Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ওটিজি বনাম মাইক্রোওয়েভ আভেন

বেকিংয়ের জন্য কোনটা ভাল? কেনার আগে কী কী দেখে নেবেন? রইল তারই খুঁটিনাটিকেক, কুকিজ় মাইক্রোওয়েভ আভেনে তৈরি করা যায় ঠিকই। তবে তার জন্য দরকার কনভেকশন মোড। কিন্তু ওটিজিতে বানানো যায় দারুণ সব কেক, কুকিজ়। তাই ওটিজি না মাইক্রোওয়েভ আভেন— রইল হাজারো খুঁটিনাটি।

রূম্পা দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

ঊর্মির বহু দিনের শখ ব্রাউনি বেক করার। তাই সে মাইক্রোওয়েভ আভেন কিনেছিল বেকিংয়ের জন্য। কিন্তু তার কেনা সাধারণ মাইক্রোওয়েভ আভেনে ভাল ব্রাউনি কিছুতেই তৈরি হয় না। তাই তার বেজায় মনখারাপ। আসলে কোনও কিছু কেনার আগেই দরকার, সেই জিনিসটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা। কেক, কুকিজ় মাইক্রোওয়েভ আভেনে তৈরি করা যায় ঠিকই। তবে তার জন্য দরকার কনভেকশন মোড। কিন্তু ওটিজিতে বানানো যায় দারুণ সব কেক, কুকিজ়। তাই ওটিজি না মাইক্রোওয়েভ আভেন— রইল হাজারো খুঁটিনাটি।

ওটিজি

আভেন-টোস্টার-গ্রিলারকে সংক্ষেপে বলা হয় ওটিজি। পুরনো ট্র্যাডিশনাল আভেনের ছোট রূপকেই বলা চলে ওটিজি।

রান্নার মাধ্যম: ওটিজির মধ্যে উপরে ও নীচে থাকে কয়েল। কয়েল উত্তপ্ত হয়ে খাবার গরম করে রান্না করে। কেক বেক করার সময়ে দু’দিকের কয়েল গরম করাই প্রয়োজন। আবার গ্রিল করার জন্য শুধু মাত্র উপরের কয়েল উত্তপ্ত করলেই যথেষ্ট।

কী কী করা সম্ভব: গ্রিলিং, টোস্টিং ও সর্বোপরি বেকিংয়ে ওটিজির জুড়ি মেলা ভার। মুচমুচে কুকিজ় থেকে শুরু করে তুলতুলে কাপকেক... সবই ওটিজিতে তৈরি করা যায়।

অ্যাকসেসরিজ়: বেকিং ট্রে, ক্রাম্ব ট্রে, রোটিসরি রড সেট, টং, ওয়্যার র‌্যাক... যাবতীয় সব জিনিসই পাওয়া যাবে ওটিজির সঙ্গে।

সময় ও বিদ্যুৎ খরচ: ওটিজিতে খাবার ঢুকিয়ে দিলেই রান্না করা যায় না। কারণ, তার প্রি-হিট করার প্রয়োজন হয়। কিছু সময় ধরে

প্রি-হিট করার পরে আভেনে খাবার ঢুকিয়ে রান্না করা যায়। প্রি-হিট এবং রান্না করতে বেশ খানিক সময় লাগে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ অনেক বেশি পোড়ে ওটিজিতে।

ব্যবহারের উপায়: সাধারণত ওটিজিতে তাপমাত্রা, মোড ও সময় মাপার জন্য তিন ধরনের নব থাকে। টেম্পারেচার নবে থাকে ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত দাগ।

কিপ ওয়ার্ম, ব্রয়েল, রোটিসরি, টোস্ট, বেক— সাধারণত এই পাঁচ ধরনের মোড থাকে বেসিক ওটিজিতে। কিপ ওয়ার্ম মোডে খাবার গরম রাখা যায়। অথবা খাবার ওটিজিতে রান্না করার পরে হয়তো পরিবেশন করতে আধ ঘণ্টা দেরি আছে। তখন সেটি ওটিজিতে রেখে কিপ ওয়ার্ম মোড চালু করতে পারেন। ব্রয়েলের মাধ্যমে গ্রিল করা যায়। রোটিসরি মোড কাজে আসে রেস্তরাঁসুলভ তন্দুরি, বারবিকিউ করতে। টোস্ট মোডের কাজ সকলেরই জানা। বেক মোডে কেক, কুকিজ়... সব কিছু বেক করা যায়।

শেষ নবটি সময়ের। শূন্য থেকে শুরু করে ৯০ মিনিট পর্যন্ত দাগ থাকে এই মোডে। হতেই পারে যে, কোনও রান্না করতে দু’ঘণ্টা অর্থাৎ ১২০ মিনিট সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে ৯০ মিনিট পর্যন্ত রান্না করা হয়ে গেলে আবার নব ৩০ মিনিট অবধি ঘুরিয়ে নিয়ে টাইম সেট করতে হবে।

মাইক্রোওয়েভ আভেন

মাইক্রোওয়েভ আভেনে কোনও কয়েল থাকে না। এই ধরনের আভেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও যুগোপযোগী হয়ে উঠেছে।

রান্নার মাধ্যম: মাইক্রোওয়েভ হল এক ধরনের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ। এই ওয়েভের মাধ্যমেই আভেনে খাবার রান্না করা হয়।

কী কী করা সম্ভব: প্রাথমিক ভাবে খাবার গরম, ডিফ্রস্ট করাই ছিল মাইক্রোওয়েভ আভেনের কাজ। কয়েক সেকেন্ডে কাজ করায় এই আভেনের জুড়ি মেলা ভার। তবে এখন উন্নত ধরনের আভেনও পাওয়া যায়। যেমন কনভেকশন মাইক্রোওয়েভ আভেন। এতে নানা ধরনের মোড সেট করে ভাত সিদ্ধ থেকে কেক বেকিং... সব সম্ভব।

অ্যাকসেসরিজ়: গ্লাস টার্নটেবল, বেকিংয়ের জন্য শর্ট মেটাল র‌্যাক, গ্রিলিংয়ের জন্য হাই মেটাল র‌্যাক দেওয়া হয় আভেনের সঙ্গে।

সময় ও বিদ্যুৎ খরচ: মাইক্রোওয়েভ আভেনে রান্না হয় ঝটপট। এমনকি ডিম (১টি), ময়দা (৩ চামচ), মাখন (১ চামচ), চিনি (স্বাদ মতো) একসঙ্গে মিশিয়ে কফি মাগে ভরে আভেনে ঢুকিয়ে দিতে পারেন। মাত্র দু’মিনিটে তৈরি হয়ে যায় মাগ কেক! বিদ্যুতের খরচও কম হয়।

ব্যবহারের উপায়: প্রাথমিক ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায় এই আভেন— সোলো, মাইক্রোওয়েভ কাম গ্রিল ও কনভেকশন বা কম্বিনেশন। সোলো আভেনে রান্না, হিট ও ডিফ্রস্ট করা যায়। মাইক্রো কাম গ্রিলে আগের কাজগুলির সঙ্গেই করা যায় গ্রিল। কনভেকশনে আবার বেকও করা যায়।

হাই, মিডিয়াম, লো পাওয়ার, ডিফ্রস্টিং, অটো মেনু ছাড়াও বহু মাইক্রোওয়েভ আভেনে ডিরেক্ট মেনু থাকে। অর্থাৎ সব উপকরণ মিশিয়ে প্লেটে করে ঢুকিয়ে দিলেই হল। তার পরে অটো মেনু প্রেস করলে পদ তৈরি হয়ে যাবে। তবে কনভেকশনে রান্না তৈরি করা গেলেও তুলনামূলক ভাবে ওটিজিতে তৈরি পদের স্বাদ বেশি ভাল হয়। কিন্তু অল্প সময়ে, তাড়াতাড়ি রান্না করার জন্য মাইক্রোওয়েভ তুলনাহীন।

কেনার আগে: এ বার নিশ্চয়ই বোঝা সহজ যে, আপনার প্রয়োজন কী আর মাইক্রোওয়েভ আভেন বা ওটিজির মধ্যে কোনটা বেছে নেবেন। সহজ কথায়, যদি এমন খাবার রান্না করতে চান, যা পাল্লা দিতে পারে রেস্তরাঁর পদকেও, তা হলে ওটিজি কেনাই শ্রেয়। আবার চটজলদি সব রকমই রান্না করতে বেছে নিতে পারেন কনভেকশন মাইক্রোওয়েভ আভেন। অনেকেই ভাল বেক ও গ্রিল করার জন্য ওটিজি এবং খাবার তাড়াতাড়ি গরম ও ডিফ্রস্ট করার জন্য সোলো মাইক্রোওয়েভ আভেন কেনেন।

কত ক্যাপাসিটির কিনবেন, সেটাও জানা প্রয়োজন। দু’জনের পরিবার হলে ১৫-২০ লিটারের আভেন কিনতে পারেন। চার থেকে ছ’জনের জন্য ২১-৩০ লিটারের আভেন চলনসই। আবার ছ’জনের বেশি সদস্যের জন্য রান্না করতে গেলে ৩২ লিটার বা তার বেশি মাপের আভেন কেনাই শ্রেয়।

আভেন কেনার পাশাপাশি তা কোথায় রাখবেন, সেটা জানাও জরুরি। এখনকার ছোট হেঁশেলে কিচেন ক্যাবিনেটের মাঝে বা স্ল্যাবের উপরে রেখে দেওয়া হয় আভেন। তার পাশেই থাকে হাজারো জিনিস। কিন্তু আভেনের চার পাশে কয়েক ইঞ্চি করে জায়গা ছাড়াই শ্রেয়। আবার আভেনের উপরে কোনও কিছু রাখা চলে না মোটেই।

পরিষ্কার করার উপায়: আভেন নিয়মিত ব্যবহার করলে তেলকালি জমে নোংরা হয়। তেলচিটে গন্ধও ছাড়ে। পরিষ্কারের জন্য সুইচ অফ করে আভেনের ভিতরে বেকিং সোডা ছড়িয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পরে জল ছিটিয়ে স্পঞ্জ দিয়ে চেপে মুছে নিলেই পরিষ্কার হবে আভেন।

মডেল: মুনমুন, ছবি: দেবর্ষি সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Cooking Microwave Oven OTG Baking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE