Advertisement
E-Paper

গান গাইতে গেলে সঙ্গে বন্দুকও রাখতাম

ইদানীং ভাবছেন গান গাওয়া ছেড়ে দেবেন। আজন্ম ডানপিটে। বাজি ধরাটা নেশা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-উত্তমকুমার থেকে উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি-পণ্ডিত রবিশঙ্করকে নিয়ে ছকভাঙা আড্ডায় নির্মলা মিশ্র। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়একফালি ঘর। বিছানায় টানটান করে চাদর পাতা। এক দিকে পড়ে আছে এক ব্যাগ নতুন শাড়ি (ভুবনেশ্বর থেকে ভক্তদের উপহার), কোথাও বা অবহেলায় আপন দ্যুতি ছড়াচ্ছে হিরের নাকছাবি। হুঁশই নেই তাঁর। তিনি নির্মলা মিশ্র। ঘর বলতে, কসবার চব্বিশ পল্লিতে ওঁর ছোট্ট ফ্ল্যাট।— “দেখুন আমার স্বামীর দেওয়া এই ছিপছিপে ফ্ল্যাট। আমার স্বামীও যেমন ছিপছিপে, ফ্ল্যাটটাও তাই। গানের আলাদা কোনও ঘর নেই। দারুণ মিউজিক সিস্টেম নেই। আছে কেবল দুজনের দুটো হারমোনিয়াম।”

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৫
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

একফালি ঘর। বিছানায় টানটান করে চাদর পাতা।

এক দিকে পড়ে আছে এক ব্যাগ নতুন শাড়ি (ভুবনেশ্বর থেকে ভক্তদের উপহার), কোথাও বা অবহেলায় আপন দ্যুতি ছড়াচ্ছে হিরের নাকছাবি। হুঁশই নেই তাঁর। তিনি নির্মলা মিশ্র।

ঘর বলতে, কসবার চব্বিশ পল্লিতে ওঁর ছোট্ট ফ্ল্যাট।— “দেখুন আমার স্বামীর দেওয়া এই ছিপছিপে ফ্ল্যাট। আমার স্বামীও যেমন ছিপছিপে, ফ্ল্যাটটাও তাই। গানের আলাদা কোনও ঘর নেই। দারুণ মিউজিক সিস্টেম নেই। আছে কেবল দুজনের দুটো হারমোনিয়াম।”

গানের জগৎ থেকে সরে আসতে চান। ইদানীং বলেন, কোথায় আমার সেই সোনাঝরা দিন!

কথায় কথায় উপচে পড়ে অভিমান। পরক্ষণেই গুনগুন সুর, “এ তুমি কেমন তুমি চোখের তারায় আয়না ধরো....।” যেন সুরমণ্ডলের মেঘলা বন্দিশ। আলাদা করে গান গাইতে বসতে হয় না তাঁকে। সুরের ভিতর দিয়েই হাসি-কান্নার জীবনকে ছুঁয়ে দেখতে চান তিনি।

পত্রিকা: নির্মলা মিশ্র গান থেকে সরে আসতে চাইছেন, এও কি সত্যি?

নির্মলা: আমার একদম ভাল লাগছে না ভাই। সেদিন একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছি, হঠাৎ একজন শিল্পী এলেন। আমার থেকে অনেক ছোট। বললেন, তাঁকে আগে গাইতে দিতে হবে। অন্য অনুষ্ঠান আছে। পরে ওঁরই মিউজিশিয়ানদের কাছে শুনলাম অনুষ্ঠানের কোনও ব্যাপারই নেই! মিথ্যে বলে উনি আগে গেয়ে নিলেন।

ভাবুন তো! আমরা কোথায় আছি? সিনিয়রদের সম্মান জানাতে জানেই না আজকের প্রজন্ম। উপরন্তু দেখা হলে কথা পর্যন্ত বলে না! কাউকে এখন ফোন করে যদি বলি তোমার গান শুনলাম, বেশ ভাল লাগল, তাতে যা হাবভাব নেয়! ধুর!... এসব থেকে সরে আসাই ভাল।

পত্রিকা: আজকের শিল্পীরা কিন্তু উল্টো কথা বলেন। তাঁদের মতে সিনিয়ররা বেশির ভাগই ‘স্বর্ণযুগের শিল্পী’ ভেবে নিজেদের আলাদা করে রাখেন....

নির্মলা: (খানিক রেগে) দেখুন স্বর্ণযুগের শিল্পী বললে ক্ষতি কি? আজকের শিল্পীরা ব্যঙ্গ করে বলে তো আমাদের, ওই যে স্বর্ণযুগের শিল্পী এলেন। কিন্তু ভাবুন একবার, কারা ছিলেন ওই সময়! সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, উৎপলাদি (সেন), আলপনাদি (বন্দ্যোপাধ্যায়), প্রতিমাদি (বন্দ্যোপাধ্যায়), ওদিকে ভালদাদা (মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়), শ্যামল মিত্র, সবাই আমরা একসঙ্গে গান গাইতাম। এরকমও হয়েছে, মঞ্চে গান গাইবার আগে এমন গল্পের নেশা, আড্ডা ছেড়ে মঞ্চে যেতে পারছেন না আলপনাদি। অথচ আলপনাদির নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। তখন বলে কিনা, যা তুই গেয়ে আয়। আর শুনুন, আজকের শিল্পীরাও তো সেই স্বর্ণযুগের গানই বেশি গায়। কেন? ওগুলো বাদ দিয়ে নিজেদের গান গেয়ে দাঁড়াক দেখি সবাই।

পত্রিকা: আপনিই তো গুনগুন করছিলেন ‘এ তুমি কেমন তুমি’। এটা তো কবীর সুমনের গান...

নির্মলা: (থামিয়ে দিয়ে) শুনুন, আমি আপনাদের মতো ওকে কবীর সুমন ভাবতে পারি না। ও আমার কাছে সুমন চট্টোপাধ্যায়। ওকে কি আজ থেকে চিনি আমি? ওর বাবা সুধীন চট্টোপাধ্যায়ের গুণগুলো পেয়েছে ও। (‘এ তুমি কেমন তুমি’ গাইতে গাইতে)....এই গানটা চমৎকার হয়েছে।

পত্রিকা: আচ্ছা, অতই ঘনিষ্ঠ যখন আপনাদের পরিচয়, কবীর সুমনের গান আপনি কেন করেননি? সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তো গেয়েছেন...

নির্মলা: নাহ্, ওর গান গাওয়া হয়নি। আসলে ও কিছু বলেনি।

পত্রিকা: কেবল কবীর সুমন? আর কারও গান পছন্দ হয় না?

নির্মলা: নচির (নচিকেতা চক্রবর্তী) গানও ভাল লাগে। সুন্দর লেখেও...ওই যে ওই গানটা শুভমিতার গলায়...(উত্তেজিত হয়ে হাত নাড়তে নাড়তে সুর ভাঁজতে লাগলেন) ‘যেভাবেই তুমি সকাল দেখো সূর্য কিন্তু একটাই’।

পত্রিকা: আজকের বাংলা গানের কথাও আপনার ভাল লাগছে...

নির্মলা: (গান থামিয়ে) এই গানগুলো তো ব্যতিক্রম। আজকের গান তো ‘টুনির মা’ আর ‘খোকাবাবু যায় লাল জুতো পায়’। একদিন নজরুল মঞ্চে এই সময়ের এক বিখ্যাত গায়ককে গাইতে শুনলাম, ‘গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা’। ওফ্, যন্ত্রের যন্ত্রণা! (দুই কানে হাত) মা গো! জগঝম্প। এরা কি কথা বোঝে না? আজকের প্রজন্ম গান ‘খাওয়াতে’ চায়। সেসব গান তুবড়ির মতো জ্বলে উঠে মিলিয়ে যায়। কিছু আবার বলাও যাবে না। আমি তো রেগে গেলে ক্যাট ক্যাট করে কথা শুনিয়ে দিই...

পত্রিকা: রাগের জন্যই সরোদিয়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে ‘ঠাকুরদা’ বলেন নাকি?

নির্মলা: আরে না, না। আমার মেজদার (মুরারি মিশ্র) নামে মুরারি স্মৃতি সম্মেলনের প্রতিযোগিতা ছিল তখনকার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা। নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হৈমন্তী শুক্লা, সকলে ওখান থেকে বেরিয়েছেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তও তাই। কিন্তু উনি কোনও দিন সে কথা উল্লেখ করেন না!

একদিন আর থাকতে না পেরে কলামন্দিরের এক অনুষ্ঠানে আমি বলে ফেলেছিলাম বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বাংলা নাম বলে বোধহয় মুরারি সঙ্গীত প্রতিযোগিতার কথা বলেন না! উনিও ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। এ কথা শোনবার পর উনি আমায় বলেছিলেন, ‘আপনি আমার ঠাকুমা, আর আমি তো আপনাদের কম্পিটিটার।’ সেই থেকে আমিও রেগে গিয়ে ওঁকে ‘ঠাকুরদা’ বলি।

পত্রিকা: আপনি নাকি অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের ওপর একবার খেপে গিয়ে গুন্ডা পিটিয়েছিলেন?

নির্মলা: (চোখ বড় করে) আরে! আমি তো সঙ্গে বন্দুকও রাখতাম। তখনকার দিনে অনেক গুন্ডা মস্তানদের জলসায় গান গাইতে যেতে হত। একবার মনে আছে নলিন সরকার স্ট্রিটের অনুষ্ঠান। তখনকার দিনের নামকরা এক গুন্ডা তার আয়োজক। গাইতে গেছি, এ দিকে সেখানে আমাকে বসিয়েই রেখেছে, কিছুতেই গাইতে ডাকছে না। আর আমি যাতে রেগে চলে না যাই আমার ন-দাকে (ভানু মিশ্র) একটা ঘরে আটকে রেখে দিয়েছে। জানে না তো আমায়! তখন আমার গা ভর্তি গয়না, দামি শাড়ি। ব্যাপারটা শুনেই শাড়িটাকে হাঁটু অবধি তুলে আঁচল কোমরে বেঁধে উদ্যোক্তাদের একজনকে এক ঘুষি মেরে গুন্ডার পিছু নিয়েছিলাম। সবাই তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমি একজন সুগায়িকা, একজন মহিলা, এ সব কিস্যু মনে হয়নি সেদিন, এরকম ক্ষেত্রে আজও হয় না। সবাই বলে আমাকে রাগিয়ে দিলে এমন ঝামেলা বাধাব (হাসতে হাসতে নেচে উঠলেন) তখন সামলানো দায় হবে। সবাই তো সেই কারণেই ‘ঝামেলা’ বলে ডাকে আমায়। আর খুব মারকুটেও তো ছিলাম!

পত্রিকা: তখনকার দিনে মেয়ে হয়েও তবলা বাজাতেন। মঞ্চে বাজিয়েছেন?

নির্মলা: তবে শুনুন, উত্তমকুমারের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে একবার শম্পা (কুণ্ডু) গাইবে। ওকে কিন্তু আমিই গানের জগতে নিয়ে এসেছি। সেদিন শ্রীকান্তকে (আচার্য) বললাম, শম্পার গানের সঙ্গে আমি তবলা বাজাব। তুই হারমোনিয়াম ধর। শ্রীকান্ত দারুণ হারমোনিয়াম বাজায়। স্প্যানিশ গিটার বাজাল রাঘব (চট্টোপাধ্যায়)। মনে হয়েছিল এত ভাল জন্মদিনের অনুষ্ঠান উত্তমকুমারের জীবিত অবস্থায় হয়নি।

পত্রিকা: টলিউডের এক বিখ্যাত নায়ক আপনাকে নাকি ‘পাখিরা এখানে এসে’ বলে গানের লাইনটা ধরে ডাকতেন? কে তিনি?

নির্মলা: কে আবার? উত্তমকুমার। উনি বলতেন, আমায় ‘পাখিরা এখানে এসে’। ওরকম মানুষ আর হবে না। ‘আকাশ পাতাল’ ছবিতে গান গাইতে গিয়ে প্রথম ওঁর সঙ্গে আলাপ।

ওই দিনটাই মনে থাকবে আমার, সাতটা ছবিতে প্লে ব্যাকের জন্য সই করি আমি। যখন ওঁকে চিনতাম না খুব ভয় পেতাম। ভাবতাম ড্রিঙ্ক করেন। বাপরে...না জানি কেমন....(মুখ কাঁচুমাচু করে) কিন্তু পরে দেখেছি একদম দরাজ মানুষ, স্পট বয় থেকে কো-অ্যাক্টর সকলকেই এক চোখে দেখতেন। একবার মালদায় বন্যাত্রাণের জন্য অনুষ্ঠান করতে গিয়ে পেটে ব্যথার অভিনয় করে উত্তমকুমারকে ঘাবড়ে দিয়েছিলাম। উনি এক মুহূর্তের জন্যও বুঝতে পারেননি আমি অভিনয় করছি। শেষে একশ টাকার বাজিতে উনি হেরে গিয়েছিলেন।

পত্রিকা: রেগে যাওয়ার মতো বাজি ধরাটাও কি আপনার স্বভাব? শোনা যায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কেও বাজিতে হারিয়ে দিয়েছিলেন আপনি?

নির্মলা: আমার ছেলেমানুষি আজও কমেনি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আমার সম্পর্কে আত্মীয় কিন্তু। ওঁর ঠাকুরদাদা আর আমার ঠাকুরদাদা মামাতো-পিসতুতো ভাই। জয়নগর মজিলপুরে আমাদের আদি বাড়ি। খুব তাড়াতাড়ি গান ডাব করতাম বলে উনি আমায় বলতেন ‘ডাবিং কুইন’। একবার হেমন্তদাকে বলেছিলাম আমি যতক্ষণ গান গাইব ততক্ষণ তোমায় জলে ডুবিয়ে বিস্কুট খেয়ে যেতে হবে, না পারলে আমার জিত। আমি তো গলা ছেড়ে গান গেয়েই চলেছি, ওদিকে হেমন্তদা চারটে বিস্কুট খেয়েই কুপোকাত। এইসব মজা করতাম বলে লোকে পাগলি বলত আমায়।

পত্রিকা: সেই ‘পাগলি’ ঘর বাঁধল কেমন করে?

নির্মলা: আমার স্বামী প্রদীপ দাশগুপ্ত একাধারে সুরকার, গীতিকার, গায়ক। প্রথমেই ওকে বিয়ে করব ভাবিনি। আমি বলে কি না, টারজানকে পছন্দ করি! এ দিকে আমার মা খুব পছন্দ করতেন ওঁকে, বলেছিলেন, আমি চলে গেলে একমাত্র ওই তোকে আমার মতো করে দেখবে। সত্যি তাই হল। এখন আমার ছেলেও তো বিয়ে করে আলাদা থাকে। খুব মনখারাপ করে ছেলের জন্য। (হঠাৎ এতক্ষণ মুখে লেগে থাকা হাসিটা মিলিয়ে গেল) আমার স্বামীর জন্য আজও এত আনন্দে আছি আমি। ওকে জয় বলে ডাকি, ও আমাকে জয়ী বলে। বন্ধুতা আছে বলেই, মনেই হয় না বিয়ের অনেক দিন হয়ে গেল।

পত্রিকা: শোনা যায়, আপনার স্বামীর গানের কথা নিয়ে অন্য নাম দিয়ে বাজারে এক সময় অনেক রেকর্ড বেরত? সেই কারণেই কি উনি গানের জগৎ থেকে চলে এলেন?

নির্মলা: দেখুন, ওঁর বহু গান নিয়েই এমন হয়েছে। কিন্তু আমায় মাপ করবেন কে বা কারা কাজটা করতেন, সেটা আজ আমি কিছুতেই বলব না। লোকজনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে আমার। আর আমার স্বামীও কোনও দিন এ নিয়ে কাউকে কিছু বলেননি। আমার অসুস্থতার কারণে উনি গান ছেড়ে দেবেন বলে মানত করেছিলেন। আসলে (মুচকি হেসে) বৌকে খুব ভালবাসে তো...

পত্রিকা: পণ্ডিত রবিশঙ্করের ‘স্যুইট গার্ল’ আর উস্তাদ বড়ে গোলামের ‘মেয়ে’ হওয়া একই সঙ্গে সম্ভব কী করে?

নির্মলা: আমার বাবা মোহিনী মোহন মিশ্র ছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের স্বনামধন্য পণ্ডিত। তখন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সব দিকপালই আমাদের বাড়ি আসতেন। বড়ে গোলাম আলি খানের কোলে বসে ওঁর গান শুনতাম। উনি আমাকে মেয়ে বলতেন। ওঁর ছেলে মুনাব্বরকে বলতেন, যেদিন আমার মেয়ে তোমার গান শুনে মাথা নাড়বে সেদিন তুমি মঞ্চে গাইবে। রবিশঙ্করের ‘কালামাটি’ ছবিতে গান গেয়েছি। উনি মজা করে আমায় ডাকতেন ‘স্যুইট গার্ল’। আমজাদ আলি খানের বাবা হাফিজ আলি খান। চেতলা বয়েজের হলে বাজাতে আসতেন। ওঁর বাজনা শুনে গায়ে কাঁটা দিত।

পত্রিকা: নির্মলা মিশ্রর গায়কিতে এমন সহজ সাবলীল ভাব আছে, মনে হতে পারে, গান গাওয়া কী সহজ! সত্যি কি গান গাওয়া এখন সহজ?

নির্মলা: গানকে পুজোর মতো করে গাইতে হবে। গান গাওয়া সহজ নয়। তবে প্রথাগত শিক্ষা আমার ছিল না। আসলে সুরের মধ্যেই বরাবর থেকেছি। (আবার গেয়ে উঠলেন ‘যেভাবেই তুমি সকাল দেখো....’)

পত্রিকা: আচ্ছা, আপনার জনপ্রিয়তা কিন্তু অনেক দেরিতে এসেছে?

নির্মলা: সত্যিই অনেক দেরিতে এসেছে আমার জনপ্রিয়তা। কেরিয়ার তৈরি করতে হবে বলে আজকালকার মেয়েদের মতো ড্যাশি-পুশি তো ছিলাম না। তবে তার জন্য মনখারাপ করিনি। গান করে গেছি। ‘বঙ্গবিভূষণ’ পেয়ে খুব ভাল লেগেছে। পুরীর মন্দির থেকে পেয়েছি ‘গান-গান্ধর্বী’ খেতাব। ওটাও আমার কাছে বেশ সম্মানের।

পত্রিকা: আপনি কি ওড়িয়া?

নির্মলা: মিশ্র পদবি বলে অনেকে এমন ভাবে। এটা আসলে খেতাব।

পত্রিকা: আর জীবনের ক্ষোভ? ঝিনুক কি খুঁজে পেলেন যাতে মুক্তো আছে?

নির্মলা: নাহ্, পাইনি, তবে আমার নিজের ক্ষোভ নেই কোনও। (লাফিয়ে উঠে সিটি বাজিয়ে নিলেন একবার) খুশি হলে সিটি দিই আমি। (খানিক চুপ করে) তবে ভাল গান আর শুনতে পাই না। আমার ঝলমলে দিনের কথা মনে পড়ে তখন। আর একটা জিনিস, জানেন, আজকাল মনে হয় এ জন্মই আমার শেষ জন্ম হোক। আর আমি জন্মাতে চাই না। ফিরতেও চাই না কোনও সুরে।

কিছুতেই ছবি তুলতে চাইছিলেন না। শাড়ি পরার নামে আজও গায়ে জ্বর আসে। একটাই খয়েরি রঙের লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁটে, গালে এমনকী চোখের ওপরটা ভরাট করলেন। চট করে লাগালেন লাল টিপ। কোনও মতে জড়িয়ে নিলেন শাড়ি। গান ভাঁজতে লাগলেন.... ‘কেউ কথা বোলো না গো/ এই তারা জ্বলা শুভ সন্ধ্যায় সে আসবে কথা আছে/ যার স্বপ্ন এত সুন্দর...’

সুরের অতলে হারিয়ে যাওয়া মানুষটিকে তখন মানবী বলে মনে হচ্ছিল না... যেন দেবী, নয়তো কোনও জীবন্ত বিগ্রহ! ...ক্যামেরার শাটারের খচ খচ শব্দ এত অসহ্য কোনও দিন লাগেনি...

nirmala mishra srovonti bandyopadhyay bengali music
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy