এর পরই হঠাৎ করে শহর থেকে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যান ব্লাঁশ। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাঁর কোনও চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বহু খোঁজাখুঁজি করে এক সময় হাল ছেড়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েন ব্লাঁশের মা। এক পর্যায়ে এসে তাঁকে ফিরে পাওয়ার সমস্ত আশা ত্যাগ করেন মা ও ভাই।
চিঠিটি পড়ে সকলে হতবাক হলেও, এই চিঠি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি অনেকেরই। নিজের মেয়েকে কী ভাবে মা এইভাবে বন্দি করে রাখতে পারেন! মন্যিয়ে পরিবার ছিল ফ্রান্সের সবচেয়ে বনেদি পরিবারগুলোর অন্যতম। পোয়াতিয়ে শহরের উন্নয়নের জন্য প্রচুর অনুদান দেন স্বয়ং মাদাম মন্যিয়ে নিজে। তাই এই কাজ তাঁদের পক্ষে করা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করেছিলেন তৎকালীন ফ্রান্সের অভিজাত সমাজের মাথারা।
ঘরটি ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার, বিশ্রী পচা গন্ধে দম আটকে আসার জোগাড়। ঘরের জানলা খোলার তোড়জোড় করে পুলিশ। সেই কাজও সহজসাধ্য ছিল না। পর্দায় মোটা পুরু ধুলো জমে ছিল, সেগুলি সরানোর পর দেখা গেল জানলার পাল্লা আটকে গিয়েছে। আলাদা আলাদা করে জানলা কেটে সেগুলি খোলার ব্যবস্থা করার হয়। ঘরে আলো প্রবেশ করতে যা দৃশ্য দেখলেন তাতে শিউরে উঠলেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
নোংরা বিছানার এক কোণে পড়ে রয়েছে অস্থিচর্মসার এক দেহ, সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়। নষ্ট হয়ে যাওয়া বিছানার উপর শুয়ে থাকা ওই নারীর সারা দেহ ছিল বিষ্ঠা এবং পচে যাওয়া খাবারে মাখা। বিছানার উপরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল পোকামাকড় এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট। লোকজনের উপস্থিতিতে শীর্ণ দেহ ঠকঠক করে কাঁপছিল। উপস্থিত সকলে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন।
পচে যাওয়া খাবার এবং বিষ্ঠার দুর্গন্ধে বেশি ক্ষণ কেউ থাকতে পারছিলেন না। উদ্ধারকর্মীরা এর পর রুগ্ন দেহটিকে চাদরে মুড়িয়ে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। মাত্র ২৫ কেজি ওজনের কঙ্কালসার দেহটি নোংরা চুলে আবৃত ছিল যা আড়াই দশক ধরে কাটা বা ধোয়া হয়নি। ২৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ব্লাঁশকে দেখে চেনা ছিল অসম্ভব।
ব্লাঁশকে নিজের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে চাওয়ার মাসুল গুনতে হয়েছে এই নরকযন্ত্রণা ভোগ করে। পরিবারের অমতে ভালবাসার জন্য অন্ধকার ঘরে দাম দিতে হয়েছে ২৫ বছর। তা-ও আবার সবচেয়ে কাছের মানুষ, নিজের মায়ের জন্য। দীর্ঘ ২৫ বছর এ শাস্তি ভোগ করেছিলেন ব্লাঁশ। এক সময়ে ব্লাঁশের দাদা বাধা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের ব্যক্তিত্বের কাছে হার মানতে হয় তাঁকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy