Advertisement
E-Paper

উপরে সড়কপথ, নীচে রেল! উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের দীর্ঘতম দোতলা ব্রিজ

নির্মাণশৈলী এবং প্রযুক্তিতেও অভিনব বগিবিল দোতলা সেতু। যার উপরের তলে চলবে বাস, ট্রাক, লরি সহ যাবতীয় যানবাহন। অর্থাৎ সড়কপথ। তিন লেনের। আর নীচে দিয়ে চলবে ট্রেন। পাতা হয়েছে ডাবল লাইন। আবার দৈর্ঘ্যেও এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দোতলা ব্রিজ এটি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৫৭
উদ্বোধনের অপেক্ষায় বগিবিল ব্রিজ। ছবি: পিটিআই

উদ্বোধনের অপেক্ষায় বগিবিল ব্রিজ। ছবি: পিটিআই

তৈরি হতে লেগেছে ২১ বছর। কিন্তু এত দিন ধরে তৈরির পর যা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, তা ভেঙে দিয়েছে অতীতের বহু নজির। তৈরি হয়েছে নয়া ইতিহাস। উদ্বোধনের অপেক্ষায় অসমের ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর তৈরি বগিবিল সেতু। মঙ্গলবারই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

১৯৯৭ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। সমীক্ষা, মাপজোক, ব্রিজ তৈরি সম্ভব কিনা— সেসব খতিয়ে দেখতেই পাঁচ বছর কেটে যায়। রেল সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পর ২০০২ সালে নির্মাণ কাজের সূচনা করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার (৪.৯৪)। খরচ হয়েছে ৫৯২০ কোটি টাকা। ২১ বছর আগেকার সেই ভিত্তিপ্রস্তর থেকেই ধীরে ধীরে ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বগিবিল ব্রিজ। আর এবার সম্পূর্ণ প্রস্তুত দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ দোতলা ব্রিজ। বাজপেয়ীর জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর এই ব্রিজে একইসঙ্গে রেল এবং সড়কপথের উদ্বোধন করবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নির্মাণশৈলী এবং প্রযুক্তিতেও অভিনব বগিবিল দোতলা সেতু। যার উপরের তলে চলবে বাস, ট্রাক, লরি সহ যাবতীয় যানবাহন। অর্থাৎ সড়কপথ। তিন লেনের। আর নীচে দিয়ে চলবে ট্রেন। পাতা হয়েছে ডাবল লাইন। আবার দৈর্ঘ্যেও এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দোতলা ব্রিজ এটি।

রেলের ডাবল লাইন পাতার পর চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল ছবি

আরও পড়ুন: নেই কোনও নাট-বোল্ট, তীব্র ভূমিকম্পও সইতে সক্ষম দেশের দীর্ঘতম এই দোতলা ব্রিজ

ব্রিজটি তৈরি করেছে ভারতীয় রেল। নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রণবজ্যোতি শর্মা মনে করেন, স্থাপত্য ও নির্মাণ শিল্পের এক অনন্য নজির এই বগিবিল ব্রিজ। শুধু যোগাযোগই নয়, উত্তর-পূর্বের সীমান্ত রক্ষার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেবে এই সেতু। তিনি বলেন, ‘‘খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্রের বুকে যে কোনও ব্রিজ তৈরি করাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এটি অতিবর্ষণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। তার উপর আবার ভূমিকম্প প্রবণ। ফলে সব দিক দিয়েই এই ব্রিজ স্বতন্ত্র।’’

আরও পডু়ন: সমুদ্রগর্ভে অগ্ন্যুৎপাতের জেরে সুনামি, ইন্দোনেশিয়ায় মৃত কমপক্ষে ১৬৮

অসমের ডিব্রুগড় জেলার সঙ্গে অরুণাচলের ধেমাজি জেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে বগিবিল সেতু। হাসপাতাল, স্কুল কলেজ থেকে যাবতীয় সুযোগ সুবিধার জন্য ধেমাজি জেলার বাসিন্দাদের ছুটতে যেতে হত অসমের ডিব্রুগড়ে। কিন্তু সেই যাতায়াত ছিল দীর্ঘ সময়ের এবং দুর্বিষহ। সেতু চালু হলে সেই দূরত্ব ও ভোগান্তি অনেকটাই কমবে। তার চেয়েও বেশি সুবিধা হবে রেল পথে। কারণ, ধেমাজি এবং ডিব্রুগড়ের মধ্যে রেলপথে দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটার থেকে কমে হয়ে যাচ্ছে মাত্র ১০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ব্যবধান কমছে প্রায় ৪০০ কিলোমিটারের। যাত্রার সময় কমবে প্রায় দশ ঘণ্টা।

নির্মীয়মাণ অবস্থায় বগিবিল সেতু। —ফাইল চিত্র

এই সব কারণেই এই বগিবিল ব্রিজই এখন দেশবাসীর চর্চার কেন্দ্রে। তা নিয়ে কৌতূহলও তুঙ্গে। এবার উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন দুই রাজ্যের মানুষ। ইতিমধ্যেই অনেকে ভিড় জমিয়েছেন ব্রিজ লাগোয়া এলাকায়। নির্মাণ প্রযুক্তি ও শৈলী নিয়েও মুখে মুখে চর্চা এই বগিবিল সেতু নিয়ে।

আরও পডু়ন: ৬ হাজার থেকে ২০ লক্ষ, কোথা থেকে টাকা পড়ছে অ্যাকাউন্টে! ভ্যাবাচ্যাকা খাচ্ছে হাওড়ার গ্রাম

২০০২ সালে বাজপেয়ী যখন সেতুর কাজের সূচনা করেন, স্থানীয় যুবক ভাস্কর গগৈ তখন বছর আঠেরোর তরুণ। তখন তিনি ছিলেন স্কুলপডু়য়া। কিন্তু সেই সময়ের কথা এখনও স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। আর সেতু সম্পূর্ণ হওয়ার পর ফের দেখতে এসে বললেন, ‘‘এই ব্রিজ ছিল আমাদের স্বপ্ন, বহু আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই ব্রিজ পেলাম আমরা। উত্তর-পূর্বের উন্নয়নে এক নয়া দিগন্ত খুলে দেবে বগিবিল ব্রিজ।’’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তর-পূর্বের যোগাযোগে যেমন বিপ্লব নিয়ে আসবে, তেমনই দেশের স্থাপত্য ও নির্মাণ শিল্পেও বিপ্লব আনবে রেলের তৈরি এই সেতু। চালু হলে ডিব্রুগড়ের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ আরও দ্রুত হবে। ফলে আরও গুরুত্ব বাড়বে উত্তর-পূর্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ডিব্রুগড়ের।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)

Bogibeel Bridge Dibrugarh Arunachal Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy