Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাশ্মীরে মধ্যস্থতা নয়, শরিফকে বার্তা ওবামার

পাক-ভারত সম্পর্কের যেন দ্রুত উন্নতি হয়, হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে সেই বার্তাই দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে ওবামার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শরিফ। বৈঠকের পরে এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, শরিফ ও ওবামা দু’জনেই ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতির উপরে জোর দিয়েছেন।

মুখোমুখি। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ছবি: এপি

মুখোমুখি। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ছবি: এপি

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

পাক-ভারত সম্পর্কের যেন দ্রুত উন্নতি হয়, হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে সেই বার্তাই দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে ওবামার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শরিফ। বৈঠকের পরে এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়, শরিফ ও ওবামা দু’জনেই ভারত-পাক সম্পর্কের উন্নতির উপরে জোর দিয়েছেন। পরে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এরিক শুল্জও বলেন, ‘‘শুধু ভারত-পাকিস্তানেই নয়, গোটা এলাকায় শান্তি পরিস্থিতি বজায় রাখতে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা দরকার। কাশ্মীর-সহ বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ের তাড়াতাড়ি মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। এবং তা তাদের নিজেদেরই করতে হবে।’’
বহু দিন ধরেই কাশ্মীর-সমস্যার সমাধানে আমেরিকা বা রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতা চাইছে পাকিস্তান। এ বারেও সেই প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তোলেন শরিফ। দাবি করেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অনমনীয় মনোভাবের ফলেই দু’দেশের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। দু’দেশের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাক প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কাশ্মীর সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এবং সেটা হতে পারে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায়।’’ আমেরিকাই এই কাজের জন্য আদর্শ, মন্তব্য করেন শরিফ। তবে আমেরিকা যে পাকিস্তানের এই প্রস্তাবে একেবারেই সহমত নয়, তা হোয়াইট হাউসের বক্তব্যেই স্পষ্ট।
কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের এই মন্তব্যের সমালোচনা করে আজ ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরে বৈঠক করতে আমরা সব সময়েই রাজি। ভারত আলোচনার টেবিল থেকে সরে এসেছে, পাকিস্তানের এই দাবি কখনওই মেনে নেওয়া যায় না।’’
এ বছর জুলাই মাসে রাশিয়ার উফায় পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। সেই বৈঠকেই স্থির হয়, শীঘ্রই দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৈঠকে বসবেন। ২৪ অগস্ট বৈঠকের দিন ঠিক হয়। কিন্তু সেই বৈঠকের ঠিক আগেই হুরিয়ত নেতাদের চা-চক্রে ডাকেন নয়াদিল্লিতে পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত। পাকিস্তানের এই দু’মুখো নীতিতে বিরক্ত নয়াদিল্লি তখন সরতাজ আজিজ ও অজিত ডোভালের সেই বৈঠক বাতিল করে দিয়েছিল।

কাশ্মীর নিয়ে নয়াদিল্লির সমালোচনা করলেও যৌথ বিবৃতিতে জঙ্গি মোকাবিলায় কড়া হওয়ার বার্তা অবশ্য দিয়েছে ইসলামাবাদ। বৈঠকে ওবামাকে শরিফ আশ্বাস দিয়েছেন, লস্কর-ই-তইবা, হক্কানি গোষ্ঠী-সহ রাষ্ট্রপুঞ্জ চিহ্নিত বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীকে পাকিস্তানের মাটি থেকে কার্যকলাপ চালাতে দেওয়া হবে না। পাক-আফগান সীমান্তের দু’দিকেই এই হক্কানি গোষ্ঠী যথেষ্ট সক্রিয়। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে দীর্ঘদিন দাবি করছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। কিন্তু হক্কানি নিয়ে এই প্রথম মুখ খুলল পাকিস্তান।

পাকিস্তানের মাটি থেকে বহু বার সন্ত্রাসের প্রমাণ মিলেছে। ভারতের মাটিতে ঘটে যাওয়া ২৬/১১-সহ বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় দোষীদের পাকিস্তানে গা-ঢাকা দিয়ে থাকার অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু কখনওই এ বিষয়ে নমনীয় মনোভাব দেখায়নি ইসলামাবাদ। এমনকী সম্প্রতি প্রাক্তন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী চৌধুরি আহমেদ দাবি করেন, ওসামা বিন লাদেন যে অ্যাবটাবাদে লুকিয়ে ছিলেন, সে কথা সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা জানতেন। পাক সরকারের তরফে এই দাবি খারিজ করে দেওয়া হলেও সব মিলিয়ে পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়ছিল। সেই চাপের মুখেই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা জানালেন শরিফ।

ভারতের স্বস্তি আরও বাড়িয়ে বৈঠকের পরে হোয়াইট হাউস জানায়, আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও অসামরিক পরমাণু চুক্তি হয়নি। ওবামা-শরিফের বৈঠকের আগে পাকিস্তানি মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছিল, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকেই স্বাক্ষরিত হবে এই চুক্তি। যা দশ বছর আগে হওয়া ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তিরই ধাঁচে। পাক সরকারের একাংশও সংবাদমাধ্যমের এই জল্পনাতে ইন্ধন জোগাচ্ছিল। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এরিক শুল্জ সেই আশায় জল ঢেলে দিয়ে বলেন, ‘‘আমেরিকা নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে এখন কোনও পারমাণবিক চুক্তি হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abpnewsletters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE