China alleges 1.27 lakh bitcoin worth of 14 billion dollar stealing through hacking by US dgtl
Chinese Bitcoin Stealing
ড্রাগনের ঘরে ‘সিঁদ’ কেটে ১.২৭ লক্ষ বিটকয়েন সাফ করেছে আমেরিকা? প্রায় ১,৪০০ কোটি ডলার খুইয়ে চুল ছিঁড়ছে চিন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১.২৭ লক্ষ বিটকয়েন চুরির মারাত্মক অভিযোগ এনেছে চিন, যার বাজারমূল্য প্রায় ১,৪০০ কোটি ডলার। বছর পাঁচেক আগে সংশ্লিষ্ট ক্রিপ্টো মুদ্রাগুলি পুল মাইনিংয়ের সময়ে বেজিঙের ‘লুবিয়ান’ নামের সংস্থার হট ওয়ালেট থেকে খোয়া যাওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
কথায় বলে ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি’! চিনের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হল সেই প্রবাদ। অভিযোগ, দুনিয়া জুড়ে হ্যাকিং আর গুপ্তচরবৃত্তিতে ‘হাত পাকানো’ বেজিঙের পকেট কেটে প্রায় ১,৪০০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছে আমেরিকা। টাকা ফেরত চেয়ে কূটনীতির যুদ্ধে নেমেছে ড্রাগন। পাশাপাশি একে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের কারসাজি বলেও তোপ দেগেছে তারা। যদিও মান্দারিনভাষীদের সেই অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
০২১৮
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৪২৬টি বিটকয়েন চুরির অভিযোগ আনে চিন। বেজিঙের সরকারি গণমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইম্স’-এ সেই খবর প্রকাশিত হতেই দুনিয়া জুড়ে পড়ে যায় শোরগোল। ড্রাগনের দাবি, বছর পাঁচেক আগে (পড়ুন ২০২০ সালে) হ্যাকিংয়ের শিকার হয় তাদের ক্রিপ্টো মুদ্রা খনন সংস্থা ‘লুবিয়ান’। ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সার্ভারে ঢুকে বিটকয়েন সরায় এক সাইবার অপরাধী। যদিও তখন বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল ‘লুবিয়ান’।
০৩১৮
বিটকয়েন-সহ যে কোনও ক্রিপ্টো মুদ্রা পুরোপুরি ভাবে ব্লক চেন প্রযুক্তি নির্ভর। লগ্নিকারীদের কাছে এটিকে পৌঁছে দিতে নিরন্তর চালাতে হয় খননকার্য, যা মূলত দু’ভাবে করা যেতে পারে। একটি হল সোলো মাইনিং বা একক খনন। দ্বিতীয়টিকে বলা হয় পুল মাইনিং বা সমষ্টিগত খনন। প্রথমটিতে ব্লক চেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ডিজিটাল দুনিয়ায় ক্রিপ্টো মুদ্রাকে হাজির করার সুযোগ রয়েছে। যদিও এতে পুল মাইনিংয়ের প্রচলন বেশি।
০৪১৮
সোলো মাইনিংয়ে বিটকয়েন বা যে কোনও ক্রিপ্টো মুদ্রা তৈরি করা বেশ সময়সাপেক্ষ। আর তাই পুল মাইনিংয়ে একাধিক ব্যক্তিকে কাজে লাগিয়ে থাকে ‘লুবিয়ান’-এর মতো চিনা সংস্থা। সমষ্টিগত ভাবে ব্লক চেনের ডিজিটাল দুনিয়ায় খননকাজ চালিয়ে বিটকয়েন তুলে আনে তারা। বেজিঙের অভিযোগ, এ-হেন পুল মাইনিংয়ের সময়ে তা হ্যাক করে ক্রিপ্টো মুদ্রা চুরি করেছে আমেরিকা। সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় সাইবার অপরাধ’ আখ্যা দিয়েছে ড্রাগন সরকার।
০৫১৮
অন্য দিকে গোটা বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেছে আর একটি গণমাধ্যম সংস্থা ‘আরখম’। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুল মাইনিংয়ের সময়ে বিটকয়েন যে চুরি হচ্ছে তা ভালই বুঝতে পেরেছিল ‘লুবিয়ান’। সঙ্গে সঙ্গে সেটা চিনের কমিউনিস্ট সরকারকে জানিয়ে দেয় তারা। ক্রিপ্টো হ্যাকিংয়ের খবর প্রকাশ্যে এলে গ্রাহকদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হবে, তা বলাই বাহুল্য। সে ক্ষেত্রে ‘লুবিয়ান’-এর গ্রহণযোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা ষোলো আনা। তখন সংস্থার থেকে মুখ ফেরাতে পারে অধিকাংশ গ্রাহক।
০৬১৮
বিটকয়েনের পুল মাইনিং হ্যাকিংয়ের খবর জানাজানি হলে ‘লুবিয়ান’-কে যে বিপুল আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে হত, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর তাই সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোথাও কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি তারা। খোয়া যাওয়া ক্রিপ্টো মুদ্রা কোথাও না কোথাও ব্যবহারের চেষ্টা করবে সাইবার অপরাধী। তখন তাঁকে হাতেনাতে পাকড়াও করার পরিকল্পনা করে চিনা সরকার। আর এখানেই মারাত্মক ভুল করে বসে বেজিং।
০৭১৮
পুল মাইনিংয়ের সময়ে ‘লুবিয়ান’-এর কোন কোন অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে, স্ক্রিনশট দিয়ে প্রতিবেদনে তা তুলে ধরে ‘আরখম’। ওই সময়ে চিনা সংস্থাটির ‘হট ওয়ালেট’ থেকে খোয়া যাওয়া বিটকয়েনের বাজারমূল্য ছিল ৩৫০ কোটি ডলার। চোরাই ক্রিপ্টো মুদ্রার অবশ্য কোনও রকমের লেনদেন করেনি সাইবার অপরাধী। ফলে তাঁকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হন বেজিঙের দুঁদে গোয়েন্দারা। অপেক্ষা করা ছাড়া তাঁদের সামনে দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খোলা ছিল না।
০৮১৮
চলতি বছরের ১৪ অগস্ট এই কাহিনিতে আসে নতুন মোড়। ওই তারিখে জালিয়াতির অভিযোগে চ্যান ঝি নামে কম্বোডিয়ার এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে মার্কিন বিচার বিভাগ। পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত হয় তাঁর সম্পত্তি। সেখানেই মেলে ১.২৭ লক্ষ বিটকয়েনের হদিস, যা নিয়ে বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর পরেই সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বেধে যায় আমেরিকা-চিন কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব।
০৯১৮
আমেরিকার বিচার বিভাগের দাবি, কম্বোডিয়ার হুইওন গ্রুপ নামের ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ধৃত চ্যান ঝির বিরুদ্ধে জালিয়াতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পর্যটকদের পণবন্দি করে বিভিন্ন দেশের থেকে কোটি কোটি টাকা তুলত সে। আর তাই অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। অভিযুক্তের কাছে মিলেছে বিপুল সংখ্যায় বিটকয়েন, যার আসল মালিকের খোঁজ করা হচ্ছে।
১০১৮
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ওই বিবৃতি দিতেই আসরে নামে চিন। সংশ্লিষ্ট বিটকয়েন তাদের সংস্থা ‘লুবিয়ান’-এর বলে দাবি করে বসে বেজিং। আমেরিকা অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ। ওয়াশিংটনের পাল্টা যুক্তি, পুল মাইনিং হ্যাকিং হয়ে থাকলে কেন সাইবার অপরাধের অভিযোগ দায়ের করল না ‘লুবিয়ান’? ফলে সঠিক মালিকের সন্ধান না পাওয়া গেলে বাজেয়াপ্ত হওয়া ক্রিপ্টো মুদ্রা ফেরত দেওয়া অসম্ভব।
১১১৮
‘গ্লোবাল টাইম্স’-এ অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলেছেন চিনের সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ‘ন্যাশনাল কম্পিউটার ভাইরাস রেসপন্স সেন্টার’ বা এনসিভিআরএস-এর এক পদস্থ কর্তা। তাঁর দাবি, ‘‘পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে আমেরিকা। গোটাটাই মার্কিন গোয়েন্দাদের মস্তিষ্কপ্রসূত। এর জন্য চ্যান ঝিকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেছেন তাঁরা। চোরাই বিটকয়েন নিজেদের কাছে রাখতে এখন নানা রকমের অবাস্তব যুক্তিজাল খাড়া করছে ওয়াশিংটন।’’
১২১৮
চিনা সংস্থা ‘লুবিয়ান’-এর পুল মাইনিং হ্যাকিংয়ের খবর জানাজানি হওয়ার প্রভাব অবশ্য ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে বিটকয়েনের বাজারে। গত ১১ নভেম্বর এই ক্রিপ্টো মুদ্রার দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম ওঠে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৩৫৫ ডলার। মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ১৬ নভেম্বর বেলা ১২টা নাগাদ সেই দরই নেমে আসে ৯৫ হাজার ৯৩৯ ডলারে। অর্থাৎ এতে প্রায় সাত শতাংশের পতন দেখা গিয়েছে।
১৩১৮
সাইবার বিশ্লেষকেরা অবশ্য চিনের ঘটনাটিকে সাধারণ হ্যাকিং বলে মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, ‘‘অভ্যন্তরীণ যোগসাজশ ছাড়া ব্লক চেন প্রযুক্তিতে ঢুকে বিপুল পরিমাণে বিটকয়েন হাতিয়ে নেওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ গ্রাহকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এর সার্ভারে প্রায় থাকেই না কোনও ত্রুটি বা দুর্বলতা।’’ আর তাই ‘লুবিয়ান’-কে তদন্তের আওতায় আনা উচিত বলে স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।
১৪১৮
গত এক মাসে বিটকয়েনের দাম কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এই পতন সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ক্রিপ্টো মুদ্রাটির বাজার মূলধন দু’লক্ষ কোটি ডলারের উপরে রয়েছে। ফলে ডিজিটাল অর্থের দুনিয়ায় বিটকয়েনের আধিপত্য ফুরিয়ে যায়নি। তবে এর মাইনিং বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ করেছে চিন। ক্রিপ্টো মুদ্রাটির সর্বাধিক মাইনিং হচ্ছে আমেরিকায়।
১৫১৮
২০২১ সালে বিটকয়েন খনন বন্ধ করার কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করে চিন। বেজিঙের এই সিদ্ধান্ত ‘লুবিয়ান’-এর হট ওয়ালেট থেকে ১.২৭ ক্রিপ্টো মুদ্রা চুরির সঙ্গে সম্পৃত্ত কি না তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রা মাইনিংয়ের কাজও করত। আপাতত তা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে ‘গ্লোবাল টাইম্স’।
১৬১৮
গত ৩০ অক্টোবর রিপাবলিক অফ কোরিয়া বা আরওকের (পড়ুন দক্ষিণ কোরিয়া) বুসান শহরে চিনা রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিঙের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় দু’ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার আলোচনার পর নিজের সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট করেন ‘প্রেসিডেন্ট অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’ অর্থাৎ পোটাস। সেখানে দু’তরফে বাণিজ্যচুক্তি হওয়ার ইঙ্গিতও দেন তিনি।
১৭১৮
বুসানে ওই বৈঠকের মুখে প্রথম বার ‘জি-২’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এর মাধ্যমে চিনকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিপাক্ষিক ভাবে বিশ্ব জুড়ে মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখতে চাইছেন ট্রাম্প, যাকে স্বাগত জানাতে একেবারেই দেরি করেনি বেজিং। কিন্তু দু’সপ্তাহের মধ্যেই বিটকয়েন নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় দু’তরফের মাখোমাখো সম্পর্ক কত দিন টিকবে, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে।
১৮১৮
এ বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিন-চিন সম্পর্ক কখনও সরলরেখায় চলেনি। এপ্রিলেই দুই ‘সুপার পাওয়ার’-এর মধ্যে বেধে যায় বাণিজ্যযুদ্ধ। সেপ্টেম্বর আসতে আসতে যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজের রফতানি বন্ধ করে বেজিং। সেই জট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। বছর শেষ হওয়ার মুখে নতুন করে মাথাচাড়া দিল পাঁচ বছর আগের বিটকয়েন চুরিকাণ্ড। এর জল কত দূর গড়ায় সেটাই এখন দেখার।