নির্ভয়াকাণ্ডে এ ভাবেই চলেছিল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় পাঁচ বছর আগের সেই শীতের রাতের ঘটনা। সঙ্গীর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন ২৩ বছরের মেডিক্যাল ছাত্রী নির্ভয়া। গণধর্ষণের পরও চলে অকথ্য শারীরিক নির্যাতন। এর পর নির্ভয়া ও তাঁর সঙ্গীকে চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গী প্রাণে বেঁচে গেলেও ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও ফিরে আসতে পারেননি নির্ভয়া। রাজধানীর ওই ঘটনার নৃশংসতার স্মৃতি আজও অনেকের মনেই তাজা। আজ, শুক্রবার এই মামলায় দোষী চার জনের আবেদনের ভিত্তিতে রায়দান করবে সুপ্রিম কোর্ট। এ দিনই জানা যাবে ওই দোষীদের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকবে কি না!
১২ ডিসেম্বর, ২০১২। তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে সিনেমা দেখে বাড়ির পথে রওনা দেন ফিজিওথেরাপির ছাত্রী জ্যোতি সিংহ। দক্ষিণ দিল্লিতে একটি বাসে ওঠেন তাঁরা। সেই বাসে ছিল আরও ছ’জন। বাসচালক রাম সিংহ আশ্বাস দেয়, নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁদের নামিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু, বাস চলতে শুরু করলে জ্যোতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্যরা। সঙ্গীর সামনেই জ্যোতিকে একে একে ধর্ষণ করে ছ’জন। এতেও থেমে থাকেনি তারা। জ্যোতির শরীরে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। টেনে বের করে আনা হয় তাঁর নাড়িভুঁড়ি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু, অবস্থায় উন্নতি না হওয়া নির্ভয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। ২৯ ডিসেম্বর সেখানেই হাসপাতালে মারা যান তিনি।
আরও পড়ুন
জবাব দেবই, বার্তা নরেন্দ্র মোদীর
অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্ত, মুকেশ ও বিনয় শর্মা। ছবি: সংগৃহীত।
এই ঘটনার পর দেশ-বিদেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। বিক্ষোভ চলতে থাকে রাজধানী-সহ দেশের নানা প্রান্তে। প্রাথমিক ভাবে জ্যোতির নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়। নির্ভয়া বা দামিনী নামেই তাঁর উল্লেখ করা হয় সংবাদমাধ্যমে। পরে প্রকাশ্যে আসেন তাঁর মা-বাবা। মেয়ের নাম-পরিচয়ও জানান তাঁরা।
ঘটনায় অভিযুক্ত ছ’জনের মধ্যে এক নাবালকও ছিল। ওই নাবালক-সহ অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত, রাম সিংহ, ও মুকেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর গত ২০১৩-তে নিম্ন আদালতে বিচার শুরু হয় তাদের। তবে ঘটনার সময় এক অভিযুক্তের বয়স ১৮ বছর থেকে মাসখানেকের কম হওয়ায় তাকে জুভেনাইল কোর্টে তোলা হয়।
দোষীদের ফাঁসির সাজা চান নির্ভয়ার মা-বাবা। ছবি: সংগৃহীত।
নিম্ন আদালতে মামলা চলাকালীনই ২০১৩-র মার্চে তিহাড় জেলে আত্মহত্যা করে রাম সিংহ। অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত, ও মুকেশকে ফাঁসির সাজা শোনায় নিম্ন আদালত। একই রায় বহাল রাখে হাইকোর্টও। জুভেনাইল কোর্টে তিন বছরের সাজা মেলে ওই নাবালকের। গত ২০১৫-তে সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়ে যায় সে। তবে ফাঁসির সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত, ও মুকেশ।
দোষীদের ফাঁসির সাজা হোক চান নির্ভয়ার বাবা। তিনি বলেন, “ওই চার জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক। এ রকম অপরাধের থেকে নৃশংস আর কিছুই হয় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy