অনুপম (৩২) • স্ত্রী (৩৩) • ছেলে (২.৫) • বাবা (৬৭) • মা (৫৫)
রাজ্য সরকারি সংস্থার কর্মী • কাজের সূত্রে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে থাকেন ভাড়া বাড়িতে • সংসার চালিয়ে সঞ্চয় করা নিয়ে চিন্তিত
• চান, ছেলের পড়াশোনার জন্য টাকা রাখতে • ইচ্ছে ভবিষ্যতে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার
একটা সময় ছিল, যখন ধরা হত, সরকারি চাকরি মানেই সারা জীবনের মতো নিশ্চিন্তে থাকা। কাজের জীবন শুরুর পর পরই ভাল বেতন, অবসরের পরে পেনশন তো আছেই, তার সঙ্গে নিরাপত্তার দিক দিয়েও এই চাকরির জুড়ি নেই। অনেক বেসরকারি চাকরিতে হয়তো মাইনে তুলনায় বেশি, কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের নোটিসে তা চলে যাওয়ার ভয়ও রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র পেনশনের সুরক্ষার ভরসায় বসে থাকলেই কি চলবে? কারণ, জিনিসপত্রের দাম গত কয়েক বছরে যে ভাবে বেড়েছে, তাতে চাকরি করেই সংসার চালাতে কালঘাম ছুটে যাওয়ার জোগাড়। এর পর যদি শুধু পেনশনের টাকায় সংসার চালাতে হয়, তা হলে শখ মেটানো তো দূরের কথা, প্রয়োজনীয় সব খরচ করার টাকা আদৌ থাকবে তো হাতে? আর ঠিক এই জন্যই জরুরি পরিকল্পনা মাফিক লগ্নি। যে পরামর্শ আমি দেব অনুপমকে।
রাজ্য সরকারি সংস্থার কর্মী অনুপম। বেতনও ভাল। খুব বাজে খরচও করেন না তিনি, যা তাঁর প্রোফাইল দেখলে বোঝা যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংসার চালিয়ে তাঁর হাতে সে রকম কিছুই থাকে না সঞ্চয়ের জন্য। বিশেষ করে ৩২ বছর বয়সে এসে এখনও কোনও রকম সম্পদ তৈরি হয়নি। এই অবস্থা কিন্তু যথেষ্ট ভয়ের। তার উপর ছেলের বয়স আড়াই বছর। পড়াশোনাও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। যার জন্য আগামী দিনে অনেকটাই টাকা সরিয়ে রাখতে হবে অনুপমকে। চিন্তা রয়েছে বাবা-মার চিকিত্সা ও সংসার খরচ জোগানো নিয়েও। ফলে প্রথমেই তাঁকে মন দিতে হবে সঞ্চয় বাড়ানোর উপর। আর সে জন্য কমাতে হবে খরচ।
আমার প্রথম পরামর্শ, মাসের শুরুতেই মাইনে হাতে পাওয়ার পরে অনুপমের কাজ হবে বিনিয়োগের টাকা সরিয়ে রাখা। তার পর হিসাব করুন কোন খাতে খরচ কতটা কমানো সম্ভব, যাতে আর একটু বেশি টাকা জমানো যায়। তবে একটা কথা বলে রাখতে চাই, যেহেতু তাঁর হাতে এখন সঞ্চয়ের মতো সে রকম অর্থ নেই, তাই কোনও প্রকল্পে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ লগ্নি করতে বলব না। শুধুমাত্র কয়েকটা বিষয়ে পরামর্শ দেব মাত্র।
ধার করে জিনিস কেনা নয়
হাতে থাকা ক্রেডিট কার্ড সোয়াইপ করে যখন যা চাইছি, তাই পেয়ে যাচ্ছি। এই অভ্যাস আমাদের অজানা নয়। অথবা চাকরি জীবন শুরু করেই গাড়ি, বাড়ি বা নিদেন পক্ষে একটা বাইক কেনার পথে পা বাড়াই আমরা। ভেবে দেখি না এক বার ধার করে যা কিনছি, তার কিস্তি মেটাতে পকেট থেকে ঠিক কতটা টাকা দিতে হবে। অথবা আজই প্রয়োজন ভেবে আমরা যা কিনছি, তা কোনও ভাবে লগ্নি পরিকল্পনার উপর প্রভাব ফেলছে কি না।
অনুপমও একটি বাইক ও টিভি কিনেছেন ঋণ নিয়ে। তার জন্য কিস্তি দিতেই বেরিয়ে যায় মাসে ৩,২০০ টাকা। তার পর দিতে হচ্ছে বাইকের পেট্রোল ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচও। এ বার ভাবুন, ওই টাকা যদি তিনি কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করতেন, তা হলে কত টাকা জমানো যেত। হয়তো তাঁকে ওই জিনিস কেনার জন্য ঋণও নিতে হত না। বাইক হয়তো তিনি প্রয়োজনেই কিনেছেন। কিন্তু ওই ২,২৩৮ টাকা দিয়ে তো তাঁর মাসের যাতায়াত খরচ মেটানো যেত।
অনুপমের দু’টি কিস্তিই আগামী বছর শেষ হবে। আপাতত তার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। অথবা চাইলে অল্প অল্প করে কিস্তির টাকা আগে শোধ করতে পারেন। যাতে টাকা জমানোর কাজ কিছুটা হলেও তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়। দুই ক্ষেত্রেই কিস্তি শেষের পর পিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি ও রেকারিং-এ টাকা রাখতে হবে অবসর জীবন এবং ছেলের পড়াশোনার জন্য।
নামমাত্র জীবনবিমা
আমাদের প্রবণতা হল চাকরি শুরুর পরেই কর বাঁচাতে একটা জীবনবিমা কিনে ফেলা। অনুপমও ব্যতিক্রম নন। তাঁর দু’টি মানি ব্যাক বিমা পলিসি রয়েছে। যেখান থেকে চার বছর পর পর ১৯,৫০০ টাকা পান তিনি। কিন্তু অঙ্কের বিচারে এই টাকা যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি, বিমামূল্যও বেশি নয়। তাঁর কিছু হলে পরিবারকে কোনও সুরক্ষাই দিতে পারবে না এই বিমা। সে কারণে আমার মতে, আপনি এই দু’টি প্রকল্প বন্ধ করার কথা ভাবুন। তার বদলে বেশি অঙ্কের টার্ম পলিসি কিনুন। টার্ম পলিসির প্রিমিয়াম অনেকটাই কম। ফলে আপনার হাতে বেশ কিছু টাকা বাঁচবে। সেই টাকা আপনি অন্যান্য খাতে লগ্নি করতে পারবেন।
পিএফ ও পেনশনের সমস্যা
অনুপমের বেশির ভাগ টাকাই যায় পিএফ এবং পেনশন তহবিলের মতো সুরক্ষিত ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে। ফলে চাইলেই তিনি এখান থেকে টাকা তুলে নিতে পারবেন না। আবার এই প্রকল্পগুলির রিটার্ন খুব কম, অনেক সময়েই তা থাকে মূল্যবৃদ্ধিরও নীচে। একটাই সুবিধা করছাড়। কিন্তু শুধু সেই সুবিধা নিয়ে থাকলে তো চলবে না। ফলে তাঁকে এসআইপি-তে লগ্নির কথা ভাবতেই হবে। যাতে কিছুটা হলেও মূল্যবৃদ্ধি ছাপিয়ে রিটার্ন মেলে।
বাড়ি ভাড়া না বাড়ি কেনা?
হাতে যদি ডাউনপেমেন্ট করার মতো অর্থ থাকে, তা হলে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু তা না-হলে বাড়ি ভাড়া করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। অনুপমকেও আমি সেই পরামর্শই দেব। কারণ তাঁর বাড়ি ভাড়াকে যদি মাসিক কিস্তি ধরি, তা হলে দেখা যাবে তিনি ঋণ পাবেন মাত্র ৪.৫০ লক্ষ টাকার। এই টাকায় বাড়ি হবে না। ফলে আপাতত ভাড়া বাড়িতেই থাকতে হবে। বেতন বাড়লে, প্রথমে তহবিল গড়ে তোলার দিকে নজর দিন। তার পর বাড়ি কেনার কথা ভাবুন।
স্বাস্থ্যবিমার অঙ্ক বাড়ান
• অনুপম বুদ্ধিমানের মতো পরিবারের জন্য ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা কিনেছেন। যার অঙ্ক ৩ লক্ষ টাকা। আমি বলব সেই বিমার অঙ্ক ধাপে ধাপে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৫ লক্ষ টাকা করুন।
• তাঁর অন্যতম চিন্তা হল বাবা-মায়ের চিকিত্সা খরচ জোগানো। রেকারিং বাদ দিলে অনুপমের সমস্ত প্রকল্পই দীর্ঘ দিনের। ফলে হঠাত্ করে টাকা জোগানো তাঁর পক্ষে সমস্যার। আর রেকারিং মাত্র ৫০০ টাকার হওয়ায়, তা ভাঙিয়ে খুব বেশি টাকা যে তিনি হাতে পাবেন, তা-ও নয়। ফলে তাঁকে পিএফ ভাঙতে হতে পারে। এ দিকে, চিকিত্সায় যদি খুব বেশি টাকা খরচ হয়, তা হলে আবার টান পড়বে অসবরের তহবিলে। যে কারণে তাঁদের জন্যও আলাদা বিমার কথা ভাবুন। সে ক্ষেত্রে প্রবীণ নাগরিকদের বিশেষ স্বাস্থ্যবিমা করাতে পারেন। অথবা চাইলে রেকারিং-এর মাধ্যমে শুধুমাত্র চিকিত্সার জন্য আলাদা তহবিল গড়ার পথে হাঁটুন।
পুজো সবে শেষ হয়েছে। নভেম্বর থেকেই আবার নেমে পড়তে হবে সঞ্চয়ের কাজে। অনুপমকে বলব হতাশ না-হয়ে, পরিকল্পনা করে এগোলে, অবশ্যই স্বচ্ছন্দে জীবন কাটাতে পারবেন।
(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)
অনুপমের মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেতে পারেন আপনিও। নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানিয়ে চিঠি লিখুন
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১.
ই-মেল: bishoy@abp.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy