Advertisement
E-Paper

নৈঃশব্দ্যেরও এক সুখানুভূতি থাকে

অপূর্ব বিশ্বাসের ‘মাইন্ড ভিশন’ যতটা পেন্টিং গুণসম্পন্ন, ‘বায়োলজি ক্লক’ মোটেই তা নয়।

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০০:০১
রঙিন: ‘বিটুইন সাউন্ড অ্যান্ড সাইলেন্স’ প্রদর্শনী।

রঙিন: ‘বিটুইন সাউন্ড অ্যান্ড সাইলেন্স’ প্রদর্শনী।

পাঁচ শিল্পী-ভাস্করের যৌথ প্রদর্শনীতে সামগ্রিক শিল্পনিদর্শনগুলি কিন্তু কোনও শব্দের অনুরণন বা নৈঃশব্দ্যের আবহে ঋদ্ধ ছিল না। উজ্জ্বলতাকে ছাপিয়ে বর্ণ যেমন হঠাৎ মিস্টিক পরিবেশ তৈরি করেছে, অনুজ্জ্বলতার পাশাপাশি বর্ণ রাখলে মেদুরতার নির্দিষ্টকরণ থেকে এক অনির্দেশের দিকে চলে গিয়েছে রঙেরই আশ্চর্য সব অসাধারণত্বে। আবার পাশাপাশি ব্রোঞ্জের কাঠিন্যকে সৌন্দর্যের মধ্যে এনেও রূপবন্ধের শৈল্পিক সুষমাকে আধুনিকীকরণের ধারণা যেমন দিয়েছেন, তেমনই ফের পরীক্ষানির্ভর ফর্মেশনে কোথাও দুর্বলতাও প্রকট হয়েছে। তা সত্ত্বেও সকলে চেষ্টা করেছেন নিজের কাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপিত করার। সবার ক্ষেত্রে যদিও তা সফল ভাবে উতরে যায়নি। অ্যাকাডেমিতে সম্প্রতি শেষ হল ‘বিটুইন সাউন্ড অ্যান্ড সাইলেন্স’-এর প্রদর্শনী।

অপূর্ব বিশ্বাসের ‘মাইন্ড ভিশন’ যতটা পেন্টিং গুণসম্পন্ন, ‘বায়োলজি ক্লক’ মোটেই তা নয়। ছবিতে অনেক কিছু বলতে চেয়েছেন, ছবি হিসেবে বড্ড ফ্ল্যাট, বেশি পরিচ্ছন্ন। কোথাও ভীষণ সচিত্রকরণের রঙিন চিত্রকল্পের মতো। ন্যারেটিভকে অত প্রাধান্য না দিয়ে সামগ্রিক স্টাইল, অ্যারেঞ্জমেন্ট এবং ব্রাশিংয়ে জোরালো অভিব্যক্তির প্রয়োজন ছিল। এখানে স্পেসের ব্যবহারিক দিক ছাড়াও কিছু অনুষঙ্গ ও শরীরী অবয়ব-বিন্যাসকে পরীক্ষামূলক ভাবে একটি আবহে নিয়ে গেলে অন্য রকম হত। তাঁর সব কাজই ক্যানভাসে মিশ্র মাধ্যমের।

স্টাইলাইজ়েশন ও রঙের ঔজ্জ্বল্য শোভন দাসের ছবিকে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে, সেখানেই থামিয়ে দেয়। তিনি নিজেই ক্যানভাসে, বোর্ডে ছবির মধ্যে কিছু চাহিদা তৈরি করেছেন এবং তা পূরণ না করে, বরং যেখানে থামা উচিত মনে করেছেন, সেখানেই ছবি শেষ করে দিয়েছেন। অতটা শূন্য পরিসর এই সব কম্পোজ়িশনে কিছু অনুষঙ্গ দাবি করে। তাঁর ছবির ক্ষেত্রে ঠিক তা-ই ঘটেছে। অথচ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁর হঠাৎ নীরবতা পেন্টিংয়ের সম্পূর্ণতাকে কিছুটা হলেও আঘাত করছে। অ্যাক্রিলিক ও ড্রাই প্যাস্টেল ব্যবহারে তিনি মাধ্যমের পরিবর্তন যদিও বুঝতে দেননি। মিষ্টি বর্ণ, ধরে ধরে টোন এনেছেন। এই ছায়াতপ ও গাঢ়ত্বের মধ্যে তেমন আকর্ষক মিশ্রণ কাজ করেনি। একটু কাটা কাটা রচনা, বড্ড পরিচ্ছন্ন। এখানেও ছোটদের গ্রন্থ-চিত্রণের রঙিন বৃহৎ কম্পোজ়িশনের মতো। তবে রচনায় সামান্য হলেও জ্যামিতিকে উপলব্ধি করা যায়। যদিও সচেতন ভাবে তা করেছেন, না কি আকারকে স্টাইলাইজ়ড করতে গিয়ে তা তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। স্পেসের শূন্যতা ভারসাম্যে সামান্য হলেও বিঘ্ন ঘটায়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের প্রদর্শনী।

স্বশিক্ষিত ভাস্কর চন্দন রায়ই এই প্রদর্শনীর একমাত্র উজ্জ্বল উদ্ধার। ব্রোঞ্জও তাঁর হাতে পড়ে ভাস্কর্যকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। তাঁর কাজে রিয়্যালিজ়মের মধ্যেও একই সঙ্গে যে আধুনিক ফর্ম ও ছন্দ কাজ করেছে, সৃষ্টিকে তা পরিয়েছে এক মহান তকমা। বিচ্ছিন্ন ভাবে কোনও একটিকে উল্লেখ করা কঠিন কাজ। ‘রিকশাওয়ালা’ বা বাঁশি হাতে ‘কৃষ্ণ’, ‘মিউজ়িক প্রসেশন’ কিংবা ‘গণেশ’—সবই এত সংবেদনশীল! তবে ‘বুল’ ওঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। টেক্সচারের মসৃণতা এবং রুক্ষতার মায়াবী বিশ্লেষণে স্বতন্ত্র মুনশিয়ানায় ঋদ্ধ। পরিমিতিবোধ এবং কতটা কাজ করতে হবে, কোথায় ছেড়ে দিতে হবে— এই ধারণাও প্রখর চন্দনের কাজে। ‘সিম্ফনি’র দু’দিকের মুখের উপরে অলঙ্করণ ও প্রজাপতি যেন অন্য এক ডায়মেনশন তৈরি করে, এক কাব্যিক মেজাজকে প্রতিষ্ঠা করে দেয়। চন্দনের কম্পোজ়িশনের ভাবনা ও তাকে রূপ দেওয়ার যে নিবিষ্ট প্রক্রিয়া, সেই গভীরতাকে স্বাগত জানাতেই হয়।

আর এক ভাস্কর চিন্ময় কর্মকার নানা ধরনের কাজ করেছেন। কোনও নির্দিষ্ট স্টাইল তাঁর কাজে লক্ষিত হয়নি। ফলে নিজস্বতা তৈরির জায়গা যেন এখনও খুঁজে পাননি। যদিও ভাবনার জায়গাটা বুদ্ধিদীপ্ত।

ফলিতকলার স্নাতক পবিত্র সাহা ক্যানভাস, কাগজে অ্যাক্রিলিকে পাহাড়-পর্বত, মেঘ, সাদা উড়োজাহাজ বা উড়ন্ত চিল, বাড়িঘর, ছোট্ট নৌকো, মাছকে একটা মৃদু হালকা রঙের সমান্তরাল জ্যামিতিক বিন্যাসে ভাগ করেছেন। ঝুলনযাত্রা যেন! সূক্ষ্ম ফুটকির, সাদা রেখার আড়াআড়ি বঙ্কিম চলনকে প্রাধান্য দিয়ে পবিত্র কী বোঝালেন? নীলাকাশে সাদা মেঘের বিন্যাস মন্দ লাগে না।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy