জি ডি বিড়লা সভাঘরে সংস্কৃতি সাগর ও দ্য ড্রিমার্সের যৌথ উদ্যোগে শ্যামসুন্দর কোম্পানি জুয়েলার্স নিবেদন করেছিল সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্করের গানজীবনের উদ্যাপন ‘৩০টি বৃষ্টি’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। রূপঙ্করের একক পরিবেশনা। আলাপচারিতায় ছিলেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের বিন্যাস, গান, নির্বাচন, উপস্থাপনা... সবক’টি ক্ষেত্রেই তিনি সে দিন ছিলেন ব্যতিক্রমী।
রূপঙ্কর শুধু বেসিক গানেই নয়, সিনেমার গানেও অগ্রগণ্য। তাঁর এক-একটি গানে এসেছে জ্যাজ় সঙ্গীতের ছোঁয়া। গানের বাঁধুনিতে যুক্ত হয়েছে কোমল স্বরগ্রামের মূর্ছনা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরও উন্মোচিত হয়েছে তাঁর ভাবপ্রকাশ।
অনুষ্ঠান শুরু হয় সুজয়প্রসাদের কবিতার রেশ দিয়ে— ‘বৃষ্টির কথা থাক, আকাশের কথা থাক, বিরহের কথা বলি’। রূপঙ্কর গাইলেন ‘রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি’। ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনালেন সুজয়প্রসাদ, যা মন ছুঁয়ে গেল। সেই কবিতার কথাগুলির অনুষঙ্গেই রূপঙ্কর গাইলেন রবীন্দ্রগান ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’। এই গানটিতে পিয়ানোর ব্যবহার একটি বিশেষ আবহ সৃষ্টি করেছিল।
পাঠে সুজয়প্রসাদ।
‘জাতিস্মর’ চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘এ তুমি কেমন তুমি’ গানটির নেপথ্যকাহিনি সুজয়প্রসাদের সঙ্গে শিল্পীর কথোপকথনে জানা গেল। এই গানের সঙ্গে আলোর ব্যবহার খুব সুন্দর। শিল্পী এর পর পরিবেশন করলেন কবীর সুমনের গান ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়’। গানের সঙ্গে হারমনির অংশটি শুনতে ভাল লাগে। ‘শাওন রাতে যদি’ গানের ভাব হৃদয় স্পর্শ করে।
রূপঙ্কর গাইলেন ‘প্রিয়তমা’, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে ও সৈকত কুণ্ডুর কথায় ‘ঝিরিঝিরি বৃষ্টিধারায়’। দু’টি গানই সুগীত। ভাল লাগে ‘রিমঝিম ঝিম বৃষ্টি’-র সঙ্গে মহিলা সহশিল্পীদের কণ্ঠে তালাত মাহমুদের গাওয়া ‘এই রিমঝিম ঝিম বরষা’। গান দু’টি মিশিয়ে গাওয়াতে বেশ নতুনত্বের ছোঁয়া লাগে। ‘না, তুই আমার হবি না’ গানটির উপস্থাপনা অনবদ্য (ছায়াছবি ‘অযোগ্য’)। ‘ঝিরিঝিরি বৃষ্টিধারায়’ গানটির সঙ্গে সুজয়প্রসাদের কবিতার সংযোজন ও গানের ব্যঞ্জনা শ্রোতাদের যেন সিক্ত করে। এই গানে পিয়ানোর ব্যবহার অনবদ্য। প্রথমার্ধের শেষ ভাগে রূপঙ্কর গাইলেন সলিল চৌধুরীর বিখ্যাত গান ‘এই রোকো, পৃথিবীর গাড়িটা থামাও’। এই গানের সঙ্গে হারমনি শুনতে ভাল লাগে।
সুদীর্ঘ তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠানে রূপঙ্কর গাইলেন ‘এই মেঘলা দিনে একলা’, ‘গভীরে যাও’, ‘চলে যাও দূরে দূরে’, ‘আজ শিউলি ফোটার দিন’, ‘মেঘ নেমে এল জানালার কাছে’, ‘তোমার টানে সারাবেলার গানে’, ‘ও চাঁদ’, ‘বাড়লে বয়স সবাই মানুষ হয়’। অনুষ্ঠানের শেষে শিল্পী গাইলেন স্বরচিত গান ‘আজ শ্রাবণের বাতাস’। সার্থক উপস্থাপনা। শ্রোতারা আবিষ্ট হয়ে শুনলেন।
রূপঙ্করের গানের মাঝে সুজয়প্রসাদের বাংলা, ইংরেজি কবিতা, উর্দু শায়েরির সংযোজন অনুষ্ঠানটিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। তবে মাঝে মাঝে মাত্রাতিরিক্ত অভিব্যক্তির প্রকাশ আর একটু সংযত হলে ভাল হত। রূপঙ্করের পরিবেশনায় নতুন কথা ও সুরের গান শুনে মনে হয়, আধুনিক বাংলা গানে এখনও আশার আলো রয়েছে। মঞ্চসজ্জা ছিল সুন্দর। পিয়ানোয় সুদীপ, বেস গিটারে সায়ন ও পার্কাশনসে সুমন— প্রত্যেকেরই সাধুবাদ প্রাপ্য। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, সুদীপের পিয়ানোবাদন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)