Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টি মাথায় দু’ঘণ্টা টানা হেঁটে ট্রেন ধরলাম

রবিবার বৃষ্টি একটু ধরল। জল নামতে শুরু করল। আর দেরি করলাম না। বাড়িতে যে সামান্য টাকা ছিল তা পকেটে ভরে একাই বেরিয়ে পড়লাম। প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা। কখনও ঝিরঝির, আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক হেঁটে পৌঁছলাম পালঘাট স্টেশনে। ট্রেনে থিকথিকে ভিড়। সবাই পালাচ্ছে। সকলের চোখে-মুখে আতঙ্ক। ধাক্কাধাক্কি করে রাত ১১টা নাগাদ কোনও মতে ট্রেনে উঠলাম।

তিরুঅনন্তপুরম থেকে বিশেষ ট্রেনে সোমবার রাতে হাওড়া পৌঁছলেন এ রাজ্যের বাসিন্দারা। তাঁদের জন্য বিশেষ বাসেরও ব্যবস্থা করেছিল পরিবহণ দফতর। হাওড়া স্টেশন চত্বরে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে যাত্রীরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তিরুঅনন্তপুরম থেকে বিশেষ ট্রেনে সোমবার রাতে হাওড়া পৌঁছলেন এ রাজ্যের বাসিন্দারা। তাঁদের জন্য বিশেষ বাসেরও ব্যবস্থা করেছিল পরিবহণ দফতর। হাওড়া স্টেশন চত্বরে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে যাত্রীরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

সপিরুল শেখ, নদিয়া থেকে কেরল যাওয়া শ্রমিক
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৫
Share: Save:

আকাশটা যেন ভেঙে পড়েছিল। চারদিক অন্ধকার করে‌ কী প্রচণ্ড বৃষ্টি! একটানা ছ’সাত দিন ধরে‌ চলল! খাবার নেই, বিদ্যুৎ নেই, চার্জের অভাবে মোবাইল বন্ধ। গোটা পৃথিবীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে দোতলায় সিঁটিয়ে বসেছিলাম আমরা তিন জন। মল্লপুরমের এই ভাড়া বাড়িটা একটু উঁচু বলে দোতলায় জল ওঠেনি। তা-ও মনে হচ্ছিল, এখানেই বসেই বোধহয় শেষ হয়ে যাব। আর কোনও দিন বেরতে পারব না।

রবিবার বৃষ্টি একটু ধরল। জল নামতে শুরু করল। আর দেরি করলাম না। বাড়িতে যে সামান্য টাকা ছিল তা পকেটে ভরে একাই বেরিয়ে পড়লাম। প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা। কখনও ঝিরঝির, আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক হেঁটে পৌঁছলাম পালঘাট স্টেশনে। ট্রেনে থিকথিকে ভিড়। সবাই পালাচ্ছে। সকলের চোখে-মুখে আতঙ্ক। ধাক্কাধাক্কি করে রাত ১১টা নাগাদ কোনও মতে ট্রেনে উঠলাম।

নদিয়ার করিমপুরে নাটনা গ্রামে আমার বাড়ি। আট মাস আগে আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে কেরলের চাট্টিপুরমে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে গিয়েছিলাম মল্লপুরম।

মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মোবাইলও বন্ধ হয়ে গেল। বাড়িতে স্ত্রী নিহারুন, দুই ছেলে—১১ বছরের সামাদুল আর ৯ বছরের ইমাদুল, বৃদ্ধ বাবা-মা— সকলের কথা মনে পড়ছিল। কত বার কেঁদে ফেলেছি। বুঝতে পারছিলাম, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না-পেরে ওরা অসম্ভব ভয় পেয়েছে। ঘর থেকে বেরিয়ে স্টেশনে আসার সময়ে রাস্তায় একটি দোকানের ইনভার্টার থেকে মোবাইলে চার্জ দিলাম। কথা বললাম বাড়িতে। ওরা নিশ্চিন্ত হল।

আরও পড়ুন: শ্রমিকদের ফেরাতে আরও এগোক বাংলা, চাইছে কেরল

এখন ট্রেনে। হয়তো বুধবার কলকাতা পৌঁছব। খাবার কেনার মতো টাকা নেই। এখন অবশ্য মনে হচ্ছে, আরও দু’দিন না-খেয়ে কাটিয়ে দেব, শুধু প্রাণটুকু নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই। পরিজনদের দেখতে চাই। কী ভাবে কলকাতা থেকে করিমপুরে যাব, জানি না। এখন উপরওয়ালাই ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Kerala Train West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE