E-Paper

এসেছিলে, তবু আসো নাই…

প্রদর্শনীটির নাম ‘সাগা অব নেচার’, অর্থাৎ প্রকৃতির গল্প। শিল্প-ইতিহাসে বহু শিল্পীই জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে প্রকৃতির ছবি এঁকেছেন।

শমিতা বসু

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ ১০:০৪
লতায় পাতায়: শিল্পী সুশান্ত দাসের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

লতায় পাতায়: শিল্পী সুশান্ত দাসের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

সম্প্রতি চারুবাসনা গ্যালারিতে শিল্পী সুশান্ত দাসের প্রথম একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল। প্রদর্শনীতে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৬৫টি ছবি দেখতে পাওয়া গেল। কোনওটা কালি ও কলম, কোনওটা অ্যাক্রিলিক, আবার কোনওটা মিশ্র মাধ্যম। শিল্পী ঐতিহ্যগত ভাবে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্রে শিক্ষিত নন যদিও, কিন্তু বিভিন্ন প্রখ্যাত শিল্পীর সান্নিধ্যে এসেছেন জীবনের নানা অধ্যায়ে। আর সেখান থেকেই তাঁর শিল্পীজীবনের অনুপ্রেরণা এবং প্রাপ্তি।

সুশান্ত শিল্প সংস্কৃতির জগতে পরিচিত নাম। তিনি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং উল্লেখযোগ্য চিত্রশালায় প্রদর্শনী কিউরেট করেছেন বহু বছর। সেই সব প্রদর্শনী নামীদামি শিল্পীদের চারুকলার অনবদ্য নিদর্শন রেখেছে। এটি সুশান্তর প্রথম নিজস্ব একক প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীটির নাম ‘সাগা অব নেচার’, অর্থাৎ প্রকৃতির গল্প। শিল্প-ইতিহাসে বহু শিল্পীই জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে প্রকৃতির ছবি এঁকেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বেশ অন্য ভাবে দেখেছেন প্রকৃতিকে। কিছুটা যেন তাঁদের অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা।

সুশান্ত দাসের প্রকৃতিপ্রেম একটু যেন অন্য রকম। তিনি সকালে ঝরে-থাকা ফুলের আত্মত্যাগ দেখে মর্মাহত হন, অবহেলিত ছেঁড়া পাতার বেদনা অনুভব করেন, সূর্যের প্রভাতী আলোয় জেগে ওঠা পদ্মের আবার গোধূলিতে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার অভিমানে বিস্মিত হন। আর ঠিক সেই মুহূর্তগুলিকেই নিজের ছবিতে ধরতে চান সুশান্ত, যেখানে কোনও কৃত্রিমতা নেই, যেখানে প্রকৃতি সপ্তসুরে আনন্দে গান করে, দুঃখে, কষ্টে প্রকৃতি যেখানে মাটিতে লুটিয়ে কাঁদে। সে-ই যেন মানুষের একমাত্র বন্ধু। ঠিক এই রকম একাত্ম ভাবে প্রকৃতিকে ভালবাসা সত্যিই দুর্লভ। তাই শিল্পী বলছেন ‘এসেছিলে, তবু আসো নাই, জানায়ে গেলে…’ পদ্মফুলের গোধূলিতে নিজেকে লুকিয়ে নেওয়া শিল্পীর ভাষায় অভিমানী, বিরহীর অনুযোগের গাথা। এই ছবিগুলোর মাধ্যমে তিনি সেই সবই বলতে চেয়েছেন।

সুশান্ত দাসের ছবির মধ্যে একটি কাগজে অ্যাক্রিলিকের ছবি ছিল। আধফোটা একটি ফুল, তার চারপাশে কুঁড়ির ভিড় আর ঘাসের মতো লম্বা লম্বা ডাঁটা। ছবির গঠন এবং ডিজ়াইন মননশীল। এই দরদী ছবিটি খানিকটা মোনোক্রোমে করা।

অপর একটি ছবিতে এক হাঁসের প্রতিকৃতি। সামনে ঘড়ায় রাখা কিছু ঘাসপাতা। হাঁসটির চারিদিকেই পাতা, ফুল, কুঁড়ি ইত্যাদিতে সাজিয়েছেন শিল্পী। ডিজ়াইন-ধর্মী ছবি। অ্যাক্রিলিক আর পেন অ্যান্ড ইঙ্কে করা। ডিজ়াইন হলেও সেটা নিরপেক্ষ নয়। মেজাজটা বেশ মানবিক।

আরও একটি হাঁসের ছবির কথা বলতেই হয়। পুরুষ হাঁসটি তার প্রেমিকার পিছনে পিছনে চলেছে। মেয়েটি আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যে রকম রাধা তাকাতেন তাঁর কৃষ্ণসখার দিকে। আশপাশে ডাল, পাতা, কুঁড়ি ইত্যাদির মোটিফে ভরা একটি রোম্যান্টিক ছবি।

সুশান্ত ঘোষের হাঁসের ছবিগুলি বেশ সুন্দর। নানা ভঙ্গিমায়, অ্যাক্রিলিক এবং পেন অ্যান্ড ইঙ্কে করা, অর্ধ-বিমূর্ত এই হাঁসগুলির আকর্ষণ এড়ানো যায় না। এদের অবয়বগুলি স্বকীয়তায় ভরা। রঙের ব্যবহারেও যথেষ্ট নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন সুশান্ত।

প্রদর্শনীর আর একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শুকনো পাতা জড়ো করা আছে। আর তারই গহনে নতুন পাতার এবং একটি কুঁড়ির জন্ম হচ্ছে। আঙ্গিকে বাস্তবায়ন নেই। সেই কারণেই ছবিটি অন্য রকম।

“মনের গহিনে যে অন্ধকার, সৃজনের মধ্য দিয়েই সেই কুজ্ঝটিকা দূরে চলে যায়। আমার ছবি আঁকার নেপথ্যে এই তাড়নাটি প্রবল। অশান্ত চিত্তকে স্থিতিশীল করার জন্য শৈল্পিক রেওয়াজের কোন বিকল্প নেই,” বলছেন সুশান্ত দাস।

সুশান্ত যে প্রধানত কবি এবং জীবনে প্রচুর কবিতা লিখেছেন,‌ সেটা অনুভব করতে অসুবিধে হয় না। ছবিগুলিতে তাঁর রঙের ব্যবহার, বিশেষ করে প্রকৃতির সবুজের স্নিগ্ধতা মুগ্ধ করে। ফুল, পাখি, লতাপাতার ছন্দোময় আধা-বিমূর্ত প্রকাশে তিনি যে মানসিক ভাবে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম, সেটা সহজেই অনুধাবন করা যায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Art exhibition

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy