Advertisement
E-Paper

পরীক্ষায় বসেন শিক্ষকমশাইও

তিনি হরিনাথ দে। চৌত্রিশ বছরের জীবনে চৌত্রিশটি ভাষাজ্ঞান নেওয়া সেই আশ্চর্য মানুষটি! লিখছেন অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়িয়ে ধর্মতলা স্ট্রিট ধরে বাড়ি ফিরছেন হরিনাথ। আচমকা দেখলেন রাস্তার মোড়ে লোকজনের জটলা। দু’পা এগিয়ে যেতেই নজরে এল, এক যুবক তারস্বরে বক্তৃতা করছেন। তাঁকে ঘিরে যাঁরা, তাঁরা তাঁর একটি শব্দও বুঝছেন না। গুঞ্জন তাই নিয়ে। কিন্তু যুবকটির তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি উত্তেজিত হয়ে বক্তৃতা করেই চলেছেন। হরিনাথ কিন্তু একটু দাঁড়িয়েই বুঝে গিয়েছেন, ভাষাটি আরবি। এবং ধর্ম নিয়ে কোনও এক বিতর্কিত বক্তব্য রাখতে চাইছেন যুবক।

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০৩
চিত্রণ: বিমল দাস

চিত্রণ: বিমল দাস

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়িয়ে ধর্মতলা স্ট্রিট ধরে বাড়ি ফিরছেন হরিনাথ। আচমকা দেখলেন রাস্তার মোড়ে লোকজনের জটলা।

দু’পা এগিয়ে যেতেই নজরে এল, এক যুবক তারস্বরে বক্তৃতা করছেন। তাঁকে ঘিরে যাঁরা, তাঁরা তাঁর একটি শব্দও বুঝছেন না। গুঞ্জন তাই নিয়ে। কিন্তু যুবকটির তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি উত্তেজিত হয়ে বক্তৃতা করেই চলেছেন।

হরিনাথ কিন্তু একটু দাঁড়িয়েই বুঝে গিয়েছেন, ভাষাটি আরবি। এবং ধর্ম নিয়ে কোনও এক বিতর্কিত বক্তব্য রাখতে চাইছেন যুবক। এতক্ষণে কেউ বোঝেননি, তাই রক্ষে। কিন্তু কেউ যদি বুঝে ফেলেন, তো মহা বিপদে পড়ে যেতেই পারেন যুবক।

অপেক্ষা না করে হরিনাথ তখনই সটান বক্তার কাছে গিয়ে আরবি ভাষাতেই ওঁকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ভিড় থেকে বের করে আনলেন।

আলাপচারিতায় জানতে পারলেন, যুবকের নাম রিজকুল্লাহ মালাতি। নিবাস মিশর। হরিনাথ তাঁকে ঠাঁই দিলেন নিজের বাড়িতে।

প্রায় দু’বছর টানা হরিনাথের কাছেই ছিলেন এই মিশরীয়-যুবক। অতিথির সেবার জন্য অন্য সব উপসর্গ তো ছিলই, সেই সঙ্গে হরিনাথ তাঁকে নিয়মিত একটি মিশরীয় সংবাদ পত্রও জোগান দিয়েছিলেন। সে-কালে শহর কলকাতায় প্রায়-দুঃসাধ্য এই কাজটি হরিনাথ যে কী ভাবে সম্ভব করতেন, কে জানে! কিন্তু হরিনাথ ছিলেন এমনই। শুধু নিজ-ভাষাভাষী বলে নয়, অন্য ভাষীর প্রতিও তাঁর টান ছিল তীব্র।

কে এই হরিনাথ? হরিনাথ দে। চৌত্রিশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবন কাটিয়ে তিনি যখন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করছেন, তত দিনে কুড়িটি ইউরোপীয় ভাষা, চোদ্দোটি ভারতীয় ভাষা কব্জা করে ফেলেছিলেন।

ভাষা আর হরিনাথ। হরিনাথ আর ভাষা। ওইটুকু জীবনে এ-দুইকে ঘিরে কত যে গল্প!

ইতালি। ভ্যাটিকান সিটি। পোপ দশম পিউসের সামনে হরিনাথ। পোপকে চোস্ত লাতিন ভাষায় অভিবাদন জানালেন বাঙালি যুবক। হরিনাথের চোখা চোখা লাতিন উচ্চারণে স্তম্ভিত পোপ। পরামর্শ দিলেন, এ বার ইতালীয়টাও শিখে ফেললে হয় তো!

পোপকে স্তম্ভিত করে দিয়ে হরিনাথ এর পর তাঁর সঙ্গে সরাসরি ইতালীয়তেই কথা বলতে শুরু করে দিলেন!

হরিনাথের ল্যাটিন-দক্ষতা চমকে দিয়েছিল লর্ড কার্জনকে। আরবি ও পার্সি থেকে অনুবাদ করে তিনি সাহেবকে একটি বই উপহার দেন। বইটির উৎসর্গ পত্রটি ছিল ল্যাটিনে লেখা। তাতে এতটাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন কার্জন, যে ঢাকায় গিয়ে তিনি ডেকে পাঠান হরিনাথকে। হরিনাথ তখন ঢাকার এক কলেজের অধ্যাপক।

ভাষা নিয়ে হরিনাথকে ঘিরে এই যে অবাক-করা সব কাহিনি, তার শুরু কিন্তু শিশুকাল থেকেই।

তেমনই এক সময়ের কথা।

শিশু হরিনাথের তখনও অক্ষরজ্ঞান হয়নি। রায়পুরের বসত বাড়িতে তাঁর মা সব্জি কাটতে কাটতে ছোট্ট ছেলেকে তরকারির খোসা দিয়ে বাংলা বর্ণমালা বানিয়ে দিচ্ছিলেন।

ঘণ্টাখানেক এমন চলার পর দেখা গেল, সেই খোসা আর কাঠকয়লা দিয়ে ঘরময় বাংলা হরফ লিখে ফেলেছে কচি ছেলেটি!

অল্প একটু বড় হতে, আবারও সেই অবাক-কাহিনি।

যাতায়াত ছিল বাড়ির পাশের এক খ্রিস্টান মিশনে। এক ফাদারের কাছে বাইবেল পড়ত খুদে হরিনাথ। এক দিন ফাদার অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলেন, ছেলেটি আস্ত বাইবেল হিন্দিতে অনুবাদ করতে শুরু করেছে!

প্রেসিডেন্সি কলেজ। ভাষাতত্ত্বের ক্লাস চলছে। পড়াচ্ছেন অধ্যাপক এফজে রো। ভাষা পরিবর্তনের একটি জটিল বিষয় নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছেন। সকলেই অপ্রস্তুত। কী জবাব হবে ভেবে পাচ্ছে না কেউই।

অধ্যাপকের অনুমতি নিয়ে ব্ল্যাক বোর্ডের কাছে চলে গেল ছাত্র হরিনাথ। চক দিয়ে খস খস করে লিখে ফেলল উত্তর। বুকে জড়িয়ে ধরলেন অধ্যাপক রো। সে দিন থেকে তিনি ছাত্রকে রোমের বিখ্যাত দার্শনিক ও গদ্যকারের নামে ‘উপাধি’ দিলেন ‘সিসেরো’!

শুধু ক্লাস নয়, ভাষা নিয়ে হরিনাথের পরীক্ষায় বসাটাও ছিল অনেক সময়ই গল্পে ভরা।

পালি-র এমএ পরীক্ষা। সিক্স্থ পেপারের প্রশ্নপত্রে ‘ধনিয়সূত্ত’র (পালির জটিল একটি পাঠ) কয়েকটি পঙক্তি চোখে পড়তে উত্তর লেখা মাথায় উঠল। হলে বসেই সেটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ না করে শান্তি পেলেন না কিছুতেই!

আরেক বারের কথা।

সংস্কৃত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ভীষণ কঠিন হয়েছে। হরিনাথ তখন অধ্যাপক তো বটেই, কলকাতা বি‌শ্ববিদ্যালয়ের সেনেট-সদস্যও। প্রতিবাদ করলেন। আর তার জন্য হরিনাথের সংস্কৃত ভাষা জ্ঞান নিয়ে বাঁকা বাঁকা মন্তব্য ছুটে আসতে লাগল পণ্ডিত-কুল থেকে। হরিনাথের তা সইল না। ঠিক করলেন জবাব দিতে হবে। বসে পড়লেন সংস্কৃত এমএ পরীক্ষায়। স্যারের পাশে বসেই সে-পরীক্ষা দিয়েছিলেন ছাত্র সুরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। তাঁরই বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে, হরিনাথ নিজের পরীক্ষার খাতায় টানা বসে লেখেননি সে দিন। মাঝেমাঝেই উঠে গিয়ে ছাত্ররা কেমন পরীক্ষা দিচ্ছে, তার খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। তা সত্ত্বেও ফল বেরোতে পণ্ডিতকুল টের পেয়ে গিয়েছিলেন, হরিনাথ দে-র সংস্কৃত-জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা কী মুর্খামি হয়েছে!

ভাষায় এত স্কলার, অথচ সেই পণ্ডিত মানুষটি কিন্তু বিএ পরীক্ষায় দর্শনে ফেল করেছিলেন! ইংরেজি, লাতিনে যথারীতি হাই-ক্লাস নম্বর পেয়েও পাশ করেননি দর্শনে। অনার্সের নম্বর কেটে তাকে পাশ করানো হয়।

ছোটবেলাতেও এমন ঘটনা আছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক সহপাঠীর বাবা হরিনাথকে প্রচণ্ড বকুনি দিচ্ছেন, কেননা সে তাঁর ছেলেটিকে ‘গোল্লায়’ পাঠাচ্ছে, তাই।

রায়পুরের সরকারি স্কুল। অঙ্ক ক্লাসটা একদম না-পসন্দ হরিনাথের। পাশেই বসে ক্লাসের সেরা ছেলে নাটু। সে অঙ্কে তুখড়। হরিনাথের সঙ্গে তার খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল। এক দিন খেলার জন্য নাটুকে ডাকতে গিয়েছে হরিনাথ। এগিয়ে এলেন নাটুর বাবা। ডাক্তার উমেশচন্দ্র মিত্র। একচোট বকুনি খেতে হল উমেশচন্দ্রের কাছে। পড়া ছেড়ে খেলা! ভাবখানা এমন যেন, পড়াশুনোয় তো ভাল নয় হরিনাথ, তাই বুঝবে কী, নাটুর মতো ভাল হতে গেলে কতটা পড়াশুনো করতে লাগে!

এর পরের ঘটনা অবশ্য কিঞ্চিৎ অন্য রকম।

হরিনাথ গোটা ঘটনার কথা জানাল তার বাবা ভূতনাথকে। ভূতনাথ ছেলেকে কথা দিলেন ছেলে যদি ভাল রেজাল্ট করে তার পছন্দমতো বই কিনে দেবেন তিনি। অঙ্কে কাঁচা হরিনাথ মিডল স্কুল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে বৃত্তি নিয়ে পাশ করল। কথা রেখেছিলেন ভূতনাথও। স্থানীয় ‘পারসির দোকান’ থেকে কিনে দেন ছেলের পছন্দের সাহিত্য আর ভাষার বই।

এর পরের ঘটনাটি আরও খানিক অদ্ভুত।

কলকাতা। রিপন স্ট্রিটে ম্যাগ্রা সাহেবের কাছে কিছু দিন কাটালেন হরিনাথ। ভর্তি হলেন সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে। এনট্রান্স পরীক্ষা দেওয়ার আগে আচমকা ঘটল এক দুর্ঘটনা। ডান চোখে আঘাত। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। পড়াশোনা সব বন্ধ।

তখন সহপাঠীরা এসে মাঝেসাঝেই হরিনাথকে পড়া শুনিয়ে যেতে লাগল। খুব আশা যদি কোনও ক্রমে হরিনাথ উদ্ধার পায়। উদ্ধার তো পেলই হরিনাথ, মিলল বৃত্তিও।

ভাষার প্রতি প্রবল আকর্ষণের পাশাপাশি দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সংগ্রহ ছিল হরিনাথের অনন্ত নেশা। তবে তাকে যে নিজের বলে একেবারে আগলে বেড়িয়েছেন, তেমনটা তো নয়ই, বরং উল্টো।

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ানোর সময় যেমন।

এক দিন দেখলেন সহকর্মী হেনরি অর্নেস্ট স্টেপলটন এক জটিল সমস্যায় পড়েছেন। কী ব্যাপার? এগিয়ে এলেন হরিনাথ। হেনরির সঙ্গে কথা বলে একটা সমাধান-সূত্র বার করলেন। নিজের সংগ্রহ থেকে ওঁকে এনে দিলেন ‘পূর্ববঙ্গের জাতি, বর্ণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য’ নামের একটি বই। বহু কষ্টে জোগাড় করা। সে যে কতটা দুষ্প্রাপ্য শুনুন—মোটে বারোটি কপি ছাপা হয়। তার একটিই ছিল হরিনাথের কাছে। এর পরেও সহকর্মীর প্রয়োজনে সেটিও তাঁর হাতে তুলে দিতে তিলমাত্র ভাবলেন না হরিনাথ।

দুষ্প্রাপ্য বইয়ের জন্য কী না কী করেছেন হরিনাথ! কোথায় না কোথায় গিয়েছেন। হঠাৎ একদিন চলে গেলেন বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজে বের করলেন কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’-এর প্রাচীনতম পুঁথিটি। এমনি করেই পার্সি ও তুর্কি ভাষায় লেখা বৈরাম খানের একমাত্র পাণ্ডুলিপি থেকে ওয়ারেন হেস্টিংসের স্বহস্তে লেখা চিঠি, দারা শিকোর করা বেদের পার্সি অনুবাদ— এ সবই ছিল হরিনাথের নিজস্ব সংগ্রহে।

শোনা যায়, সেই সময়ে প্রতি মাসে ছ’শো টাকারও বেশি বই কিনতেন তিনি।

একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে লেখা হয়, মৃত্যুর সময় হরিনাথের সংগ্রহে ছিল হাজার সাতেক পুঁথি ও বই। যার আনুমানিক দাম, ১৯১১ সালের হিসেবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। দুর্ভাগ্য, হরিনাথের এই সংগ্রহশালাকে সম্পূর্ণ ভাবে রক্ষা করতে পারা যায়নি। কোনও এক কারণে, মাত্র হাজার তিনেক টাকায় তা বিক্রি হয়ে যায়।

সংগ্রহশালাটি গিয়েছে। এ বার বোধ হয় তাঁর সম্পাদিত অজস্র বই, লেখাপত্রেরও একই দশা হতে চলেছে!

স্টেপলটনের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছিলেন, তেমন অন্যকে গবেষণায় সাহায্য করাটি ছিল যেন, হরিনাথের এক ধরনের নেশা।

অন্তত দু’টি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রথমটি ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের। তখন ঔরঙ্গজেবের শাসনকাল সম্পর্কে গবেষণার উপাদান সংগ্রহ করছিলেন যদুনাথ। তিনি আবার তখন পটনা কলেজের অধ্যাপকও। যদুনাথ ভারী বিপদে পড়েছিলেন একটা পার্সি পুঁথি ঘাঁটতে গিয়ে। পার্সিতে তিনি সুপণ্ডিত। তবু অনেক চেষ্টাতেও বুঝতে পারছিলেন না কয়েকটি শব্দের অর্থ। অগত্যা হরিনাথের শরণাপন্ন হলেন। দেখামাত্র হরিনাথ শব্দগুলির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বুঝিয়ে দিলেন যদুনাথকে।

দ্বিতীয় ঘটনাটি আরেক ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। রাখালদাস তখন বাংলাদেশের ইতিহাস লিখছেন। খবর পেয়ে হরিনাথ সাগ্রহে রাখালদাসের কাছে গিয়ে তাঁর সংগ্রহে থাকা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নথি দিয়ে এলেন রাখালদাসকে।— রাজা হরিবর্মদেবের তাম্রলেখ।

উদারমনা, অসম্ভব উদ্যমী পণ্ডিত এই মানুষটি জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটি ফেললেন মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়েসে!

টাইফয়েড হল। তিন-চারটি দিন অচেতন অবস্থাতেই পড়ে রইলেন। দিনভর চেষ্টা করলেন নীলরতন সরকার, হরিনাথ ঘোষ, প্রাণধন বসুর মতো সেকালের সব নামকরা ডাক্তার।

তবু হরিনাথকে ধরে রাখা গেল না।

ঋণ: বিস্মৃত ভাষাবিদ্ হরিনাথ দে (সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়), আচার্য হরিনাথ (অঘোরনাথ ঘোষ)

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy