Advertisement
E-Paper

হাইজিনে বাজিমাত

ছোট ছোট যত্নআত্তি আর নিয়মের মধ্য দিয়েই শরীর থাকবে সুস্থ, স্বাস্থ্য হবে আরও মজবুতছোটখাটো খেয়াল রাখার মাধ্যমেই স্বাস্থ্য হতে পারে মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী। আর সুস্থ শরীর নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠিই হল হাইজিন।

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৯
মডেল: নয়নিকা; ছবি: আশিস সাহা; মেকআপ: প্রীতি দাস; পোশাক: লাইফস্টাইল, কোয়েস্ট মল

মডেল: নয়নিকা; ছবি: আশিস সাহা; মেকআপ: প্রীতি দাস; পোশাক: লাইফস্টাইল, কোয়েস্ট মল

কথায় বলে, স্বাস্থ্য এবং সময়ের মতো বড় সম্পদ কিছু নেই। যেমন সময়ের মর্যাদা রাখা উচিত, তেমনই স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখাও জরুরি। আমাদের শরীর সহ্য করতে পারে বলেই অহেতুক তার উপরে বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার মানে নেই কোনও। বরং ছোটখাটো খেয়াল রাখার মাধ্যমেই স্বাস্থ্য হতে পারে মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী। আর সুস্থ শরীর নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠিই হল হাইজিন।

হাত-পা-চুল-দাঁতের খেয়াল

হাত: কম্পিউটারে টাইপ, বহু হাতে ঘুরে আসা টাকা-পয়সা দিয়ে বিকিকিনি, সকলের ব্যবহৃত টেলিফোনে কাজ করার সূত্রে ছড়িয়ে প়ড়ে জীবাণু। তাই খাওয়ার, রান্নার আগে ও পরে, বাড়ির খুদে সদস্যকে আদর করার আগে হাত ধুতে হবে। পশু-পাখির সংস্পর্শে আসার পরেও হাত ধোবেন। আবার হাত সামান্য জলে ভিজিয়ে স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে পারেন। হাঁচি-কাশির জন্য রুমাল সঙ্গে রাখুন। ডিসপোসেবল গ্লাভসও ব্যবহার করতে পারেন।

দাঁত: মাড়ি ও দাঁতে ব্যথা, মুখে দুর্গন্ধ, দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা শুধু শারীরিক নয়, সামাজিক সমস্যাও বাড়িয়ে তোলে। দিনে দু’বার ব্রাশ করুন। ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরোনোর প্রবণতা থাকলে মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করুন। তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন ছাড়াও লিভারজাতীয় সমস্যা থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রচুর জল ও তাজা ফল খাওয়া দরকার। বছরে দু’বার দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পা: সারা ঘর খালি পায়ে ঘুরে বিছানায় না ওঠা ভাল। রাতে অবশ্যই পা পরিষ্কার করে ধুয়ে ময়শ্চারাইজ় করুন। ঢাকা জুতো পায়ের জন্য ভাল।

চুল: শুষ্ক, তেলতেলে চুল হোক বা খুশকির সমস্যা— প্রত্যেক দিন ভাল করে চুল ধোয়া এর অদ্বিতীয় দাওয়াই। শ্যাম্পু, কন্ডিশনিং এবং রোজ চুল ভিজিয়ে স্নান করুন। খুশকির মোকাবিলায় নিয়মিত মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

স্নান ও ঘাম: আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশে দিনে দু’বারও স্নান করতে বাধা নেই। তীব্র ঘামের গন্ধের কারণ শুধু অনিয়মিত স্নান নয়, শরীরের আভ্যন্তরীণ সমস্যাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখান।

গোপনাঙ্গের যত্ন

গোপনাঙ্গের স্বাস্থ্যরক্ষা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোজ শরীরের ওই অংশ পরিষ্কার করুন। সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন শরীরের ভিতরে প্রবেশ না করে। অনেকে যৌনাঙ্গের পিএইচ ব্যালান্স রক্ষার জন্য ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বাথরুমে প্রবেশ করেই খানিকটা জল ঢেলে দেওয়া বা ফ্লাশ করে নেওয়া জরুরি। এতে বাথরুমের মেঝেয় থাকা জীবাণু সহজে গোপনাঙ্গের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। হাইজিন রক্ষায় প্রথমে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করে তার পরে মলদ্বার পরিষ্কার করাই শ্রেয়।

ঋতুস্রাবের সময়ে: মাসের বিশেষ দিনগুলিতে শরীর যতই বিরোধিতা করুক, হাইজিনই পারে আপনার যন্ত্রণা ও বিরক্তি কমাতে। ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন কখনওই ফ্লাশ করবেন না। ডাস্টবিনে ফেলার আগে ন্যাপকিন কাগজে মুড়ে নিন।

নিয়মিত ন্যাপকিন ব্যবহারের ফলে যৌনাঙ্গের চারপাশে র‌্যাশ বেরোতে পারে। যতটা সম্ভব শুকনো থাকার চেষ্টা করুন। অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল লোশন ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ন্যাপকিন বদলানো, স্নান করা অবশ্যই উচিত। ঈষদুষ্ণ জলেও স্নান করতে পারেন। এতে অনেকেই শারীরিক যন্ত্রণা থেকে সাময়িক মুক্তি পান।

শারীরিক ঘনিষ্ঠতার সময়ে

নিজের হাইজিন রক্ষা করা যেমন জরুরি, তেমনই আপনার সঙ্গীর হাইজিনের দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। চুম্বনের ক্ষেত্রে নানা ব্যাকটিরিয়ার আদানপ্রদানে সংক্রমণ এবং অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না— এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বহু চিকিৎসক বলছেন, যে কোনও শারীরিক তরল আদানপ্রদানে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তবে চুম্বনের ক্ষেত্রে মুখের স্যালাইভা আগত বেশির ভাগ ব্যাকটিরিয়া মেরে ফেলতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের সম্ভাবনার হারও স্বাভাবিক ভাবে তলানিতে।

ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে দু’জনেরই ভাল করে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পরে দু’জনেরই প্রস্রাব করা উচিত। প্রস্রাবের মাধ্যমে বাইরে থেকে প্রবেশ করা ব্যাকটিরিয়া মেয়েটির শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। মেয়েদের ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন)-এর সমস্যা ভয়ঙ্কর। যৌনমিলনের আগে প্রস্রাব করলে সেই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।

যৌন মিলনের পরে অবশ্যই গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করা উচিত। তা না হলে মেয়েরা নির্দ্বিধায় ফেমিনিন ওয়াইপ ব্যবহার করতে পারেন। নিদেন পক্ষে জল দিয়ে যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। ঋতুস্রাবের সময়ে যৌনমিলন এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। এর ফলে যে কোনও রকম সংক্রমণের আশঙ্কা এড়ানো যায়।

বেড়াতে গিয়ে

দু’ঘণ্টার ফ্লাইটে বা ট্রেনে যাওয়ার সময়ে বাথরুম এড়িয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু অনেক ক্ষণের যাত্রায় বাথরুম ব্যবহার না করে উপায় নেই। সে ক্ষেত্রে সঙ্গে স্প্রে রাখুন। অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল স্প্রে কমোডের উপরে ছড়িয়ে দিলে জীবাণু কিছু ক্ষণের জন্য নিস্তেজ হয়ে যায়। তার মধ্যেই প্রয়োজন সেরে ফেলুন। স্প্রে না থাকলে অবশ্যই টিসু পেপার ব্যাগে রাখুন। নিদেন পক্ষে কমোডের উপরের অংশ তা দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারবেন।

মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা গুরুতর। তাই পাবলিক টয়লেট বাছুন দেখেশুনে। সুস্থ থাকতে স্কোয়াট পজ়িশনে বসেও নিজের কাজ সারতে পারেন। বেড়াতে গিয়ে বারবার বাথরুমে যেতে হবে, এই ভয়ে জল খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেবেন না। এতে হিতে বিপরীত হয়। সঙ্গে রাখুন অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার।

সময়ে ঘর পরিষ্কার করা, ধুলো না জমতে দেওয়া, নিয়মিত জামাকাপড় কাচা, খাবারের পাত্র ও রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা ইত্যাদিও স্বাস্থ্যরক্ষারই অঙ্গ। নিজের ও চারপাশের যত্ন নিলে তবেই না শরীর ও মনের স্বাস্থ্যরক্ষা হবে!

Beauty tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy