All need to know about Flight 401 accident and ghost stories related to it dgtl
Flight 401 Incident
অন্য বিমানের চালকদের ‘দেখা দিতেন’ দুর্ঘটনায় মৃত পাইলট, সাবধানও করতেন! এখনও জট কাটেনি ফ্লাইট ৪০১ রহস্যের
১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের কিছু আগে ১৬৩ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে লকহিড এল-১০১১-১ ট্রাইস্টার বিমানটি। কিন্তু যাত্রীদের নিয়ে ফ্লরিডার একটি জলাভূমিতে আছড়ে পড়ে সেটি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
কিছু কিছু রহস্য আজীবন রহস্যের মোড়কেই বন্দি থাকে। হাজার চেষ্টা করেও সেই রহস্য উন্মোচন করতে পারেন না কেউই। তেমনই এক রহস্য ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৪০১-এর দুর্ঘটনা এবং সে সংক্রান্ত ভূতুড়ে কাহিনি।
০২২৩
ইস্টার্ন এয়ারলাইনস ফ্লাইট ৪০১ ছিল আমেরিকার নিউ ইয়র্কের কুইন্সে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লরিডার মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার একটি উড়ান।
০৩২৩
১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতের কিছু আগে ১৬৩ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে লকহিড এল-১০১১-১ ট্রাইস্টার বিমানটি। কিন্তু যাত্রীদের নিয়ে ফ্লরিডার একটি জলাভূমিতে আছড়ে পড়ে সেটি।
০৪২৩
ভয়ঙ্কর সেই দুর্ঘটনায় ককপিটে থাকা দু’জন পাইলট, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, ১০ জনের মধ্যে দু’জন ক্রু এবং ১৬৩ জন যাত্রীর মধ্যে ৯৬ জন নিহত হন। ৭৫ জন বেঁচে গেলেও, তাঁদের মধ্যে ৫৮ জন গুরুতর আহত হন। আর তার পর থেকেই এই বিমানকে নিয়ে নানা ভৌতিক কাহিনি ছড়ায়।
০৫২৩
মূল ঘটনার সূত্রপাত ১৯৭২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। বছরের শেষে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বিমান ফ্লাইট-৪০১। গন্তব্য মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
০৬২৩
এই বিমানের চালকেরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ ছিলেন। ক্যাপ্টেন রবার্ট অ্যালবিন লফ্টের ৩২ বছরের কর্মজীবনে মোট উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল ২৯,৭০০ ঘণ্টার। বিমানটির সহ-পাইলট তথা ফার্স্ট অফিসার ছিলেন অ্যালবার্ট জন এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার তথা সেকেন্ড অফিসার ছিলেন ডোনাল্ড লুইস।
০৭২৩
লুইসের অভিজ্ঞতাও কম ছিল না। তাঁর মোট উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল ১৫,৭০০ ঘণ্টার। সহ-পাইলট জনই সেই তুলনায় অনভিজ্ঞ ছিলেন। তাঁর কর্মজীবনে মোট উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল ৫,৮০০ ঘণ্টার।
০৮২৩
বিমান যখন মায়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের মুখে, তখন রাত প্রায় সাড়ে ১১টা। ক্যাপ্টেন ল্যান্ডিং গিয়ারের লিভারটি নীচে নামানোর সময় লক্ষ করেন, নোজ় গিয়ারের সঙ্গে যুক্ত ইন্ডিকেটরের আলো জ্বলছে না। সাধারণত, বিমান টেক-অফের সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের লিভার নীচে নামালে ইন্ডিকেটরটি জ্বলে ওঠে। এর ফলে বোঝা যায়, ল্যান্ডিং গিয়ারটি খুলেছে কি না।
০৯২৩
বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার না খুললে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী, তাই পাইলটেরা বিমানটিকে দু’হাজার ফুট উচ্চতায় অটোপাইলট মোডে রেখে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারকে ডাকেন। তিনি পুরো ইন্ডিকেটর সিস্টেমের পরীক্ষা করেন। বিমানের সব আলো জ্বলে উঠলেও ইন্ডিকেটরের আলো কিছুতেই জ্বলছিল না। তিনি নীচের কেবিনে গিয়ে দেখারও চেষ্টা করেন।
১০২৩
পিছনের দিকে ল্যান্ডিং গিয়ার খুললেও নোজ় ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধই ছিল। এই অবস্থায় কোনও ভাবেই বিমান অবতরণ করানো যাবে না। তাই তাঁরা আকাশপথেই কিছু ক্ষণ বিমানটি ‘হোল্ডিং পজ়িশন’-এ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
১১২৩
কিন্তু বিমানটি নিজে থেকেই নীচের দিকে নামতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ৯০০ ফুট উচ্চতায় নেমে যায় বিমানটি। পাইলট সেই মুহূর্তে বিমানটিকে ১৮০ ডিগ্রি ঘোরাতে উদ্যোগী হলে বিমানের ফার্স্ট অফিসার খেয়াল করেন, বিমানটি আর আগের উচ্চতায় নেই।
১২২৩
ক্যাপ্টেন লফ্টকে তিনি এই বিষয়ে জানাতে যাবেন, তত ক্ষণে বিমানটি নির্দিষ্ট দিকে ঘুরিয়ে ফেলেছিলেন লফ্ট। মুহূর্তের মধ্যে ফ্লরিডার এভারগ্লেডস জলাভূমিতে আছড়ে পড়ে বিমানটি।
১৩২৩
বিমানের পাইলট-সহ দু’জন ক্রু সদস্য, দু’জন বিমানকর্মী এবং ৯৬ জন যাত্রীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। ৭৫ জনকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।
১৪২৩
ফ্লাইট ৪০১ বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত করেছিল আমেরিকা। সেই তদন্তের শেষ রিপোর্টে বলা হয়, পাইলটের ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘‘উড়ানের শেষ চার মিনিটে বিমানের যন্ত্রগুলি ঠিক করে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। দুর্ঘটনা আটকাতে অপ্রত্যাশিত অবতরণও শনাক্ত করতে পারা যায়নি। সেগুলি বিমানের ক্রুদের ব্যর্থতা। ল্যান্ডিং গিয়ারের অবস্থান নির্দেশক সিস্টেমের ত্রুটির কারণে যন্ত্রগুলি থেকে ক্রুদের মনোযোগ বিচ্যুত হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে।’’
১৫২৩
সে সময় এ নিয়ে প্রচুর হইচই হয়েছিল। কিন্তু কালের নিয়মেই ধীরে ধীরে সেই দুর্ঘটনার কথা মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যেতে থাকে। কিন্তু এর পরেই ফ্লাইট ৪০১-কে নিয়ে শুরু হয় ভৌতিক গুঞ্জন।
১৬২৩
দুর্ঘটনার পর ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের তরফে ফ্লাইট ৪০১ বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। যে অংশগুলি তখনও অক্ষত ছিল, তা সামান্য মেরামত করে ওই সংস্থার অন্য বিমানে ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ যন্ত্রপাতিই লাগানো হয়েছিল এন৩১৮ইএ বিমানে।
১৭২৩
১৯৭৩ সালের ঘটনা। ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট এন৩১৮ইএ বিমানে যাত্রা করছিলেন। তাঁর পাশের আসনে বসেছিলেন ওই বিমানের ক্যাপ্টেন। কিছু ক্ষণ বার্তালাপ চলার পর তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, ক্যাপ্টেন যদি তাঁর পাশে বসে থাকেন, তবে বিমান চালাচ্ছেন কে?
১৮২৩
তাড়াহুড়ো করে তিনি পাইলট কেবিনের দিকে পা বাড়াতে যাবেন, তখনই তিনি ভাল করে ক্যাপ্টেনের মুখের দিকে লক্ষ করেন। এ মুখ তাঁর পরিচিত। ফ্লাইট ৪০১ বিমানের ক্যাপ্টেন লফ্ট এত ক্ষণ তাঁর সঙ্গে গল্প করছিলেন! কিন্তু কী করে সম্ভব? লফ্ট তো অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। তিনি কি তবে ভূত দেখলেন?
১৯২৩
শুধু ক্যাপ্টেন লফ্টকেই নন, ফ্লাইট ৪০১ বিমানের সহ-পাইলট জন এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ডোনাল্ডের প্রেতাত্মাও দেখতে শুরু করেন এন৩১৮ইএ এবং ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের অন্য বিমানের যাত্রীরা।
২০২৩
তবে ক্ষতি করতে নয়। সেই প্রেতাত্মারা নাকি অন্য বিমানের চালকদের আগাম দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করতেন। যাত্রা শুরু করার আগের মুহূর্তে বিমানে কোনও যান্ত্রিক গোলযোগ রয়েছে কি না, তা-ও নাকি কোনও ভাবে জানিয়ে দিতেন বিমানকর্মীদের।
২১২৩
এক বার এমনও জল্পনা উঠেছিল যে, বিমানকর্মীদের দেখা দিয়ে ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আগুন লাগা নিয়ে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন ফ্লাইট-৪০১-এর মৃত ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার লুই। সঙ্গে সঙ্গে ওই বিমানের পাইলট ভয় পেয়ে বিমানবন্দরে ফিরে যান।
২২২৩
পরীক্ষা করে দেখা যায়, সত্যিই বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। এ রকম বহু বিমানকেই নাকি দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন ফ্লাইট ৪০১-এর ক্রু সদস্যেরা। বিমানকর্মীরা সত্যি সত্যিই ভূত দেখছেন, না কি এ সবই গুজব, তা জানতে বিমান সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মীরা তদন্ত শুরু করেন। এই নিয়ে তর্কবিতর্কও চলে প্রচুর।
২৩২৩
১৯৯১ সালে ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে আর আর কোনও ‘ভূতুড়ে’ কাণ্ড ঘটেনি। ১৯৭৮ সালে এই ফ্লাইট-৪০১-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিনেমাও তৈরি করা হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল সিরিজ়ও। তবে ফ্লাইট ৪০১-এর দুর্ঘটনা এবং সেই সংক্রান্ত ভৌতিক কাহিনির কিনারা হয়নি। এখনও তা রহস্য হয়েই থেকে গিয়েছে।