Advertisement
E-Paper

ইতিহাস ও প্রকৃতির সাহচর্যে

খাজুরাহোর স্থাপত্য অনিন্দ্যসুন্দর। সেই মুগ্ধতাকে সঙ্গী করে চলুন পান্নার জঙ্গলে। বাঘ দেখার সৌভাগ্যও হতে পারে। লিখছেন সোমা মুখোপাধ্যায়খাজুরাহোর স্থাপত্য অনিন্দ্যসুন্দর। সেই মুগ্ধতাকে সঙ্গী করে চলুন পান্নার জঙ্গলে। বাঘ দেখার সৌভাগ্যও হতে পারে। লিখছেন সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৪৫

ইতিহাস চাই। সঙ্গে প্রকৃতিও। আবার তারই সঙ্গে উদ্দাম, অবাধ্য জঙ্গলের হাতছানিও থাকে!

একই সঙ্গে এত সব ফরমায়েশ মেটাতে গিয়ে, এক সময় বেড়ানোর পরিকল্পনাটাই বানচাল হতে বসেছিল। কারণ হাতে সময় মাত্র সপ্তাহখানেক। তার মধ্যে এত সব ইচ্ছাপূরণ হবে কী ভাবে? টানা কয়েক দিন মাঝরাত পর্যন্ত আলোচনার পরে অবশেষে পাওয়া গেল এক দুরন্ত ‘কম্বিনেশন’! খাজুরাহো আর পান্না!

পান্না ন্যাশনাল ফরেস্টের নাম এখনও অনেকের কাছেই অজানা। তাই মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে যাব শুনে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কানহা বা বান্ধবগড় নয় কেন? এর উত্তর দুটো। প্রথমত, পান্না গেলে খাজুরাহো-ও একেবারে ধরাছোঁয়ার মধ্যেই থাকে। আর দ্বিতীয়ত, পান্না-য় এখনও পর্যটকের ভিড় তুলনামূলক ভাবে কম। কানহা-বান্ধবগড়ের অতি-উৎসাহ এখনও কিছুটা রেহাই দিয়েছে এই জাতীয় উদ্যানকে। অতএব এই ‘কম্বিনেশন’ই চূড়ান্ত হয়ে গেল!

খাজুরাহোর মন্দিরের ভাস্কর্য শুধু এ দেশে নয়, বিখ্যাত গোটা পৃথিবীতেই। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবেও চিহ্নিত। কিন্তু গিয়ে বুঝলাম, খাজুরাহো বলতে যে ভাবে অনবদ্য মিথুন-মূর্তির কথাই সামনে আসে বারবার, সেটা সত্যি তো বটেই, কিন্তু একমাত্র সত্যি নয়। ধ্যানযোগের নানা নমুনা, আধ্যাত্মিক নানা প্রক্রিয়াও খোদাই করা আছে মন্দিরের দেওয়ালে। রয়েছে সেই আমলের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নানা ছবিও। যৌনতা নিয়ে অহেতুক লুকোচুরি বর্তমান সমাজে যে কদর্যতা তৈরি করে প্রায়শই, তা থেকেও যেন বহু যোজন দূরে এই সব ভাস্কর্য। খাজুরাহোর মন্দিরকে ‘টেম্পল অব লভ’-ও বলা হয়।

জঙ্গলের আঁকাবাঁকা রাস্তায়

৯৫০ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চান্ডেলা সাম্রাজ্যের অধীনে এই মন্দিরগুলি তৈরি হয়েছিল। ৭৫টিরও বেশি হিন্দু এবং জৈন মন্দিরের মধ্যে ২২টি অবশিষ্ট আছে। ২০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে মন্দিরগুলি ছড়ানো। পশ্চিম, পূর্ব এবং দক্ষিণ তিনটি ভাগে ভাগ করা। এর মধ্যে পশ্চিমের মন্দিরগুলিই বেশি বিখ্যাত। প্রত্যেকটি মন্দির সম্পর্কে আলাদা গল্প রয়েছে। প্রতি সন্ধ্যায় এখানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-এরও ব্যবস্থা আছে। সারা দিন মন্দিরগুলো খুঁটিয়ে দেখে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিতে পারেন। তার পর সন্ধেয় লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো কোনওভাবেই মিস করবেন না।

খাজুরাহোর মুগ্ধতাকে সঙ্গী করেই পরের গন্তব্য পান্না। পান্নার জঙ্গলে সাফারির ব্যবস্থা আছে দু’বেলাই। তাই সবচেয়ে ভাল হয়, যদি খাজুরাহো থেকে সকালে বেরিয়ে পান্না পৌঁছে, সে দিন বিকেলে প্রথম সাফারিটা করেন। পরের সাফারিটা তোলা থাক পরদিন ভোরের জন্যই।

সাফারির জন্য দুটি গেট রয়েছে। মাদলা আর হিনৌতা। সাফারির সময় সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে সাড়ে ১০টা। আবার দুপুর আড়াইটে থেকে সাড়ে পাঁচটা। যদি গরম সহ্য করে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে, তা হলে গরমের সময়টাই এখানে বেড়াতে আসার সেরা সময়। তবে যেহেতু খাজুরাহোতেও এক মন্দির থেকে আর এক মন্দিরে ঘুরতে টানা অনেকটা সময় লাগে, তাই গরম এবং বর্ষার পরে পুজোর ছুটিতে গেলেও জমিয়ে ঘুরতে পারবেন।

রানে ফল্‌স

কেন নদীর ধারে এই জঙ্গল মন কেড়ে নেয় সহজেই। পান্নায় বাঘ দেখার সম্ভাবনা বেশি। এরই পাশাপাশি হরিণ, কৃষ্ণসার হরিণ, হাতি, চিতা, নানা ধরনের পাখি আর অজস্র নাম-না-জানা ফুলের সমারোহ। ব্রেকফাস্ট আর ফ্লাস্কে চা-কফি ভরে জিপে উঠে যান। তার পর জঙ্গল চষে ফেলার মাঝেই কোথাও জিপ দাঁড় করিয়ে খাওয়াদাওয়া সেরে নেওয়ার মজাই আলাদা। আমাদের অভিজ্ঞতাটা ছিল একদম অন্য। সদ্য স্যান্ডউইচে কামড় দিয়েছি। কফি ঢালা হচ্ছে। হঠাৎই গাইড আর গাড়ির চালক কান খাড়া করলেন। কী ব্যাপার? ‘‘শীগগিরই গাড়িতে উঠুন।’’ কেন? ‘‘পরে বলছি।’’ হুড়মুড় করে গাড়িতে ওঠা হল। আঁকাবাঁকা পথে কিছু দূর যাওয়ার পর গাড়ি থামল। সুনসান চারপাশ। কেমন একটা গা শিরশিরে অনুভূতি। গাইড হাত তুলে দূরে দেখালেন। উত্তেজনায় আমরা সকলেই তখন জিপের উপরে দাঁড়িয়ে পড়েছি। অদূরেই হেলেদুলে হেঁটে চলেছে হলুদ-কালো চকচকে ডোরা কাটা একটা চেহারা। রাজকীয় বলতে কী বোঝায়, পান্নার জঙ্গলে এত কাছ থেকে বাঘ দেখে সেটা টের পেয়েছিলাম!

পান্না-র দুটি চোখ-জুড়োনো ঝরনা রয়েছে। পাণ্ডব ও রানে ফল্‌স। পাণ্ডব ফল্‌স ঘেঁষে রয়েছে কিছু গুহা। পাণ্ডবরা নাকি কিছু দিন ওই গুহায় ছিলেন। সেই থেকেই এই নামকরণ। খাজুরাহো আর পান্নার মাঝামাঝি রয়েছে রানে ফল্‌স। কেন নদী থেকে উৎপন্ন এই ঝরনার পাশে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা আর ৩০ মিটার গভীর একটা গিরিখাদও তৈরি হয়েছে। চার পাশে লাল, গোলাপি, ধূসর গ্র্যানাইটের মাঝে সবুজ টলটলে জল। দেখে মনে হয়, শুধু চুপচাপ বসে থাকি।

কীভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে চম্বল এক্সপ্রেসে মাহোবা স্টেশন পৌঁছে, সেখান থেকে ফের ট্রেনে বা গাড়িতে যেতে পারেন। অথবা শিপ্রা এক্সপ্রেস কিংবা মুম্বই মেলে সাতনা গিয়ে সেখান থেকেও গাড়িতে খাজুরাহো যাওয়া যায়। খাজুরাহো থেকে পান্না যাওয়ার জন্য ট্রেন, বাস, গাড়ি সব মাধ্যমই রয়েছে। সময় লাগে ঘণ্টাখানেক।

খাজুরাহোতে খুব সুন্দর, ছোট্ট একটা এয়ারপোর্ট আছে। দিল্লি, মুম্বই, বারাণসী থেকে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে।

কোথায় থাকবেন?

মধ্যপ্রদেশ টুরিজম-এর টুরিস্ট ভিলেজ এবং ঝঙ্কার আর পায়েল হোটেল রয়েছে খাজুরাহো-তে।

পান্না-য় থাকার জন্য টুরিস্ট ভিলেজ আছে। আছে জঙ্গল ক্যাম্পও। কলকাতায় মধ্যপ্রদেশ টুরিজমের বুকিং অফিস রয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন বুকিংও সম্ভব।

Khajuraho Group of Monuments Khajuraho Monuments Nature History
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy