন একজন মানুষ। অত্যন্ত আত্মসচেতনও। রামধনু রঙের মানে বোঝেন না ঠিক মতো। কিন্তু বোঝেন, ভালবাসার মানে। বেঁচে থাকার মানে। আর লাডলির এই বেঁচে থাকার উদযাপনই ফ্রেমবন্দি করেছেন সুদীপ্ত। ছবিটি প্রযোজনা করেছে নাইট অ্যালি। সুপ্রিম কোর্টের রায় সেই সম্মানের জীবনকেই স্বীকৃতি দিল, মত সুদীপ্ত বাবুরও।

Article 377 Supreme Court Homosexuality LGBT
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy