Advertisement
E-Paper

পর্ন সাইট রুখতে গিয়ে খাল কেটে কুমির ডেকে আনল কেন্দ্র?

গত সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের নির্দেশে, ৮২৭টি জনপ্রিয় পর্নোগ্রাফিক সাইট ভারতে বন্ধ করার নির্দেশ জারি করে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক। দেশের সমস্ত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি-কে বলা হয় ওই ৮২৭টি সাইটকে ব্লক করে দিতে।

সিজার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৪১
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

এ যেন এক ভূতকে বিদায় করতে, নেমম্তন্ন করে অন্য ভূতকে ডেকে নিয়ে আসা! গোটা দেশে কয়েকশো পর্নোগ্রাফিক সাইট নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তকে এমনটাই মনে করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।

কেন মনে করছেন? বিশেষজ্ঞদের মতে— অনলাইন পর্নোগ্রাফি আটকাতে গিয়ে, পরোক্ষে গোটা দেশের মানুষকে অনিরাপদ নেট ব্রাউজিংয়ের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে এই নিষেধাজ্ঞা। সাইবার দুনিয়া থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য সেই বিপদেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। অজান্তেই আমি আমার গোপনতম তথ্য তুলে দিচ্ছি কোনও সংস্থার কাছে। আর মুহূর্তের মধ্যে সেই তথ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আর এই তথ্য চুরির ভূতের বাহন হল ভার্চুয়াল প্রক্সি নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে ভিপিএন।

গত সেপ্টেম্বর মাসে উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের নির্দেশে, ৮২৭টি জনপ্রিয় পর্নোগ্রাফিক সাইট ভারতে বন্ধ করার নির্দেশ জারি করে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক। দেশের সমস্ত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি-কে বলা হয় ওই ৮২৭টি সাইটকে ব্লক করে দিতে।

আরও পড়ুন: উপরে সড়কপথ, নীচে রেল! উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের দীর্ঘতম দোতলা ব্রিজ

আর তার পরই আবির্ভাব তথ্য চুরির জিনের। গুগলের নিজস্ব ট্রেন্ড সমীক্ষা অনুযায়ী, ওই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার পর এ দেশে লাফিয়ে বেড়েছে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি সার্চ করার প্রবণতা। শতাংশ হিসাবে অক্টোবর মাসের চতুর্থ সপ্তাহের তুলনায় নভেম্বর মাসে এই সার্চের প্রবণতা দ্বিগুণের বেশি। একই প্রবণতা জারি রয়েছে এই ডিসেম্বর মাসেও।

ঠিক একই ভাবে, নিষিদ্ধ ঘোষণার পরই চড়চড় করে বেড়েছে ভিপিএন, ফ্রি ভিপিএনের সার্চ। গুগল ট্রেন্ডের নিরিখে তা ১০০ ছুঁয়েছে বার বার, যার অর্থ ওই সময়ে (অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত) ভিপিএনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা ওই নিষেধাজ্ঞার সরাসরি ফলাফল। কারণ ভিপিএনের সাহায্যে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের ব্লক করা সাইটেও পৌঁছে যাওয়া যায়। এই প্রক্সি নেটওয়ার্কের সাহায্যে যে কোনও নিষিদ্ধ সাইটে ঢোকা যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা, ভিপিএন ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) লুকোতে সাহায্য করে, ব্যবহারকারীর অবস্থান গোপন রাখে, সর্বোপরি, অন্য দেশে থাকা সার্ভারের সাহায্যে যে কোনও সাইটে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন: ‘ড্রাই স্টেট’ গুজরাতে কিটি পার্টিতে মদ্যপান! গ্রেফতার ২১ মহিলা

স্বভাবতই ভারতের নেটিজেনরা, যাঁরা বিগত কয়েক বছর যাবত ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখতে অভ্যস্ত, তাঁরা নেট জুড়ে ভিপিএনের খোঁজ খবর শুরু করেছেন সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে। ব্যবহারও শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। পরিসংখ্যান বলে, সারা বিশ্বে পর্নোগ্রাফিক সাইটের ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভারত তৃতীয় স্থানে, ব্রিটেন এবং আমেরিকার ঠিক পরই।

আর এখানেই বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রথমেই মনে রাখতে হবে, ভিপিএন সার্ভিস যাঁরা দেন, তার একটা বড় অংশই পয়সার বিনিময়ে। পাশাপাশি অনেক বিনা পয়সার সার্ভিস আছে। আর এই ফ্রি ভিপিএন ঘিরেই সমস্যা।” ভারতের কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম (সার্ট)-এর এক শীর্ষ সাইবার বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যা করেন, “বিনা পয়সার ভিপিএন সার্ভিস যে সংস্থা দিচ্ছে, তার নিজের মুনাফা কী? মুনাফা একটাই। ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য জমা করে তা অন্য কোথাও বেচে দেওয়া। অর্থাৎ সাইবার তস্করদের জন্য দরজার ছিটকিনি খুলে দেওয়া।”

সেই রাস্তা দিয়ে যে কেউ মারাত্মক ট্রোজান ভাইরাস বা স্পাইওয়্যার পাঠিয়ে জেনে নিতে পারে ব্যবহারকারীর ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন গোপনীয় তথ্য। কারণ এখন প্রায় সবাই নিজের কম্পিউটার বা মোবাইলে বহু ব্যক্তিগত তথ্য রাখেন। বিভাস চট্টোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন, “এই সংস্থাগুলোর কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকায়, তাঁরা সহজেই সমস্ত তথ্য তুলে দিতে পারে অন্য কারও হাতে।” অর্থাৎ খাল কেটে কুমির আনার মতই বিপজ্জনক এই ভিপিএন।

আর ভিপিএনের পাশাপাশি, নিজেদের ইউআরএল সামান্য পাল্টেও ফের ভারতের সাইবার স্ক্রিনে ফিরে আসছে বহু নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফিক সাইট। ২০১৫ সালেও ঠিক একই ভাবে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হয়েছিল, যা কার্যত ব্যর্থ হয়। এ বারও নাম পাল্টে ফিরে আসা এই সাইটগুলির একটা বড় অংশকেই বিপজ্জনক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, এই সুযোগে সাইবার ডাকাতরা ঢুকে পড়ছে। সার্টের ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, “আসলে গোটা ব্যাপারটাই চোর-পুলিশ খেলার মতো। কার্যত বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো।” বিভাস বলেন, “আসলে পর্নোগ্রাফ নিয়ে আমাদের দেশে কোনও স্পষ্ট আইন নেই। মান্ধাতার আমলে ব্রিটিশদের দেওয়া অশ্লীলতার যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা আজ কার্যত অচল।” তিনি ওই প্রসঙ্গে রাজ কপূরের ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবি ঘিরে ওঠা অশ্লীলতার অভিযোগের উল্লেখ করেন। বিভাস বলেন, “সেই মামলাতে কাজ কপূর প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, সমসাময়িক সমাজের উপর অশ্লীলতার সংজ্ঞা নির্ভর করে।” তবে চাইল্ড পর্ন বা শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে ভারতে যথেষ্ট কড়া আইন রয়েছে বলেই মনে করেন তিনি।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)

Telecom Cyber Virus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy