Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Satellite Collision

গতির ঝড়ে মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহদের মধ্যে ধাক্কা লাগার উপক্রম! ইতিহাসে প্রথম বার চিনা সতর্কবার্তা পেল নাসা

মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহদের মধ্যে ধাক্কা লাগার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই দুর্ঘটনা এড়াতে নজিরবিহীন ভাবে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করল চিন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:০৯
Share: Save:
০১ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

মহাকাশে মুখোমুখি দুই ‘সুপার পাওয়ার’-এর কৃত্রিম উপগ্রহ! তীব্র গতিতে একে অপরের দিকে ছুটে চলেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে সংঘর্ষ এড়াতে নিজে থেকেই এগিয়ে এল এক পক্ষ। তড়িঘড়ি আসন্ন বিপদের কথা জানিয়ে অন্য দেশটির জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সতর্ক করল তারা। এ-হেন নজিরবিহীন ঘটনার ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য খুঁজে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা।

০২ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

চিন এবং আমেরিকা। বাণিজ্য, শুল্ক, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় আধিপত্য থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। ২১ শতকে এই দুই ‘সুপার পাওয়ার’-এর মধ্যে অহরহ চলছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেই তালিকায় আছে মহাকাশ গবেষণাও। সেখানেই এ বার ‘খেলোয়াড়োচিত’ মনোভাব দেখাল বেজিং। প্রথম বারের জন্য কৃত্রিম উপগ্রহের সংঘর্ষ এড়াতে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছে তারা।

০৩ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

চলতি বছরের অক্টোবরে ‘আন্তর্জাতিক মহাকাশ সম্মেলন’-এ যোগ দেন মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা নাসার পদস্থ কর্তা অ্যালভিন ড্রু। সেখানে চিনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা সিএনএসএ-কে নিয়ে একটি বিশেষ তথ্য দেন তিনি। এর পরই বিজ্ঞানীমহলে হইচই পড়ে যায়।

০৪ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

নাসা কর্তা অ্যালভিন জানিয়েছেন, মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহদের মধ্যে সংঘর্ষ ঠেকাতে নাসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সিএনএসএ। এই নিয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করে তারা। সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কৃত্রিম উপগ্রহের গতিপথ বদলানোর সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্রের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রতিষ্ঠান। এর আগে কখনওই বেজিঙের দিক থেকে এই ধরনের সতর্কবার্তা পায়নি ওয়াশিংটন।

০৫ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

অতীতে অবশ্য এই ধরনের পরিস্থিতিতে বহু বার সিএনএসএ-কে সতর্ক করেছে নাসা। শুধু তা-ই নয়, অ্যালভিনের বয়ান অনুযায়ী, মহাকাশে দুর্ঘটনা এড়াতে কখনও কখনও কৃত্রিম উপগ্রহের গতিও কমিয়েছেন তাঁরা। সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ওই পদক্ষেপ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

০৬ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ‘স্পেসডটকম’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন ধরনের প্রযুক্তির খোঁজ মেলায় কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সংখ্যা দিন দিন বাড়িয়ে চলেছে সিএনসএসএ। বর্তমানে হাজার উপগ্রহের একটি পুঞ্জকে পৃথিবীর নিম্নকক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে চৈনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। ফলে সেখানে ভিড় ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

০৭ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই আমেরিকাও। মার্কিন ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্কের সংস্থা ‘স্পেসএক্স’-এর কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক পুঞ্জ রয়েছে। এর মাধ্যমে সরাসরি ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে থাকে ওই সংস্থা, যার পোশাকি নাম ‘স্টারলিঙ্ক’। মাস্কের এ-হেন সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভারতেও চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

০৮ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথায়, পৃথিবীর নিম্নকক্ষে যত বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ থাকবে, ততই বাড়বে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা। আর তাই ২০২২ সালে বিশেষ একটি প্রকল্প গ্রহণ করে চৈনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সংস্থা সিএনএসএ। পৃথিবীর নিম্নকক্ষ থেকে ‘মৃত’ বা ধ্বংস হয়ে যাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের উপাদান পরিষ্কারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে তারা। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে কক্ষপথের পরিস্থিতি নিয়ে নাসাকে সতর্ক করল ওই সংস্থা।

০৯ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, কৃত্রিম উপগ্রহ পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। ফলে জীবনীশক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর মহাকাশে দিব্যি ঘুরতে থাকে সেগুলি। এর জন্যই দিন দিন অন্তরীক্ষে বাড়ছে আবর্জনা। শুধু তা-ই নয়, ভরে উঠছে পৃথিবীর নিম্নকক্ষ। এই সমস্যার সমাধানে একটি আন্তর্জাতিক ট্র্যাকিং কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

১০ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

১৯৫৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) স্পুটনিক-১ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ অভিযান শুরু হয়। এর পর থেকে গত ৭০ বছরে কম-বেশি ৫৬ হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ বা সমতুল বস্তু পৃথিবীর চার দিকে নানা কক্ষপথে ঘুরেছে। এর অর্ধেকেরই ব্যবহারযোগ্যতা ফুরিয়েছে। ফলে সেগুলি পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ঘুরে চলেছে। আবার ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনায় উদ্ভূত বিভিন্ন আকারের বস্তুও আছে তালিকায়।

১১ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

পৃথিবীকে ঘিরে নানা কক্ষপথের আবার একাধিক হিসাব রয়েছে। প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত আছে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন কক্ষ বা লো আর্থ অরবিট। এর উপর ৩৫ হাজার কিলোমিটার অবধি মধ্যম শ্রেণির কক্ষ। আর তার উপরে ৪২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভূসমলয় ও অন্যান্য উচ্চ কক্ষগুলি। বিভিন্ন দেশের মহাকাশ সংস্থাগুলির সমীক্ষা অনুযায়ী, আনুমানিক ১৪ হাজার উপগ্রহ এই মুহূর্তে ভূপৃষ্ঠের কাছের কক্ষগুলিতে ঘুরছে।

১২ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

নাসা-র বিজ্ঞানী ডোনাল্ড জে কেসলার ১৯৭৮ সালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। সহলেখক ছিলেন বার্টন জি কুর প্যাল। মহাকাশে আবর্জনা কী হারে বাড়ছে এবং মানবসভ্যতার অস্তিত্বের পক্ষে তা কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, তার ভবিষ্যৎ-চিত্র তুলে ধরা হয় এই নিবন্ধে। সেখানেই আবর্জনা দ্রুত কমানোর কথা উল্লেখ করেন তাঁরা।

১৩ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

এই পরিস্থিতিতে বেজিং চাইছে কোন দেশের কতগুলি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে রয়েছে, তার যাবতীয় তথ্য থাকুক ওই আন্তর্জাতিক ট্র্যাকিং কেন্দ্রের হাতে। তাদের যাত্রাপথের উপরেও নিয়মিত নজরদারি চালাক সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এতে দু’টি সুবিধা আছে। প্রথমত, মহাশূন্যে কত শতাংশ কৃত্রিম উপগ্রহ কর্মক্ষম রয়েছে, তা বুঝতে পারবে তারা। দ্বিতীয়ত, মৃত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়া উপগ্রহের আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ অনেক বেশি সুশৃঙ্খল ভাবে করা যাবে।

১৪ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

তবে এতে বেশ কয়েকটি জায়গায় অসুবিধা রয়েছে। বর্তমানে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন বা ভারতের মতো দেশের গুপ্তচর উপগ্রহও রয়েছে পৃথিবীর নিম্নকক্ষে। এগুলির ব্যাপারে কোনও তথ্য কখনওই দিতে চায় না কোনও রাষ্ট্র। তা ছাড়া স্পেসএক্সের মতো বেসরকারি সংস্থার পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা জানাও বেশ কঠিন। ফলে প্রেসিডেন্ট শি-র প্রস্তাব বাস্তবে কতটা কাজ করবে, তা নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে।

১৫ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

গত ৩০ অক্টোবর রিপাবলিক অফ কোরিয়া বা আরওকের (পড়ুন দক্ষিণ কোরিয়া) বুসান শহরে চিনা রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিঙের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রায় দু’ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার আলোচনার পর নিজের সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট করেন ‘প্রেসিডেন্ট অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’ অর্থাৎ পোটাস। বেজিঙের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন একটি গোষ্ঠী তৈরির ইঙ্গিত দেন তিনি।

১৬ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

বুসানে ওই বৈঠকের মুখে প্রথম বার ‘জি-২’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেন ট্রাম্প। এর পরই দুনিয়া জুড়ে শুরু হয় হইচই। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, ‘জি-২’র মাধ্যমে চিনকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিপাক্ষিক ভাবে বিশ্ব জুড়ে মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখতে চাইছেন পোটাস, যাকে স্বাগত জানাতে অবশ্য একেবারেই দেরি করেনি বেজিং।

১৭ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

দক্ষিণ কোরিয়ায় চিনা প্রেসিডেন্ট শি-র সঙ্গে বৈঠকের পর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ট্রাম্প লেখেন, ‘‘জি-২র বৈঠক আমাদের দুই দেশের জন্যই দুর্দান্ত ছিল। এটা আমাদের চিরস্থায়ী শান্তি এবং সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে। ঈশ্বর চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়কেই আশীর্বাদ করুন!’’

১৮ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

এর পরই বিষয়টি নিয়ে পাল্টা বিবৃতি দেয় বেজিঙের বিদেশ মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা যৌথ ভাবে দায়িত্ব পালন করব। বিশ্বের কল্যাণের জন্য মহান এবং সুনির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তার জন্য একসঙ্গে পথ চলার ক্ষেত্রে আমাদের আপত্তি নেই।’’

১৯ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

ট্রাম্প-শি বৈঠকের মুখে ওয়াশিংটন এবং বেজিঙের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সংস্থা যে ভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তাতে দু’তরফে বিশ্বাস বাড়বে বলেই আশাবাদী আন্তর্জাতিক মহল। এই ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতা আগামী দিনে জি-২ গঠনকে তরান্বিত করতে পারে, বলছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

২০ ২০
Chinese space agency CNSA first time coordinate with NASA to avoid satellite collision

মহাকাশ গবেষণায় একটা সময়ে চিনের চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে ছিল আমেরিকা। চাঁদে মানুষ পাঠাতেও সফল হয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, ২১ শতকে এই ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে বেজিং। পৃথিবীর নিম্নকক্ষে রয়েছে তাঁদের মহাকাশ স্টেশন ‘তিয়ানগং’। এই ধরনের কোনও নভোযান নেই মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সংস্থা নাসার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy