Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঝাড়খণ্ডের গণপ্রহারেও রাজনীতি জুড়লেন মোদী

মোটরবাইক চোর সন্দেহে ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোঁয়ায় তবরেজ আনসারি নামে এক যুবককে বেধড়ক পেটায় গ্রামবাসী।

রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

ঝাড়খণ্ডে গণপ্রহারে মৃত্যুর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসাকে এক গোত্রে ফেলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মোটরবাইক চোর সন্দেহে ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোঁয়ায় তবরেজ আনসারি নামে এক যুবককে বেধড়ক পেটায় গ্রামবাসী। জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোও হয়। বিচার বিভাগীয় হেফাজতে মারা যান তবরেজ। এ সবই তিনশোরও বেশি আসন নিয়ে নরেন্দ্র মোদী জিতে আসার পরে। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর সঙ্গে ‘সবকা বিশ্বাস’ মন্ত্র যোগ করার পরে। এত দিন এই নিয়ে টুঁ-শব্দ করেননি মোদী। রাহুল গাঁধীও গত কাল প্রধানমন্ত্রীর ‘নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিরোধীরা চেপে ধরায় রাজ্যসভায় আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদজ্ঞাপক বিতর্কে এ নিয়ে মুখ খুলতে হল মোদীকে। তিনি বললেন, ‘‘যুবকের হত্যায় ব্যথিত। দোষীদের সাজা হওয়া উচিত। অপরাধ হলে সংবিধান ও আইন মেনেই পদক্ষেপ হবে। সেখান থেকে পিছু হটার প্রশ্নই নেই।’’

এ কথা বলেই বিতর্কের মোড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন মোদী। কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ তবরেজের ঘটনার কথা উল্লেখ করে ঝাড়খণ্ডকে ‘গণপিটুনির ঘাঁটি’ বলেছিলেন। মোদী সেই মন্তব্যকেই বেশি গুরুত্ব দিলেন। বললেন, ‘‘একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য গোটা রাজ্যকে দায়ী করা যায় না। গোটা রাজ্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাজনীতি করলে ভাল হবে না। সেখানেও অনেক সজ্জন ব্যক্তি রয়েছেন। এমন করলে ভাল কাজ করার লোক পাওয়া যাবে না।’’

বিজেপি-শাসিত ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট আসন্ন। সেই রাজ্যেই ঘৃণার আবহ থেকে উঠে আসা এক অপরাধকে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে রাজনৈতিক হিংসার সঙ্গে এক গোত্রে ফেলেছেন,

তাকে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে পাশ কাটানোর চেষ্টা বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। মোদী আজ বলেছেন, ‘‘হিংসা ঝাড়খণ্ডে হোক বা পশ্চিমবঙ্গ-কেরলে— আমাদের একই মাপকাঠি হওয়া উচিত। তবেই হিংসাকে রুখতে পারব। রাজনৈতিক ফায়দা তোলার অন্য অনেক ক্ষেত্র আছে। কিন্তু মানবতার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে সব রাজনৈতিক দলকেই একসঙ্গে

আসতে হবে।’’ এখানেই না-থেমে সন্ত্রাসবাদকেও সুকৌশলে জুড়ে দিয়েছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘ভাল সন্ত্রাসবাদী ও মন্দ সন্ত্রাসবাদী নিয়ে বাছবিছারে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইটারই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।’’

প্রধানমন্ত্রীর যুক্তির এমন মোচড়ের পরে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেছেন, ‘‘দেশে ঘৃণার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সেখান থেকেই ঝাড়খণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে রাজ্যে রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার কী যোগ?’’ তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন (যাঁকে আজ ‘ডেরেক ওবেরয়’ বলে সম্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী) বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো আসল বিষয়গুলির জবাব না-দিয়েই পালিয়ে গেলেন।’’ লোকসভায় তৃণমূলের সৌগত রায় তবরেজের মৃত্যুকে ‘ঠান্ডা মাথায় খুন’ বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘‘এই ঘটনা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত। গণহত্যার বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রতিবাদ জারি থাকবে।’’ আজই দিল্লির যন্তরমন্তরে তবরেজের ছবি নিয়ে মোমবাতি মিছিল হয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদী জমানায় ‘সবকা বিশ্বাস’ অর্জন হচ্ছে কই?

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE