Advertisement
E-Paper

সঞ্চয়ের প্রথম ধাপ

ব্যাঙ্কে সঞ্চয়ের প্রথম সিঁড়িই সেভিংস অ্যাকাউন্ট। অথচ সে সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণাই স্পষ্ট নয়। কেন তা খোলা উচিত থেকে শুরু করে কোন ধরনের অ্যাকাউন্টটি আমার পক্ষে ভাল— আসুন জানিটাকা-পয়সার লেনদেন কিংবা সঞ্চয়ের কৌশল নিয়ে আলোচনা হলেই আমরা অধিকাংশ জন বিভিন্ন গুরুগম্ভীর কথায় ঢুকে পড়ি। শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, এসআইপি, বন্ড (ঋণপত্র)— এমন আরও কত কী। কিংবা নিদেনপক্ষে আড্ডায় উঠে আসে পিএফ, পিপিএফ, ফিক্সড ডিপোজিটের মতো প্রকল্প। কিন্তু সেখানে সেভিংস অ্যাকাউন্ট নিয়ে চর্চা তেমন শুনিনি।

শৈবাল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৩

টাকা-পয়সার লেনদেন কিংবা সঞ্চয়ের কৌশল নিয়ে আলোচনা হলেই আমরা অধিকাংশ জন বিভিন্ন গুরুগম্ভীর কথায় ঢুকে পড়ি। শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, এসআইপি, বন্ড (ঋণপত্র)— এমন আরও কত কী। কিংবা নিদেনপক্ষে আড্ডায় উঠে আসে পিএফ, পিপিএফ, ফিক্সড ডিপোজিটের মতো প্রকল্প। কিন্তু সেখানে সেভিংস অ্যাকাউন্ট নিয়ে চর্চা তেমন শুনিনি।

আসলে অনেকেই মনে করেন, সেভিংস অ্যাকাউন্ট আবার তেমন কী? ও তো সকলেরই থাকে। ব্যাঙ্কে একখানা অ্যাকাউন্ট খোলার পরে সেখানে কিছু টাকা ফেলে রাখলেই হল। এর সঙ্গে আর যা-ই হোক, সঞ্চয় কৌশলের কোনও সম্পর্ক নেই।

কিন্তু এই দু’টি ধারণাই ভুল। প্রথমত, স্বাধীনতার পরে প্রায় সত্তর বছর কাটতে চলল। কিন্তু বহু মানুষ এখনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কী, তা জানেন না। এখনও তাঁরা ওই পরিষেবার বাইরে। তা যদি না হবে, তা হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে জন-ধন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে হচ্ছে কেন?

দ্বিতীয়ত, আমাদের মতো যাঁদের সেভিংস অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁরাও এর সঠিক ব্যবহার নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। আর সেই কারণেই আমরা অনেকেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বিভিন্ন সময়ে একগাদা অ্যাকাউন্ট খুলি। যার হদিস পরিবারের অন্য কারও কাছে দেওয়া তো দূরের কথা, অনেক সময়ে গুলিয়ে ফেলি আমরা নিজেরাও। নইলে সারা দেশে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের বিপুল সংখ্যক সেভিংস অ্যাকাউন্টে এত টাকা দাবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে কী করে!

আজকের আলোচনা

তাই আজ সেভিংস অ্যাকাউন্ট নিয়েই কথা বলব আমরা। এবং সেই আলোচনা ছড়িয়ে দেব মূলত দু’ভাগে। প্রথমে দেখব, সেভিংস অ্যাকাউন্ট কী, কেন প্রয়োজন, কোথায় খোলা যায়, সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি। আর তার পরে খতিয়ে দেখব, ওই অ্যাকাউন্ট কত ধরনের হতে পারে ও তাদের বৈশিষ্ট্য। যাতে বোঝা যায় যে, ঠিক কোন ধরনের অ্যাকাউন্টটি আপনার পক্ষে উপযোগী।

গোড়ার কথা

সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা যায় যে কোনও বাণিজ্যিক, সমবায় (কো-অপারেটিভ) ব্যাঙ্ক ইত্যাদিতে। এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন ডাকঘরেও।

যে-কেউ (চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, পড়ুয়া, অবসরপ্রাপ্ত ইত্যাদি) এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

এ জন্য প্রথমে জমা দিতে হবে ১০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা। এক-এক জায়গায় এই অঙ্ক এক-এক রকম।

যে-কোনও সময়ে চাইলেই এই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যায়।

সুদের হার ৪ থেকে ৭ শতাংশ। যা হিসেব হয় কোনও অ্যাকাউন্টের প্রতি দিনের গড় আমানতের উপর।

সুবিধার খতিয়ান

বাড়িতে টাকা ফেলে রাখা সব সময়েই ঝুঁকির। ফলে তার বদলে সেভিংস অ্যাকাউন্টে তা রাখলে সঞ্চিত অর্থ সুরক্ষিত থাকে।

চাইলেই যে-কোনও সময়ে টাকা তোলা যায়। তাই আজকের এটিএম আর নেট ব্যাঙ্কিংয়ের জমানায় বাড়িতে নগদ টাকা ফেলে রাখার মানে কী?

সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা টাকার উপর ৪%-৭% সুদ মেলে। ফলে বাড়ে তহবিলের অঙ্ক।

পাওয়া যায় এটিএম বা ডেবিট কার্ড এবং চেকবইয়ের সুবিধা।

সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে (মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড ইত্যাদি) সঞ্চয়কে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতাও।

দৌড়-ঝাঁপ না-করেই জমা দেওয়া যায় বিদ্যুতের বিল, ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া ইত্যাদি।

গয়নাগাঁটি বা দলিল-দস্তাবেজ রাখার জন্য লকার কিংবা শেয়ার বাজারে পা রাখতে পরে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টও খুলতে পারেন এই সেভিংস অ্যাকাউন্টের দৌলতে।

খুলতে গেলে?

সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে নীচের ধাপগুলি মনে রাখুন—

অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদনপত্র পূরণ করুন।

ভর্তি করে জমা দিন কেওয়াইসি ফর্ম। দু’টিতেই নিজের সই করা পাসপোর্ট ছবি দিতে হবে।

দিতে হবে নিজের সই করা প্যান কার্ডের কপিও। কোনও কারণে তা না-থাকলে, ফর্ম-৬০ দিতে ভুলবেন না।

ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে পাসপোর্ট, আধার কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র বা টেলিফোন বিলের মতো অন্তত একটি নথির কপি সই করে জমা দিন।

সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদনপত্র খুব সতর্ক ভাবে পূরণ করুন। ডেবিট কার্ড, নেট-ব্যাঙ্কিংয়ের মতো কোন-কোন সুবিধা আপনি চান, সেখানে তা জানাতে ভুলবেন না।

সিঙ্গল বা জয়েন্ট যে-কোনও ধরনের অ্যাকাউন্টই খুলতে পারেন। তবে নমিনি অবশ্যই করবেন।

কোন অ্যাকাউন্ট আদপে কেমন

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

আর জন-ধনে?

এই প্রকল্পের আওতায় অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কেওয়াইসি বিধি অনেক শিথিল। তা করা যাবে একটিমাত্র সচিত্র পরিচয়পত্র দেখাতে পারলেই। এমনকী কোনও সরকারি পরিচয়পত্রই যদি না -থাকে, তবুও জন-ধন প্রকল্পের অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে শুধু নিজের দু’কপি ছবি জমা দিয়ে। সেই ছবির উপর সই বা আঙুলের টিপছাপ থাকা জরুরি। তবে এক বছরের মধ্যে অন্তত একটি পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে।

জন-ধনে শর্ত

তবে মনে রাখবেন (১) জন-ধন প্রকল্পে খোলা অ্যাকাউন্টে চেকবই দেওয়া হবে না। (২) কখনও ৫০ হাজার টাকা ছাড়াতে পারবে না ব্যালান্স। (৩) বছরে সেভিংস, রেকারিং, স্থায়ী আমানত-সহ সমস্ত খাত মিলিয়ে মোট জমা ছাড়াতে পারবে না ১ লক্ষ টাকা।

সুতরাং শুধু জন-ধনের সুবিধা পেতে পুরনো অ্যাকাউন্টকে তার আওতায় আনার আগে দু’বার ভাবুন। দেখুন, আপনার অ্যাকাউন্টের লেনদেন উপরের শর্তগুলির মধ্যে থাকে কি না।

আপনার প্রাপ্য

যদি আপনি এমনই সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলেন ( জন-ধন প্রকল্পের আওতায় নয়), তবে কিছু জিনিস প্রায় তা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই পাবেন। যেমন—

চেকবই। এখন অধিকাংশ ব্যাঙ্কই যার প্রতি পাতায় গ্রাহকের নাম লিখে দেয়। এটিএম বা ডেবিট কার্ড (পিন নম্বর-সহ)। নেট-ব্যাঙ্কিংয়ের পিন নম্বর। পাসবই।

সাবধানের মার নেই

সেভিংস অ্যাকাউন্টের কতকগুলি বিষয়ে সাবধান থাকা জরুরি। যেমন—

চেকবই এবং এটিএম কার্ড যত্ন করে রাখুন। তা যেন অন্যের হাতে না-যায়।

কার্ডের পিছনে সই করুন।

এটিএম এবং নেট ব্যাঙ্কিংয়ের পিন নম্বর নিয়ে সাবধান। তা লিখে রাখা কখনও উচিত নয়।

অনেকে নিজের জন্মদিন বা আঁচ করার পক্ষে সহজ কিছু সংখ্যা দিয়ে এটিএমের পিন বানান। এই ভুল করবেন না। সেই নম্বর এমন হওয়া উচিত, যা আপনি ভুলবেন না কিন্তু অন্যের পক্ষে তা আঁচ করা সম্ভব হবে না।

পিন নম্বর কাউকে বলবেন না। এমনকী ব্যাঙ্কের কাউকেও নয়।

কোনও কারণে চেকবই বা এটিএম কার্ড হারিয়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যাঙ্ককে জানান। নিশ্চিত করুন, অন্য কেউ যেন তা ব্যবহার করতে না-পারে।

নিজের নামে আগে থেকে চেক কেটে রাখলে, বাড়তি সতর্কতা জরুরি। চেক ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি’ না-হলে, যিনি টাকা তুলবেন, তাঁর নাম লিখে দেওয়া ভাল। সে ক্ষেত্রে যে-কেউ তা তুলতে পারবেন না। এবং টাকা তোলার সময়ে ব্যাঙ্ক তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চাইবে। তবে মনে রাখবেন, ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি’ চেক দেওয়াই সব থেকে ভাল।

অ্যাকাউন্টে যে-কোনও লেনদেনের জন্য যাতে এসএমএস-অ্যালার্ট আসে, তার বন্দোবস্ত করে রাখুন।

চেক নিয়ে সাবধান

চেক কাটার সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই তাড়াহুড়ো করি আমরা। কিন্তু তা থেকে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই আমার মতে, চেক লেখার সময়ে অন্তত নীচের বিষয়গুলি মাথায় রাখুন—

তারিখ ঠিক লিখুন।

চেক লিখে ফেললে, তা ব্যবহার করা যাবে (ভ্যালিড) ৩ মাস পর্যন্ত।

পরের কোনও দিনের জন্য চেক কাটলে (পোস্ট ডেটেড চেক), খেয়াল রাখবেন তা যেন বাউন্স না-করে।

যাঁর নামে চেক লিখছেন, তাঁর নামের বানান ঠিক থাকা জরুরি। ‘বেয়ারার’ শব্দটিও কেটে দেওয়া ভাল।

চেকের অঙ্ক সংখ্যার পাশাপাশি কথাতেও লিখতে হবে। শেষে ‘ওনলি’ কথাটি লিখে দেওয়াও জরুরি। যাতে ওই অঙ্ক কেউ পরিবর্তন করতে না-পারে।

ব্যাঙ্কে যে-নমুনা দেওয়া আছে, সেই সই-ই চেকে করুন। নইলে তা মিলবে না।

কোনও চেক ক্যান্সেল করতে চাইলে, চেকের উপর তা (CANCEL) স্পষ্ট করে লিখতে হবে।

চেকে কোনও পরিবর্তন কিংবা ‘ওভার রাইটিং’ চলে না। সে ক্ষেত্রে কিন্তু চেকই বাতিল হয়ে যাবে।

চেকবইয়ের শেষে কত টাকার কোন চেক কাকে দিচ্ছেন, তা লিখে রাখার একটি জায়গা থাকে। সেই রেকর্ড অবশ্যই রাখুন। তাতে সুবিধা আপনারই

কোনটি আপনার

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী, সারা দেশে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিতে ৩,৫০০ কোটিরও বেশি টাকা দাবিহীন ভাবে পড়ে আছে। শুনতে অবাক লাগলেও, এটা সত্যি! এর মূল কারণ হল, অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে আমরা আগ্রহী হলেও, অনেক সময়ে সেখানকার টাকা আমাদের উত্তরাধিকারীর হাতে কী ভাবে যাবে, তা নিয়ে আমরা ততটা ভাবি না। ফলে হয়তো দেখা যায়, লগ্নিকারীর মৃত্যুর পরে সেই অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ দিন কোনও লেনদেনই হয়নি। সেখানকার টাকাও কেউ দাবি করেননি। অনেক সময়ে আবার অ্যাকাউন্টে লেনদেন না-করা সত্ত্বেও তা বন্ধ না-করে ফেলে রাখি আমরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুসারে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও অ্যাকাউন্টে লেনদেন না-হলে কিংবা ওই সময়ের মধ্যে সেই অ্যাকাউন্টের মালিকানা কেউ দাবি না-করলে, সেখানকার টাকা দাবিহীন আমানত বলে ধরা হয়। ফলে সেই টাকা ব্যাঙ্কেই পড়ে থাকে। এবং এই ভাবেই ওই দাবিহীন আমানতের অঙ্ক ৩,৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

সঙ্গের সারণি দেখুন

‘কুবের উবাচ’র জন্য পাওয়া বিভিন্ন প্রোফাইলে এবং আপনাদের সমস্যা জানিয়ে দেওয়া চিঠিতে অনেক সময়েই দেখেছি যে, অ্যাকাউন্টে টাকা রেখে যাওয়া সত্ত্বেও উত্তরাধিকারী তার হদিস পাননি। কারণ, তিনি তা জানতেনই না। অনেক সময়ে আবার অনেকে বুঝেই উঠতে পারেন না যে, কোন ধরনের সেভিংস অ্যাকাউন্ট তাঁদের খোলা উচিত। এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যা চোখে পড়ার কারণেই আজকের এই আলোচনা।

সঙ্গের সারণিতে চোখ রাখুন। সেখানে দেখানোর চেষ্টা করেছি, সেভিংস অ্যাকাউন্ট কত রকম হতে পারে। সেগুলির বৈশিষ্ট্যই বা কী। এক ঝলকে তুলে ধরতে চেয়েছি সুবিধা-অসুবিধার খতিয়ান। যাতে তা দেখার পরে ঠিক করা সহজ হয় যে, এর মধ্যে ঠিক কোন ধরনের অ্যাকাউন্টটি আপনার পক্ষে উপযুক্ত।

এ ছাড়াও মাইনর অ্যাকাউন্ট

সারণির অ্যাকাউন্টগুলি বাদেও রয়েছে মাইনর অ্যাকাউন্ট। যা খুলতে পারবেন ১৮ বছরের কম বয়সীরা। সম্প্রতি এর কিছু নিয়ম পরিবর্তন করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যার দৌলতে ১০ বছর বা তার বেশি বয়সের কেউ স্বাধীন ভাবে তা চালাতে পারবেন। এই অ্যাকাউন্টে ছোটরাও পাবেন চেকবই, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং, এটিএম ইত্যাদি ব্যবহারের সুবিধা। যা এত দিন দেওয়া হত না। তবে ব্যাঙ্কগুলির স্বাধীনতা রয়েছে কত বছরে সেই অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে-সহ অন্যান্য নিয়ম নিজেদের মতো করে স্থির করার। মাত্র কয়েক দিন আগে নিয়ম বদলানোর কারণে অবশ্য পুরো চিত্রটি এখনও একেবারে স্পষ্ট নয়।

অ্যাকাউন্ট তো খুলবেন। তবে তার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে পারলে ভাল—

করুন জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট

স্যালারি ও পেনশন অ্যাকাউন্ট সব ক্ষেত্রেই একক নামে হয়। অন্য অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে সব ক্ষেত্রে যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলুন। তা জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন ভাগের মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারবেন।

জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট যদি স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ব্যবহার করতে চান, তা হলে বেছে নিতে পারেন ‘আইদার অর সার্ভাইভার’। যে-কোনও এক জনের মৃত্যু হলে, টাকা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এটি ভাল উপায়।

যদি না-চান যে, আপনি বেঁচে থাকার সময়ে অন্য কেউ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন, সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল ‘ফর্মার অর সার্ভাইভার’। প্রথম গ্রাহক মারা গেলে তবেই অন্যরা সেখানে লেনদেন করতে পারবেন।

নমিনি করে রাখুন

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেই নমিনি করার সুবিধা রয়েছে। ফলে আপনি চাইলে সিঙ্গল বা জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট—দু’ক্ষেত্রেই নমিনি করতে পারেন।

স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে (দুর্ঘটনা ইত্যাদিতে) মারা গেলে যদি সন্তান জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের নমিনি হয়, তা হলে টাকা পেতে সুবিধা হয়।

অনেকে মনে করেন, সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট খুলে কাউকে নমিনি করে রাখলেই কাজ সারা। সে ক্ষেত্রে আর জয়েন্ট (আইদার অর সার্ভাইভার) করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সব সময়ে তা হয় না। কারণ মনে করুন, এক জন সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ও তাঁর নমিনি রয়েছে। কিন্তু তিনি হঠাত্‌ অসুস্থ হলেন। তখন অ্যাকাউন্টে টাকা থাকা সত্ত্বেও যতক্ষণ না তিনি সুস্থ হচ্ছেন, তা ব্যবহার করতে পারবেন না। আবার তিনি মারা না-যাওয়া পর্যন্ত নমিনিও সেই টাকা তুলতে পারবেন না। ফলে টাকা থাকলেও তা চিকিত্‌সার কাজে আসবে না।

খেয়াল রাখুন

উইল করলে দেখবেন, যাঁকে সম্পত্তি দিচ্ছেন, তিনিই যেন আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও নমিনি হন। কারণ তা না-হলে, সেই উত্তরাধিকারী আইনত আপনার সব সম্পত্তির মালিক হলেও, অ্যাকাউন্টের টাকা নমিনি পেয়ে যাবেন। তাই তখন সেই টাকা পেতে হলে উইলের উত্তরাধিকারীকে আইনের সাহায্য নিয়েই তা দাবি করতে হবে।

অনেক সময়ে অবিবাহিত থাকার সময়ে আমরা বাবা-মা অথবা ভাই-বোনের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলি অথবা বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে এক জনকে নমিনিও করে রাখি। কিন্তু এর পরে বিয়ে হয়ে গেলেও, অনেক সময় সেই তথ্য আর পাল্টানো হয় না। সে ক্ষেত্রে কিন্তু স্ত্রী-সন্তান উত্তরাধিকারী হলেও, সেই অ্যাকাউন্ট বা লগ্নির টাকা তাঁরা পাবেন না। ফলে নিয়মিত যেমন নিজের লগ্নির টাকা পরীক্ষা করেন, তেমনই নমিনি অথবা যৌথ লগ্নিকারীর নামও দেখে রাখুন। প্রয়োজনে তা পাল্টে নিন।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)

savings account bank saibal biswas tips bishoy ashoy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy