Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Green Hydrogen

সমুদ্রের নোনাজলের ভোলবদল! ২৪ টাকার জ্বালানিতে চলবে গাড়ি-কলকারখানা? চিনের বুদ্ধিতে হতবাক সৌদি ও আমেরিকা

নোনা জলকে স্বাদু বা মিঠে জলে পরিণত করার পাশাপাশি জল থেকে ‘হাইড্রোজ়েন জ্বালানি’ বার করার প্রযুক্তি বার করেছে বেজিং। নামমাত্র খরচে জল থেকে ‘তরল সোনা’ বার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চিন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৪৭
Share: Save:
০১ ১৮
Green Hydrogen

সমুদ্রের জল থেকে জ্বালানি তৈরির খরচে আমেরিকা, এমনকি তেলের খনির দেশ সৌদি আরবকেও টেক্কা দিল চিন। বিকল্প জ্বালানির খোঁজে বিশ্বের প্রায় সব দেশই উঠেপড়ে লেগেছে। অন্য দিকে, গোটা বিশ্ব জুড়ে আগামী দিনে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে জলসঙ্কট। দুই বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান বার করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে বেজিং।

০২ ১৮
Green Hydrogen

মাটি খুঁড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি খোঁজার দিন প্রায় শেষের পথে। তেমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সে দিক থেকে নীল সাগরের জল সীমাহীন সম্পদ। সেঁচে আনতে পারলেই ফুলেফেঁপে উঠবে যে কোনও দেশের অর্থনীতি। নোনা জলকে স্বাদু বা মিঠে জলে পরিণত করার পাশাপাশি জল থেকে ‘হাইড্রোজ়েন জ্বালানি’ বার করার প্রযুক্তি খুঁজে পেল চিন। নামমাত্র খরচে জল থেকে ‘তরল সোনা’ বার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ড্রাগন।

০৩ ১৮
Green Hydrogen

প্রতি ঘনমিটারে মাত্র ২৪ টাকা খরচ করে সমুদ্রের জলের ভোল বদলে দিতে পেরেছে বেজিং। শানডংয়ের রিঝাও শহরের একটি শোধনাগারের একক প্রযুক্তিতেই পানীয় জল এবং বিকল্প জ্বালানি তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছেন চিনা গবেষকেরা। প্রকল্পটি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে একটি কারণেই। একটি মাত্র যন্ত্র ব্যবহার করে দু’টি মূল্যবান সম্পদ তৈরি করে দেখিয়েছে চিন।

০৪ ১৮
Green Hydrogen

উষ্ণায়ন ও পরিবেশের উপরে নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বহু দিন ধরেই বিশ্ব জুড়ে খোঁজ চলছে জীবাশ্ম জ্বালানির ‘উপযুক্ত’ বিকল্পের। ভবিষ্যতের সেই বিকল্প জ্বালানিই হল, সবুজ হাইড্রোজ়েন। পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি (সৌর বা বায়ু) ব্যবহার করে জলের তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে হাইড্রোজ়েন উৎপন্ন হয়, তাকে বলা হয় ‘গ্রিন হাইড্রোজ়েন’। এখন গ্রিন হাইড্রোজ়েনকেই ভবিষ্যতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শক্তি হিসাবে গণ্য করা যায়।

০৫ ১৮
Green Hydrogen

গবেষণাগার বা শিল্পে উৎপাদিত হাইড্রোজ়েনের থেকে প্রাকৃতিক হাইড্রোজ়েন অনেক আলাদা। পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎস থেকে জলের তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সবুজ হাইড্রোজ়েন তৈরি হয়। প্রাকৃতিক হাইড্রোজ়েন পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এই হাইড্রোজ়েন দূষণের সৃষ্টি করে না।

০৬ ১৮
Green Hydrogen

প্রকল্পটিতে শুধুমাত্র সমুদ্রের জল এবং কাছাকাছি ইস্পাত, পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্যের তাপ ব্যবহার করা হয়। সমুদ্রের জলকে বিশুদ্ধ জল ও সবুজ হাইড্রোজ়েনে পরিণত করার প্রকল্পটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল খরচ। প্রতি ঘনমিটারের জন্য খরচ পড়ছে ২ ইউয়ান বা প্রায় ২৪ টাকা। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির গুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে গ্রিন হাইড্রোজ়েন।

০৭ ১৮
Green Hydrogen

এই প্রযুক্তি এতটাই সস্তা যে এটি জল প্রক্রিয়াকরণের দক্ষতার জন্য বিখ্যাত সৌদি আরব এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে নেতৃত্বস্থানীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে। শোধনাগারটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি কোনও চিরাচরিত বিদ্যুৎ বা শক্তির উপর নির্ভরশীল নয়। পুরো প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয় রাসায়নিক বর্জ্যের থেকে। তাই খরচও নামমাত্র। আর এই জায়গাতেই বাজিমাত করেছে বেজিং।

০৮ ১৮
Green Hydrogen

একটি ‘ইনপুট’ থেকে তিনটি ‘আউটপুট’ নীতি। একক ইনপুট হল সমুদ্রের জল এবং বর্জ্যের তাপ। সেখান থেকে, প্রকল্পটি তিনটি ভিন্ন আউটপুট সরবরাহ করে। পরিকল্পনাটিকে এই নকশার আদলে ছকেই সাফল্যের মুখ দেখেছে শি জিংপিং সরকার। রাসায়নিক তৈরির কারখানাগুলি বাতাসে অতিরিক্ত তাপ ছেড়ে দেয়। সেই শক্তি নষ্ট না করে সেগুলিকে শোধনাগারের শক্তির জোগানদারে বদলে ফেলেন ইঞ্জিনিয়ারেরা।

০৯ ১৮
Green Hydrogen

প্রথম ধাপে এটি লবণাক্ত জল থেকে পানযোগ্য স্বাদু জল উৎপাদন করে। সংবাদ প্রতিবেদন সূত্রে খবর, প্রতি বছর ৮০০ টন বা ৮ লক্ষ কেজি সমুদ্রের জল প্রক্রিয়াজাত করে ৪৫০ ঘনমিটার অতি বিশুদ্ধ জল উৎপন্ন করা হবে, যে জল পরীক্ষাগার বা শিল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে।

১০ ১৮
Green Hydrogen

দ্বিতীয়ত, এটি প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৯২ হাজার ঘনমিটার সবুজ হাইড্রোজ়েন উৎপন্ন করে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পরিষ্কার জ্বালানিগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। যানবাহন থেকে শুরু করে শিল্প কারখানা, যে কোনও শিল্পের প্রয়োজনীয় ইন্ধন জোগান দিতে সক্ষম এই সবুজ জ্বালানি।

১১ ১৮
Green Hydrogen

তৃতীয়ত, এই প্রক্রিয়ার শেষে ৩৫০ টন খনিজ সমৃদ্ধ লবণাক্ত পদার্থ পড়ে থাকে। সেটিও ফেলনা নয়। বিভিন্ন রাসায়নিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই খনিজ বর্জ্য। গোটা প্রক্রিয়াতে কিছুই নষ্ট হয় না। প্রতিটি ধাপেই কিছু না কিছু কার্যকরী উপাদান তৈরি হয়।

১২ ১৮
Green Hydrogen

এখনও পর্যন্ত সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা সমুদ্রের শোধিত জল পাওয়া যায়। সেই দেশগুলিতে এখনও নোনা জল শোধনের খরচ প্রায় ৪২ টাকা। আমেরিকায় সমুদ্রের জল প্রক্রিয়াকরণের খরচ সৌদির চেয়ে প্রায় সাড়ে চার গুণ। ক্যালিফোর্নিয়ার বৃহত্তম প্ল্যান্টে তৈরি শোধিত জলের খরচ প্রায় ১৮৬ টাকা।

১৩ ১৮
Green Hydrogen

বেজিঙে সাধারণ পানযোগ্য জলের প্রতি ঘনমিটারে দাম ৫ ইউয়ান। ভারতীয় মুদ্রায় ৬৩ টাকারও বেশি। অর্থাৎ, সমুদ্রের জল প্রক্রিয়াকরণের খরচের দ্বিগুণেরও বেশি।

১৪ ১৮
Green Hydrogen

এখন যে হাইড্রোজ়েন উৎপাদন হয়, তা মূলত তৈরি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। ফলে হাইড্রোজ়েন বিশুদ্ধ জ্বালানি হলেও তার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কার্বন নিঃসরণ হয়। কিন্তু বিকল্প বিদ্যুতের সাহায্যে জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ (ইলেক্ট্রোলিসিস) করে বা বায়োমাস থেকে যে হাইড্রোজ়েন তৈরি হয় তা দূষণহীন। সেটিকেই বলা হয় গ্রিন হাইড্রোজ়েন।

১৫ ১৮
Green Hydrogen

এখনও পর্যন্ত এই সবুজ পরিবেশবান্ধব জ্বালানিটি তৈরির প্রধান অন্তরায় ছিল খরচ। এটি তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ এবং প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ জলের প্রয়োজন হত। লবণাক্ত জলের কারণে যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হত। পরিকল্পনার মাঝেই যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ত। সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ক্লোরাইড আয়নগুলি সরঞ্জামের ক্ষতি করে। বৈদ্যুতিক পরিবাহীগুলিতে জমে যেত উপাদানগুলি।

১৬ ১৮
Green Hydrogen

চিনের নতুন ব্যবস্থায় সরাসরি সমুদ্রের জল থেকে হাইড্রোজ়েন তৈরি করার ফলে বিশুদ্ধ জলের প্রয়োজন পড়ছে না। নতুন প্রযুক্তি এই দীর্ঘস্থায়ী বাধাগুলি দূর করতে সক্ষম হয়েছে। রিঝাওয়ের পরিশোধনাগারটি একটানা তিন সপ্তাহ কাজ করতে সক্ষম। এই ঘটনাই প্রমাণ করেছে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলি সফল ভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে চিনা প্রযুক্তি। দাবি তুলেছেন সে দেশের গবেষকেরা।

১৭ ১৮
Green Hydrogen

চিনের লাওশান গবেষণাগারের অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার কিন জিয়ানগুয়াংয়ের মতে, এই প্ল্যান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতি বছর প্রায় ৩,৮০০ কিলোমিটার চলার জন্য ১০০টি বাসকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট। তাঁর ধারণা, এই প্রযুক্তিটি কেবল হাইড্রোজ়েন সিলিন্ডার ভর্তি করার বিষয় নয়। এটি সমুদ্র থেকে শক্তি আহরণের একটি নতুন উপায়।

১৮ ১৮
Green Hydrogen

অফুরান সমুদ্র সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সীমিত পানীয় জল এবং জ্বালানি সম্পদ রয়েছে এমন দেশগুলির কাছে এই প্রযুক্তি নতুন আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলির জন্য ভবিষ্যতে মিষ্টি জলের সঙ্কট কমানো এবং বিকল্প শক্তির স্থায়ী সমাধানের দিশা দেখাচ্ছে চিন, এমনটাই মনে করছেন শক্তি ও জ্বালানি সংক্রান্ত বিষয়ক গবেষকদের একাংশ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy