প্র: টানা গরমের পর হঠাৎ বৃষ্টি, বাচ্চাদের গলা ব্যথা, সর্দি, জ্বর শুরু হয়ে গেছে। কী করব?
উ: ঠাণ্ডা-গরমে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। তার জন্যই এই অবস্থা। বাচ্চাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেবেন না। যদি ভিজে যায়, সঙ্গে সঙ্গে জলটা মুছিয়ে দিন আর তক্ষুণি তক্ষুণি এসি-তে ঢুকতে দেবেন না। ঠাণ্ডা জলও খেতে দেবেন না। স্যুপ জাতীয় গরম কিছু খেতে দিন।
প্র: একটু গরম বাড়লেই সারাক্ষণ এসি-তে থাকতে চাইছে, ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম দেদার খাচ্ছে। তাতেও ঠান্ডাও বাধাচ্ছে।
উ: তার মধ্যেও যতটুকু সম্ভব সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষ করে যাদের একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়।
প্র: খুব ছোট বাচ্চাদের তো সমস্যা আরও বেশি হয়।
উ: হ্যা।ঁ বাচ্চা খুব ছোট হলে কিছু বলতে পারে না। তাই ওদের জ্বর হলে সেটাও খুব বাড়াবাড়ি হয়।
প্র: এ রকম হলে কী করব?
উ: বয়স অনুযায়ী প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বা সিরাপ দিতে পারেন। ঠান্ডা থেকে বাচ্চাদের অনেক সময় কানে ব্যথা হয়। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কানে ইয়ার ড্রপ দেবেন না। ব্যথা বাড়লে কাপড়ে নুন ভরে শুকনো তাওয়ায় গরম করে সেঁক দিতে পারেন। ব্যথা কমবে। তবে কান দিয়ে পুঁজ বা রক্ত বেরোলে, অবিলম্বে ডাক্তার দেখাতে হবে।
প্র: কান দিয়ে রক্ত!
উ: বাচ্চাদের টনসিলের ইনফেকশন থেকে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। প্রথম দিকে ওষুধেই ভাল হয়ে যায়। তিন সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে অপারেশন করতে হতে পারে। তাই সমস্যা হলে আগেভাগেই ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে।
প্র: আগে ভাগে কী করে বুঝব ব্যাপারটা এই দিকে গড়াচ্ছে?
উ: কান দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। সঙ্গে কানে ব্যথা হতে পারে। কানটা ভারী মতো লাগতে পারে। শুনতে অসুবিধে হয়। পাশাপাশি জ্বরও আসতে পারে।
প্র: খুব ছোট বাচ্চা কি এত কিছু বুঝতে পারে?
উ: সেটাই তো হয় মুশকিল। বাচ্চারা অতশত বোঝে না। প্যারাসিটামল দিয়ে রেখে দিলে সাময়িক ব্যথা কমে। এর পর পুঁজ পড়া বন্ধ হয়ে গেলে বাড়ির লোক ভাবে ঠিক হয়ে গেছে। ও ভাবেই রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে কানের পর্দা ফুটো হয়ে যায়। তাই বাচ্চারা কানে সমস্যা হচ্ছে বললে ইএনটি বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে নেবেন।
প্র: বড়দের যাঁদের এমনিতেই টনসিলের প্রবণতা, তাঁরা কী করবেন?
উ: রোদ্দুর থেকে এসে কনকনে ঠান্ডা জল খাবেন না। বারবার এসি, নন-এসি করবেন না, নিয়মিত গার্গল করবেন। সহ্য না হলে বেশি বার স্নান করবেন না। সর্দি হলেও খুব জোর করে নাক ঝাড়তে যাবেন না। তাতে রক্ত পড়তে পারে।
প্র: কিন্তু নাক আটকে থাকলে খুব অস্বস্তি হয়...
উ: উষ্ণ গরম জল নাক দিয়ে হাল্কা করে টেনে আস্তে করে ছেড়ে দিন। ন্যাসাল ড্রপ দিতে পারেন। তবে সেটা বেশি দিন ব্যবহার করা উচিত নয়।
প্র: গার্গল কি ডিসপ্রিন দিয়ে করব? উ: একটু নুন বা এক চিমটে খাবার সোডা জলে ফেলে মিনিট পাঁচেক গার্গল করবেন।
প্র: ঠান্ডা লাগলে আর কী করব?
উ: বার বার গরম কিছু যেমন স্যুপ, চা ইত্যাদি খান। গলায় সমস্যা হলে টক জাতীয় জিনিস খাবেন না।
প্র: টক খেলে গলার সমস্যা বাড়ে?
উ: বাড়তে পারে। বিশেষত চাইনিজ খাবারে যে সব সস ব্যবহার করা হয়, বা ধোসা-সম্বর, ফুচকার জল ইত্যাদি টক জাতীয় খাবার থেকে সমস্যা বাড়ে। তাই ঠাণ্ডা লাগলে এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সাইনাস বা ডাস্ট অ্যালার্জি থাকলে বাইরের ধুলো-ধোঁয়া এড়িয়ে চলবেন।
প্র: বাইরে তো ধুলো ধোঁয়া থাকবেই।
উ: সার্জিকাল মাস্ক বা ট্রাফিক পুলিশরা যে ধরনের মাস্ক ব্যবহার করেন, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। নইলে ওড়নায় নাক-মুখ ঢাকুন। ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহার করবেন।
গলা ব্যথায় লবঙ্গ
• গলা ব্যথা হলে লবঙ্গ, আদাকুচি মুখে রাখতে পারেন
• খুব রোদ্দুর থেকে এসে ঠান্ডা জল খাবেন না
• বাইরে বেরোনোর আগে খানিকটা জল খেয়ে বেরোন। বাইরে বেরিয়েও জল খান
• ঠান্ডা লেগে গেলে টক জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন
• শরীরকে ঢেকে রাখুন
ডা.দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
যোগাযোগ: ৯৮৩০০৪৮৫০৬
সাক্ষাৎকার: রুমি গঙ্গোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy