Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Art exhibition

exhibition: ছয় দশক অতিক্রম করে চলা একটি দল

প্রায় সাদাকালো অসংখ্য পড়ে থাকা মনুষ্য-খুলির বিস্তার ঘনান্ধকার আবহে যেন এক মৃত্যুচেতনার দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করছে।

প্রতীকী: সোসাইট অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টসের প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

প্রতীকী: সোসাইট অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টসের প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

অতনু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৪৯
Share: Save:

সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস। এক সময়ে তাঁদের প্রদর্শনীগুলিতে উপচে পড়া ভিড় আজ ইতিহাস। সেই সময়কার অনেক স্মরণীয় শিল্পী-ভাস্কর আজ প্রয়াত। তাঁদের কিছু সাড়াজাগানো প্রদর্শনী এ রাজ্যে ও অন্যান্য প্রদেশেও প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রথম থেকেই একটি সাধু, প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁরা অন্যান্য অনেক কাজই করে থাকেন। প্রকাশনায় নিজেদের ইতিহাস থেকে প্রয়াতদের স্মরণে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ সিরিজ়, মিলিত কর্মকাণ্ডের প্রয়াস থেকে ছাপাই ছবির বাক্সবন্দি চোখজুড়োনো প্রকাশনা, দলীয় সম্মিলিত ওয়ার্কশপে নানা মাধ্যমের কাজ— এ সবই তাঁদের অত্যন্ত সিরিয়াস একটি এলাকা। এই অতিমারির আবহেও তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। প্রদর্শনী করা, ওয়ার্কশপ, প্রিন্টমেকিং, সাপ্তাহিক বুধসন্ধ্যার আলোচনা থেকে নিজেদের গ্যালারিতে প্রদর্শনী... সবই চালিয়ে গিয়েছেন ধারাবাহিক কর্মতৎপরতার মাধ্যমে। অবশ্যই পরবর্তী পরিকল্পনাগুলি মাথায় রেখেই। সম্প্রতি তাঁদের ১৯ জন সদস্যের ৩৮টি শিল্পকর্ম নিয়ে, তাঁদেরই গ্যালারিতে ৬২তম প্রদর্শনীটি সম্পন্ন হল। এটি অনলাইনেও দেখা গিয়েছে তাঁদের ওয়েবসাইটে।

বর্ষীয়ান সনৎ করের কালো রেখার সচেতন ও আকস্মিক টানগুলি দৃশ্যত কবিতার অন্তর্গত ‘স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ’। বিস্ফারিত, কৌতূহলী চোখমুখ, দু’আঙুলে ধরা পত্র-পল্লবিত পুষ্প... রচনা দু’টিকে রূপকথার কাহিনি মনে পড়িয়ে দেয়। যে ছন্দে দুলে ওঠে কিছু স্বপ্নাচ্ছন্ন মুহূর্ত।

বেশ কিছুকাল ধরেই অনেকটা স্পেস রেখে, কালো রেখার সরু, অপেক্ষাকৃত চিকন ও মোটা-চওড়া ড্রয়িং, হঠাৎ ওয়াশের মতো ছায়াতপ, প্রতিচ্ছায়াসদৃশ আংশিক রূপবন্ধ... এ সমস্তকেই নিজস্ব শৈল্পিক জ্যামিতির ফর্মেশনে ফেলে, একটা আশ্চর্য নিসর্গের ব্যাকরণ তৈরি করতে চেয়েছেন গণেশ হালুই। এখানে ডিজ়াইনের পাশাপাশি এবং কখনও ওতপ্রোত ভাবেই একটি সম্পূর্ণ ল্যান্ডস্কেপের আবহ তৈরি হচ্ছে। এই অনন্য জিয়োমেট্রিক্যাল অ্যাবস্ট্রাকশনের মধ্যেও আচ্ছন্ন হয়ে থাকা নৈসর্গিক অনুষঙ্গের তাৎপর্যগুলিকে তিনি নিজস্ব নিরীক্ষার সরলীকরণে মোহিত করেন দর্শককে।

লালুপ্রসাদ সাউয়ের টেম্পারার ‘বাবু-বিবি’ চিরাচরিত, তাঁর স্টাইলকে একই ভাবে ধরে রেখেছে।

লাল টকটকে জলরঙের তরলীকরণের বিমূর্তায়ন মানু পারেখের কাজে। মিশ্রমাধ্যম অর্থে কালো, খয়েরি রেখার ড্রয়িংয়ে মিশে যাওয়া বর্ণের চটুল বিন্যাস রূপবন্ধের ব্যালান্সকে এক অন্য আঙ্গিকে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও যেন প্রতীকী যৌনতা থেকে প্রত্যঙ্গের চমৎকার ব্যবহার, সাদা ছেড়ে রাখা মানবী-মুখ সুন্দর।

ফাইবার গ্লাসের ‘বুল’-এর শারীরিক গঠন ও বিন্যাসে ছন্দ-জ্যামিতি-স্টাইল রচনাকে বলিষ্ঠ করেছে নিরঞ্জন প্রধানের কাজে। একই মাধ্যমে লম্বা, দাঁড়ানো ময়ূরটিও দৃষ্টিনন্দন।

প্রায় সাদাকালো অসংখ্য পড়ে থাকা মনুষ্য-খুলির বিস্তার ঘনান্ধকার আবহে যেন এক মৃত্যুচেতনার দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করছে, আদিত্য বসাকের কাজে অতিমারি কি এ ভাবেই প্রতিভাত? মনোজ মিত্রের কাজ ছোটদের গল্পের বইয়ের সচিত্রকরণের মতো মনে হলেও, তা নয়। ইঙ্ক-ওয়াশে ব্যাঙের সাপ খাওয়ার দৃশ্য বেশ জমাট, সাপও ব্যাং খাচ্ছে। মজার দু’টি ড্রয়িং। মনোজ দত্তের ‘জার্নি’ রবীন্দ্রচিত্রকে মনে পড়ায়। প্রদীপ মৈত্র ‘ইম্প্রেশন টেন’ ও ‘ইম্প্রেশন ইলেভেন’-এ আনকাট পেপারে জলরঙে একটু অন্য রকম কাজ করেছেন। পেন-ইঙ্কের কাজে শ্রীকান্ত পাল ‘রি-লেশন’-এ অনেক প্রশ্ন ও কৌতূহল রেখে দিলেন। ভারী সুন্দর ওঁর ড্রয়িং ও পেনের সূক্ষ্মতর স্ট্রোক। পরাবাস্তববাদ, অথচ প্রখর বাস্তবের মধ্যে তাঁর এক ধরনের প্রতিবাদ প্রতিফলিত। চমৎকার কাজ। দুই পুরুষের মুখোমুখি সহাবস্থান, একজন নারীশরীরের প্রতিভূ। ভাবনাচিন্তায় বেশ অন্য রকম এক অলৌকিক দৃশ্যকল্প।

সৌমেন খামরুইয়ের কাজ যেন আদিমুলমের প্রথম দিকের কাজের রূপবন্ধকে সরিয়ে, গাইতোন্ডেকে একটু সরলীকরণ করে, নিজস্ব কিছু রূপকে প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। এই আধাবিমূর্ত আবহে জ্যামিতিক রূপবন্ধগুলির ছড়ানো অংশ কাজ দু’টিকে মহার্ঘ করেছে। খুব ছোট দু’টি চমৎকার এচিং করেছেন রাজেন মণ্ডল, শকুন ও তরবারি-ভোজালির সমন্বয়ে। টেকনিকেও মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। বিমল কুণ্ডুর ব্রোঞ্জের সনাতন দুর্গামূর্তির রূপ নিখুঁত, পরিচ্ছন্ন। সাবেকি দুর্গার মুখ হলেও তাঁর নিমীলিত নয়নদু’টি চোখ টানে। ‘টাইগ্রেস’-এ উচ্চাবচ জ্যামিতির রূপ জন্তু-নারীর শরীরময়। অনেক প্রশ্ন তুলে দেওয়া দু’টি সাদাকালো ঝাঁকড়া চুলের অলৌকিক মুখের অনবদ্য ড্রয়িং অতীন বসাকের। অখিলচন্দ্র দাসের ধাতু ও দারু মিশ্রিত ভাস্কর্য দু’টি অসাধারণ। এ ছাড়াও অতনু ভট্টাচার্য, পঙ্কজ পানোয়ার, ভোলানাথ রুদ্র, ডেভিড মালাকার মোটামুটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Art exhibition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE