ছবি: প্রণব বসু
একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে স্বজনদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন বেসুরে বাজে হিংসা, ঈর্ষা, লোভ, সন্দেহ, স্বার্থপরতায় তা নিয়ে এক অনাড়ম্বর গল্প কল্পায়ুর নতুন নাটক ‘সুরান্তর’-এর (নাটক ও পরিচালনা: জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায়)। নাটকের শুরু মায়ের মৃত্যুর পর। প্রথম দৃশ্যেই সঙ্কটের সূচনা, যখন বড় বৌ ঐন্দ্রিলা দেওর-ভাজ-ননদ-নন্দাইয়ের বিরুদ্ধে মনের গরল উগরে দেয় স্বামী ললিতের কাছে। অভিঘাতে কোনও সাসপেন্স নেই, তবু দর্শকমন উদগ্রীব হয়ে ওঠে বেসুরের বিস্তার আর তার পরিণতির জন্যে। নাটক জমে ওঠে যখন শোকার্ত ছোট ছেলে এবং মেয়ে-জামাই মায়ের শেষকৃত্যের জন্য বাড়িতে এসে ক্রমশ সম্পত্তি নিয়ে কালনেমির লঙ্কাভাগ শুরু করে। বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন, সম্পত্তির মালিকানা ছিল মায়ের। ললিত মাঝে মাঝেই জোগায় কৌতুকের রসদ, টেনে বার করে ভাই-বোন-ভগ্নিপতির স্বচ্ছ শোকাভিনয়ের আড়াল থেকে তাদের সম্পত্তি লোভের বিষ। নাটকের অভিমুখ প্রহসনের দিকে ঝুঁকলেও প্রযোজনার মেজাজ সিরিয়াস কমেডির। কিন্তু এক তড়িঘড়ি গোঁজামিলের পরিণতি ঘটে যখন হারানো সুর ফিরে আসে বা সুরান্তর ঘটে। যাই ঘটুক তার কোনও নাটকীয় প্রস্তুতি নেই।
তবু মসৃণ উপস্থাপনা এবং সূক্ষ্ম ভাবব্যঞ্জনার অভিনয়ে দু’ঘণ্টার একটি নিটোল প্রযোজনা। ললিত সংসার জলে এক টুকরো মাখনের মতো, চরিত্রটির ব্যতিক্রমী ঋজুতা এক অনুচ্চ অথচ সুষ্ঠু নাটকীয় মাত্রা পেয়েছে পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়ে। কুটিল, কুচুক্কুরে সংসারে অশান্তির অন্যতম উৎস অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐন্দ্রিলা এই প্রযোজনার সম্পদ। কমল চট্টোপাধ্যায়ের বাবা সাজা বা সেয়ানা পাগল হলেও নাটকে তাঁর প্রচ্ছন্ন বিবেকের ভূমিকা অনবদ্য। কিন্তু স্ত্রীবিয়োগের পর হঠাৎ স্ত্রীর প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে সাড়ম্বরে ক্ষমা চাওয়ার কোনও নাটকীয় প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। অন্যান্য ভূমিকায় উল্লেখযোগ্য কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রযোজনার গতি স্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছে শুভব্রত নন্দীর পরিচ্ছন্ন মঞ্চে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy