Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Presents

মেয়েদের অধিকার

বাবা ও স্বামীর সম্পত্তিতে মেয়েদের দাবির কথা স্পষ্ট বলে আইন। অথচ অনেকে এ ব্যাপারে এখনও অন্ধকারে। রাত পোহালেই নতুন বছর। কোমর বাঁধুন। সময় এসেছে নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ারবাবা ও স্বামীর সম্পত্তিতে মেয়েদের দাবির কথা স্পষ্ট বলে আইন। অথচ অনেকে এ ব্যাপারে এখনও অন্ধকারে। রাত পোহালেই নতুন বছর। কোমর বাঁধুন। সময় এসেছে নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার

জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:২৫
Share: Save:

মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাইলে মজবুত হওয়া দরকার পায়ের নীচের জমি। আর তার জন্য প্রতিটি মেয়েকে প্রথমেই বুঝে নিতে হবে নিজের আর্থিক অধিকারগুলো। তা সে বাবার সম্পত্তিতেই হোক কিংবা স্বামীর। ভারতবর্ষে আইনের বইয়ে সে সব পরিষ্কার ভাবে লেখা রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ মহিলাই তার খবর রাখেন না। প্রত্যন্ত গ্রাম ও শহরতলি তো বটেই, শহরেও সমাজের বড় অংশে এই সচেতনতার বড্ড অভাব। এমনকী বহু শিক্ষিত পরিবারেও একই ছবি।

তাই সমস্যায় পড়লে অনেকেই লড়াইয়ের রাস্তায় হাঁটতে ভয় পান। কেউ কেউ সাহস করে এগোলেও দীর্ঘ টানাপড়েনে ভেঙে পড়েন। হার মেনে নিয়ে সরে আসেন। আইন কিন্তু বলছে, বিয়ে হোক বা না-হোক বাবার সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকারী মেয়েরা। আবার স্বামীর সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকুন বা না-থাকুন, স্ত্রীর কিছু দাবি নস্যাৎ করা যায় না। চলুন আজ এগুলোতেই চোখ রাখি।

প্রথমেই বলে রাখি, এই লেখাটি পুরুষদের বিরুদ্ধে মেয়েদের তাতিয়ে তোলা নয়। বরং এর মানে, মেয়েদের জন্যই মেয়েদের সচেতন করা। কারণ, তাঁদের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ এক এক ক্ষেত্রে এক এক রকম। কোথাও সন্তান-সহ তরুণী মা লড়ছেন স্বামী-শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে, কোথাও স্বামীহারা স্ত্রী লড়ছেন মাথার উপরে একটু ছাদের জন্য। কোথাও আবার ভাইদের বঞ্চনায় সব খোয়ানো একা অবিবাহিত মেয়ে খড়কুটো ধরতে মরিয়া। নিজের আর্থিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে তবেই না প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে বেঁচে থাকার যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়া যাবে!

বাবার সম্পত্তিতে

একটা সময়ে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। বিবাহিতারা সে সময়ে বাবার বাড়িতে অধিকার দাবি করতে পারতেন না। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বহু আলাপ-আলোচনা চলে। পরবর্তী কালে বাবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকারের নতুন সংজ্ঞা লিখেছেন আইন প্রণেতারা।

বিয়ের আগে

বিয়ের আগে পর্যন্ত একটি মেয়ে আইনত তার বাবার উপর নির্ভরশীল। তাই বাবারও দায়িত্ব এবং কর্তব্য তাঁর সব দায়ভার গ্রহণ করা। সুতরাং মেয়ের প্রাপ্য অধিকারগুলি হল—

জন্মের মুহূর্ত থেকেই থাকতে পারেন বাবার বাড়িতে। সাবালিকা হওয়ার পরেও সেই অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে।

আয় ও অবলম্বনহীন অবিবাহিতা মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাবা অস্বীকার করলে বঞ্চনার অভিযোগে আদালতে যাওয়া যায়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পরে আদালতে যদি সাব্যস্ত হয় যে, মেয়েটির নিজের জীবনধারণের উপায় নেই, তা হলে আইনত তাঁর ভারণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাবা বাধ্য।

বাবার সম্পত্তির অবশ্যই হকদার। টাকা-পয়সা, জমি-বাড়ি, শেয়ার অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাই থাকুক না কেন, একক সন্তান হলে এবং মায়ের অবর্তমানে পুরোটারই দাবিদার মেয়ে।

ভাই, বোন থাকলে সম্পত্তি সকলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। সমান অংশ পাবেন মা-ও। কারণ, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন বলছে, বাবার সম্পত্তিতে স্ত্রী-সহ তাঁর প্রতিটি সন্তানের সমান অধিকার।

বাবা যদি মারা যাওয়ার আগেই দানপত্র বা পারিবারিক ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে যাবতীয় সম্পত্তি নিজের ইচ্ছানুয়ায়ী ভাগ-বাটোয়ারা করে যান, তা হলে আলাদা কথা। সে ক্ষেত্রে বাবা মেয়েকে যতটা দেবেন, ততটাই পাবেন তিনি। আর না-দিলে পাবেন না।

তবে বাবা যদি উইল করে মেয়েকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন, তা হলেও আপত্তি জানানোর অধিকার থাকে তাঁর। যাঁর বা যাঁদের অনুকূলে ওই উইল করা হয়েছে, অধিকার বুঝে নিতে বাবার মৃত্যুর পরে তাঁকে বা তাঁদের প্রোবেট নিতে হয়। আইন অনুযায়ী প্রোবেট নেওয়ার সময়ে নির্দিষ্ট এলাকার বা ‘জুরিসডিকশন’-এর আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং এর জন্য সমস্ত ভাই বোনেদের বা বাকি সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীদের আইনি নোটিস পাঠানো বাধ্যতামূলক। সেই সময়ে বঞ্চিত মেয়ে ওই নির্দিষ্ট আদালতে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয়ে উইলটির বিরুদ্ধে আপত্তি দাখিল করতে পারেন। জানাতে পারেন নিজের যুক্তি।

নাবালিকা হোন বা সাবালিকা, যত দিন না বিয়ে হচ্ছে, সাধারণত তত দিন মেয়েরা বাবার কাছ থেকে খোরপোষ পাওয়ার অধিকারী।

বিয়ের পরে

বিয়ের পরে ছাদ পাল্টায়। পাল্টে যায় চেনা চারপাশ। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া ইস্তক পুরনো সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অজানা চৌহদ্দিতে ফের শুরু হয় নতুন শিকড় ছড়ানোর পালা। এখনও অনেকে মনে করেন মেয়ের বিয়ে হওয়া মানে পরের বাড়ি চলে যাওয়া। কাজেই বাবার সম্পত্তিতে তাঁর আর কোনও অধিকার রইল না। কিন্তু আদপে তা নয়। আইন বলছে—

বাবার বাড়ি ও সম্পত্তির উপর বিবাহিতা মেয়েরও সমান অধিকার।

একমাত্র সন্তান হলে বাবা, মায়ের মৃত্যুর পরে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সূত্রে পুরো সম্পত্তি মেয়েরই পাওয়ার কথা। মা বেঁচে থাকলে অবশ্য তা দু’ভাগ হবে।

এক বা একাধিক ভাই, বোন থাকলে বিবাহিতা কন্যাও পৈতৃক সম্পত্তির সমান অংশের দাবিদার। অর্থাৎ মা এবং অন্যান্য ভাই, বোন ঠিক যতটা করে টাকাপয়সা, জমি-বাড়ি, শেয়ার অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির অংশ পাবেন, ঠিক ততটাই প্রাপ্য তাঁর। দুই বোনের একজন বিবাহিতা ও অন্য জন অবিবাহিতা হলেও এই ভাগ সমান।

বাবা মারা যাওয়ার আগে দানপত্র করে বা পারিবারিক ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে সম্পত্তি নিজের ইচ্ছানুয়ায়ী ভাগ-বাটোয়ারা করে গেলে আলাদা কথা। সে ক্ষেত্রে বাবা বিবাহিতা মেয়ের নামে যতটুকু রাখবেন, ততটুকুই তিনি পাবেন।

তবে উইল করে মেয়েকে তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করলে অবিবাহিতা মেয়ের মতো বিবাহিতারাও আদালতে আপত্তি জানাতে পারবেন। যাঁর বা যাঁদের অনুকূলে উইল করা হয়েছে, অধিকার বুঝে নিতে বাবার মৃত্যুর পরে তাঁকে বা তাঁদের প্রোবেট নিতে হয়। আইন অনুযায়ী প্রোবেট নেওয়ার সময় নির্দিষ্ট এলাকার বা ‘জুরিসডিকশন’-এর আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। এবং এর জন্য সমস্ত ভাই-বোনেদের বা বাকি সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীদের আইনি নোটিস পাঠানো বাধ্যতামূলক। সেই সময়ে বঞ্চিত বিবাহিতা মেয়ে ওই নির্দিষ্ট আদালতে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয়ে উইলটির বিরুদ্ধে আপত্তি দাখিল করতে পারেন।

শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আসা, বিবাহবিচ্ছিন্না ও বিধবা হলে

ভাল চাকরি-বাকরি করলে হয়তো দেওয়ালে পুরোপুরি পিঠটা ঠেকে যায় না। কিন্তু অতি সামান্য রোজগার বা একেবারে সহায়-সম্বলহীন ভাবে যদি কেউ শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন এবং তার উপর সঙ্গে যদি সন্তান থাকে, তা হলে সেই মেয়ের দুর্দশা অন্তহীন।
মনে রাখবেন—

শ্বশুরবাড়িতে অশান্তির জেরে কোনও মহিলা বাপের বাড়িতে ফিরতে চাইলে, আইনি সহায়তায় তিনি ফিরতেই পারেন। স্বামী হারানো বিধবা মহিলার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।

আগেই বলেছি, একজন বিবাহিতা মহিলার বিয়ের পরেও বাবার বাড়িতে পূর্ণ অধিকার থাকে। সুতরাং শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আসা, বিবাহবিচ্ছিন্না ও বিধবা— সকলেই বাবার সম্পত্তির সম্পূর্ণ হকদার। টাকা-পয়সা, জমি-বাড়ি, শেয়ার অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাই থাকুক না কেন, একক সন্তান হলে এবং মায়ের অবর্তমানে পুরোটাই দাবি করতে পারেন মেয়ে।

ভাই, বোন থাকলে সম্পত্তি সকলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে। সমান অংশ পাবেন মা-ও। শুধু দেখতে হবে বাবা আগেই তাঁর সম্পত্তি অন্য কোনও ছেলে-মেয়েকে দানপত্র বা পারিবারিক ব্যবস্থাপত্র করে দিয়ে দিয়েছেন কি না। উইল করে সম্পত্তি অন্য কাউকে দিয়ে গেলে আদালতে লড়াই করার রাস্তা খোলা থাকে। কিন্তু দানপত্র বা ব্যবস্থাপত্রের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ কম।

স্বামীর সম্পত্তিতে

আবারও বলছি, এই লেখাটিকে মেয়েদের জন্য এবং পুরুষদের বিরুদ্ধে ভাবলে ভুল হবে। মনে রাখবেন এখানে একটি মেয়ে মানে আমাদের বাড়ির বা পরিবারের অংশ। ঠিক একজন পুরুষের মতোই। এটা ভাবতে পারলেই আর কোনও গোলমাল থাকে না। যদিও বাস্তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় না। বিয়ের পর স্ত্রীকে বোঝা ভাবছেন, সমাজে এমন পুরুষের সংখ্যা কম নয়। আর সেই বিবাহিত জীবনে বহু মেয়েই অত্যাচারিত হয়েও মুখ বুজে পড়ে পড়ে মার খান শুধুমাত্র নিজের অধিকার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহাল নন বলে।

বিবাহিত জীবনে

ম্যারেজ রেজিস্টারে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সিলমোহর পড়ার মুহূর্তেই পাকা হয়ে যায় পত্নী হিসেবে মেয়েটির আর্থিক অধিকারগুলি। সেগুলি হল—

বিবাহ শব্দের মানে ‘বিশেষ ভাবে বহন করা’। তাই বিয়ের পর স্বামীর পূর্ণ দায়িত্ব তাঁর স্ত্রীর ভরণপোষণের।

বিয়ের পরে একটি মেয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠবে এবং সেখানেই তার অধিকার গড়ে উঠবে। প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা এই রীতিই এখন মেয়েদের আইনি অধিকার। তাঁকে ওই বাড়ি থেকে বেআইনি ভাবে কেউ উচ্ছেদ
করতে পারবে না।

স্বামীর সমস্ত রকম স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তির উপর স্ত্রীর সমান অধিকার। স্ত্রীর যদি নিজের রোজগার থাকে, তা-ও স্বামী তাঁর স্ত্রীর ভরণপোষণ বা খোরপোষ সংক্রান্ত দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। স্বামীর আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী থাকাটা স্ত্রীর অধিকার। আবার স্বামী যখন বিয়ে করে স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসছেন তখন নিজের সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী স্ত্রীকে সামাজিক নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষা দেওয়াও স্বামীর কর্তব্য।

বিয়ে ভাঙলে

এ ক্ষেত্রে আদালতের চোখে সব মহিলার অধিকার কিন্তু এক রকমের না-ও হতে পারে। কারণ ঘটনা ও জীবন বিশেষে সকলের দাবি এক হয় না। একজন মহিলা স্বামীর বিরুদ্ধে কোন গ্রাউন্ডে (অভিযোগের ভিত্তিতে) ডিভোর্স চাইছেন এবং তাঁর সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান কী, অধিকারের প্রশ্নে সেটা অন্যতম বিচার্য বিষয় হয় আদালতের কাছে। ওই আর্থ-সামাজিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, ১) কোনও মহিলা চাকরি করেন না, স্বামীর উপর নির্ভরশীল ২) কেউ চাকরি করেন না, নির্ভরশীল এবং সন্তান আছে ৩) কেউ অতি সাধারণ চাকরি করেন ৪) কেউ অতি সাধারণ চাকরি করেন এবং সন্তান আছে ৫) কেউ উঁচু পদে আসীন, বেতন খুব ভাল ৬) কোনও মহিলার হয়তো সন্তান রয়েছে, কিন্তু বাড়িতে তাকে দেখার কেউ নেই ৭) কেউ বিয়ের কারণে কেরিয়ারের কোনও বড় সুযোগ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ৮) কেউ নির্যাতিত হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন ৯) কাউকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১০) কেউ আবার স্বেচ্ছায় বেরিয়ে এসেছেন ১১) কোনও মহিলার সন্তান খুব ছোট ১২) কোনও ক্ষেত্রে আবার সন্তান থাকলেও ফের বিবাহিত সম্পর্কে ঢোকার সম্ভাবনা আছে। এমনই বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও ডিভোর্স চাওয়ার কারণ অনুযায়ী মহিলাদের বিভিন্ন দাবির ভিত্তিতেই তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত করে আদালত। যা এক একটি ডিভোর্স মামলার ক্ষেত্রে এক এক রকমের হতে পারে। তবে সাধারণ ভাবে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত বা বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রী যে-সব অধিকার পেতে পারেন, সেগুলি হল—

বাপের বাড়িতে থাকলেও তাঁর ও সন্তানের ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন।

পেতে পারেন খোরপোষ।

ডিভোর্স বা বিবাহিত জীবনে ফিরে যাওয়ার মামলা ঝুলে থাকলে, সেই অনুযায়ী অ্যালিমনি চেয়ে মামলা করতে পারেন। এতে ভরণপোষণ ও মামলা চালানোর খরচও চাওয়া যায়।

হিন্দু বিবাহ আইনের ২৫ নম্বর ধারায় পার্মানেন্ট অ্যালিমনি পেতে পারেন।

একই ভাবে বিশেষ বিবাহ আইন অনুযায়ী অ্যালিমনি ও পার্মানেন্ট অ্যালিমনি দাবি করতে পারেন।

যত দিন না আবার বিয়ে করছেন ততদিন স্বামীর রোজগার অনুযায়ী খোরপোষ পেতে পারেন। তবে কতটা পরিমাণে পাবেন, সেই ব্যাপারটা আদালতের বিচার্য বিষয়।

জীবনযাপনের ক্ষেত্রে আর্থিক ভাবে স্বামীর যে অবস্থান, সেই একই অবস্থান দাবি করে আবেদন জানাতে পারেন।

স্ত্রী-ধন অর্থাত্‌ বাপেরবাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি থেকে যা যা পেয়েছিলেন, সব ফেরত পেতে পারেন।

যদি স্বামীর বাড়ি থেকে সম্পত্তি আটকে দেওয়া হয়, তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা করে তা ফেরত চাইতে পারেন। কিংবা পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেন।

গার্হস্থ হিংসা প্রতিরোধ আইন, ২০০৫-এর আওতায় আর্থিক সুবিধা (মানিটারি রিলিফ) ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এই আইনের অধীনে থেকে একজন মহিলা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে থেকেই মামলা করতে পারেন এবং এই ব্যাপারে তাঁর সুরক্ষার ব্যবস্থা করাও বাধ্যতামূলক। এই আইনে একজন মহিলার বাসস্থানজনিত সমস্যা সমাধান করার ব্যবস্থা রয়েছে এবং ‘প্রোটেকশন অফিসার’ তাঁকে সুরক্ষা দেবেন।

মিউচুয়াল কনসেন্ট বা সমঝোতার মাধ্যমে হওয়া ডিভোর্সেও এককালীন/থোক খোরপোষ চাওয়া যায়।

ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন।

হিন্দু বিবাহ আইনের ২৬ নম্বর ধারায় সন্তানের অধিকার চাইতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতই নির্ধারণ করে, বাচ্চা কোথায় থাকলে তার সঠিক পরিচর্যা হবে ও সে সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

সন্তান যদি খুব ছোট হয় এবং মায়ের সাহচর্য প্রয়োজন হয়, তা হলে সেটা পেতে পারেন। দেখভালের খরচ দিতে হতে পারে বাবাকে। এ ক্ষেত্রেও অবশ্য বাচ্চার ভাল থাকাটাই আদালতের কাছে সর্বশেষ বিচার্য বিষয়। তাই ঘটনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আলাদা হতে পারে।

স্বামী মারা গেলে

স্বামী মারা গেলে শ্বশুরবাড়ি ও বাপেরবাড়ি, দুই জায়গাতেই অনেক সময় ব্রাত্য হয়ে যান বহু মেয়ে। সমাজে নড়বড়ে হয়ে যায় তাঁদের অবস্থান। অথচ বিধবা মেয়ের বাপেরবাড়িতেও যেমন অধিকার থাকে, তেমনই তাঁর প্রাপ্য অধিকার অস্বীকার করতে পারে না শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও।

স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁর বিধবাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বার করে দেওয়া বেআইনি।

হিন্দু অ্যাডপশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স আইন অনুযায়ী, বিধবা মহিলারা শ্বশুরবাড়ির কাছ থেকে ভরণপোষণ পেতে পারেন।

পরলোকগত স্বামীর সম্পত্তির উপর স্ত্রীর অধিকার বর্তায় ঠিকই, তবে পুরোটাই তিনি পাবেন না। স্ত্রী-সহ সমস্ত আইনি উত্তরাধিকারী, যাঁরা জীবিত আছেন তাঁরা সকলেই ওই ব্যক্তির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দাবিদার। অর্থাৎ বিধবা স্ত্রী পাবেন একটা সমান ভাগ।

এ ছাড়াও যে সব মহিলা লিভ ইন রিলেশনশিপে আছেন, তাঁদের জন্যও একটা কথা বলব। মনে রাখবেন, সঙ্গীর কাছ থেকে গার্হস্থ হিংসা প্রতিরোধ আইন-এর অধীনে থেকে ‘আর্থিক সুবিধা’ পেতে পারেন তাঁরাও।

লেখক কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী

জমিই হোক বা সঞ্চয়। আপনার যে কোনও বিষয়-সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য লিখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না।

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১। ই-মেল: bishoy@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

women legal rights property
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE