Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এখনও আমার সেরাটা দেওয়া হল না

আজও বলেন জিনাত আমন। ইন্ডাস্ট্রি কী বলে তাঁকে নিয়ে? শুনলেন আভা গোস্বামীবড়লোকের বাউন্ডুলে মেয়ে হিপি হয়ে গেল। ভাঙাচেরা, তেতো দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে বেঁচে থাকা মহিলা গভীরভাবে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লেন। কিংবা একজন সুখী গণিকা। ছবির দৃশ্য-চরিত্র যাই-ই হোক, শরীরী আবেদন আর গ্ল্যামার মিলিয়ে অনায়াসে জাদু দেখাতেন তিনি। জিনাত আমন। শুধু যৌন আবেদন দিয়ে ঝড় তোলা নায়িকা নন, জিনাত ছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। সব মিলিয়ে বলিউডে এক অবাক করা ঘটনার নাম জিনাত। সত্তর দশকের একজন অভিনেত্রী, নিজের অজান্তেই হিন্দি ফিল্মি নায়িকার ‘ভালো মেয়ের ইমেজ’-কে কেমন উড়িয়ে দিয়েছিলেন! শুধু নিজের ব্যক্তিত্ব আর পছন্দ দিয়ে।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০০:১৩
Share: Save:

বড়লোকের বাউন্ডুলে মেয়ে হিপি হয়ে গেল।

ভাঙাচেরা, তেতো দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে বেঁচে থাকা মহিলা গভীরভাবে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লেন।

কিংবা একজন সুখী গণিকা।

ছবির দৃশ্য-চরিত্র যাই-ই হোক, শরীরী আবেদন আর গ্ল্যামার মিলিয়ে অনায়াসে জাদু দেখাতেন তিনি।

জিনাত আমন। শুধু যৌন আবেদন দিয়ে ঝড় তোলা নায়িকা নন, জিনাত ছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। সব মিলিয়ে বলিউডে এক অবাক করা ঘটনার নাম জিনাত।

সত্তর দশকের একজন অভিনেত্রী, নিজের অজান্তেই হিন্দি ফিল্মি নায়িকার ‘ভালো মেয়ের ইমেজ’-কে কেমন উড়িয়ে দিয়েছিলেন! শুধু নিজের ব্যক্তিত্ব আর পছন্দ দিয়ে।

১৯৭১-এর ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’। জিনাত এখানে চুরমার হয়ে যাওয়া একটা বাড়ির ভগ্নহৃদয় এক যুবতী। এই চরিত্রে তাঁর অভিনয় যেন এক ঝলক তাজা হাওয়া এনে দিয়েছিল। আর সেটা এমনই এক সময়ে, যখন এলিয়ে-দুলিয়ে চলা ভারতের অর্থনীতি নিয়ে চারপাশে একেবারে মোহভঙ্গ হয়েছে। চারদিকে বেকারি, একটা তালগোল পাকানো দশা, রক্ত। দুই সুপার পাওয়ারের মধ্যে ‘প্রক্সি ওয়ার’ (ভিয়েতনাম যুদ্ধ)।

পরিস্থিতি এমনই যে শিক্ষিত, ভারতীয়দের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। তখন পর্দায় জিনাতের স্বাভাবিক অবজ্ঞা জড়ানো আচরণ কোথাও একটা অন্য চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। সময়ের নিয়মের উল্টো পারে দাঁড়িয়ে যৌনতাও প্রতিবাদ হয়ে দেখা দিয়েছে।

চলচ্চিত্র সাংবাদিক চৈতন্য পাড়ুকোন। কেরিয়ারের গোড়া থেকেই তিনি জিনাতকে চেনেন। বলছিলেন, “ও বরাবরই বলে এসেছে, আমি যাই-ই করি, নিজের ১১০ ভাগ দিতে পছন্দ করি। পাশাপাশি জিনাত হল হাতেগোনা সেই শিল্পীদের মধ্যে একজন, যে কি না বার বার ‘ক্যালকুলেটিভ রিস্ক’ নিয়ে গেছে। ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’-য় যেমন, ওর চরিত্রটা নায়কের বোন। অমন একটা রোল কিন্তু ওর পক্ষে আত্মহত্যার মতো হয়ে যেতে পারত। তবু ও ঝুঁকিটা নিয়েছে।”

চৈতন্যর শেষ কথার সূত্র ধরে আরও নমুনা দেওয়াই যায়।

জিনাতের ল্যান্ডমার্ক পারফরম্যান্স ‘রোটি কাপড়া অওর মকান’ (১৯৭৪), সুযোগসন্ধানী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক মহিলার চরিত্রে জিনাত; বিতর্কিত ছবি ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ (১৯৭৮)। রাজ কপূর জিনাতের যৌনতাকে ব্যবহার করলেন বাঁধনছেঁড়া উদ্দামতা নিয়ে; এর পরও আছে, ‘হীরাপান্না’ (১৯৭৩), ‘ডন’ (১৯৭৮), ‘কুরবানি’ (১৯৮০), ‘লাওয়ারিশ’ (১৯৮১)।

লোকে বলে, চরিত্রের ব্যাপারে জিনাত ছিলেন অসম্ভব খোলামেলা। যে কারণে হেমা মালিনী তখন মক্ষিরানি হলেও, বড় বড় ব্যানারওয়ালা প্রযোজক-পরিচালক সুযোগ পেলেই বেশি বেশি করে জিনাতের দিকেই ঝুঁকেছে। বলিউডে এরকমই একটা উদাহরণ হল, রাজ কপূরের ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’-এ জিনাতের রোলটা পেয়ে যাওয়া। অদ্ভুত একটা ‘ব্লান্ট’ লুক তৈরি করে চরিত্রটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জিনাত। এর পর ওঁকে ‘সেক্স সিম্বল’ হিসেবে ডাকা হতে লাগল। যদিও সে ছবির পরে রাজ কপূর বা জিনাত দুজনেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বলা হয়েছে, ‘সত্যম শিবম...’-এ প্রাণ নেই, আছে শুধুই যৌনতা।

চৈতন্য বলছিলেন, “জিনাত ওর নিজের সময়ের অন্যতম সেরা একজন রিফাইন্ড আর কালচারড অভিনেত্রী। একই সঙ্গে স্পষ্টবাদী। পার্টিকুলার। মনে পড়ে মেহবুব স্টুডিয়োয় আর ডি বর্মনের স্টেজ শো-র রিহার্সাল। ‘দম মারো দম’ গানটার জন্য জিনাতের ওখানে আসার কথা। লোকজন ভেবেছিল অত বড় একজন স্টার, রিহার্সালে কিছুতেই আসবে না। একেবারে ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামের শো-এ চলে যাবে। জিনাত কিন্তু এসেছিল। একদম সাদামাটা একটা পোশাকে। রিহার্সালও দিল। এমনকী ওর অভিনয়ের টুকটাক ইনপুটও বুনে দিল।” বলিউডের অনেকেই মানেন, এখনও অবধি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আর একজন জিনাতকে খুঁজে পেল না। যদিও পরভিন ববিকে বলা হত ‘পুওর ম্যানস্ জিনাত’। যাঁদের জিনাতকে নেওয়ার ক্ষমতা হত না, তাঁরা পরভিনকে নিতেন। বা পদ্মিনী কোলাপুরিকে ডাকা হত ‘বেবি জিনাত’ বলে। কিন্তু জিনাত, জিনাতই।

এত কিছুর পরেও কিন্তু জিনাত ফিল্মে যে সব কাজকম্ম করে গেছেন, সে সবের চেয়ে ওঁর ব্যক্তিগত জীবনটা লোকজনকে বেশি টেনেছে।

জিনাতের অদ্ভুত একটা ঝোঁক ছিল। ভুলভাল লোকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া। যে কারণে যে ক’জন মানুষের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন, আঘাত পেয়েছেন। জীবনটা একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়া যাকে বলে, তাই হয়েছে। কখনও ধাক্কাটা এসেছে ওঁর পুরুষসঙ্গীর কাছ থেকে, তো কখনও স্বামী।

ওঁর প্রথম স্বামী সঞ্জয় খানের কথাই ধরুন। অভিনেতা সঞ্জয় খান। তাঁর সঙ্গে ভয়ঙ্করভাবে ভেঙে যায় জিনাতের সম্পর্ক। কোথায়? না, একটা পাঁচ তারা হোটেলে। হোটেল তাজ প্রেসিডেন্ট। হুড়োতাড়া করে বিয়ে। তারপর সেই সঞ্জয়েরই অত্যাচারের ঠেলায় জিনাত চিরকালের জন্য একটা চোখই হারিয়ে ফেললেন।

অমন চোখ নিয়েও জিনাত হার মানেনি। আবার ঘুরে দাঁড়ালেন। আবার প্রেমেও পড়লেন। এ বার বিয়ে করলেন মজহার খানকে। বারো বছর একসঙ্গে ছিলেন মজহারের সঙ্গে। তখনই দুই ছেলের মা হন জিনাত আজান আর জাহান। দুর্ভাগ্য তারপরও পিছু ছাড়ল না। প্রচণ্ড অসুস্থতা আর বাড়াবাড়ি রকমের খরচখরচার মুখে দাঁড়িয়ে নব্বইয়ের দশকে জিনাত আর মজহারের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে ওঁর মনকষাকষি এমন পর্যায়ে যায়, যে খবরের কাগজে হেড লাইন পর্যন্ত হতে থাকে। বন্ধু ডিম্পল কাপাডিয়া আর পরিচালক হানি ইরানিকে নিয়ে জিনাত সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন। শ্বশুরবাড়িতে তার ওপর কেমন অত্যাচার চলত, প্রকাশ্যে সে সব কথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে।

জিনাতের সঙ্গে ‘গাওয়াহি’-তে একসঙ্গে কাজ করেছেন বিবেক ভাসওয়ানি। ভাসওয়ানি মনে করেন, জিনাতের ব্যক্তিগত জীবনটা ওঁর কেরিয়ারকে খুব ক্ষতি করে দিয়েছে। বিশেষ করে সঞ্জয় খানের সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক। জিনাত প্রচুর ফিল্ম ছেড়ে দিয়েছেন, শুধু সঞ্জয় খানের সঙ্গে ‘আবদুল্লা’ করবেন বলে। সেই সুযোগে একের পর এক ছবি পেয়ে গেছেন পরভিন ববি। এর পরও কিন্তু খুব বাজে একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে সঞ্জয়-জিনাত সম্পর্কটা ভেঙে যায়।

তখন আবার ওর একটা চোখও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যে জন্য পর পর বড় ছবি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন জিনাত।

যখন মজহার এলেন ওঁর জীবনে, জিনাত অভিনয় প্রায় ছেড়েই দিলেন। মজহারকে পরিচালক করতে হবে, লক্ষ্য তখন একটাই।

‘গ্যাং’ ছবি করে মজহার পরিচালক হলেন। যে ছবির প্রযোজকও ছিলেন তিনি। বহু ঝঞ্ঝাট পোয়াতে হয়েছে ছবিটা করতে। তৈরি হতে লেগেছিল ছ’বছর। রিলিজ পেতে আরও দু’বছর।

২০০০ সালে যখন ‘গ্যাং’ মুক্তি পায় তার আগে মজহারের মৃত্যু হয়েছে। রেনাল ফেলিওরে। ১৯৯৮-এর সেপ্টেম্বর মাসে। তার আগে জিনাত অবশ্য বিচ্ছেদের মামলা করে ফেলেছিলেন। মজহারের সঙ্গে সম্পর্কও যে শেষমেশ ভাল ছিল না, এ কথা অনেকেই জানেন। জিনাতকে মজহার ‘চিটিং’-এর জন্যও অভিযুক্ত করেন। উল্টো দিকে জিনাত বলেছেন, তাঁকে মারধোর পর্যন্ত করেছেন তাঁর স্বামী।

চৈতন্য পাড়ুকোন বলছিলেন, “বলিউডের সঙ্গে অনেক দিন ধরে জড়িয়ে থাকা লোকজনের কী মনে হয় জানেন? জিনাত অভিনেত্রী হিসেবে আরও খ্যাতি, আরও সম্মান অর্জন করতে পারত, যদি ব্যক্তিগত জীবনে ওকে এত সমস্যার মধ্যে পড়তে না হত। এমনকী জিনাতকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, ও-ও বলে ওর সব চেয়ে সেরা ক্ষমতাটা এখনও ব্যবহারই করা হয়নি।”

প্রদীপ বান্ডেকর। একজন আলোকচিত্রী। বললেন, “সব সময় ফোটোগ্রাফের ব্যাপারে অসম্ভব পার্টিকুলার জিনাত। আমার একবারের কথা মনে আছে। ফিল্মস্তানে আমরা যেখানে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখলাম জিনাত বাইরে বসে আছে। ভেতরে ওরই একটা ছবির শু্যটিং হচ্ছে। আমরা তো ওর ছবি তুলতে লেগেছি। হঠাৎ ও উঠে দাঁড়াল। বলল, না না, প্লিজ তুলবেন না। মেকআপটা ভাল নয়...এ রকম কিছু কথা।” বান্দেকরের আরও মনে আছে, “যখন জিনাত চোখের অসুবিধের পর ফিল্মে ফিরল, এক দিন আমাকে আড়ালে ডেকে বলল, দেখো তো কেমন লাগছে আমায়। বললাম, দুর্ধর্ষ। একেবারে আগে যেমনটা ছিল। ও শুনল কথাটা। নিজেকে নিয়ে বেশ মজাও করত জিনাত।”

ইন্ডাস্ট্রির সবাই অবশ্য এমনটা মনে করেন না। আড়ালে আবডালে অনেকেই বলেন, জিনাত আমন বেশ পুরনো ঘরানার মানুষ।

ওঁকে নিয়ে তো একটা নামও চালু আছে বলিউডে, ‘ড্রামা ক্যুইন’। জিনাতের জন্ম ভারতে। মা ভারতীয়, সৎ বাবা জার্মান। জিনাতের যখন তেরো বছর বয়স, তখন ওঁর বাবা আমানুল্লা খান মারা যান। আমানুল্লা ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ। ছিলেন চিত্রনাট্যকার। ‘মুঘল ই আজম’, ‘পাকিজা’র মতো ছবির স্ক্রিপ্ট ওঁরই। আমানুল্লা মারা যাওয়ার পর জিনাতের মা আবার বিয়ে করেন ওই জার্মান ভদ্রলোককে। ওদেশের নাগরিকত্বও নেন। মেয়ের বয়স তখন তেরো। জিনাতকে ওঁর মা নিয়ে চলে যান জার্মানি। শোনা যায়, এ দেশ ছেড়ে যেতে একেবারেই সায় ছিল না জিনাতের।

জিনাতের ছোটবেলাটা ছিল প্রচুর ঘোরাঘুরির। লস এঞ্জেলেস-এ পড়াশোনা। জার্মানিতে বড় হওয়া। আঠেরো বছর বয়েসে ভারতে ফেরা। এখানকার একটা নামী ম্যাগাজিনে কাজ নেওয়া। মডেলিং। ভীষণই ছন্নছাড়া জীবন কেটেছে তাঁর শৈশব থেকেই। অসম্ভব একাকীত্বে ভরা। অনেকে বলেন, যৌবনে এগুলোই তাঁকে মানসিক ভাবে খুব ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। মিস ইন্ডিয়া হলেন। মিস এশিয়া প্যাসিফিকও হলেন সত্তর দশকে। তখন বয়স কতই’বা! লাইমলাইট, গ্ল্যামারের জগৎ এক সময় তাঁকে মুভিস্টার বানিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার পাশাপাশি করে দিয়েছিল অসম্ভব একাকী।

বলিউডে জিনাতের কেরিয়ার অবশ্য ভাল ভাবে শুরু হয়নি। প্রথম ছবি ওপি রালহানের ‘হালচাল’। বক্সঅফিস পায়নি। কিন্তু পরে পর পর কয়েকটি ছবি ওঁকে ফোকাসে এনে দেয়। ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’ যেমন। অথচ মজার কথা, এই ছবিতে জিনাত যে রোলটি করেন সেটি প্রথম দেওয়া হয় জাহিদাকে। জাহিদা করতে চেয়েছিলেন হিরোইনের চরিত্র। যেটা চলে যায় মুমতাজের জিম্মায়। তাতে গোঁসা করে জাহিদা সরে গেলে, জিনাতের ভাগ্য খোলে।

পর্দায় জিনাতের বড় টার্নিং-পয়েন্ট দেবানন্দের সঙ্গে তাঁর জুটি। জিনাত-দেবানন্দ মিলে যে সব ছবি করেন, ‘হীরা পান্না’, ‘ইশক্ ইশক্ ইশক্’, ‘প্রেমসূত্র’, ‘ওয়ারেন্ট’, ‘ডার্লিং ডার্লিং’, ‘কালাবাজ’ প্রত্যেকটাতেই জিনাত নিজের জাত চিনিয়ে যেতে থাকেন।

ব্রিটানিকার ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব হিন্দি সিনেমা’ জিনাতকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তারা যা বলে তার সারসংক্ষেপ অনেকটা এরকম হিন্দি ছবির হিরোইনদের বৈশিষ্ট্যতে জিনাত আমন একটা অন্য মাত্রা এনে দিয়েছেন। ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’, ‘ইয়াদোঁ কি বরাত’-এর মতো ছবিতে ভরা যৌবন আর পশ্চিমি ধাঁচের ইমেজটাকে মিলিয়ে একটা নতুন ট্রেন্ড তাঁরই তৈরি।

ট্র্যাডিশনাল নায়িকা থেকে ধান্দাবাজ মেয়ে, ১৪ বছরে নানা ধরনের চরিত্র করেছেন। তার মধ্যে অদ্ভুত একটা ব্যালান্সও রেখেছেন। কিন্তু ১৯৮৩-তে ‘পুকার’-এর পর ওঁর কেরিয়ার যেন একটু পড়তির দিকে চলে গেল। যেটা ‘ডাকু হাসিনা’-তে এসে একেবারে থমকে গেল। যদিও অনন্ত বালানির ছবি ‘গাওয়াহি’ প্রশংসা পায়।

মজহারকে বিয়ে করার পর থেকেই জিনাত ফিল্ম থেকে দূরে থেকেছেন। ফিরলেন ‘ভোপাল এক্সপ্রেস’-এ। তারপর ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে ‘বুম’ (২০০৩)। চূড়ান্ত ফ্লপ। শেষ কয়েক বছরে একেবারে নতুন পরিচালকদের সঙ্গে ‘আগলি আউর পাগলি’ (২০০৮), ‘ডুন্নো ওয়াই না জানে কিঁউ’ (২০১০)-এর মতো ছবিও করেছেন।

‘ডুন্নো ওয়াই...’-এর পরিচালক সঞ্জয় শর্মা বলছিলেন, “একেবারে নতুন একজন অভিনত্রী যেমন ভাবে কাজ করতে চান, ঠিক তেমন ভাবেই ওঁকে পেয়েছিলাম! সব সময় শিখতে চাইছেন। অসম্ভব কোঅপারেটিভ। এক জন সিনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে অন্যদের মতো সম্মান অবশ্যই তিনি আশা করেছিলেন, তার বাইরে কিচ্ছু না। আমরাও ওঁর প্রয়োজন মতো সব কিছু জুগিয়ে গিয়েছি।” শর্মার অভিজ্ঞতা হল, “স্ক্রিপ্ট-সংলাপ কয়েক দিন আগে চেয়ে নিতেন। সেটে যখন আসতেন দেখতাম, সব সংলাপ নিজের হাতে লেখা। অসম্ভব পাংচুয়াল। আর ওয়ার্ড্রোবের ব্যাপারে এখনও প্রচণ্ড পার্টিকুলার।”

মাত্র ৪ বছর আগের ঘটনা। তা’ও তো একই রকম লাগে! সেই ‘দম মারো দম’-এর জিনাত যেমন। আসলে এখনও অভিনয়ের খিদেটা যায়নি যে! বয়স ৬৩, তাতে কি, এই বয়েসে দাঁড়িয়েও জিনাত আমনরাই বলতে পারেন “এখনও আমার সেরাটা দেওয়া হল না...।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abha goswami zeenat aman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE