Advertisement
E-Paper

ঠাকুরবাড়ির অন্দরে

যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রবীন্দ্রনাথের টেব‌্‌ল, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আসবাব... শান্তিনিকেতনে সুপ্রিয় ঠাকুরের বাড়ি ঘুরে এসে লিখলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রবীন্দ্রনাথের টেব‌্‌ল, জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আসবাব... শান্তিনিকেতনে সুপ্রিয় ঠাকুরের বাড়ি ঘুরে এসে লিখলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০০:০০

আষাঢ়ে মেঘের পালাই পালাই ভাব। লাল মাটির ভেজা গন্ধে রবিবারের ছেঁড়া মেঘের আলো যেখানে টেনে নিয়ে গেল, সে বাড়ির ছাইপোড়া ইটে ইতিহাসের গন্ধ। সেই গন্ধের নাম ‘শোহিনী’। দিগন্তপল্লি, শান্তিনিকেতন। গেট পেরিয়ে চোখ যায় ঝাউপাতার মোটিফের উপরে কাঠের তৈরি নামফলকের দিকে, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস টেগোর।

পুরো বাড়িটাই তৈরি হয়েছে ইট দিয়ে। যার উপর নেই পলেস্তারার পোচ, আছে ধূসর রঙের প্রলেপ। আর সেখানেই ইতিহাস ছুঁয়েছে বর্তমানকে। আসার সময়ে শান্তিনিকেতনের এক রিকশাওয়ালা বললেন, ‘‘ঠাকুরবাড়ি কিন্তু ইটের।’’

খাওয়ার ঘর

সুপ্রিয় ঠাকুর সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র, তাঁর স্ত্রী শুভ্রার মা গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতনি। সুপ্রিয় আর শুভ্রা ঠাকুরের বাড়ির পুরো কাঠামোটাই দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় খাঁজ কাটা আর্চিংয়ের উপর। সদর দরজা পেরিয়ে বাঁ হাতে লম্বা কাঠের দেরাজ। যেখানে কোথাও যামিনী রায়, তো কোথাও গগনেন্দ্র ঠাকুরের আঁকা ছবি।

রবীন্দ্রনাথের লেখার টেব্‌ল

দেশ-বিদেশের ঘর সাজানোর ছোট ছোট জিনিস, পরিবারের ছবি... দিয়ে কাঠের র‌্যাক সাজিয়েছেন শুভ্রা ঠাকুর। বসার ঘরের পরদায়ও আছে নতুনত্ব। ‘‘আমার মামার বাড়ি গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার। ছোটবেলা থেকেই অন্য রকম কিছু করার চোখ-মন নিয়ে জন্মেছি। ইটের বাড়িতে কি আর কাপড়ের পরদা চলে? মাদুরের পরদার আইডিয়াটা তখন মাথায় এসেছিল,’’ বললেন শুভ্রা ঠাকুর। কলাভবনের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে করা কাচের জানালায় গাঢ় লাল-হলুদ-সবুজের আঁকিবুঁকি। অন্দরসজ্জার আলোতেও বাংলার মেঠো মেজাজ। বাঁশের টোকা (চাষিরা চাষ করার সময় যে টুপি পরে) উল্টো করে তার তলায় বাল্‌ব দিয়ে তৈরি হয়েছে আলো। ‘‘আমাদের বাইরের ঘর মানেই আড্ডা। তার কথা ভেবেই মেঝে থেকে এক ধাপ উঁচু করে বসার জায়গার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে আনা লম্বা ডিভান, যার পায়ের দিকটা যেন কোনও জন্তুর পায়ের থাবা,’’ আরামকেদারায় বসে বলছিলেন সুপ্রিয় ঠাকুর। তার ঠিক উল্টো দিকে রাখা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পেতলের কমণ্ডলু। বসার ঘরের থেকে ডান দিকে চোখ গেলেই এক ধাপ উঁচুতে খাওয়ার জায়গা।

বসার ঘরের অন্য দিক

এই বাড়িতে বসার ঘর, খাওয়ার ঘর আলাদা করে বোঝাতে মেঝে থেকে এক ধাপ উঁচুতে ফ্লোর তৈরি করা হয়েছে। খাওয়ার ঘর জুড়ে বড় গোল টেব্‌ল, যাকে দু’ভাগ করে নেওয়া যায়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাঁচীর বাড়ি থেকে আনা হয়েছিল ওই টেব্‌ল। রান্নাঘর আর খাওয়ার ঘরের মধ্যে দরজার ব্যবহার না করে, বিদেশি কায়দায় দেওয়ালে আর্চ করে খুলে রাখা হয়েছে। শুভ্রা ঠাকুর উৎসাহ নিয়ে বললেন, ‘‘রান্নাঘরে অতিথি-রসনার ব্যবস্থা করতে করতে আমাকেও তো শুনতে হবে বাইরের ঘরের গল্প। তাই এই ব্যবস্থা।’’

সেই টি সেট

রান্নাঘরের দিকে কাঠের আলমারিতে রান্না ও খাবারের নানা সরঞ্জাম। সেখান থেকেই আশ্চর্য প্রদীপের মতো বেরিয়ে এল ইন্দিরা দেবী চৌধুরানির ছবি দেওয়া টি সেট। দূরে পারিবারিক ছবিতে জ্ঞানদানন্দিনীর কোলে সুপ্রিয় ঠাকুর। একতলার খাওয়ার ঘর থেকে শোওয়ার ঘর আলাদা করা হয়েছে পুরনো পিয়ানো দিয়ে। বাড়ির মধ্য দিয়েই সিঁড়ি। সিঁড়ির ধাপে ধাপে ডোকরার ঘোড়া, পেঁচা ও আরও নানা মুখ। মাঝসিঁড়িতে ছিমছাম গেস্টরুম কটকি পরদায় সেজেছে। তাকে ছাড়িয়ে উপরে যাওয়ার সিঁড়ির দেওয়াল জুড়ে বইয়ের তাক। মনে হবে, বিশ্বলোকের ওখানেই শুরু, ওখানেই শেষ। সে দিক ছাড়ালেই খোলামেলা বারান্দা। পুরো আকাশ দেখার ব্যবস্থা। আর তার উল্টো দিকেই শোওয়ার ঘর। এ বাড়ির প্রতিটি ঘরের সঙ্গেই লাগোয়া বারান্দা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেতের মোড়া, যার উপর পেতলের থালা রেখে, সাইড টেব্‌ল হিসেবে ব্যবহৃত। শোওয়ার ঘরে ঢুকতেই চোখ যায় আয়না দেওয়া কালো টেব্‌লে। ‘‘ওই টেব্‌লেই রবীন্দ্রনাথ লিখতেন,’’ ভেসে এল শুভ্রা ঠাকুরের স্বর।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে আনা সেই ডিভান

বৃষ্টি ততক্ষণে চুপ। সূর্যাস্তের রক্তরশ্মি খাপের ভিতর থেকে তলোয়ারের মতো বেরিয়ে এসেছে...

Home Decor Rabindranath Tagore Tagore Family Furnitures ঠাকুরবাড়ি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy