Advertisement
E-Paper

হেই সামালো

বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। নতুন হাঁটতে শেখা বাচ্চার মতো বারবার পড়ছে-উঠছে শেয়ার বাজার। স্বাভাবিক ভাবে অনিশ্চয়তার মেঘ মিউচুয়াল ফান্ডের আকাশেও। উল্টো দিকে, উঁচু হারে সুদের শেষ সলতে নিভছে ডাকঘরে। জারি হয়েছে তা কমানোর ফরমান। এমন অক্টোপাসের মতো পেঁচিয়ে ধরা সমস্যা থেকে বাঁচবেন কী ভাবে? কী হবে এই উত্তাল ঢেউয়ে সঞ্চয়ের নৌকার দাঁড় বেয়ে চলার কৌশল?বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। নতুন হাঁটতে শেখা বাচ্চার মতো বারবার পড়ছে-উঠছে শেয়ার বাজার। স্বাভাবিক ভাবে অনিশ্চয়তার মেঘ মিউচুয়াল ফান্ডের আকাশেও। উল্টো দিকে, উঁচু হারে সুদের শেষ সলতে নিভছে ডাকঘরে। জারি হয়েছে তা কমানোর ফরমান। এমন অক্টোপাসের মতো পেঁচিয়ে ধরা সমস্যা থেকে বাঁচবেন কী ভাবে? কী হবে এই উত্তাল ঢেউয়ে সঞ্চয়ের নৌকার দাঁড় বেয়ে চলার কৌশল?

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৪৯

চার বছরে এক বার অলিম্পিকের আসর বসে। আর ভারতের শেয়ার বাজারে বড়সড় পতনের আতঙ্ক ফিরে ফিরে আসে ৮ বছর অন্তর!

কাকতালীয়। কিন্তু পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, এ দেশে শেয়ার বাজারে নিয়ম করে ধস নেমেছে প্রতি আট বছর বাদে। ১৯৯২ সালে হর্ষদ মেটা-কেলেঙ্কারি। ২০০০ সালে মার্কিন মুলুকে ডটকম বুদ্বুদ ফেটে যাওয়া। ২০০৮ সালে লেম্যান ব্রাদার্সের দেউলিয়া ঘোষণার পরে বিশ্বজোড়া মন্দা। আর এ বার, এই ২০১৬ সালে সেনসেক্সের ফের হুড়মুড়িয়ে ২২ হাজারের ঘরে নেমে আসা। দেখা যাচ্ছে, আট বছর অন্তর দেশে-বিদেশে কিছু একটা ঘটে। আর তার জেরে তলিয়ে যায় সূচক। প্রায় আড়াই দশক ধরে এই ধারা চলছেই।

সুড়ঙ্গের শেষ কই?

এখনই ভারত বা বিশ্বের অর্থনীতি গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে পুরো গতিতে দৌড়তে শুরু করবে বলে মনে করছেন না কেউই। মাঝে কিছুটা আশা জাগালেও পুরোদস্তুর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি মার্কিন অর্থনীতি। গুটিকয় দেশ বাদে ধুঁকছে ইউরোপ। বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে নড়বড়ে চিনা অর্থনীতিতে। তলানিতে ঠেকা তেলের দামের জেরে বাজেটের অঙ্ক মেলাতে হিমশিম রাশিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া, পশ্চিম এশীয় দেশগুলি। তার উপরে অনিশ্চয়তা বহাল রয়েছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বাড়ানো নিয়ে।

সমস্যা দেশেও কম নয়। কেন্দ্র বৃদ্ধির আশাজনক পূর্বাভাস দিলেও এক বছরের বেশি সময় ধরে টানা কমছে রফতানি। গোত্তা খাচ্ছে শিল্পোৎপাদন। পাহাড়প্রমাণ অনুৎপাদক সম্পদের বোঝায় নাভিশ্বাস রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির। পরপর দু’বার অনাবৃষ্টির জেরে অবস্থা ভাল নয় কৃষিরও। সব মিলিয়ে, এতগুলি প্রতিকূলতা থাকায় অর্থনীতির ক্ষত এ বার বেশ গভীরে। যা শুধু উপর থেকে মলম দিয়ে সারার নয়। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার।

হয়তো চিন-সহ অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থা ভাল। পরিস্থিতি এখনও আয়ত্তের মধ্যে। কিন্তু তার মানে এ-ও নয় যে, কালই সব ঠিক হয়ে যাবে। বরং এখন বেশ কিছু দিন এই সমস্ত সমস্যার সঙ্গেই ঘর করতে হবে আমাদের। তাকে মেনে নিয়েই ঠিক করতে হবে লগ্নি কৌশল।

হাল ছেড়ো না বন্ধু

অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন, এই পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা বাজারে তবে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ? দূরে থাকা উচিত মিউচুয়াল ফান্ডের থেকে? আমার উত্তর, ‘না’।

আপনি তো জানেন না যে, এই সমস্যার শেষ কোথায়। তাই কত দিন বাজার থেকে দূরে থাকবেন আপনি? টাকা ফেলে রাখবেন অলস ভাবে? তাই আমার মনে হয়, সব দিক দেখে, বুঝে-শুনে লগ্নির জন্য ঝাঁপাতে আপনাকে হবেই। একটা শব্দ বদলে নিয়ে শুধু মাথায় রাখতে হবে সেই ‘ক্যাচলাইন’— বাজারের সব ওঠা-পড়া যেন সহজে গায়ে না লাগে!

ভোর হবেই

এ বারই তো প্রথম নয়। অতীতেও বাজার তলিয়ে গিয়েছে অনেক বার। প্রতিবারই মনে হয়েছে তা আর উঠবে না। আতঙ্কে বাজার ছেড়েছেন বহু লগ্নিকারী। কিন্তু প্রতিবারই অনেক বেশি শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। এত বার পতনের ধাক্কা সামলেও গত বছর সেনসেক্স পৌঁছে গিয়েছিল ৩০ হাজারের ঘরে। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

তার থেকেও বড় কথা, এ ধরনের বাজারেই সুযোগ আসে রুপোর দামে সোনা কেনার। পড়তি বাজারে তুলনায় কম দামে ভাল শেয়ার ঘরে তোলার এই তো সময়। শেয়ার থেকে মোটা মুনাফা সিন্দুকে পুরতে যাঁরা সফল, তাঁদের অনেকেই এ ধরনের দুর্বল বাজারে বিনিয়োগ করেছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। তারপরে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছেন বাজার ফের ওঠার জন্য। সবুরে মেওয়াও ফলেছে। তাই হাল না-ছেড়ে এখন কোমর বাঁধার সময়।

আপনার করণীয়

তবে হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে, সবার অবস্থা এক রকম নয়। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মানুষ লগ্নি সংক্রান্ত নানা সমস্যার মুখোমুখি। অনেকের পক্ষে আবার খুব বেশি অপেক্ষা করা সম্ভব না-ও হতে পারে। ধরুন যিনি অবসরের কাছাকাছি এসে পড়েছেন, কোন ভরসায় এই অস্থির বাজারে টাকা ফেলে রাখবেন তিনি?

তাই এখানে বিভিন্ন জনের (নাম ও জায়গা কাল্পনিক) বিভিন্ন সমস্যার ঝাঁপি খুলে বসছি। চেষ্টা করছি, তাঁদের কার কী করণীয়, তা আলোচনা করার। এঁদের সঙ্গে হয়তো কোথাও গিয়ে কিছুটা মিলে যাবে আপনার সমস্যা। সে ক্ষেত্রে নিজের ভিতর দানা বাঁধা প্রশ্নের উত্তর পাবেন আপনিও।

সমস্যা-সমাধান

(১)

জয়ন্ত দাঁ খাঁটি লগ্নিকারী। চটজলদি লাভের জন্য শেয়ার বেচা-কেনা (ট্রেডিং) মোটে করেন না। কেনেন বেশি। বিক্রি তেমন করেন না বললেই চলে। এই পথে হেঁটে গত ২০ বছরে বেশ ভাল ও বড়সড় শেয়ারের ভাণ্ডার (পোর্টফোলিও) গড়ে উঠেছে তাঁর। মোট ৭ লাখ টাকার লগ্নি গত মার্চে বেড়ে পৌঁছেছিল ২০ লাখে। কিন্তু এ বারের পতনে এরই মধ্যে খোওয়া গিয়েছে ৪ লাখ। জয়ন্তবাবুর বয়স ষাটের কোঠায়। তাই আগে পতনের অভিজ্ঞতা থাকলেও এ বার যেন একটু শঙ্কিত। কী করণীয়?

পরামর্শ: পোর্টফোলিওর প্রতিটি শেয়ার সংশ্লিষ্ট সংস্থার সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক ফলাফলের নিরিখে পরীক্ষা করে দেখুন।

উঁচু ডিভিডেন্ড প্রদানকারী ভাল শেয়ার ধরে রাখুন।

যে-সব শেয়ার তেমন ভাল নয়, বাজার মাঝেমধ্যে একটু উঠলে তা বেচে দেওয়ার কথা ভাবুন।

ওই শেয়ার বেচে পাওয়া টাকা পরের পতনে বেশ খানিকটা দর পড়েছে এমন ভাল শেয়ারে লাগান।

ধৈর্য ধরুন। লম্বা মেয়াদে বাজার ওঠার সম্ভাবনা যথেষ্ট। মেক ইন ইন্ডিয়ার মঞ্চে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব এসেছে। শিল্পকে চাঙ্গা করতে দাওয়াই থাকার কথা এ বারের বাজেটে। সেখানে মোটা টাকা সংস্থান করা হতে পারে ব্যাঙ্কিং ও পরিকাঠোমা শিল্পের জন্য। আর তার উপরে সরকার যদি জিএসটি, দেউলিয়া বিল পাশের পথে পা বাড়াতে পারে, তবে তো সোনায় সোহাগা। সে ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজার থেকে নতুন করে দুঃসংবাদ না -এলে (ফেড রিজার্ভের যেমন এখনই ফের সুদ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম), এই ঝুঁকে থাকা বাজারে অন্তত মাঝারি মাপের ‘বুল-রান’ দেখা যেতেই পারে।

সুতরাং ভাল শেয়ার ধরে রেখে সেই বাজার ওঠার জন্য অপেক্ষা করুন। চাইলে সেই উঠতি বাজারে অল্প-অল্প করে শেয়ার বেচে লাভ ঘরে তুলতে পারেন।

(২)

বছর পাঁচেক হল বেহালার সুদীপ রায় চাকরিতে ঢ়ুকেছেন। এখনও মালাবদল হয়নি। মাস শেষে বেতনের অনেকটাই হাতে থাকে। কিন্তু এই ক’বছরে হিসেব কষে তেমন জমানো হয়নি। টাকা পড়ে আছে সেভিংস অ্যাকাউন্টে। এখন কী করা উচিত?

পরামর্শ: সুদ যদি ভবিষ্যতে কিছুটা কমেও, তবু পিপিএফ দীর্ঘ মেয়াদে টাকা জমানোর অন্যতম সেরা জায়গা হিসেবেই বিবেচিত হবে। তার করছাড়ের সুবিধার কথাও ভুললে চলবে না। তাই প্রথমেই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলুন।

ঝুঁকি নিতে আপত্তি না-থাকলে খুলুন ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টও। সেখানে প্রতিটি পতনের সুযোগে অল্প-অল্প করে ভাল শেয়ার কিনতে পারেন।

কোনও সুবিন্যস্ত মিউচুয়াল ফান্ডে খুলতে পারেন এসআইপি অ্যাকাউন্ট।

ভাবতে পারেন নিউ পেনশন সিস্টেমে অ্যাকাউন্ট খোলার কথাও।

(৩)

বীরেশ্বর সেন সদ্য অবসর নিয়েছেন। পিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং ছুটি বিক্রি করে হাতে যে-টাকা এসেছে, তা মন্দ নয়। কিন্তু ব্যাঙ্কে সুদ কমে আসায় তাঁর চিন্তা, ওই টাকা কোথায় রাখবেন? তাঁর যা আয়, তাতে অবসরের পরেও পেনশন-সহ মোট রোজগারের একটা অংশ ৩০% করের আওতায় পড়তে পারে।

পরামর্শ: করের দৃষ্টিকোণ মাথায় রেখে তহবিলের একটি অংশ করমুক্ত বন্ডে লগ্নি করতে পারেন।

ওই বন্ড ইস্যু মাস তিনেক আগে শুরু হয়েছে। নতুন ইস্যুর দিকে নজর রাখুন। ১৫ বছর মেয়াদে সুদ মিলছে কম-বেশি ৭.৬০%। করমুক্ত এই সুদ ১০.৮৬% করযুক্ত সুদের সমান।

টাকা রাখতে পারেন ৫ বছর মেয়াদি সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস প্রকল্পে। মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো যেতে পারে। সুদ ৯.৩%। তা পাওয়া যায় ৩ মাস অন্তর। অ্যাকাউন্ট খোলা যায় ডাকঘর এবং ব্যাঙ্কে।

ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পও (এমআইএস) মন্দ নয়।

(৪)

এক সন্তানের মা তনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ বছর ধরে চাকরি করছেন বহুজাতিক সংস্থায়। প্রথম দিকে জমানো হয়নি। টাকা গিয়েছে শপিং মল, মোবাইল আর ঝুঁকে পড়া সোনার বাজারে গয়না কিনতে। এ বার নিয়মিত কিছু জমাতে চান। অল্প ঝুঁকিতে আপত্তি নেই।

পরামর্শ: ১৫ বছর মেয়াদি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলুন।

এসআইপি মারফত টাকা ঢালুন দু’টি মিউচুয়াল ফান্ডে। একটি খাঁটি সুবিন্যস্ত (ডাইভার্সিফায়েড) ইকুইটি ফান্ড। আর অন্যটি হাইব্রিড বা ব্যালান্সড ফান্ড। এই ঝুঁকে পড়া চঞ্চল বাজারে এসআইপি লগ্নির অন্যতম সেরা পন্থা হতে পারে।

(৫)

সৌমেন দত্ত বছর দেড়েক আগে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি শুরু করেছিলেন ইকুইটি ফান্ডে। কিন্তু এত দিন পরেও লগ্নির মোট ন্যাভ মোট জমা করা টাকার চেয়ে কম। সেই এসআইপি চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে?

পরামর্শ: বাজার যেহেতু নেমে এসেছে, সেই কারণেই লগ্নি চালিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, এখন সস্তায় ইউনিট কেনা যাবে। ফলে এ যাবৎ তাঁর কেনা মোট ইউনিটের গড় দাম কমবে। সম্ভাবনা বাড়বে পরে বাজার উঠলে লাভের মুখ দেখার।

(৬)

পলাশ স্বনির্ভর। উত্তরপাড়ায় মোটরবাইকের দোকান। তা খারাপ চলে না। লাভের টাকার একাংশ কোথায় লগ্নি করা ভাল?

পরামর্শ: পলাশের পিএফ, পেনশন, গ্র্যাচুইটি নেই। নিজেকেই এখন থেকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রথমেই খোলা উচিত পিপিএফ অ্যাকাউন্ট। পেনশনের জন্য যোগ দেওয়া উচিত এনপিএস বা মিউচুয়াল ফান্ডের কোনও পেনশন প্রকল্পে।

এসআইপি পদ্ধতিতে টাকা জমান কোনও খাঁটি ইকুইটি প্রকল্পে।

পরিবারের সুরক্ষার জন্য জরুরি জীবন বিমা। দরকার স্বাস্থ্য বিমাও।

(৭)

শ্যামবাজারের শশী দত্ত অনেক দিন ধরেই শেয়ারে লগ্নির কথা ভাবছেন। কিন্তু সাহস করে মাঠে নামা আর হয়নি। এখন কি ঠিক সময়?

পরামর্শ: শেয়ার বাজারে প্রবেশের জন্য এই সময় আদর্শ।

ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলুন। ভাল পরামর্শদাতার সঙ্গে কথা বলুন। আবেদন করুন ভাল নতুন ইস্যুতে। সেই সঙ্গে এখন কম দামের সুযোগে অল্প-অল্প করে কিনুন ভাল শেয়ারও।

এসআইপি মারফত ভাল ইকুইটি প্রকল্পে নাম লেখাতে পারেন।

(৮)

জলপাইগুড়ির রুমি চক্রবর্তীর বয়স ৭০-এর উপর। এত দিন টাকা রেখেছেন ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে। মেয়াদ শেষে তা ফেরত আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এখন সুদ ক্রমশ কমতে থাকায় নতুন করে তা ফের ব্যাঙ্কে রাখলে আয় কমবে। কী করবেন?

পরামর্শ: ৯.৩% সুদে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখুন সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস প্রকল্পে। আয় কমবে না। সুদ মিলবে তিন মাস অন্তর।

টাকা রাখতে পারেন ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে। সুদ ৮.৪%।

(৯)

বালিগঞ্জের বিজন রায় ২০০৫ সালে লগ্নি হিসেবে ফ্ল্যাট কেনেন। সম্প্রতি ৪৫ লাখে বেচেছেন। বন্ধুদের অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, ওই টাকা শেয়ারে লাগাতে। বিজনবাবু ধন্দে।

পরামর্শ: ফ্ল্যাট বেচে পাওয়া লাভের উপর করের হিসেব করুন। এ জন্য ফ্ল্যাটের ক্রয়মূল্যের উপর ২০১৫-’১৬ সালে আয়কর দফতরের প্রকাশিত মূল্যবৃদ্ধি সূচক (কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স) প্রয়োগ করে ওই ফ্ল্যাটের বর্তমান মূল্য হিসেব করুন। এ বার তা বিক্রয়মূল্য থেকে বাদ দিন। তা হলে মূলধনী লাভ জানা যাবে।

এই লাভে কর বাঁচানো সম্ভব, যদি আপনি সেই টাকা তিন বছর মেয়াদি ক্যাপিটাল গেইনস বন্ডে ঢালেন।

আয়কর আইনের ৫৪-ইসি ধারা অনুযায়ী ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি এবং রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্প এই বন্ড ইস্যু করে। বছরে সুদ ৬%।

ঝুঁকি নিতে আপত্তি না-থাকলে বাকি টাকার একাংশ লগ্নি করুন ভাল শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে।

তুলনায় কম ঝুঁকিতে কিছু টাকা ঢালতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ডের ডায়নামিক বন্ড ফান্ডে। এখানে গড়ে ৮% আয় সম্ভব। ৩ বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করলে কর নামমাত্র।

(১০)

বারাসতের রাজীব মুখোপাধ্যায় সস্তার বাজারে সোনা, গোল্ড ফান্ড ও গোল্ড ইটিএফে নিজের তহবিলের অনেকটাই লগ্নি করেছেন। এখন পাকা সোনা আবার ৩০ হাজার ছুঁইছুঁই। এই সুযোগে কি কিছু সোনা বা স্বর্ণ ঋণপত্র বিক্রি করলে ভাল?

পরামর্শ: আগের মতো সোনা এখন আর একনাগাড়ে ওঠে না। মাঝেমধ্যেই পড়ে। তাই লাভ ভাল হয়ে থাকলে, মুনাফার কিছুটা ঘরে তুলতে পারেন।

অর্থনীতি আর বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লে কিংবা ভারতে ডলারের দাম বাড়লে, সাধারণত সোনার দর বাড়ে। এই কারণে সোনা এখন ৩০ হাজার ছুঁইছুঁই। হয়তো তা আর একটু বাড়বে। কিন্তু অর্থনীতির হাল ফিরতে শুরু করলে, তা ওই উচ্চতা না-ও ধরে রাখতে পারে। ফলে সোনা বিক্রির কথা ভাবতেই পারেন।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত)

জমিই হোক বা সঞ্চয়। আপনার যে কোনও বিষয়-সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের
পরামর্শের জন্য লিখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না।
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।
ই-মেল: bishoy@abp.in

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy