সামনে একের পর এক সবুজ পাহাড়ের ঢাল। উপরে নীল আকাশ। শহরের দূষিত বাতাস এখনও আকাশ ছোঁয়েনি। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে। এমনই এক জায়গায় এসে কিছু ক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিলেন। তখনই উঠল তাঁর ছবি। কথা হচ্ছে, বলিউড তারকা হৃতিক রোশনকে নিয়ে। হাতে লাঠি নিয়ে পাহাড়ি দৃশ্য উপভোগ করছেন তিনি। মাথায় টুপি, পিঠে ব্যাগ, কোমরে জ্যাকেট, পোক্ত জুতো। নায়কের সাজে স্পষ্ট, তিনি পাহাড়ে ট্রেক করছেন। আর ক্যাপশন পড়ে বোঝা গেল, উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে গিয়েছেন তিনি।
ট্রেকিংয়ে বলিউড তারকা হৃতিক রোশন। ছবি: সংগৃহীত।
হৃতিকের মতো আপনিও ট্রেকিং জুতোয় পা গলিয়ে নিতে পারেন। এই শীতে বা আগামী বসন্তের জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে পারেন। উপভোগ করতে পারেন উত্তরাখণ্ড থেকে হিমালয়ের বিশালতাকে। এমনই ৩টি ট্রেকিং রুটের সন্ধান দেওয়া হল—
আরও পড়ুন:
দেওরিয়া তাল: উত্তরাখণ্ডের গাড়ওয়াল হিমালয়ের বুকে অপরূপ এক হ্রদ। স্বচ্ছ জলে পাহাড় আর গাছের ছায়া পড়ে আরও মায়াবী হয়ে থাকে ছোট্ট উপত্যকা। বরফে ঢাকা চৌখাম্বা শ়ৃঙ্গ সেখান থেকে দৃশ্যমান। হরিদ্বার থেকে গাড়ি নিয়ে রুদ্রপ্রয়াগ হয়ে চোপতায় পৌঁছোন। তার পর উখিমঠ পেরিয়ে সারি গ্রাম পর্যন্ত গাড়িতে করে পৌঁছে যান। তার পর শুরু হবে পায়ে হাঁটার পালা। প্রয়োজনে চোপতা বা সারিতে রাত কাটিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু ভোর ভোর হাঁটা শুরু করলে ভাল দেওয়ারিয়া তালের জন্য। ২.৫ কিমি চ়ড়াই রাস্তা পেরিয়ে প্রায় ৭,৯৯৯ ফুট উচ্চতায় দেওরিয়া তালে পৌঁছোতে হয়। রাস্তা কোথাও মসৃণ, কোথাও আবার ঝুরো পাথরে ভরা। বৃষ্টির পর পরিস্থিতি খানিক খারাপ হতে পারে। কিন্তু ঘন জঙ্গল আর পাহাড় দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে। হাঁটার পাশাপাশি ঘোড়ায় চেপে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে। পথের শেষ বাঁকে পৌঁছোনোর আগেও বোঝা যায় না, কোন বিস্ময় লুকিয়ে রয়েছে মোড় ঘুরলে। তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, টয়লেট-টেন্টের বন্দোবস্ত রয়েছে দেওরিয়া তালে। শীতের সময়ে বরফে চারদিক ঢেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েই যাওযা উচিত। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা উপভোগ করতে চাইলে দেওরিয়া তাল ভাল বিকল্প।
দেওরিয়া তাল ট্রেক। ছবি: সংগৃহীত।
কেদারকণ্ঠ: বান্দরপুছ-সহ হিমালয়ের একাধিক শৃঙ্গ দেখতে দেখতে কেদারকণ্ঠ ট্রেক সেরে আসুন এই শীতে। ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামিক ভিউয়ে পাহাড়ের রূপ দেখতে দেখতে কেদারকণ্ঠ পৌঁছে যেতে পারবেন। ১২,৫০০ ফুট উচ্চতার কেদারকণ্ঠ চূড়ায় পৌঁছে সেখান থেকে হিমালয়ের একাধিক শৃঙ্গ দেখতে পাবেন। দেহরাদুন থেকে ৭ ঘণ্টা দূরে সাঙ্করি গ্রাম থেকেই সাধারণত শুরু হয় ট্রেকটি। ২০ কিমি রাস্তা পেরোতে আপনার হাঁটার গতিবেগের উপর নির্ভর করে ৩ থেকে ৬ দিন মতো সময় লাগবে। শীতের সময়ে রাস্তা আপাদমস্তক বরফাবৃত থাকবে। তাই সমস্ত বন্দোবস্ত করেই যাওয়া উচিত। কিন্তু শীতের অবিশ্বাস্য দৃশ্য উপভোগ করতেই অনেকে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কেদারকণ্ঠে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
কেদারকণ্ঠ ট্রেক। ছবি: সংগৃহীত।
ব্রহ্মতাল: বরফাবৃত রাস্তায় ট্রেক করার শখ যাঁদের, তাঁরা শীতের সময়ে ব্রহ্মতাল লেক ঘুরতে যান। ১২,২০০ ফুট উচ্চতার এই হ্রদ থেকে ত্রিশূল এবং নন্দাঘুন্টি পর্বত দৃশ্যমান। চামোলি জেলার এই ট্রেকপথ রডোডেনড্রন এবং ওক গাছে ভর্তি। তুষারাবৃত শৈলশিরার মাঝখান দিয়ে ১৩ কিমি রাস্তা পেরিয়ে ৩ দিনে পৌঁছোনো যায় ব্রহ্মতালে। রাতে সেখানে থাকতে পারেন, আবার কেউ কেউ নেমেও আসেন। কাঠগোদাম হয়ে লোহাজংয়ে পৌঁছে ট্রেক শুরু করতে হবে।
ব্রহ্মতাল ট্রেক। ছবি: সংগৃহীত।