Advertisement
E-Paper

ঝুঁকির দাঁড়িপাল্লায়

ডাইভার্সিফায়েড ফান্ড বনাম সেক্টর ফান্ড। মিউচুয়াল ফান্ডের হাত ধরে শেয়ারে লগ্নি করার জন্য কোন পথে এগোবেন আপনি? ভেবে দেখুনডাইভার্সিফায়েড ফান্ড বনাম সেক্টর ফান্ড। মিউচুয়াল ফান্ডের হাত ধরে শেয়ারে লগ্নি করার জন্য কোন পথে এগোবেন আপনি? ভেবে দেখুন

নীলাঞ্জন দে

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০০:২২

শেয়ার বাজারে লগ্নি করবেন কিন্তু ঝুঁকি নেবেন না, তা কি হয়? তবে হ্যাঁ, নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী ঝুঁকির গণ্ডি টেনে লগ্নি করার ব্যবস্থা আছে শেয়ার নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতে। যেমন, এক ধরনের ফান্ডে রয়েছে বাজারের ঝড়ঝাপটার হাত থেকে বাঁচার ঢাল। সেখানে রিটার্ন হয়তো তুলনায় খানিকটা কম, কিন্তু তেমনই কম ডোবার সম্ভাবনাও। আবার অন্য এক ফান্ডে ওই ঝুঁকিটাই তুরুপের তাস। যা উতরোতে পারলে তাক লাগানো রিটার্নের দৌলতে আপনি রাজা। তবে ভাগ্য ভাল না-হলে বড় লোকসান গোনার দিনও দেখতে হতে পারে।

আজকের আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাব ঝুঁকি কম-বেশির নিরিখে সম্পূর্ণ আলাদা এই দু’ধরনের ফান্ডের তুলনামূলক ভাল-খারাপ, সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদির খতিয়ানে চোখ রেখেই। যার একটি হল ডাইভার্সিফায়েড ফান্ড, অন্যটি সেক্টর।

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে

এক নয়, অনেক— ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডের মূলমন্ত্রই এটি। এখানে ফান্ডের তহবিল দিয়ে নানা রকম শিল্পের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার কেনা হয়। বড়, মাঝারি ও ছোট, মূলধনের বিচারে যে-কোনও মাপের সংস্থার শেয়ারেই মিলিয়ে মিশিয়ে লগ্নি করা হতে পারে।

বৈচিত্র্যেই ফায়দা: ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন শেয়ারে লগ্নির একটি উদ্দেশ্য যদি ঝুঁকির স্রোত থেকে মাথা বাঁচানো হয়, তা হলে অন্যটি হল বাজারের সমস্ত দিক থেকেই ফায়দা তোলার একনিষ্ঠ চেষ্টা।

ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডের তহবিল দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে আবাসন, ব্যাঙ্কিং, ইস্পাত, ভোগ্যপণ্য, গাড়ি, সিমেন্টের মতো বিভিন্ন শিল্পের যে-কোনও সংস্থার শেয়ার কেনা হতে পারে। দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি ধসে না-পড়লে সাধারণত একসঙ্গে সব শিল্পের দুর্দিন আসে না। এই ভাবনা থেকেই এক লপ্তে বিভিন্ন ক্ষেত্রের একাধিক সংস্থায় লগ্নি করে নিজের অবস্থান তুলনায় নিরাপদ রাখার কৌশল নেয় এই ফান্ড। ঝুঁকি এড়ানোর আদর্শ পন্থা এটা।

লক্ষ্য ১: কোনও কারণে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি বা দু’টি শিল্পে আশানুরূপ বৃদ্ধি না-ই হতে পারে। সেই অনুযায়ী ফান্ডের ন্যাভ-ও নেমে যায়। কিন্তু তবু কোনও চাপ নেই। কারণ সেই সময়ে অন্য শিল্পের হয়তো পৌষ মাস। তাই সেই শিল্পের আওতায় থাকা সংস্থার শেয়ার দর তখন ভাল মতো বাড়বে। ফলে কিছু সংস্থার শেয়ার দরের পতনে যে-লোকসান গুনতে হল ফান্ডকে, বাকিগুলির উত্থান তা পুষিয়ে দেবে। ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডের তুরুপের তাস এটাই। সুতরাং ফান্ড যদি খুব ভাল ভাবে দেখে-শুনে বিভিন্ন শিল্পের শেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লগ্নি করে থাকে, তবে কোনও না-কোনও ক্ষেত্র থেকে মুনাফা নিশ্চিত।

লক্ষ্য ২: এমন হতেই পারে যে, সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত কিংবা দেশ-বিদেশের কোনও ঘটনার জেরে একসঙ্গে দু’তিনটি শিল্প বৃদ্ধির মুখ দেখছে বা দেখতে চলেছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে থাকার কারণে ডাইভার্সিফায়েড ফান্ড সব জায়গা থেকেই সেই ফায়দা তুলতে সক্ষম। মাত্র একটি শিল্পে লগ্নি করলে কিন্তু সব শিল্পের বৃদ্ধির সুযোগ এ ভাবে নেওয়া সম্ভব হত না। তবে এ সব সুবিধা নিতে হলে লগ্নির আগে বিভিন্ন শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে, সেই অনুযায়ী তহবিল বণ্টন করার ব্যবস্থা করতে হবে।

পাখির চোখ একটাই

বেশি ঝুঁকি, বড় রিটার্ন— মিউচুয়াল ফান্ড দুনিয়ায় এই চালু কথাটা কার্যত সেক্টর ফান্ডের চরিত্রকেই তুলে ধরে। এই ধরনের ইকুইটি ফান্ডের লগ্নি সীমাবদ্ধ রাখা হয় নির্দিষ্ট একটি শিল্পের মধ্যে। অর্থাৎ সেক্টর ফান্ডের তহবিল দিয়ে একটি শিল্পেরই একাধিক সংস্থার শেয়ার কেনা হয়।

ঝুঁকিই সম্পদ: যাঁদের রিটার্নের খিদে প্রবল এবং সে জন্য যে-কোনও মাপের ঝুঁকি নিতে আপত্তি নেই, তাঁদের পক্ষে এটি আদর্শ। কারণ, বেশি রিটার্নের পথে হাঁটার জন্যই এই ফান্ড ঝুঁকিপূর্ণ লগ্নির কৌশল নেয়। ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডের ঠিক বিপরীতে এই সেক্টর ফান্ড। একটি মাত্র শিল্পেই এই ফান্ড তার তহবিলের সবটা ঢালে বলে তার বাঁচা-মরা সবই ওই একটি সুতোর উপর ঝুলে থাকে। ভারতের বাজারে সেক্টর ফান্ডের সংখ্যা এমনিতে খুবই হাতে গোনা। হয়তো বেশি ঝুঁকি বলেই এ দেশের লগ্নিকারীরা একে একটু এড়িয়ে চলেন। ব্যাঙ্কিং, ভোগ্যপণ্য, ওষুধ ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প নির্ভর সেক্টর ফান্ডই প্রচলিত ভারতের বাজারে।

লক্ষ্য: সরকারের কোনও সিদ্ধান্তের জেরে বা অর্থনৈতিক কিংবা নীতিগত কোনও কারণে অনেক সময়ে একটি শিল্পকে সার্বিক ভাবে ফুলেফেঁপে উঠতে দেখা যায়, বা সে রকম সম্ভাবনা তৈরি হয়। তখন সেই শিল্পের আওতায় থাকা সব সংস্থার শেয়ারেই তার প্রভাব পড়ে। এই ফান্ডের উদ্দেশ্য হল, পুরো লাভটাই নিজের পকেটে পোরা। ফলে ন্যাভ দ্রুত উপরে উঠতে থাকে। যে-কারণে এই ফান্ডের রিটার্ন ভাল হলে, তা অন্য যে-কোনও লগ্নির রিটার্নকে অনেক পেছনে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

তবে বিভিন্ন শিল্পের অগ্রগতি, লাভ-লোকসানের সম্ভাবনা, সরকারের নীতি বা সংস্কারের সিদ্ধান্ত ইত্যাদি বিচার করে খুব দেখেশুনে সেক্টর ফান্ড বাছতে হয়। কারণ,
যে-শিল্পে বাজি রাখলেন সেটি মুখ থুবড়ে পড়লে কিন্তু লগ্নিকারীরই দফারফা। অবশ্য বয়স কম হলে এবং দীর্ঘ মেয়াদে এই ফান্ডে লগ্নি করে রাখতে পারলে ঝুঁকির পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা বাড়ে।

মনে রাখবেন: সেক্টর ফান্ডে আগ্রহী লগ্নিকারীদের ক্ষেত্রে একটা কথা মাথায় রাখা খুব জরুরি। কোনও শিল্পে রকেটর মতো বৃদ্ধি চোখে পড়ছে মানেই সেটা সব থেকে ভাল, তা কিন্তু নয়। ভেবে দেখা উচিত এই বৃদ্ধি কতটা যুক্তিযুক্ত। ভবিষ্যতে তা ধরে রাখার সম্ভাবনাই বা কতটা। ঠিক যেমন ভাবে, কোনও শিল্প বর্তমানে সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মানেই আগামী দিনে তার বৃদ্ধির গতি রুদ্ধ মনে করে নেওয়া ভুল। দু’টো উদাহরণ দেব। মিলিয়ে দেখুন।

প্রথমে বলব গত দশকের প্রথম দিকে ডটকম বিপ্লবের ফানুস ফেটে যাওয়ার কথা। তার আগেই তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের হাত ধরে এই ক্ষেত্রে যুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার দর হুড়মুড়িয়ে বাড়ছিল। যে-কারণে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারে লগ্নি করা বহু ফান্ডেরই তখন রমরমা বাজার। কিন্তু আচমকাই সেই ফানুস ফেটে যায়। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সমস্ত ইকুইটি ফান্ড মুখ থুবড়ে পড়ে। বহু লগ্নিকারীরই মাথায় হাত পড়েছিল সে সময়ে। যা থেকে বড়সড় শিক্ষা নিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়া।

এ বার বলি সাম্প্রতিক কালে ব্যাঙ্কিং ফান্ডের কথা। গত কয়েক বছর ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে তেমন সুসময় বলে প্রমাণিত হয়নি। বহু ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ বিপজ্জনক হারে বেড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে মূলধনের অভাব নজরে এসেছে। আর্থিক সঙ্কটজনিত কারণে নানা সমস্যায় ভুগতে দেখা গিয়েছে তাদের। এর ফলে বহু দিন যাবৎ গোটা ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রই বেশ চাপে রয়েছে। অথচ শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক সংস্থাগুলির শেয়ার কিন্তু এ সময়ে তলিয়ে যায়নি। ব্যাঙ্কিং সেক্টর ফান্ডেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। ৮ মে-র ন্যাভ অনুযায়ী, গত এক বছরে ব্যাঙ্কিং ফান্ডের গড় রিটার্ন ৩৫%। আর সব থেকে ভাল ফল করেছে যে ব্যাঙ্কিং ফান্ডটি, তার রিটার্ন তাক লাগানো, ৪২.৫%। তা হলেই বুঝে দেখুন।

লেখক মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

জমিই হোক বা সঞ্চয়। আপনার যে কোনও বিষয়-সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের
পরামর্শের জন্য লিখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না।
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা, পিন-৭০০০০১। ই-মেল: bishoy@abp.in

nilanjan dey abp bisoy asoy bisoy asoy latest diversified fund mutual fund sector fund
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy