Advertisement
E-Paper

নিরীহ আলোয় রং ধোয়া ছায়া-ছবির উপাখ্যান

চিত্রকলার ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়ান পেন্টিং’-এর গর্বিত অধ্যায়ের দিকটি এক দিন বিলুপ্ত প্রজাতির মতো উচ্চারিত হবে।

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪২
নারীসত্তা: রুনু মিশ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ। সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে

নারীসত্তা: রুনু মিশ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ। সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে

চিত্রকলার ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়ান পেন্টিং’-এর গর্বিত অধ্যায়ের দিকটি এক দিন বিলুপ্ত প্রজাতির মতো উচ্চারিত হবে। শিল্পকলা ঐতিহ্যের মুঘল-রাজপুত অণুচিত্র-উত্তর পর্বে বাংলা কলমের স্বর্ণ-ইতিহাস চিরস্মরণীয়। ভারতের বেশির ভাগ শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ইন্ডিয়ান পেন্টিং’ নামে কোনও বিশেষ বিভাগ নেই। ছাত্রছাত্রীরা তাই সেই বিদ্যা জানবে কী ভাবে? কলকাতার সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে এখনও এই বিষয় নিয়ে শিক্ষাদান পর্ব আগের অবস্থায় নেই।

সম্প্রতি এই মাধ্যমটিতে রুনু মিশ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রদর্শনী শেষ হল অ্যাকাডেমিতে। এই তাঁর পঞ্চম একক। তবে সব কাজ যে ইন্ডিয়ান পেন্টিংয়ের ধারাটিকে বহন করেছে, তা নয়। তিনি তৈলচিত্রের কাজ শিখেছিলেন এক সময় ওই মাধ্যমের দুই দিকপাল শিল্পী অশেষ মিত্র ও বিকাশ ভট্টাচার্যের কাছে। আর ইন্ডিয়ান পেন্টিং শেখেন প্রথমে ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম ও তার পরে মৃণালকান্তি দাশের কাছে। এ ছাড়া গণেশ হালুইয়ের কাছে মুরাল, পেন্টিং এবং ওয়াশের কাজ শিখেছিলেন। শিক্ষাশেষে সরকারি কলেজ থেকেই সার্টিফিকেট কোর্স করেছিলেন রুনু।

তাঁর চর্চা দীর্ঘ কালের হলেও, নানা কারণবশত কিছু কালের জন্য ব্যাহত হয়েছিল। হয়তো এ জন্য তাঁর কাজের সামনে দাঁড়ালে বোঝা যায়, মাধ্যমকে অনায়াস আয়ত্তের মধ্যে এনেও বহু জায়গায় একটু দ্রুত শেষ করেছেন। আর এখানেই কিছু অসুবিধে তৈরি হয়। যেখানে ছবির চাহিদা অনুযায়ী রচনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বর্ণের মসৃণতা ও নরম আবহকে রক্ষা করার টেকনিককে ধীরেসুস্থে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই নিয়ম, সেখানে অযথা অল্প রঙে সামান্য টোন ও ফ্ল্যাটনেস ছবির সৌন্দর্যকে একটু হলেও বাধা দিচ্ছে।

কোথাও কোথাও প্রকৃত রূপ বা গঠনকে তুলির দ্রুত সঞ্চালনে ও সাধারণ আবহে এনে ফেলার প্রবণতা কাজ করেছে। যার ফলে কয়েকটি বিশেষ জায়গা স্বাভাবিকতাকে থিতু হতে দেয়নি। এই সব ত্রুটি খুব প্রকট নয়, তবু তাকে কাটিয়ে ওঠাই ভাল।

বেশ কিছু কাজ জল রং ও বিধৌত পদ্ধতির। দেশি হ্যান্ডমেডে যে কাজ করেছেন এই পদ্ধতিতে, মানানসই হয়নি। ওয়াশ টেকনিককে ঠিক মতো লালন করার ক্ষেত্রে কাগজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা তার পৃষ্ঠতলের মসৃণতা বা রুক্ষতার উপরেই রঙের প্রয়োগ নির্ভর করে। এই পাল্প বা আঁশ রঙকে ধরে রাখা ও তার চরিত্রকে দৃষ্টিনন্দন করার ক্ষেত্রে যেহেতু বিরাট এক ভূমিকা পালন করে, সে ক্ষেত্রে শিল্পীকে সেই করণ-কৌশল না মানলে চলে না। শিল্পী যেখানে কেন্ট পেপারে মাত্র দু’টি কাজ করেছেন, সেখানেই এই পদ্ধতি দারুণ ভাবে লালিত হয়েছে, বোঝা যায়। ডব্লিউ টি কেন্ট দুষ্প্রাপ্য না হলেও সব সময়ে সহজলভ্য নয় ও মূল্যবান বটে। বিদেশি অন্য কাগজেও চেষ্টা করেছেন ধৌত পদ্ধতির দিকটি সামলে সুচারু ভাবে সম্পন্ন করার।

একটি কাজে বাঁশঝাড়ের সামনে লাঠি হাতে দাঁড়ানো কিশোরী, যার অসংবৃত আঁচলে বক্ষ যুগল প্রতিভাত ও বড় বিষণ্ণ চাউনি— এই কৃষ্ণকলির রূপটি বেশ ধরেছেন। স্বচ্ছতোয়া বর্ণের ব্যবহার ছবিকে প্রাণ দিয়েছে। আবার ‘রাধা’র বিষণ্ণতা কেন অত গাঢ়? পদ্ম, জল, গাছের ডালে বাঁধা দোলনায় একাকী সে। শাড়ির ভাঁজে তুলির দ্রুত সঞ্চালন কেন? এই ভাঁজ বা পরত রেখায় সম্পূর্ণ হয় না, ছায়াতপের মধ্যেও ঘনত্ব না থাকায় একটু সমতল। ‘ওয়াটার লিলি’তে পৃথুলা নারীর লাবণ্য শরীরের ভারে কিছুটা ব্যাহত। রচনা ও কাজ হিসেবে যদিও বেশ। তবে ‘ব্লুমিং’-এর বর্ণ বিশ্লেষণ ও টেকনিক অনবদ্য। দারুণ নরম বর্ণের শুকনো আবহে সতেজ কুঁড়ি ও পদ্মপাতার বিস্তার বিন্যাসের দিক থেকে চমৎকার। মাঝের সাদা প্রস্ফুটিত পুষ্প ও পদ্মের পাপড়ি রেখা ও ছায়াতপের মাধ্যমে রাখলে আরও দৃষ্টিনন্দন হত। কোথায় রেখাপ্রধান হওয়া চলে, কোথায়ই বা ছায়াতপের প্রয়োজনীয়তা, সেই সিদ্ধান্ত অবশ্যই এই মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ।

সিল্কের উপরে করা ‘টাচি’ এক কথায় অসাধারণ! ধূসর মোনোক্রোমে উস্কোখুস্কো চুলের ও বিবর্ণ মুখের করুণ চাউনিতে ড্রয়িংয়ের অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও দারুণ ভাল কাজ।

সবই প্রায় নারীকেন্দ্রিক ছবি। চাহিদা অনুযায়ী স্পেসের অভাব ও প্রয়োজনের বেশি কাজও পটে লক্ষ করা যায়। তবু প্রদর্শনীটি নিঃসন্দেহে ভাল মানের।

Art exibition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy