Advertisement
E-Paper

ব্রেকফাস্ট একদম বাতিল করবেন না

ঘণ্টায় ঘণ্টায় কফিও খাবেন না। তা হলে কিন্তু কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। বলছেন ডা. রাজীব শীল। কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।প্র: ইদানীং দেখছি প্রায়ই লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করতে বলছেন ডাক্তাররা। কেন? উ: এর থেকে বোঝা যায় রক্তে কোলেস্টেরল আর ট্রাইগ্লিসারাইড ঠিক আছে কি না। প্র: থাইরয়েডের সমস্যার জন্য ডাক্তার দেখাতে গিয়েও দেখেছি সেই লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করতে হবে। উ: আসলে কোলেস্টেরল আর ট্রাইগ্লিসারাইড নানা শারীরিক সমস্যার সঙ্গে লতায়-পাতায় জড়িয়ে থাকে। তাই ওগুলো দেখা হয়।

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০০:০০

প্র: ইদানীং দেখছি প্রায়ই লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করতে বলছেন ডাক্তাররা। কেন?
উ: এর থেকে বোঝা যায় রক্তে কোলেস্টেরল আর ট্রাইগ্লিসারাইড ঠিক আছে কি না।

প্র: থাইরয়েডের সমস্যার জন্য ডাক্তার দেখাতে গিয়েও দেখেছি সেই লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করতে হবে।
উ: আসলে কোলেস্টেরল আর ট্রাইগ্লিসারাইড নানা শারীরিক সমস্যার সঙ্গে লতায়-পাতায় জড়িয়ে থাকে। তাই ওগুলো দেখা হয়।

প্র: কোলেস্টেরল বাড়লে তো হার্টের সমস্যা হয় শুনেছি...
উ: হার্ট কেন, কিডনি, প্যানক্রিয়াস, থাইরয়েড, লিভার, সব কিছুর সঙ্গে এই কোলেস্টেরল জড়িয়ে। ব্যাপারটা অনেকটা বাড়ির জলের কলের মতো। পাইপে মরচে পড়লে জলের গতি কমে যায়। কোলেস্টেরলও সে রকম। রক্তনালীর মধ্যে এর আস্তরণ জমতে জমতে রক্তপ্রবাহের রাস্তাটাকে সরু করে দেয়। সেটা শরীরের যে অংশে হয়, সেখানেই সমস্যা দেখা দেয়। হার্টের কোনও রক্তনালিতে হলে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।

প্র: রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ছে বুঝব কী করে?
উ: সাধারণত এগুলি রুটিন টেস্টে ধরা পড়ে। বা ধরুন অন্য কোনও সমস্যা নিয়ে এলেন। সে সময় লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করে ব্যাপারটা ধরা পড়ল।

প্র: তার মানে রুটিন টেস্টটা জরুরি?
উ: অবশ্যই। ৩৫-এর পর বছরে এক বার রক্তের রুটিন টেস্ট আর লিপিড প্রোফাইল দেখে নেওয়াটা খুব দরকার। আর যদি পরিবারে কোলেস্টেরলের ইতিহাস থাকে তবে ৩০-এর পর থেকেই বছরে এক বার রুটিন টেস্ট শুরু করে দিতে হবে।

প্র: এখন তো শুনি খুব কম বয়সিদেরও কোলেস্টেরল ধরা পড়ছে। তবে?
উ: ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাস আর আয়েসি জীবনযাত্রার জন্য খুব কম বয়সেই কোলেস্টেরল বেড়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে খাওয়াদাওয়ায় রাশ টেনে, ওষুধ খেয়ে কোলেস্টেরলকে স্বাভাবিক করতে হবে।

প্র: ওষুধ না খেয়ে কমানো যায় না?
উ: খাওয়াদাওয়া, লাইফস্টাইল পরিবর্তন আর এক্সারসাইজ নিয়মিত করলে কিছুটা তো কাজ হয়ই। তবে সবার আগে ধূমপানের অভ্যাস ছাড়তে হবে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিনের বেশি মদ্যপান করবেন না। তবে পরিমিত ভাবে। বাকিদের ওষুধ খেতেই হবে। কোলেস্টেরল আর ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর জন্য খুব ভাল ওষুধ আছে। তা ছাড়া কোলেস্টেরলকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে আর ভাল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে।

প্র: খাওয়াদাওয়ায় রাশ বলতে?
উ: তৈলাক্ত, মশলাদার, আর ফ্যাটযুক্ত খাবারে লাগাম টানতে হবে। ফুল ক্রিম মিল্ক, মাখন, ঘি, রেড মিট যতটা সম্ভব কম। স্ন্যাকস জাতীয় খাবারও কমিয়ে দিতে হবে।

প্র: তবে খাবটা কী?
উ: পাস্তা, দানাশস্য, প্রচুর ফল আর সবজি খান। স্প্রাউটেড বিনস খান। ডায়াবেটিস না থাকলে ভাতও চলবে। লিন মিট খেতে পারেন। তৈলাক্ত মাছ কোলেস্টেরলের জন্য খুব উপকারী। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই ধরনের মাছ খেতে পারলে ভাল। মাছের তেলও খেতে পারেন। তবে প্রেগন্যান্সির সময় কোলেস্টেরল বাড়লে সে ক্ষেত্রে তৈলাক্ত মাছ কম খাওয়া দরকার। সারা দিনে প্রচুর জল খাবেন। ফ্রুট জুস, লিকার চা বা গ্রিন টি’ও উপকারী। আর খাবারে নুনের পরিমাণ কমাতে হবে। দিনে ৬ গ্রামের বেশি নয়।

প্র: নুনও হিসেব করে খেতে হবে?
উ: হ্যাঁ। চানাচুর, চিপসের মতো প্যাকেটের খাবারের মধ্যে প্রচুর নুন থাকে। তার পর ধরুন আচার, মুখশুদ্ধি। এগুলোও নুনে ভরপুর। এগুলি খাওয়া কমিয়ে দিলেই অনেকটা কাজ হবে।

প্র: আর তেল?
উ: রেপসিড অয়েল, সানফ্লাওয়ার, অলিভ অয়েল খেতে পারেন। কোলেস্টেরল আর ট্রাইগ্লিসারাইড থাকলে সরষের তেল খাবেন না। কোলেস্টেরল না থাকলে দিনে ১৫ গ্রামের (বড় চামচের দেড় চামচ) মতো সরষের তেল খেতে পারেন। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।

প্র: ডিম খাওয়া যাবে?
উ: ডিমের সাদা অংশটা খেতেই পারেন। তবে সপ্তাহে দুই দিন কুসুম অংশটাও খেতে পারেন।

প্র: অনেকে বলেন রসুন নাকি কোলেস্টেরলের জন্য উপকারী?
উ: হ্যাঁ। প্রতি দিন এক কোয়া করে রসুন খেতে পারলে ভাল। কোলেস্টেরল কমাতে রোজ কিছু না মিশিয়ে বাড়িতে পাতা সাদা টক দই খেতে পারলে ভাল। রঙিন সবজি খান। ডায়বেটিস না থাকলে অল্প করে ড্রাই ফ্রুটস আর আমন্ড খেতে পারেন। মোট কথা যার যা সমস্যা, সেটার জন্য যা খাওয়া বারণ, সেটা বাদ দিয়ে খান।

প্র: কিন্তু কোলেস্টেরলের ভয়ে এই ভাবে হিসেব করে খেতে খেতে তো জীবনটাই পানসে হয়ে যাবে।
উ: সপ্তাহে এক দিন বা দুই সপ্তাহে এক দিন প্রাণ ভরে খেতে বারণ করছি না তো। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যে ক্যালোরিটা অতিরিক্ত ঢুকল, সেটাকে এক্সারসাইজের মাধ্যমে বের করে দিতে হবে। তা হলে সব ঠিক থাকবে।

প্র: কী রকম এক্সারসাইজ?
উ: সপ্তাহে ৫-৬ দিন ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন। রোজ ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। মোটামুটি ভাবে তিন থেকে চার কিলোমিটার। অভ্যেস না থাকলে প্রথম প্রথম এক থেকে দুই কিলোমিটার মতো হাঁটুন। ক্রমে বাড়াতে হবে। সাঁতারও খুব ভাল। বাড়িতে যোগাসন, ফ্রি-হ্যান্ড যেটা ভাল লাগে করতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে কোনও ভাবেই ভুঁড়ি যেন না বাড়ে।

প্র: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর কী করব?
উ: স্ট্রেসকে কাছে ঘেঁষতে দেবেন না।

প্র: তা বললে কী হয়! স্ট্রেস তো রোজকার সঙ্গী।
উ: স্ট্রেস সবারই সঙ্গী। কিন্তু স্ট্রেসকে দূরে রাখার কায়দাও জানতে হবে। স্ট্রেস যেন কোনও ভাবেই আপনার মাথাব্যথার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। নিয়মিত এক্সারসাইজ বা সাঁতার স্ট্রেস সামলাতে সাহায্য করবে। আর সব সময় পজেটিভ চিন্তাভাবনা করবেন। হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করবেন। আর লাইফস্টাইলটা দরকার মতো পরিবর্তন করে নিতে হবে।

প্র: কী রকম?
উ: ঠিক সময় মতো খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ব্রেকফাস্ট কোনও ভাবেই বাতিল করবেন না। কাজের ফাঁকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় কফি খাওয়া বা দিনের পর দিন রাত জেগে কাজ চলবে না।

প্র: আর কিছু?
উ: ডাক্তারকে না জানিয়ে নিজে নিজেই ওষুধ খাবেন না। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর কোলেস্টেরলের ওষুধ খেলে তিন মাস পর পর কিছু টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।

প্র: সেটা কী?
উ: রুটিন ব্লাড টেস্ট আর ১২ ঘন্টা ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল। আগের দিন রাত আটটায় খেলে পর দিন সকাল আটটায় রক্ত দিতে হবে। মাঝে জল ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারবেন না। করতে হবে লিভার ফাংশন টেস্ট। দেখে নিতে হবে রক্তে সুগারের মাত্রাও। আর কোলেস্টেরল বেশি থাকলে নিয়মিত হার্টের ডাক্তার দেখাতে হবে।

যোগযোগ: ৯৮৩১০৮১০৮৮

কোলেস্টেরলকে বশে রাখতে

• ধূমপান বন্ধ করুন।
• ফিজিকাল এক্সারসাইজ জরুরি।
• রেড মিট, সি-ফুড এড়িয়ে চলুন।
• স্ট্রেসকে ঘেঁষতে দেবেন না।
• নুন খাওয়া কমাতে হবে।
• রোজ এক কোয়া রসুন খান।
• ঘরে পাতা সাদা দই আর রঙিন শাকসব্জি খান।
• ফ্রুট জুস, লিকার চা বা গ্রিন টি’ও উপকারী।

patrika health doctor rajib sil rumi gangopadhyay rumi ganguly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy