পত্রিকা: শুনলাম, আজকাল আপনি নাকি একটা নতুন রেজলিউশন নিয়েছেন...
আলিয়া: মানে! (একটু ঘাবড়ে গিয়ে) কী বলুন তো? কে বলল আবার এ সব...
পত্রিকা: বলিউডে কান পাতলে তো সে রকমই শোনা যাচ্ছে। যে আলিয়াকে এক সময় মধ্যরাত অবধি পার্টিতে দেখা যেত, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ রিলিজ করার কয়েক দিন আগে থেকে তিনি নাকি রোজ রাত এগারোটায় ঘুমোতে যাচ্ছেন। আর দিন শুরু করছেন ভোর ভোর...
আলিয়া: ও এটাও শুনেছেন? আমিও শুনেছি। (প্রচণ্ড হেসে) আরে, রোজ এত সকালে উঠি নাকি! আজকাল তো শ্যুটিংয়ে যাচ্ছি বলে এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছি। বহু দিন পর এত ভাল করে সকাল দেখছি। আমি কোনও দিনই আর্লি টু রাইজে বিশ্বাসী নই। তবে হ্যাঁ, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র পর একটা চেঞ্জ এসেছে জীবনে।
পত্রিকা: কী?
আলিয়া: (হেসে) আগের থেকে সত্যিই পার্টি করা কমিয়ে দিয়েছি। অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম, কিন্তু হয়ে উঠছিল না। ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ হওয়ার পর ভাবলাম, চেষ্টা করেই দেখি না। ব্যস। এখন শুধু শ্যুটিং আর বাড়ি। সম্প্রতি নতুন ফ্ল্যাটে শিফট করেছি আমি আর দিদি শাহিন। যখন বাড়ি ফিরি তখন মনে হয়, হাতে যেন সময়ই নেই।
পত্রিকা: সে কী! এত ব্যস্ততা তো...
আলিয়া: (থামিয়ে) বিফোর ইউ ক্যান কমপ্লিট, ইয়েস। কাজের চাপ বাড়ছে। এই দেখুন না, আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একটা বিজ্ঞাপনী শ্যুট করতে যাচ্ছি। এ ছাড়াও ছবির কাজ তো আছেই। সো ইয়েস...নেক্সট কোয়েশ্চেন।
পত্রিকা: গত বছর অবধি আলিয়া ভট্ট বলতেই যে হিরোদের নামগুলো শোনা যেত, সেগুলো এ রকম—বরুণ ধবন, সিদ্ধার্থ মলহোত্র, অর্জুন কপূর। আর আজ আপনার বিপরীতে শাহরুখ খান। তার মানে আলিয়া ভট্ট তাঁর আসল ‘জিন্দেগি’ খুঁজে পেয়েছেন...
আলিয়া: (হেসে) আমি তো বহু দিন থেকেই শাহরুখের সঙ্গে কাজ করতে চাইছিলাম। এবং, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ সেই সুযোগটা করে দিল। আমি শাহরুখের সঙ্গে আরও অনেক ছবি করতে চাই। ওঁর কাছ থেকে যা শিখেছি, সেটা আমার কাছে বিরাট একটা এক্সপেরিয়েন্স।
ইয়েস, জিন্দেগি এখন বেশ ভাল। তবে আমার মনে হয়, নিজেকে নিয়ে এত নাচানাচি করার এখনও কিছু হয়নি। কী এমন করেছি আজ অবধি!
পত্রিকা: যাঁর এ বছর সব ছবি হিট, ঝুলিতে সেরার পুরস্কার, তাঁর এ রকম উত্তর! একটু বেশি বিনয় হয়ে গেল না?
আলিয়া: একদমই না। ছোটবেলা থেকে যে হেতু এই ইন্ডাস্ট্রিতেই বড় হয়েছি, তাই আমি জানি, নিজেকে নিয়ে নাচানাচি করাটা ঠিক নয়। তোমার কাজ পছন্দ না হলেও, পরিচিত লোকজন তো আর কেউ খারাপ কথা বলবে না, তাই শেষ কথা বলবেন সেই দর্শক। আর আমি আজও কোনও দর্শকের কাছ থেকে সে রকম প্রশংসা পাইনি। সুতরাং, কিছুই যে হয়নি সেটা বুঝতে পারছি। তাই প্লিজ, ‘আলিয়া হ্যাজ অ্যারাইভড’ ওই জাতীয় কথাবার্তা বলবেন না। জানেন, আমাকে বাবা (মহেশ ভট্ট) বলে যে, মাথার ভিতর একবার খারাপ-ভালর ভাবনা ঢুকে গেলে সেটা অভিনয়ে এফেক্ট করে। তাই ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ মুক্তির তিন দিন পরে ছবিটা থেকে মেন্টালি সরিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে। মনে হতো, এই যদি কেউ বলে, দারুণ হয়েছে, তা হলে তো মুশকিল! আরে ভাই, উড়ছ ওড়ো, বেশি হাওয়ায় ভেসো না।
বেশি ভাসলে আমার মতো ইমোশনালদের মুশকিল হয়ে যায়! (হাসি)
পত্রিকা: কিন্তু ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র কায়রাকে দেখে তো ইন্ডাস্ট্রির অনেকে আলিয়ার সঙ্গে বিরাট কোহালি-র মিল খুঁজে পাচ্ছে। যিনি সবার সামনে কাজ নিয়ে ভাবলেশহীন, অথচ মাঠে নামলেই প্রচণ্ড আগ্রাসী...
আলিয়া: (হেসে) এ সব আবার কে বলল? তবে বিরাটের আগ্রাসী মনোভাবটা আমার দারুণ লাগে। সেই জন্যই বোধহয়, ও এতটা ইন্সপায়ার করে। স্বীকার করি বা না করি, আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু বিশেষ কিছু মানুষের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড হই। অনেক কিছু শিখি, এবং বাঁচার রসদও পাই। আমার কাছে বিরাট সে রকমই এক চরিত্র। হতে পারে ওকে আমি খুব ভাল করে চিনি না, কিন্তু ওকে দেখে আমিও ইন্সপায়ার্ড হয়েছি, যেটা অন্য কেউ করতে পারেনি।
পত্রিকা: সে কী! ডক্টর জাহাঙ্গির খানও নন?
আলিয়া: (একটু উত্তেজিত হয়ে) না। আমার যে বাস্তবে কোনও ডক্টর জাহাঙ্গির খান-ই নেই! মন খারাপ হলে মা আছে, শাহিন আছে, ওদের কাছেই ছুটে যাই। তবে একটা কথা না বলে পারছি না।
পত্রিকা: কী?
আলিয়া: জাহাঙ্গির খান না থাকলেও আমার একজন খান আছে। শাহরুখ খান। ও সব সময় একজন জুনিয়রকে প্রচণ্ড হেল্প করে। ওর কাছে যেমন অভিনয় শেখা যায়, ডায়ালগ বেটার করা যায়, ঠিক তেমনই সব সময় বড় দাদার মতো ওকে পাশেও পাওয়া যায়।
পত্রিকা: আচ্ছা, শুনেছি, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র কায়রার সঙ্গে নাকি আপনার অতি পরিচিত একজনের প্রবল মিল। কায়রার মতো তিনিও প্রফেশনালি অত্যন্ত সফল, কিন্তু ডিপ্রেশনে ভোগেন..
আলিয়া: হুমম। আমার মতে এই চরিত্রটার সঙ্গে আমার দিদি শাহিনের বেশ মিল আছে। (একটু থেমে) ও নিজে অসাধারণ স্ক্রিপ্ট রাইটার। কিন্তু সেই তেরো বছর বয়স থেকে ডিপ্রেশনে ভোগে। পরিচালক গৌরী শিন্ডে যখন আমাকে স্ক্রিপ্টটা প্রথম শোনাল, আমার হঠাৎ মনে হয়েছিল আরে এটা তো শাহিনের গল্প...ওর মতো একজন ছটফটে, ফান –লাভিং মেয়ে যে মনের অসুখে ভুগতে পারে, তা কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সেটাই সত্যি। ছবিটা করার আগে আমি শাহিনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম চরিত্রটা নিয়ে। যেহেতু আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি দু’জনেই দু’জনের দুঃখগুলো বুঝতে পারি। এবং সেই কারণেই ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র আসল কায়রার নাম শাহিন ভট্ট। আচ্ছা, এই নিয়ে আর নাই বা কথা বললাম...
পত্রিকা: আজকাল কি মনে হয় যে, এত দিন যারা আপনাকে শুধু মহেশ ভট্ট-র মেয়ে বলে চিনত, তাদের কাছে অভিনেত্রী আলিয়া অনেক বেশি পরিচিত...
আলিয়া: (একটু থেমে) সেটা কিছুটা স্বাভাবিক। আমারও মনে হয়, নিজের পরিচিতি হওয়াটা খুব দরকার। একটা সময়ের পর, শুধু মহেশ ভট্টর মেয়ে এই পরিচয়টুকু একটু সমস্যার। তবে, ওই যে আগে বললাম, আমি কিন্তু এখনও এতটাও বড় হইনি যে নাচানাচি করতে হবে।
পত্রিকা: আপনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বারবার মনে হচ্ছে, তেইশ বছরের এমন এক মেয়ের সঙ্গে কথা বলছি, যে জানে সে-ই এ বছর পরীক্ষায় ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল, কিন্তু সেটা মানতে নারাজ...
আলিয়া: (হেসে) বছরের শুরুতে তো ভাবিনি যে, এই বছর সব ছবি হিট হবে। তাই... (একটু থেমে) আর কয়েকটা ভাল কাজ করেছি মানেই, সব ভাল হবে, তেমন কোনও কথা নেই। ভাল ব্যাটসম্যান, ভাল অভিনেতারও একটা ম্যাচ খারাপ হতে পারে। আমি বোধহয় একটা কারণেই অন্যদের থেকে একটু আলাদা। কখনও এক চরিত্র রিপিট করি না। এক রকম দৃশ্য বা ডায়ালগ থাকলে সেই ছবি এড়িয়ে চলি। ও সব বাদ দিন। একে কাজ তার ওপর বাড়ির চাপ। আর বেশি ভাবতে পারছি না।
পত্রিকা: কী বলছেন! বাড়ির চাপ?
আলিয়া: (খুব হেসে) আরে, নিজের টাকায় নতুন ফ্ল্যাট কিনেছি। ডিমনিটাইজেশনের বাজারে একা হাতে সেটা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। বাড়িতে মা-বাবা আছে। সেটে পরিচালক আছে, শাহরুখের মতো সিনিয়র আছে। সব কিছু সামলে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট লোকজন। কিন্তু এখানে তো শুধু আমি আর শাহিন। একবার অবস্থাটা ভাবুন তো!
শুটিং সেরে বাড়ি ফিরেই রান্না করতে কিচেনে ছুটছে হিরোইন। লোকে শুনে ভাববে নির্ঘাৎ মিথ্যে বলছে, কিন্তু আমাদের ফ্ল্যাটে এলে দেখবেন, আলিয়া সত্যিই এ সব করছে এখন। মায়ের সঙ্গে থাকার সময় বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখানে তো আমি-ই প্রোডিউসার, আমিই অভিনেত্রী আবার আমিই ডিরেক্টর। কী যে চাপ...
তবে একটাই মজার ব্যাপার। সেটে সবাই আমাকে ছোট বলে মজা করে, এখানে কিন্তু আমিই বস! (হাসি) তবে কী জানেন সব দিকটা সামলানো কিন্তু খুব কঠিন। আচ্ছা, শ্যুটিং শুরু হল বলে। লাস্ট কোয়েশ্চেন...
পত্রিকা: বছর শেষের পার্টিতে এ বারের থিম সংটা কী, অ্যায় জিন্দেগি গলে লগা লে?
আলিয়া: (জোরে হেসে) পার্টি করব কিনা সেটাই তো জানি না। তবে চাই এ রকম একটা সুন্দর বছর ফিরে আসুক। বার বার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy