প্র: খুব কম বয়সে এখন দেখছি অনেকেরই পিরিয়ডের সমস্যা হচ্ছে। কারও বা পিরিয়ড সময় মতো হয় না কারও বা মাসে দু-বার হয়ে গেল। কেন?
উ: এখনকার লাইফস্টাইল আর খাওয়াদাওয়ার জন্য ওজন বাড়ে। বেশি ওজন থেকে হরমোনের তারতম্য হয়। আর তার থেকে বাড়ে পলিসিস্টিক ওভারির সম্ভাবনা। সে জন্য পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে।
প্র: পলিসিস্টিক ওভারি কী?
উ: ওভারির গায়ে ছোট ছোট ফোস্কার মতো হয়।
প্র: সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে?
উ: পিরিয়ডের সমস্যা হলে কিছু হরমোন পরীক্ষা আর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষা করে দেখা হয় সত্যিই পলিসিস্টিক ওভারি কি না।
প্র: ধরুন পলিসিস্টিক ওভারিই হল। তখন? অপারেশন করতে হবে?
উ: উ: না না। ওষুধেই কমবে। ওজনটা কমান। ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড বাদ দিন। তা হলেই সমস্যা মিটবে।
প্র: ওজন কমালেই ঝামেলা মিটবে?
উ: একদম। ওজন কমালেই সমস্যা কমবে। ওজন বাড়লে আবার সমস্যা হতে পারে। সুতরাং ওজনের ব্যাপারে সাবধান।
প্র: ধরুন ওজন তেমন কমাতে পারলাম না। তখন?
উ: তখন ওষুধ খেতে হবে।
প্র: শুনেছি পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা থাকলে পরবর্তীতে প্রেগন্যান্সি আসতে অসুবিধে হয়?
উ: এখানেও ওজনের কথাই বলব। ওজন কম হলে খুব একটা সমস্যা হয় না। সাধারণত প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে এক সমস্যা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপি করে সিস্টগুলো পাংচার করে দেওয়া হয়।
প্র: মানে অপারেশন...?
উ: দশ মিনিটের অপারেশন। সকালে অপারেশন করে বিকেলেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ছয় মাসের মধ্যে প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ।
প্র: তা হলে তো গাদা গাদা ওষুধ না খেয়ে ল্যাপারোস্কোপি করে নিলেই হয়। দশ মিনিটেই ঝামেলা মেটে?
উ: এক দম না। শুধু মাত্র প্রেগন্যান্সি না এলে তবেই অপারেশন।
প্র: এ ধরনের সিস্ট থাকলে পরবর্তীতে আর কোনও অসুবিধে হতে পারে?
উ: ডায়বেটিস আর হার্টের সমস্যার সম্ভাবনা থাকে। ইউটেরাস ও ব্রেস্টে ক্যানসারও হতে পারে। তবে সময় মতো আগে ভাগে চিকিৎসা করালে এ সবের ভয় থাকে না।
প্র: অনেকের শুনি পিরিয়ডের সময় খুব ব্যথা হয়। মাসের সেই ক’টা দিন কাজ টাজ সব পণ্ড হয়। এটাও কি পলিসিস্টিক ওভারির জন্য?
উ: না। সাধারণত এমনটা হয় চকলেট সিস্টের জন্য।
প্র: সেটা কী?
উ: এটা বিশেষ ধরনের সিস্ট। ওর ভেতর রক্ত জমা থাকে। তাই দেখতে চকলেটের মতো লাগে।
প্র: এ ক্ষেত্রে কী করব?
উ: ওষুধ, ইনজেকশন দুটোই আছে। তবে এই ধরনের সিস্ট হলে বাচ্চা আসতে খুব সমস্যা হয়। তাই ফেলে রাখবেন না। বাচ্চা আনার জন্য ল্যাপারোস্কোপি করে সিস্ট বিদেয় করতে হয়।
প্র: নইলে?
উ: নইলে সিস্ট বড় হতে হতে নাভি অবধি চলে যেতে পারে। তার পর হঠাৎ ফেটে গিয়ে মারাত্মক অবস্থা হতে পারে।
প্র: এত বড় সিস্ট হলে তো আর মাইক্রোসার্জারি করা যাবে না?
উ: না। ল্যাপারোস্কোপিতেই সুবিধে। বিশেষ করে যারা বাচ্চা নিতে চায়। পেট কেটে অপারেশন করলে বরং অসুবিধে।
প্র: কী ধরনের অসুবিধে হয়?
উ: মাস তিনেক বিশ্রাম নিতে হয়। ব্যথা থাকে। মাইক্রোসার্জারি করলে সকালে সার্জারি, বিকেলে বাড়ি। আর কম বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে দাগের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। মাইক্রোসার্জারি করলে অ্যাডেশন বা ভেতরকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জড়িয়ে যায় কম। তাই পরবর্তীতে প্রেগন্যান্সি আসতে অসুবিধে হয় না।
প্র: পিরিয়ডের সময়কার প্রবল ব্যথায় অনেকেই কাবু হয়ে যায়। তখন কী করবে?
উ: বিশ্রাম নেবেন। উপুর হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। তলপেটে গরম সেঁক দিলে আরাম পাবেন। খুব বেশি ব্যথা হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। দিন তিনেকের মধ্যে ব্যথা কমে যায়। সমস্যা বেশি হলে ডাক্তার দেখাবেন।
প্র: পেটে ব্যথার সঙ্গে তো আরও নানা সমস্যা হয়...
উ: হ্যাঁ। অনেকের বমি হয়, হজমের সমস্যা হতে পারে, ব্রেস্টে ব্যথা হয়। ব্লিডিং ও বেশি হতে পারে। তবে প্রতি মাসে এ ধরনের সমস্যা হলে নিয়মিত ব্যায়াম করলে ভাল থাকবেন। শারীরিক ফিটনেস এ ক্ষেত্রে খুব উপকারি। রিল্যাক্সশেসন টেকনিক শিখে নিতে হবে। ব্লিডিং বেশি হলে ডাক্তার দেখাতে হবে।
প্র: ব্লিডিং বেশি হচ্ছে বুঝব কী করে?
উ: টানা দশ থেকে বারো দিন পিরিয়ড চললে, বা ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্যাড বদলাতে হলে, অথবা রাতে ঘুম ভেঙে প্যাড বদলাতে হলে বুঝবেন ব্লিডিং বেশি হচ্ছে। তা ছাড়া যদি দেখেন ব্লিডিং-এর সঙ্গে ক্লট বেরোচ্ছে, তা হলেও বুঝতে হবে ব্লিডিং বেশি হচ্ছে। এ সময় ভারী এক্সারসাইজ করবেন না।
প্র: সিস্ট হয়েছে বুঝব কী করে?
উ: সিস্ট সব সময় বোঝা যায় না। চুপচাপ বসে থাকে। কমবয়সি মেয়েরা ছোটাছুটি করে। সে ক্ষেত্রে বড় সিস্ট থাকলে সেটি পেঁচিয়ে যেতে পারে বা ফেটে যেতে পারে। তখন খুব পেটে ব্যথা, বমি হয়। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করলে সমস্যা ধরা পড়ে। সে জন্য বাচ্চা মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হলে ডাক্তার দেখানো দরকার।
প্র: মানে সিস্টের নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ নেই?
উ: সে রকম নেই। তবে পিরিয়ড না হলে বা মাসে দুবার ব্লিডিং হলে বা ব্যথা হলে ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন।
প্র: বলা হয় যে সিস্ট বাদ না দিতে...
উ: ছোট সিস্ট হলে আমরা সেটা নজরে রাখি। ৪-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সিস্ট হলে সেটা নাড়াচাড়া না করাই উচিত। ওষুধেই কাজ হয়। সিস্ট মিলিয়েও যেতে পারে। ওষুধ খাওয়ার তিন মাস পর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করলে সেটা বোঝা যায়। তবে ৫ সেন্টিমিটারের বড় সিস্ট হলে বাদ দিতে হয়।
প্র: সিস্ট অপারেশনের সময় কি সব বাদ দিয়ে দেওয়া হয়?
উ: ৪০-এর ওপর বয়স হলে ও ফ্যামিলি কমপ্লিট হলে এবং সমস্ত পরীক্ষা ঠিক থাকলে ওভারি বাদ দিয়ে দেওয়াই ভাল। নইলে শুধু সিস্টটাই সাবধানে বাদ দেওয়া হয়।
যোগাযোগ-৯৮৩০৭৭৭৬৩১