China develops new Naval Air defence weapon named Metal Storm, would be a game changer in Taiwan conflict dgtl
Chinese Air Defence
মিনিটে ছোড়া যায় চার লক্ষ বুলেট! ভারত-পাক ‘যুদ্ধ’ থেকে পাওয়া দুর্নাম মুছতে ‘ধাতব ঝড়’ তুলল ড্রাগন
ভারত-পাকিস্তান ‘যুদ্ধে’ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে ইসলামাবাদের হাতে থাকা একাধিক চিনা হাতিয়ার। সেই ঘটনা ভুলে গিয়ে নৌবাহিনীর জন্য নতুন একটি হাতিয়ারের প্রোটোটাইপ তৈরি করলেন ড্রাগনের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৫ ১৩:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ড্রোন হামলায় উড়েছে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। ধ্বংস হয়েছে একের পর এক লড়াকু জেট। লড়াইয়ের ময়দানে কাজ করেনি ক্ষেপণাস্ত্র। চার দিনের ভারত-পাকিস্তান ‘যুদ্ধে’ ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছে চিনের হাতিয়ার-গুমর। এই অবস্থায় হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে নতুন অস্ত্র তৈরিতে নজর দিয়েছে বেজিং। এর মাধ্যমে দুর্নাম মোছা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ড্রাগনের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।
০২১৮
সম্প্রতি চিনের জনপ্রিয় প্রতিরক্ষা পত্রিকা ‘মর্ডান ওয়েপনরি’ নতুন একটি অস্ত্রের প্রোটোটাইপের কথা জানিয়েছে। মূলত, রণতরী ধ্বংসকারী ড্রোন, ক্রুজ় এবং হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে ঠেকাতে এর নির্মাণ করছেন ড্রাগনের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। বেজিং সেটিকে কী ধরনের যুদ্ধজাহাজে ব্যবহার করবে তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। হাতিয়ারটিকে নৌঘাঁটির ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ হিসাবেও ব্যবহার করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
০৩১৮
‘মর্ডান ওয়েপনরি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন ধরনের ওই অস্ত্রটিতে রয়েছে ১৬টি ৩৫ মিলিমিটারের ব্যারেল। সেগুলি থেকে মিনিটে চার লক্ষ গুলি ছুড়তে পারবে চিনের ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএর নৌসেনা। এটি ব্যবহার করার জন্য যে ‘বুলেট কার্টেন’-এর প্রয়োজন, তা-ও বানিয়ে ফেলেছে বেজিং। প্রাথমিক ভাবে এই হাতিয়ারটিকে ‘ধাতব ঝড়’ (মেটাল স্টর্ম) বলে উল্লেখ করেছে ড্রাগন। তবে এর আনুষ্ঠানিক নামকরণ এখনও হয়নি।
০৪১৮
‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ আবার জানিয়েছে, ৭ ম্যাক (শব্দের গতিবেগের চেয়ে সাত গুণ) গতিতে আসা যে কোনও মাঝারি পাল্লার হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকাতে পারবে চিনের এই নতুন অস্ত্র। প্রাথমিক ভাবে এটিকে ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির রণতরীতে মোতায়েন করতে পারে বেজিং। পিএলএ-র নৌবাহিনী পুরোপুরি এটিকে গ্রহণ করলে তাঁদের আকাশ প্রতিরক্ষা যে অনেকটা মজবুত হবে, তা বলাই বাহুল্য।
০৫১৮
বর্তমানে রণতরী এবং নৌঘাঁটিগুলির সুরক্ষায় ‘ক্লোজ় ইন ওয়েপন সিস্টেম’ নামের একটি বিশেষ ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করে ড্রাগন ফৌজ। এর সাহায্যে যুদ্ধজাহাজ বিধ্বংসী স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের ঝাঁককে আটকানো সম্ভব বলে জানা গিয়েছে। ‘ধাতব ঝড়’-এর ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। প্রতিকূল সামুদ্রিক পরিবেশে মানিয়ে নিতে এর কোনও অসুবিধা হবে না বলে দাবি করেছে বেজিং।
০৬১৮
‘ধাতব ঝড়’-এর উৎপত্তিস্থল হিসাবে চিনকে চিহ্নিত করলে অবশ্য ভুল হবে। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে এই ধরনের একটি অস্ত্র তৈরি করে সারা বিশ্বকে চমকে দেন অস্ট্রেলীয় মাইক ও’ডোয়ায়ার। তাঁর সংস্থা ‘মেটাল স্টর্ম ইনকর্পোরেশন’-এর বানানো এই হাতিয়ারের প্রোটোটাইপে ছিল ৩৬টি নল বা ব্যারেল, যা দিয়ে মিনিটে চালানো যেত ১০ লক্ষ রাউন্ড গুলি। তৎকালীন সময়ে এর জন্য রেকর্ড করেছিল ওই অস্ত্র।
০৭১৮
‘মেটাল স্টর্ম ইনকর্পোরেশন’-এর প্রোটোটাইপ অস্ত্রটির উপর নজর পড়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা গবেষকদের। ও’ডোয়ায়ারকে ডেকে নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রযুক্তিগত নানা বাধার কারণে এই হাতিয়ার নির্মাণ থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১২ সালে দেউলিয়া হয়ে যায় ‘মেটাল স্টর্ম ইনকর্পোরেশন’। তখনই সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটির নির্মাণ এবং গবেষণায় দাঁড়ি পড়ে বলে মনে করা হয়েছিল।
০৮১৮
তবে আমেরিকা হাল ছাড়লেও এ ব্যাপারে আশা ত্যাগ করেনি চিন। মাইকের দাবি, ২০০৬ সালে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন পিএলএর পদস্থ জেনারেলরা। সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটির প্রযুক্তির হস্তান্তর চেয়েছিলেন তাঁরা। এর জন্য ও’ডোয়ায়ারকে ১০ কোটি ডলার দিতে রাজি ছিল বেজিং। অস্ট্রেলীয় শিল্পপতি ওই অর্থ নিয়েছিলেন কি না, তা জানা যায়নি। তবে বিশ্লেষকদের দাবি, তাঁর থেকে প্রযুক্তি চুরি করে নৌ-প্রতিরক্ষার প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে ড্রাগন।
০৯১৮
এই অস্ত্র নির্মাণে মূল ভূমিকা রয়েছে চিনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিরক্ষা সংস্থা নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ় গ্রুপ কর্পোরেশনের। তাদেরই শাখা সংস্থা হারবিন ফার্স্ট মেশিনারি গ্রুপ কোং লিমিটেডের হাত ধরে জন্ম হয়েছে ‘ধাতব ঝড়’-এর। প্রতিরক্ষা পত্রিকা ‘মডার্ন ওয়েপনরি’ জানিয়েছে, ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া ফৌজি প্রযুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে বেজিং। আগামী দিনের যুদ্ধে এটি ‘গেম চেঞ্জার’-এর ভূমিকা নেবে বলে মনে করে পিএলএ নৌবাহিনী।
১০১৮
সূত্রের খবর, ‘ধাতব ঝড়ে’ যে ১৬টি ব্যারেল রয়েছে, তার এক একটি মিনিটে ১২ হাজার রাউন্ড গুলি ছুড়তে পারে। ট্রাক বা সাঁজোয়া গাড়িতে বসিয়ে এটিকে রণতরী পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবে পিএলএ নৌবাহিনী। হাতিয়ারটির ট্রায়াল যথাসম্ভব গোপনে সেরে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে বেজিং। বিশ্লেষকদের অনুমান, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের গোড়াতেই এটি হাতে পাবে পিএলএ নৌসেনা।
১১১৮
এই হাতিয়ার থেকে ৩৫ মিলিমিটারের গোলা ছোড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে ‘ধাতব ঝড়’ চালানোর ক্ষেত্রে অন্যতম অসুবিধা হল, এর রি-লোডিং। গুলি ফুরিয়ে গেলে এতে তা নতুন করে ভরা মোটেই সহজ নয়। এই প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মেটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন চিনা প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। এ ছাড়া এর ব্যাপক উৎপাদনের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে।
১২১৮
লম্বা সময় ধরেই তাইওয়ানকে পৃথক রাষ্ট্রের মান্যতা দিতে নারাজ চিন। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপটিকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দাবি করে এসেছে বেজিং। এ হেন আগ্রাসী ড্রাগনের হাত থেকে তাইপেকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে আমেরিকা। ইতিমধ্যেই এমকিউ-৪সি ট্রিটন এবং এমকিউ-৯বি রিপারের মতো হামলাকারী ড্রোন দ্বীপরাষ্ট্রটিতে মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন।
১৩১৮
পাশাপাশি, ড্রোন হামলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে তাইপেও। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ৩,৫০০ মানববিহীন উড়ুক্কু যান নির্মাণে মন দিয়েছে সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপ। তাইওয়ান প্রণালী পেরিয়ে দেশটিকে কব্জা করার ক্ষেত্রে এগুলি ড্রাগনের গলার কাঁটা হতে পারে। সেই কারণে রণতরীগুলিকে রক্ষা করে আক্রমণ চালিয়ে যেতে এই ধরনের অস্ত্র তৈরির দিকে ঝুঁকেছে চিন, মত প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের।
১৪১৮
ভারত-পাকিস্তান ‘যুদ্ধে’ অবশ্য পর্দার আড়ালে থেকে ক্রমাগত ইসলামাবাদকে সাহায্য করে গিয়েছে চিন। সূত্রের খবর, সীমান্তে ভারতীয় সেনার গতিবিধির উপর নজর রাখতে একাধিক ‘গুপ্তচর’ উপগ্রহকে কাজে লাগায় বেজিং। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য সরাসরি রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতর পাঠাচ্ছিল ড্রাগন সরকার। যদিও তাতে শেষরক্ষা হয়নি।
১৫১৮
এ ছাড়া পহেলগাঁও কাণ্ডের তদন্তে চিনা যোগ খুঁজে পেয়েছেন নয়াদিল্লি। গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে সিএনএন-নিউজ় ১৮ জানিয়েছে, বেজিঙের বেইদু গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত একটি নিষিদ্ধ হুয়াওয়ে স্যাটফোন ব্যবহার করেছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। ভারতীয় সেনার রেডারে গ্যাজেটটির উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে। যদিও বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার পর সংশ্লিষ্ট স্যাটফোনটিকে খুঁজে পাননি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি বা এনআইএ) গোয়েন্দারা।
১৬১৮
বর্তমানে চিনের রফতানি করা অস্ত্রের ৬০ শতাংশ কিনে থাকে পাকিস্তান। ‘যুদ্ধের’ সময় সেগুলির অত্যন্ত খারাপ পারফরম্যান্সে বিপাকে পড়ে ইসলামাবাদ। সংঘাত চলাকালীন ড্রোন হামলা চালিয়ে পাক পঞ্জাব প্রদেশের লাহৌরের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কে উড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। সেখানে মোতায়েন ছিল চিনের তৈরি ‘এইচকিউ-৯পি’ নামের একটি এয়ার ডিফেন্স।
১৭১৮
এ ছাড়া বেজিং থেকে কেনা জেএফ-১৭ নামের দু’টি লড়াকু জেটকে ধ্বংস করেছে নয়াদিল্লি। সে কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির সেনা অফিসারেরা। পাশাপাশি, পাক বিমানবাহিনীর ছোড়া চিনের তৈরি পিএল-১৫ আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রটি (এয়ার টু এয়ার মিসাইল) মাঝ-আকাশে বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হয়। পঞ্জাবের সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে অক্ষত অবস্থায় সেটিকে উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
১৮১৮
পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, প্রযুক্তি চুরি করে একের পর এক হাতিয়ার তৈরি করেছে বেজিং। সেই কারণেই যুদ্ধের ময়দানে সেগুলির ব্যর্থতা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। ‘ধাতব ঝড়’-এর ভাগ্যেও কি সেটাই লেখা রয়েছে, না কি এর সাহায্যে পুরনো অপমান ঝেড়ে ফেলতে পারবে চিন? উত্তর দেবে সময়।