Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ডিসপ্লের সঙ্গে ভাবনা থাক শিল্পকর্মের গুণাগুণ নিয়েও

তিনটি ছোট ভাস্কর্য-সহ ছোট বড় মাঝারি বেশ কিছু ছবিও এ প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে বেশ বেমানান লেগেছে। এর একমাত্র কারণ, অতি দুর্বল নির্বাচন। আবার কয়েকটি কাজের ক্ষেত্রে তা প্রদর্শনের পক্ষে কতটা গ্রহণযোগ্য বা বর্জনীয়— তা মাথায় রেখেই যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, সেই গুরুত্বই কেউ উপলব্ধি করেননি। তাই রং ছিল, কিন্তু সিম্ফনি সে ভাবে বাজেনি!

রঙিন: সিম্ফনি ইন কালারসের প্রদর্শনী

রঙিন: সিম্ফনি ইন কালারসের প্রদর্শনী

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ১০:০০
Share: Save:

অপ্রতুল পরিসরে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের প্রধান সমস্যা কাজগুলির নির্বাচন ও সংখ্যার নির্দিষ্টতা। শিল্পী বা শিল্পীদল মুশকিলে পড়ে যান কোন কাজ রাখা যাবে এবং সংখ্যায় কতটা— তা নিয়ে। একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা, তার যাবতীয় খুঁটিনাটির সঙ্গে লেগে থেকে তা সম্পন্ন করা যথেষ্ট পরিশ্রমসাপেক্ষ শিল্পী মাত্রই জানেন। ‘সিম্ফনি ইন কালারস’-এর ছোট্ট প্রদর্শনীটি কিছু বিষয়কে সঠিক ভাবে সামলাতে পারেনি। প্রদর্শনীতে ডিসপ্লে একটা বড় ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গেই ক্যাটালগ বা ফোল্ডার। শিল্পকর্মের পরিচিতি অসম্পূর্ণ না রেখে, ডিসপ্লে অবিন্যস্ত ভাবে ছেড়ে না দিয়ে, পাঁচ জন শিল্পীর পক্ষে এই ছোট্ট প্রদর্শনীটি কি আরও সুচারু ভাবে সাজানো যেত না? ক্যানভাস বা অন্য ছবির নির্বাচন ও প্রয়োজনীয় মাপ অনুযায়ী আরও ভাল ভাবে ডিসপ্লে করাই যেত। কাজের বাহুল্য ও মান— দু’টি ক্ষেত্রেই অসঙ্গতি চোখে পড়েেছ।

তিনটি ছোট ভাস্কর্য-সহ ছোট বড় মাঝারি বেশ কিছু ছবিও এ প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে বেশ বেমানান লেগেছে। এর একমাত্র কারণ, অতি দুর্বল নির্বাচন। আবার কয়েকটি কাজের ক্ষেত্রে তা প্রদর্শনের পক্ষে কতটা গ্রহণযোগ্য বা বর্জনীয়— তা মাথায় রেখেই যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, সেই গুরুত্বই কেউ উপলব্ধি করেননি। তাই রং ছিল, কিন্তু সিম্ফনি সে ভাবে বাজেনি!

অলোক রায় একটি বড় ও বেশ কিছু ছোট ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকে কাজ করেছেন। ওঁর ব্রাশিং ও নানা রকম রূপবন্ধ দিয়ে স্পেস সাজানোর একটা প্রক্রিয়া কাজ করেছে। এখানে দেখতে হবে, পটের পরিসর অনুযায়ী অনুষঙ্গের বিবিধ ব্যবহারের অবস্থান চিত্রের ভারসাম্য নষ্ট করছে কি না। যত্রতত্র ফর্মকে ছড়াতে থাকলে কিন্তু কম্পোজ়িশন ব্যাহত হয়, অলোককে এ কথা বুঝতে হবে। যদিও তাঁর প্রয়োগ-কুশলতা মন্দ নয়। বর্ণের ছায়াতপে একটা স্নিগ্ধতাও কাজ করেছে। কিন্তু যেখানে যেখানে তবুও ‘এয়ারি স্পেস’-এর চাহিদা তৈরি হচ্ছে, সেখানেই রূপবন্ধের অনাবশ্যক বাহুল্য সেই স্পেসকে খর্ব করেছে। এ ক্ষেত্রে কম্পোজ়িশন, অ্যারেঞ্জমেন্টের সঙ্গে চিত্রপটের ব্যালান্সের কথাও মাথায় রাখতেই হবে। ছবি অনেক সময় অকারণেই জটিল হয়ে যায়। কার্পণ্য নয়, সময় ও জায়গা মতো তাই থামতে হয়। আর একটু সরলীকরণের কথা এ বার ভাবা প্রয়োজন। কেননা অলোকের কাজ কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে আকর্ষণীয়।

তনিমা ভট্টাচার্যের জলরং এত দুর্বল কেন? পেন্টিং ও ইলাস্ট্রেশনের বিষয় বুঝতে হবে। ছবির প্রধান বিষয়ের সঙ্গে পরিস্থিতির পারিপার্শ্বিকতাকে কতটা পেন্টিংযোগ্য করা যায়, এই ভাবনা কাজ করেনি। বড্ড কাঠিন্য, একটা আবহে সবই যেন কী রকম শিক্ষানবিশের মতো হয়ে গিয়েছে। আসলে জলরঙের ব্যবহার সম্পর্কে হাতে-কলমে আরও ওয়াকিবহাল না হলে, রং মেশানো বা রং চাপানোর সঠিক টেকনিক অনায়ত্তই রয়ে যায়। ছবিকেও সে ভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায় না। শিল্পীর কাজে চেষ্টা থাকলেও তাই আগে এগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা দরকার।

জয়ন্ত সরকার নিজস্ব একটি স্টাইল তৈরি করতে গিয়ে যে সব জায়গায় আটকে গিয়েছেন, সেখানেই ছবিকে সম্পূর্ণ করেছেন। কেন? পটে অনেক সুযোগ তৈরি করেও তাই হঠাৎ যেন ছবি থেকে হারিয়ে গেলেন তিনি। ওঁর পশুরা অমন অনির্দিষ্ট কেন? অথচ কম্পোজ়িশনে তাদের বিন্যস্ত করার বেশ কিছুটা সুযোগ ছিল— অন্তত অবস্থানগত ভাবে ও প্রয়োজনীয় কিছু নতুন রূপবন্ধ ব্যবহার করে। রং সীমিত ও আপাতউজ্জ্বল, কিন্তু শুধু অস্পষ্ট উচ্চারণেই যেন ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ!’

একমাত্র ভাস্কর সৌমেন পাল। ব্রোঞ্জের সরু পাকানো দড়ির মতো অজস্র জটিল এবং নির্দিষ্ট কিংবা অনির্দিষ্ট ফর্মেশনে বুদ্ধমুখের নানা মায়াজাল তৈরি করেছেন। ভিতরের শূন্যতা ও বহিরঙ্গের প্যাঁচানো ছড়ানো কায়দার ওই একঘেয়েমি কিন্তু ভাস্কর্য হিসেবে মার খাচ্ছে। তুলনায় ব্রোঞ্জের ট্রাম্পেটের উপরে উল্লাসরত একগুচ্ছ মানব অদ্ভুত এক ধরনের মজা উদ্রেক করছে। যদিও এর মানে স্পষ্ট নয়। নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্রকে সমন্বয় করেছেন হয়তো। অথচ খুব সূক্ষ্ম ভাবে ধরে ধরে কাজ করতে গিয়ে গ্রাম্য নিসর্গকে এক ধরনের ডিজ়াইনের মতো করে সাজিয়েছেন স্নেহাংশু দাস। প্রতিটি কাজেই সেই অপার কাঠিন্য ছবির নিহিত শিল্পভাষাকে ভয়ংকর ভাবে আঘাত করেছে।

অতনু বসু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exhibition Art Symphony in Colours
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE