All need to know about Chinese men are trying to marry women from Pakistan and Bangladesh dgtl
China-Bangladesh-Pakistan
বিয়ের টোপ দিয়ে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মহিলাদের যৌন ব্যবসায় নামাচ্ছেন চিনা পুরুষেরা! আড়ালে অন্য ‘খেলা’
কেন এই পরিস্থিতি? কেন পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি মহিলাদের বিয়ে করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে চিনে? এর জন্য চিনের এক সন্তান নীতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে দীর্ঘ দিন এক সন্তান নীতি নিয়ে চলছিল বেজিং।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ১০:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো দেশের মহিলাদের সঙ্গে বিয়ের হিড়িক পড়েছে চিনা পুরুষদের! ক্রমবর্ধমান সেই প্রবণতা দেখে এ বার মানবপাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল চিনের শি জিনপিং সরকার। বিয়েগুলি প্রাথমিক ভাবে আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্পর্ক বলে মনে হলেও পরে দেখা গিয়েছে যে, এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র এবং অপরাধ।
০২২১
বাংলাদেশিদের বিয়ে করার আগে সতর্ক হওয়ার জন্য দেশের নাগরিকদের ইতিমধ্যেই পরামর্শ দিয়েছে চিন। রবিবার বাংলাদেশের চিনা দূতাবাসের তরফ থেকে এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়।
০৩২১
চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ওই বিজ্ঞপ্তিতে চিনা নাগরিকদের ‘বিদেশি স্ত্রী কেনার’ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
০৪২১
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? কেন পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি মহিলাদের বিয়ে করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে চিনে? এর জন্য চিনের এক সন্তান নীতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে দীর্ঘ দিন এক সন্তান নীতি নিয়ে চলছিল বেজিং।
০৫২১
কিন্তু দেশের জনসংখ্যার গড় বয়স ক্রমশ বাড়তে থাকায় এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে চিনের কমিউনিস্ট সরকার। একের বেশি সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়ার পর চিনে জন্মহার খানিক বাড়লেও নারী-পুরুষ অনুপাতের যে ভারসাম্য, তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
০৬২১
সে দেশের বহু পুরুষ বিয়ের জন্য অন্য দেশ থেকে হবু স্ত্রীকে আনার পরিকল্পনা করছেন। বহু সময়েই টাকার বিনিময়ে কোনও তৃতীয় পক্ষ সম্ভাব্য স্ত্রীদের খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এর আড়ালে চলছে মানবপাচার।
০৭২১
এক সন্তান নীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কারণে চিনে বিবাহযোগ্য মহিলাদের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই নীতির ফলে ১৯৭৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পুরুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। ফলে, ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে জনসংখ্যার।
০৮২১
রিপোর্ট অনুযায়ী, মহিলা সঙ্গীর অভাবে এখন চিনের সাড়ে তিন কোটির বেশি পুরুষ একা রয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
০৯২১
আর সে কারণেই স্ত্রী খুঁজতে মরিয়া চিনা পুরুষেরা পাড়ি দিচ্ছেন অন্য দেশে। এর জন্য মূলত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গরিব পরিবারের তনয়াদের নিশানা বানাচ্ছেন তাঁরা। অনেকে কনে খুঁজতে ঢুঁ মারছেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে।
১০২১
বাংলাদেশি মহিলাদের বিয়ে করার জন্য মোটা টাকাও খরচ করতে হচ্ছে সঙ্গীহীন চিনা পুরুষদের। চিনা সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডিং চাংফাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, ‘‘চিনের গ্রামাঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি অবিবাহিত পুরুষ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিয়ে করতে ৫ থেকে ৬ লক্ষ ইউয়ান পর্যন্ত খরচ করছেন।’’
১১২১
ডিংয়ের উদ্বেগ, শুধু বিয়ের জন্যই নয়, অনেকে আবার মহিলাদের কিনেও আনছেন বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে। আর এই ভাবে বাড়ছে মানবপাচার। কিন্তু কী ভাবে ঘটে পাচার? মূলত বাংলাদেশের নিম্ন আয়ে থাকা পরিবারগুলির কন্যাদের বিয়ে এবং উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করা হয়।
১২২১
এর পর বিয়ে করে বা অন্য ভাবে পাচার করা হয় চিনে। অভিযোগ, প্রতারণামূলক আন্তঃসীমান্ত বিবাহবন্ধনের বিরুদ্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও এজেন্টরা গোপনে সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
১৩২১
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বহু নারীকে চিনে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডেলি স্টার’ তাদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “বাংলাদেশের মহিলাদের চিনে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিয়ের নাম করে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু দুর্বৃত্তেরা এর আড়ালে মানবপাচার করছে।”
১৪২১
‘গ্লোবাল টাইমস’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের চিনা দূতাবাস বিভিন্ন ভিডিয়ো প্ল্যাটফর্মে ‘সীমান্ত ডেটিং’ সম্পর্কিত প্রতারণামূলক বিষয়বস্তু থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এটি বাংলাদেশে ‘বিদেশি স্ত্রী’ খোঁজার জন্য বিভিন্ন অননুমোদিত অ্যাপ বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা নিয়েও সতর্ক করেছে। চিনা আইন অনুসারে এই ধরনের পদক্ষেপকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
১৫২১
ঢাকার চিনা দূতাবাস জোর দিয়ে জানিয়েছে, এই ধরনের অবৈধ বিবাহে জড়িতদের চিন এবং বাংলাদেশ— উভয় দেশেই শাস্তি হতে পারে। মানব পাচারকারীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
১৬২১
এই ধরনের প্রতারণার শিকার যাঁরা, তাঁদের অবিলম্বে চিনের জননিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করারও অনুরোধ করেছে দূতাবাস। সংবাদমাধ্যম ‘আল জাজ়িরা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে ঢাকা পুলিশ ১১ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছিল। ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে টিকটক ব্যবহার করে বাংলাদেশি মহিলাদের যৌন ব্যবসায় প্রলুব্ধ করার অভিযোগ উঠেছিল।
১৭২১
পাকিস্তানেও একই ঘটনা ঘটছে। বিয়ের নাম করে পাক মহিলাদের চিনে পাচার করা হচ্ছে। প্রথমে চিনের ধনী পুরুষদের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহার করে তাঁদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে যৌন ব্যবসার দিকে।
১৮২১
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে ইসলামাবাদে থাকা চিনা দূতাবাস। তারা জানিয়েছে, ‘‘পাকিস্তানি মহিলাদের চিনে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক যৌন ব্যবসার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে কোনও প্রমাণ নেই।’’ তবে অবৈধ বিয়ের কার্যক্রম যে চলছে রমরমিয়ে, তা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
১৯২১
চিন এবং পাকিস্তান যৌথ ভাবে ৪৬০০ কোটি ডলারের চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্প শুরু করার পর থেকে হাজার হাজার চিনা কর্মী পাকিস্তানে যাচ্ছেন। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে অবৈধ বিয়ের রমরমা।
২০২১
বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত চিনও। আইনি ফাঁক এবং ধীর আইনি পদক্ষেপের কারণে পাচার রোধের প্রচেষ্টা বাধাপ্রাপ্ত হয়। চিনা নাগরিকেরা সহজেই পাকিস্তানে যাওয়ার ভিসা পেয়ে যান, কিন্তু পাকিস্তানিদের চিনে প্রবেশের জন্য কঠোর ভিসা প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। এর ফলে পাচারকারীদের কাজ করা সহজ হয়।
২১২১
চিনের কেউ কেউ সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়েদের আইনি বিয়ের বয়স কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। ‘চাইনিজ পিপল্স পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স’-এর সদস্য চেন সোংজি মহিলাদের বিয়ের বয়স ২০ থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছেন।