তিনি চলে গেছেন বহু বছর। তবু তাঁর জন্মদিনে রোজনামচাকে উপেক্ষা করে আজও বাঙালির মন উঁকি দেয় জোড়াসাঁকোর ধারে সেই লালবাড়িটার আনাচে-কানাচে। কবিতা, গানে কিংবা নিছক আত্মউপলব্ধির মাঝে আবালবৃদ্ধবনিতার উপস্থিতিতে সেই লালবাড়ির প্রাঙ্গন তখন মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র।
বৈশাখের দাবদাহকে তুচ্ছ করে প্রতি বছর যাঁরা কবির জন্মদিনে জোড়়াসাঁকোয় উপস্থিত হন তাঁদের জন্য রয়েছে সুখবর। আজ ২৫শে বৈশাখ, কবির ১৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে বিচিত্রা ভবনে দোতলায় সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে দু’টি গ্যালারি। একটি দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের, অন্যটি কবি পত্নী মৃণালিনী দেবীর স্মৃতি বিজড়িত।
বিচিত্রা ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিমের ঘরটিতে জীবনের শেষ দু’বছর কাটিয়েছিলেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘সকল গানের কাণ্ডারি, সকল গানের ভাণ্ডারি’ সেই দিনুঠাকুর। ১৯৩৩-এ এক বুক অভিমান নিয়ে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় চলে এসেছিলেন তিনি। মনে প্রত্যাশা ছিল হয়তো শান্তিনিকেতন থেকে আবারও ফিরে আসার ডাক আসবে। তবে সেই ডাক আর কোনও দিনও আসেনি। এই ঘরটিতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর ঘর সংলগ্ন এক চিলতে বারান্দায় দাঁড়িয়েই দিনেন্দ্রনাথ অধুনালুপ্ত পাঁচ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা পক্ষাঘাতগ্রস্ত গগনেন্দ্রনাথের সঙ্গে কথা বলতেন। আলোকচিত্রের মাধ্যমে পনেরোটি প্যানেলে ফুটে উঠেছে সুখে দুঃখে ভরা দিনেন্দ্রনাথের জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
তেমনই বিচিত্রা ভবনের দোতলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঘরটি মৃণালিনী দেবীর নামাঙ্কিত। পূর্ববঙ্গের দক্ষিণডিহির এক অখ্যাত গ্রাম ফুলতলির গ্রাম্য বালিকা ভবতারিণী কী ভাবে কবি পত্নী মৃণালিনী হয়ে উঠলেন তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্যালারিতে। এখানেই প্রয়াত হয়েছিলেন মৃণালিনী দেবী। আলোকচিত্রের পাশাপাশি থাকছে মৃণালিনী দেবীর ব্যবহৃত শাড়ি, আয়না, ফলের ঝুড়ি, রুপোর থালা, গেলাস ইত্যাদি।
রবীন্দ্রভারতী প্রদর্শশালার অধ্যক্ষ ইন্দ্রাণী ঘোষ বললেন, ‘‘প্রতি বছরই ২৫শে বৈশাখ অসংখ্য দর্শক এখানে আসেন নতুন কিছু দেখার প্রত্যাশা নিয়ে। তাঁদের সামনে নতুন কিছু তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ। ইন্দ্রাণীদেবী জানালেন, এ বছর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর কক্ষটি নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে। ১৫ মে তাঁর জন্মদিনে থাকবে আলোচনা সভা। জুন মাসে দেবেন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত কক্ষটি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy