Advertisement
E-Paper

রায়সাহেব বনাম সেন মহাশয়

আমি ক্লাস ওয়ানের ছাত্র। স্কুলের হেডমাস্টারকে বিচার করার আমি কে! আমার সৌভাগ্য, সত্যজিৎ রায় আর মৃণাল সেন, দু’জনের সঙ্গেই কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। ‘ইন্টারভিউ’ করে ১৯৭০-এ দেড় হাজার টাকা পেয়েছিলাম। নট ব্যাড। ‘শাখা-প্রশাখা’য় পাই দেড় লাখ।

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
ছবি: শীতল দাস

ছবি: শীতল দাস

আমি ক্লাস ওয়ানের ছাত্র। স্কুলের হেডমাস্টারকে বিচার করার আমি কে!

আমার সৌভাগ্য, সত্যজিৎ রায় আর মৃণাল সেন, দু’জনের সঙ্গেই কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

‘ইন্টারভিউ’ করে ১৯৭০-এ দেড় হাজার টাকা পেয়েছিলাম। নট ব্যাড। ‘শাখা-প্রশাখা’য় পাই দেড় লাখ। তত দিনে আমার বছর কুড়ির অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছে।

কমপ্যারিটিভলি ইজিও লেগেছিল তখন। একটা সিকোয়েন্স দারুণ ছিল। ওই শেষের দিকে মাথা গরম হয়ে আছে, দাদাদের বলছি, ‘তোমাদের তিনটে বাড়ি, তিনটে গাড়ি আছে বলে ভেবো না তোমরা সব অসাধারণ! আসলে আমরা সবাই খুব সাধারণ! আমরা চিরকাল শুধু নিয়েই এসেছি, দিইনি কিস্যু! তাই আমরা মরে গেলে কেউ আমাদের মনেও রাখবে না!’

শুরুতেই ভেবে নিয়েছিলাম, চরিত্র অনুযায়ী নর্ম্যাল অ্যাক্টিং করব।

যেই বলেছি, মানিকদা একটু যদি দেখিয়ে... উনি গম্ভীর গলায় বললেন, ও ফ্লোরে হয়ে যাবে!

তাও প্রথম দু’দিন একটু নার্ভাস লাগছিল। ওঁর ছবিতে খুব খুঁটিয়ে স্ক্রিপ্টরিডিংটা হত। ওটাই আসল! এত ভাল পড়তেন, দুর্দান্ত ন্যারেশন! ওটা ফলো করলেই নাইনন্টি পার্সেন্ট কাজ হয়ে যেত।

ছবি: সমর দাস

অ্যাক্টরদের অসম্ভব লিবার্টি দিতেন। ফ্লোরে ক্যামেরা রিহার্স করার সময়ে বড়জোর দু’একটা জায়গা রিপেয়ার করে দিলেন।

তুলনায় মৃণালদাকে অসম্ভব খাটতে হয়েছে আমার পিছনে। আমি তখন একেবারে নভিস। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ে স্রেফ কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে আসা!

আমার এক কাকা বিমলচন্দ্র মল্লিক যোগাযোগ করিয়ে দেন। ভেবেছিলাম, দু-একটা ফিল্ম করে ছেড়ে দেব।

শুধু উনি যা যা বলতেন, করে যেতাম। লেকের ধারে স্ক্রিনটেস্ট। মৃণাল সেন বলে চলেছেন, রেগে যাও, প্রচণ্ড রেগে যাও! খিলখিল করে হাসো, অবাক হও! আমিও করে যাচ্ছি। ক্যামেরার পিছনে কে কে মহাজন ছবি তুলে যাচ্ছেন...আই ওয়াজ সিলেক্টেড।

ক্যামেরাকে ফলো করা, কোন দিকে তাকাতে হবে বোঝানো, সব উনি বলে দিতেন! এমন মেমরাইজ করেছিলাম, কিছু ডায়ালগ এখনও মনে আছে!

ওই যে শেষটা যখন ইন্টারভিউ-তে ধুতি পরে কেন গিয়েছি, তাই নিয়ে কমপ্লেন এল! সন্ধেবেলা কাকা এসে বলছেন, কিচ্ছু হবে না! তখন আমার ভেতরের লোকটা বেরিয়ে আসছে।

আমি বলছি, ‘কী রকম একটা ভুয়ো ব্যবস্থার মধ্যে আমাদের থাকতে হচ্ছে। আর এটা আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে’...অ-সাধারণ একটা মুহূর্ত!

মৃণালদার কাছে বকুনিও প্রচুর খেয়েছি। তার মধ্যে দু’দিন সব থেকে ভড়কে গিয়েছিলাম।

একদিন তো পুলিশের সঙ্গে সিন। কোনও ডায়ালগ নেই! অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরকে বলছি, মশাই দেখুন কী হচ্ছে! কিন্তু কেউ কিছু বলছেন না।

শেযটা মৃণালবাবু বললেন, ডায়লগ আবার কী! পুলিশ যা যা জিজ্ঞেস করছে উত্তর দেবে। শুধু একটা জিনিস মাথায় রাখবে, তোমার ইন্টারভিউ আছে। তুমি পালাতে পারলে বাঁচো। ইউ আর ইন আ হারি!

আর একটা সিকোয়েন্সে তো বললেন, হাত-পা নেড়ে যা খুশি বলে যাও! আমি ভাবছি, উনি কি জোক করছেন? তা শেষমেশ মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা— মুখে যা আসে বলে গেলাম। পরে সিনেমায় দেখি, ‘সাউন্ড অফ’ করে দেওয়া হয়েছে। পুরো সিনটা মন্তাজের মধ্যে নেওয়া।

জীবনে এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।

এর দু’বছর বাদে, কার্লোভি ভ্যারিতে বেস্ট অ্যাক্টরের পুরস্কার!

তখনই ডিসিশন নিই, সিনেমাই আমি করে যাব।

(সাক্ষাৎকারভিত্তিক রচনা)

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy