Cattle farmer disappeared in 1991 and returned 30 years later in same clothes dgtl
Romania Incident
বেরিয়েছিলেন ব্যবসার কাজে, ৩০ বছর পর একই পোশাকে, ৩০ বছরের পুরনো ট্রেনের টিকিট নিয়ে বাড়ি ফেরেন বিস্মৃত বৃদ্ধ!
৩০ বছর বাড়ি কেন ফেরেননি, এত বছর কোথায় এবং কী ভাবে দিনযাপন করেছিলেন— সে সব বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান যে, তাঁর নাকি কোনও স্মৃতিই নেই। শুধুমাত্র ৩০ বছর আগেকার সেই দিনের কথাই মনে রয়েছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৩১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
স্ত্রী-সন্তান থাকলেও সারা দিন ব্যবসার কাজেই ডুবে থাকতেন বৃদ্ধ। ঘরের চেয়ে বেশি সময় কাটাতেন বাইরে। ৩০ বছর আগে এমন ব্যবসার কাজেই শহরের বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ৩০ বছর আর বাড়িমুখো হননি। যে জামা পরে বাড়ি থেকে ৩০ বছর আগে বেরিয়েছিলেন, সেই জামা পরেই আবার নিজের ঠিকানায় ফিরলেন তিনি। ঠিক যেন বাস্তবের ‘রিপ ভ্যান উইঙ্কল’-এর কাহিনি।
০২১৭
১৯৯১ সালের ঘটনা। স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে থাকতেন রোমানিয়ার বাসিন্দা ভেজ়িলে গর্গো। পেশায় পশুপালক ছিলেন ভেজ়িলে। ব্যবসায় মন পড়ে থাকত তাঁর। ষাটের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ব্যবসার যাবতীয় কাজ একা হাতে সামলাতেন তিনি।
০৩১৭
শহরের বাইরে ব্যবসার কাজে যাচ্ছিলেন ভেজ়িলে। সেই জন্য ট্রেনের টিকিটও কেটে রেখেছিলেন তিনি। একই দিনে আবার বাড়ি ফিরে আসবেন বলে একই সঙ্গে ফেরার টিকিটও কিনে ফেলেছিলেন। নির্দিষ্ট দিনে রওনা হলেও সে দিন আর ফেরেননি ভেজ়িলে।
০৪১৭
১৯৯১ সালে ব্যবসার কাজে ট্রেনে চেপে অন্য শহরে গিয়েছিলেন ভেজ়িলে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বছর। সে দিনই ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও বাড়ি ফেরেননি তিনি।
০৫১৭
নিখোঁজ হয়েছেন ভেবে ভেজ়িলের বাড়ির লোক পুলিশের দ্বারস্থ হন। তদন্তে নেমে পুলিশও কোনও সন্ধান পায় না ভেজ়িলের। কয়েক বছর পর তাঁকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। এমনকি, ভেজ়িলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও করে ফেলে তাঁর পরিবার।
০৬১৭
৩০ বছর পরের ঘটনা। ২০২১ সালের ২৯ অগস্ট। ভেজ়িলের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় একটি গাড়ি। সেই গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায় এক বৃদ্ধকে। বৃদ্ধকে চেনা না গেলেও তাঁর পোশাক খুব চেনা চেনা ঠেকে ভেজ়িলের সন্তানদের।
০৭১৭
ভেজ়িলেকে নামিয়ে দিয়েই গাড়িটি সেখান থেকে চলে যায়। গাড়িটির রেজি়স্ট্রেশন নম্বর পর্যন্ত লক্ষ করতে পারেননি ভেজ়িলের সন্তানেরা। বৃদ্ধের পরিচয় জেনে অবাক হয়ে যান তাঁরা। বৃদ্ধ জানান, তাঁর নাম ভেজ়িলে।
০৮১৭
৩০ বছর আগে ভেজ়িলে যে পোশাক পরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, বৃদ্ধের পরনেও সেই একই পোশাক ছিল। তিনি যে আসলে ভেজ়িলেই, তার প্রমাণ হিসাবে বৃদ্ধের হাতের মুঠোয় ছিল এক টুকরো কাগজ।
০৯১৭
ভেজ়িলের সন্তানেরা সেই কাগজ খতিয়ে দেখেন যে, সেটি একটি ট্রেনের টিকিট। কিন্তু তা ৩০ বছরের পুরনো। বৃদ্ধের দাবি, তিনি ৩০ বছর আগে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনের যে টিকিট কেটেছিলেন, সেটি নিজের কাছে এত বছর যত্ন করে রেখেছিলেন।
১০১৭
ভেজ়িলে নিজের নাম-পরিচয় দিলেও তাঁর সন্তানদের কাউকে চিনতে পারছিলেন না। এমনকি, তাঁর সন্তানেরা শৈশবের কোনও ঘটনার উল্লেখ করলেও তা মনে করতে পারছিলেন না বৃদ্ধ।
১১১৭
৩০ বছর বা়ড়ি কেন ফেরেননি, এত বছর কোথায় এবং কী ভাবে দিনযাপন করেছিলেন— সে সব বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান যে, তাঁর নাকি কোনও স্মৃতিই নেই। শুধুমাত্র ৩০ বছর আগেকার সেই দিনের কথাই মনে রয়েছে।
১২১৭
সত্যতা যাচাই করতে চিকিৎসককেও ডাকেন ভেজ়িলের সন্তানেরা। বৃদ্ধের কোনও অসুখ করেছে কি না, তা পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয় চিকিৎসককে। কিন্তু চিকিৎসক সমস্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান যে, বৃদ্ধ সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন।
১৩১৭
বয়সের কারণে শারীরিক দুর্বলতা ছিল বৃদ্ধের। বয়সজনিত কারণেই হয়তো কোনও ঘটনা মনে রাখতে পারেননি তিনি। ৩০ বছর পর ভেজ়িলের হঠাৎ আগমন আজও এক রহস্য থেকে গিয়েছে।
১৮১৯ সালে ‘রিপ ভ্যান উইঙ্কল’ নামের একটি ছোট গল্প লিখেছিলেন ওয়াশিংটন আর্ভিং। এই গল্পে রিপ ভ্যান উইঙ্কল নামের এক তরুণ ছিল। স্ত্রীকে ছেড়ে কুকুরকে সঙ্গী করে পাহাড়ে চলে যায় সে। সেখানে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রিপ।
১৬১৭
ঘুম থেকে উঠে রিপ দেখতে পায় সে বুড়ো হয়ে গিয়েছে। তার দাড়ি ঝুলে পড়েছে গোড়ালি পর্যন্ত। আদরের কুকুরটিকেও আশপাশে দেখতে পাচ্ছে না সে। তার পর নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় রিপ। কিন্তু গ্রামে গিয়ে মাথায় হাত পড়ে তার।
১৭১৭
রিপ তার বাড়ির সামনে গিয়ে স্ত্রীর নাম ধরে ডাকলে এক তরুণী দরজা খোলে। কিন্তু সে নাকি রিপের কন্যা। রিপের স্ত্রী বহু বছর আগেই মারা গিয়েছে বলে জানতে পারে। এমনকি, চেনা-পরিচিতদের মধ্যে বিশেষ কাউকে খুঁজে পায় না রিপ। গ্রামবাসীদের কাছে রিপ জানতে পারে যে, সে ২০ বছর নিরুদ্দেশ ছিল। ২০ বছর পর গ্রামে ফিরে এসেছে। ভেজ়িলের ঘটনাও রিপের মতো। শুধু গল্পের চেয়ে আরও ১০ বছর বেশি ‘নিরুদ্দেশ’ ছিলেন বাস্তবের ‘রিপ ভ্যান উইঙ্কল’।