Advertisement
E-Paper

ঋণের কুসুম ও কাঁটা

ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ। শাস্ত্র বলে, প্রয়োজনে ধার করেও ঘি খাও। ট্যাঁকে টাকা নেই বলে বিলাস-ব্যসন বন্ধ থাকবে কেন? আবার মহাভারতে বকরূপী ধর্ম প্রশ্ন করলে, যুধিষ্ঠির উল্টো কথা বলেন। তাঁর মতে, দিনান্তে যে পরম নিশ্চিন্তে শাক-ভাত খায়, সে-ই সুখী। অর্থাৎ, ধার-ইএমআই মেটানোর টেনশন নেই। সুদ গোনার ঝক্কি নেই। অল্পেতে সন্তুষ্টিই আসল কথা।

ফ্ল্যাট কিনবেন বলে লম্বা সময় ধরে টাকা জমানো শেষ হল। কিন্তু তত দিনে ওই ধরনের বাড়ি হয়তো ধরাছোঁয়ার বাইর

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২০:৫৭

ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ। শাস্ত্র বলে, প্রয়োজনে ধার করেও ঘি খাও। ট্যাঁকে টাকা নেই বলে বিলাস-ব্যসন বন্ধ থাকবে কেন?

আবার মহাভারতে বকরূপী ধর্ম প্রশ্ন করলে, যুধিষ্ঠির উল্টো কথা বলেন। তাঁর মতে, দিনান্তে যে পরম নিশ্চিন্তে শাক-ভাত খায়, সে-ই সুখী। অর্থাৎ, ধার-ইএমআই মেটানোর টেনশন নেই। সুদ গোনার ঝক্কি নেই। অল্পেতে সন্তুষ্টিই আসল কথা।

এ তো ঘোর বিপদ! এক দিকে, ব্যাঙ্কের দিকে পা বাড়ালে কিংবা পকেট থেকে ক্রেডিট কার্ড বার করলেই ‘সহজ শর্তে’ ঋণের হাতছানি। যা দিয়ে পছন্দের পণ্য বা পরিষেবা কিনে ফেলা যায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। আবার অন্য দিকে, ধারের রাস্তায় না-হেঁটে বরং তিল তিল করে জমিয়ে সেই টাকায় কেনাকাটায় শান্তি। যাতে পছন্দের জিনিস হাতে আসতে দেরি হয় ঠিকই। কিন্তু তেমনই বইতে হয় না মাসিক কিস্তির (ইএমআই) টেনশনও।

এই দু’টোর কোনটা ভাল, তা নিয়ে প্রায়শই ধন্দে পড়ে যান অনেকে। আসুন, আজ এই দুই রাস্তার একটা তুল্যমূল্য আলোচনায় বসি। দাঁড়িপাল্লায় চাপিয়ে দেখি দু’য়েরই ভাল-মন্দ। যাতে পরের বার কিছু কেনার আগে অন্তত এ নিয়ে আর দ্বিধায় পড়তে না-হয় আপনাকে।

দুই রাস্তা

বাড়ি হোক, গাড়ি হোক কিংবা শখের মোবাইল। যে-কোনও জিনিস কেনার দু’টো রাস্তা আছে প্রথমটা তুলনায় সহজ, লোভনীয়ও। চটজলদি ধার। যার হাত ধরে এখন চাকরি পেতেই ‘পশ’ এলাকায় তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট বুক করে ফেলছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করা বছর আঠাশের তরুণ। বাইক দ্রুত বদলে যাচ্ছে গাড়িতে। হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছে টিভি-ফ্রিজ-ওয়াশিং মেশিন। প্রথমে কিছুটা ‘ডাউনপেমেন্ট’। আর তার পর মাসে-মাসে ঋণের টাকা মিটিয়ে দিতে পারলেই প্রয়োজন থেকে শখ-আহ্লাদ সব দরজাই চিচিং ফাঁক হয়ে যাচ্ছে আপনার সামনে। আর স্বামী-স্ত্রী দু’জনে রোজগেরে হলে তো কথাই নেই। যা যা কিনতে বাপ-ঠাকুর্দার আমলে অন্তত ষাট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত, তা হাতে চলে আসছে হয়তো ছত্রিশেই।

আর দ্বিতীয়টি তাঁদের জন্য, যাঁরা সবুরে মেওয়া ফলায় বিশ্বাসী। অথবা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়ার আর্থিক যোগ্যতা যাঁদের নেই। বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাট থেকে পছন্দের ভোগ্যপণ্য সমস্ত কিছু কিনতেই এঁদের টাকা জমাতে হয় একটু একটু করে। সুতরাং প্রতি মাসে ধার মেটানোর চিন্তা এখানে নেই। কিন্তু অপেক্ষার রাস্তা অনেকটাই লম্বা।

অথবা নয়, এবং

প্রথমেই একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া ভাল। সেটা হল, এমনটা একেবারেই নয় যে, এই দু’টোর মধ্যে একটা রাস্তাতেই আমাদের সারা জীবন চলতে হবে। বরং আমার মতে, এই দু’য়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য নির্ধারণ করাটাই সুখী জীবনের চাবিকাঠি।

কেন এমনটা বলছি?

কারণ, এই দুই রাস্তারই নিজস্ব কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। যা নিয়ে এই লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করব আমরা। কিন্তু একেবারে সংক্ষেপে যদি ব্যাপারটা বুঝতে চাই, তা হলে বিষয়টি এ রকম—

ধার নিয়ে কিছু কেনা মানে বর্তমানে ত্যাগ এবং বর্তমানেই ভোগ। তবে হ্যাঁ, সঙ্গে ‘উপরি পাওনা’ ধার মেটানোর চিন্তা। সেখানে সঞ্চয় করে তা কেনার অর্থ বর্তমানে ত্যাগ কিন্তু ভবিষ্যতে ভোগ। তবে হ্যাঁ, সেই ভোগ অনেকটাই চিন্তামুক্ত। ঋণ শোধের টেনশন সেখানে নেই।

এখন এমনটা হতেই পারে যে, কোনও একটা জিনিস আপনার বা আপনার পরিবারের এখনই প্রয়োজন। দীর্ঘ দিন তার জন্য অপেক্ষা করাই সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ধারের রাস্তায় হাঁটা ছাড়া গতি নেই। কিংবা ধরুন, মাসে মাসে মোটা টাকা ভাড়া গুনছেন। যাতে না-আছে কোনও রিটার্ন, না তৈরি হচ্ছে সম্পদ। সে ক্ষেত্রে আরও ১৫-২০ বছর তা গুনে যাওয়ার বদলে হয়তো ধার নিয়ে একখানা ফ্ল্যাট কিনে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

কিন্তু আবার মনে করুন, হাতে একখানা বেশ ভাল স্মার্টফোন থাকতেও আরও বেশি দামের আই-ফোনের জন্য লোভ হল আপনার। স্রেফ ঝোঁকের বশে আগুপিছু না-ভেবে মোটা টাকা ইএমআই গোনার শর্তে তা কিনেও ফেললেন। সেটা কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হল, তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন রইল বিস্তর। কারণ, কিছু দিন অপেক্ষা করে টাকা জমিয়েও তা কিনতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে ফি-মাসে অতগুলো টাকা আটকে রাখার দরকারই পড়ত না। ফোনও হাতে আসত।

গোড়ার হিসেব

পছন্দের পণ্য-পরিষেবা কিনতে কিংবা সম্পদ তৈরির জন্য আমাদের যে ঋণ ও সঞ্চয়, দুই রাস্তাতেই হাঁটতে হবে, আশা করি তা এতক্ষণে স্পষ্ট। কিন্তু তার মধ্যে কোন পথ কোন ক্ষেত্রে উপযোগী, বিচক্ষণতার সঙ্গে তা কী ভাবে বাছতে পারি আমরা?

আমার মতে, এ ক্ষেত্রে কয়েকটি হিসেব গোড়াতেই কষে ফেলা ভাল—

• বাড়ি-গাড়ির মতো অনেক জিনিস ধারে কিনতে হলেও কিছুটা টাকা অন্তত আগে জমাতেই হবে আপনাকে। নইলে ডাউনপেমেন্ট দেবেন কোথা থেকে? আগে দেখুন, সেই ডাউনপেমেন্টের টাকা আপনার কাছে আছে তো?

• অনেক সময়ে সুদ-সহ জমানো টাকা যে-হারে বাড়ে, তার থেকে অনেক দ্রুত বাড়ে অভীষ্ট জিনিসের দাম। ফলে সে ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে যখন টাকা জমানো শেষ হয়, তখন হয়তো দেখা যায়, লক্ষ্যের বস্তুটির দাম চলে গিয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষত ফ্ল্যাট-বাড়ি-জমির ক্ষেত্রে তো এমনটা হামেশাই ঘটে। তাই শুরুতেই ভেবে দেখুন, যা কিনবেন ভাবছেন, শুধু সঞ্চয়ের সিঁড়িতে চড়ে তার নাগাল পাওয়া যাবে তো?

• সব থেকে বড় কথা, ধারে (এমনকী সঞ্চয় করেও) যে-কোনও জিনিস কেনার আগে চট করে অঙ্ক কষে দেখুন, যে-টাকা আপনি খরচ করতে যাচ্ছেন, জিনিসটি আদৌ তার যোগ্য কিনা। ধরুন, এমবিএ পড়তে ধার নেবেন। কিন্তু তার আগে দেখুন, ওই প্রতিষ্ঠানের নাম-ডাক কেমন? পাশ করার পর সকলে চাকরি-পত্তর পায় কিনা। পেলেও তাদের গড় বেতন মোটামুটি কেমন? ইত্যাদি...

সোজা কথায়, কিছু কিনতে যে-টাকা উপুড় করছেন, তা সত্যিই খরচ করা সার্থক কিনা, সেটি শুরুতেই যাচাই করে নিতে ভুলবেন না।

ধারের ফিরিস্তি

সঞ্চয়ে তো সাবধানী হওয়ার তেমন জায়গা নেই। যত বেশি সঞ্চয় করবেন, জিনিস কিনতে টাকা জমবে তত তাড়াতাড়ি। কিন্তু ঋণের পথে পা বাড়ানোর আগে তার রকমফের, পাওয়ার যোগ্যতা, সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করে নেওয়া ভাল। তা হলে ঠকার সম্ভাবনা কমে। আবার কোথায় সত্যিই ধার নেওয়া উচিত, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণও সহজ হয়। আসুন, অন্তত সংক্ষেপে সেই চেষ্টা করি।

রকমফের

বাজারে নানা রকমের ঋণ মেলে। তা দেয় মূলত বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক সংস্থা। যেমন—

• টার্ম লোন: বাড়ি-গাড়ির মতো কোনও সম্পদ কিনতে দীর্ঘ মেয়াদে যে-ঋণ পাওয়া যায়, তারই নাম মেয়াদি ঋণ বা টার্ম লোন।
• ডিমান্ড লোন: কোনও লগ্নিপত্র (যেমন ফিক্সড ডিপোজিটের রসিদ, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের লগ্নিপত্র, জীবনবিমা পলিসি, মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প) ইত্যাদি জমা রেখে এই ধরনের ধার মেলে।
• পার্সোনাল লোন: হঠাৎ কোনও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এই ধার নেওয়া যায়। সাধারণত, ব্যাঙ্কের পুরনো ভাল গ্রাহকেরাই এই ব্যক্তিগত ঋণ বা পার্সোনাল লোন পান। এতে কিন্তু সুদের হার বেশ চড়া।
• ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা: এটাও এক ধরনের ধারই। কারণ, এ ক্ষেত্রে জিনিসের দাম সঙ্গে সঙ্গে নগদে মেটাচ্ছেন না আপনি। দিচ্ছেন পরে। তবে হ্যাঁ, নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে টাকা মিটিয়ে দিলে এর জন্য কোনও সুদ গুনতে হয় না।

এ ছাড়াও এডুকেশন লোন বা শিক্ষা ঋণ-সহ বহু ধরনের ধার রয়েছে। ঋণ নেওয়া যায় প্রভিডেন্ট ফান্ড কিংবা অফিস কো-অপারেটিভ থেকেও। মনে রাখবেন, প্রত্যেক ধরনের ঋণের শর্ত এবং সুদের হার আলাদা। গোড়াতেই সে কথা ভাল করে জেনে নিন। যাচাই করুন, প্রসেসিং ফি কত। কোনও লুকনো খরচ (হিডেন কস্ট) আছে কিনা, তা-ও জানতে ভুলবেন না।

যোগ্যতা

মনে রাখবেন, চাইলেই ঋণ পাওয়া যায় না। তার আগে ঋণদাতা দেখে নিতে চায় আবেদনকারীর পুরো মেয়াদে ধার শোধের ক্ষমতা। যেমন, মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে দেখা হয় চাকরি পাকা কিনা, যে- সংস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চাকরি করেন, তার ব্যবসায়িক ও আর্থিক নির্ভরযোগ্যতা ইত্যাদি। আবেদনকারী ব্যবসায়ী হলে, তাঁর ব্যবসার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ অবস্থা খতিয়ে দেখে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাগুলি। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের কাছে চাওয়া হয় তিন বছরের আয়কর রিটার্ন। যে-সম্পত্তি কিনছেন, তার বাজার দর এবং ভবিষ্যতে দাম বাড়া-কমার সম্ভাবনাও খুঁটিয়ে দেখে ঋণদাতারা। সম্পত্তির দাম যথেষ্ট না-হলে, বাড়তি কিছু বন্ধক লাগতে পারে। যেমন, জীবনবিমা পলিসি, ফিক্সড ডিপোজিটের রসিদ ইত্যাদি। প্রয়োজন হতে পারে এক বা দু’জন গ্যারান্টরও।

সুবিধা

• বাড়ি-গাড়ি-ল্যাপটপ যা-ই কিনুন, পছন্দের পণ্যের মালিকানা হাতে আসে অনেক তাড়াতাড়ি। দীর্ঘ দিন অপেক্ষার ঝক্কি এখানে নেই। অর্থাৎ, ভোগ শুরু প্রথম দিন থেকেই।

• বয়স কম থাকতে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নিলে, মাসিক কিস্তি বা ইএমআই ছোট হয়। প্রথম দিকে গায়ে লাগলেও পরে বেতন বাড়লে খুব একটা কষ্ট পোহাতে হয় না।

• যাঁরা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাঁরা ঋণ নিয়ে বাড়ি/ফ্ল্যাট কিনলে প্রায় ভাড়ার টাকাতেই ইএমআই মেটাতে পারেন। বার বার বাসা পাল্টানোর ঝঞ্ঝাট নেই। সেই সঙ্গে তৈরি হয়ে যায় সম্পদও। তা ছাড়া, করছাড়ের সুবিধা তো রয়েইছে।

• ঋণে জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনলে সুদে-আসলে দাম বেশি পড়ে ঠিকই। কিন্তু একবার শোধ হয়ে গেলে সম্পত্তি আপনার। সাধারণত তখন তার দরও ভাল রকম বেড়ে ওঠে।

• কিস্তিতে মেয়াদি ভোগ্যপণ্য (ফ্রিজ, টিভি, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি) কিনলে, একসঙ্গে বড় চাপ পড়ে না। আবার বাড়ির সমস্ত রকম প্রয়োজনও মিটিয়ে ফেলা যায় এক-এক করে।

• ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা সুদে ঋণ মেলে। পকেটে কার্ড থাকলে, নগদ নিয়ে ঘুরতে হয় না। অনলাইনেও কেনাকাটা করা যায়।

• নামী প্রতিষ্ঠানের ভাল পাঠ্যক্রমে শিক্ষা ঋণ নিয়ে পড়া চালিয়ে যাওয়া অবশ্যই স্বাগত। কারণ, পরে প্রতিষ্ঠিত হলে ওই ধার শোধ করতে সাধারণত অসুবিধা তেমন হয় না।

• আর ব্যবসার জন্য ধার তো অবশ্যই অনেক ক্ষেত্রে জরুরি। নইলে নতুন কারখানা কিংবা প্রকল্পের ইট গাঁথতে টাকা আসবে কোথা থেকে?

সাবধান!

• ওষুধ রোগ সারায়। তেমনই সেই একই ওষুধ মাত্রাছাড়া ভাবে খেলে তা মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। ধারের ক্ষেত্রেও এই একই কথা খাটে। তাই যথেষ্ট সাবধান হওয়া উচিত ঋণ নেওয়ার বিষয়ে। অবিবেচকের মতো ধার নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। তাই শুরুতেই সাবধান হোন। অযথা অতিরিক্ত ধার করবেন না।

• ঋণ পাওয়া গেলেই যে তা নিতে হবে, এমন কথা নেই। দেখতে হবে, সত্যিই তা প্রয়োজন কিনা। অনেক সময়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগ করে। সত্যিকারের প্রয়োজন থাকলে, তবেই ‘হ্যাঁ’ বলুন।

• দেখে নিন, সুদের হার ও অন্যান্য শর্ত। যাচাই করে দেখে নিতে হবে, অন্য কোনও সূত্র থেকে এর থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায় কি না। এ ব্যাপারে ইন্টারনেটের সাহায্য নিন।

• দেখে নিন, টাকা হাতে এলে সময়ের আগেই ঋণ শোধের সুবিধা আছে তো?

• একসঙ্গে একাধিক ঋণ না-নেওয়াই ভাল। দেখতে হবে, আপনি যেন ঋণের জালে জড়িয়ে না-পড়েন। আগে একটি শোধ হলে, তবেই নতুন ধারের কথা ভাবুন।

• ভেবে দেখুন, কিস্তির অঙ্ক আপনার আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে আছে কি না। এমন না-হয় যে, ঋণ নিয়ে স্বপ্নপূরণ করতে গিয়ে ইএমআই মেটানোর দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুমই খুইয়ে ফেললেন আপনি।

• ব্যাঙ্কে কিস্তি মেটানোর মতো যথেষ্ট টাকা অবশ্যই গচ্ছিত রাখুন। সময় মতো কিস্তি না-মেটালে শাস্তি হিসেবে বাড়তি সুদ গুনতে হতে পারে।

• গৃহঋণে আসল এবং সুদ বাবদ আয়করের সুবিধা পেতে আর্থিক বছর শেষ হওয়ার পরেই সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক/ আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে ভুলবেন না।

• ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার যথাসম্ভব কম করাই ভাল। আর ব্যবহার করলে, ধারের টাকা অবশ্যই সুদহীন মেয়াদের মধ্যে শোধ করুন। নইলে ৩০ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হতে পারে।

• ঋণ শোধ হয়ে গেলে, দলিল, লগ্নিপত্র এবং জমা করা অন্য কাগজপত্র ব্যাঙ্ক থেকে ফেরত নিন।

• গাড়ির ঋণের ক্ষেত্রে তা শোধের পর ‘হাইপথিকেশন’ কাটানোর ব্যবস্থা করতে ভুলবেন না।

• দীর্ঘ মেয়াদে বড় অঙ্কের ঋণ নিলে, তার সঙ্গে জীবনবিমা অবশ্যই করিয়ে নেওয়া উচিত। নইলে ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে, ধারের দায় বর্তাবে পরিবারের উপর। যা নিশ্চয়ই তাঁর কাম্য নয়।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত)

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy