Detailed Comparison of Military Strength, Weapons, and Defence Power of Afghanistan and Pakistan dgtl
Afghanistan vs Pakistan
সেনা, রকেট, ট্যাঙ্ক— শক্তির নিরিখে কে এগিয়ে? পাকিস্তান-আফগানিস্তান যুদ্ধ হলে নাকানিচোবানি খেতে হবে কাকে?
ইসলামাবাদ এবং কাবুলের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংঘাত এবং বিমান হামলায় এ মাসে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবেরা ক্ষমতা পুনর্দখলের পর এই প্রথম এত বড় সংঘর্ষে জড়িয়েছে দেশটি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সংঘাতে জড়িয়েছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। গত এক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে দু’পক্ষ। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত, বিগত কয়েক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে হওয়া সবচেয়ে গুরুতর সংঘর্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।
০২২০
ইসলামাবাদের অভিযোগ, পাকিস্তানের মাটিতে প্রতিনিয়ত আক্রমণ শানিয়ে যাওয়ার মূল কান্ডারি ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছে আফগানিস্তান। আফগান সীমান্তবর্তী এলাকা থেকেই জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের বুকে।
০৩২০
যদিও আফগানিস্তানের তরফে পাকিস্তানি বিদ্রোহীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। বরং তালিবান সরকারের পাল্টা অভিযোগ, ইসলামাবাদই তাদের প্রধান সশস্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখাকে আশ্রয় দিয়েছে।
০৪২০
এ নিয়েই সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল গত ৯ অক্টোবর। ওই দিন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমানহানা চালায় পাকিস্তান বায়ুসেনা। ১০ অক্টোবর সীমান্ত লাগোয়া পকতিকা প্রদেশের মারঘি এলাকায় একটি বাজারে বিমানহানা চালানো হয়।
০৫২০
ঘটনাচক্রে, আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফর শুরুর দিনেই হামলা হয়েছিল কাবুলে। পাক সেনার দাবি, কাবুল এবং পকতিকায় টিটিপির ঘাঁটি ছিল বিমানহানার নিশানা।
০৬২০
এর পর গত মঙ্গল ও বুধবার সীমান্ত সংঘর্ষের মধ্যেই দক্ষিণ আফগানিস্তানের শহর কন্দহর ও আশপাশের এলাকায় বিমান ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। এর পরেই পুরোদস্তুর সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের মধ্যে।
০৭২০
ইসলামাবাদ এবং কাবুলের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংঘাত এবং বিমান হামলায় এ মাসে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা পুনর্দখলের পর এই প্রথম এত বড় সংঘর্ষে জড়িয়েছে দেশটি।
০৮২০
এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় তালিবান সরকারের সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টার সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় ইসলামাবাদ। কিন্তু তার মেয়াদ শেষের আগেই আফগান তালিবানের একাংশের ‘ভ্রাতৃপ্রতিম’ সংগঠন টিটিপির বিরুদ্ধে সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বিদ্রোহীদের ডেরায় ফের হামলা চালায় পাক বাহিনী।
০৯২০
পাক ফৌজের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, অভিযানে ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি (পাক সরকার এবং সেনা যাদের ‘ফিতনা আল খোয়ারিজ়’ বলে চিহ্নিত করে)-র অন্তত ৩৪ জন জঙ্গি নিহত হয়েছেন।
১০২০
অতীতের বন্ধু তথা বর্তমানে শত্রু দুই দেশ যখন সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর উপায় খুঁজছে, তখন অনেকেই বোঝার চেষ্টা করছেন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান— কার ক্ষমতা বেশি। পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হলে, দু’দেশের মধ্যে পাল্লা ভারী থাকবে কার?
১১২০
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, পদাতিক সেনা, বায়ুসেনা থেকে শুরু করে পরমাণু শক্তি— আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে কে কোথায় দাঁড়িয়ে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শক্তি, তাদের হাতে থাকা অস্ত্রভান্ডার।
১২২০
পাকিস্তানের প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার চিন। বেজিংয়ের সামরিক সরঞ্জামে অনেক দিন ধরেই নিজেদের অস্ত্রের ভাঁড়ার ভরাচ্ছে ইসলামাবাদ। পাশাপাশি, পাকিস্তান নিজেদের সামরিক পরমাণু কর্মসূচিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। নৌ এবং বিমানবাহিনীকেও অত্যাধুনিক করে গড়ে তুলেছে।
১৩২০
অন্য দিকে, আফগান তালিবানের সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর আমেরিকার ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্র দখল করেছিল তালিবেরা। কিন্তু সে সব অস্ত্রেরও ব্যবহারিক ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অভাবে সামরিক আধুনিকীকরণও করতে পারেনি আফগান তালিবান সরকার।
১৪২০
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৬ লক্ষ ৬০ হাজার সক্রিয় সেনা রয়েছে। এর মধ্যে পদাতিক বাহিনীতে রয়েছে ৫,৬০,০০০ সেনা। বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনীর সদস্য যথাক্রমে ৭০ হাজার এবং ৩০ হাজার।
১৫২০
অন্য দিকে, আফগান তালিবানের সামরিক বাহিনীর সংখ্যা কম। মাত্র ১ লক্ষ ৭২ হাজার। যদিও, সম্প্রতি দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে আরও ১৮ হাজার জন নিয়োগের ঘোষণা করেছিল আফগানিস্তান।
১৬২০
পাকিস্তানের হাতে ৬ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া গাড়ি এবং সাড়ে চার হাজারেরও বেশি কামান রয়েছে। আফগান বাহিনীর কাছে রয়েছে সোভিয়েত যুগের ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি। তবে এর সংখ্যা কত, তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি। আফগানিস্তানের হাতে ক’টি কামান রয়েছে, তা-ও অজানা।
১৭২০
তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে ৪৬৫টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। হেলিকপ্টার রয়েছে ২৬০টিরও বেশি। এর মধ্যে অনেকগুলি হামলাকারী হেলিকপ্টার। আফগানিস্তানের হাতে অত্যাধুনিক কোনও যুদ্ধবিমান নেই। বলার মতো কোনও প্রকৃত বিমানবাহিনীও নেই সে দেশের।
১৮২০
তাদের কাছে কমপক্ষে ছ’টি বিমান রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি আবার সোভিয়েত যুগের। ২৩টি হেলিকপ্টারও রয়েছে আফগান তালিবান সরকারের কাছে। যদিও তার মধ্যে কতগুলি উড়ানে সক্ষম, তা বলা সম্ভব নয়। পাকিস্তানের মতো অতো রকেটও নেই আফগানিস্তানের হাতে।
১৯২০
পরমাণু শক্তির দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। কমপক্ষে ১৭০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে ইসলামাবাদের হাতে। তবে, আফগানিস্তানের কোনও পারমাণবিক অস্ত্রাগার নেই। তাদের পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার শূন্য।
২০২০
ফলে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হলে ইসলামাবাদের পাল্লা ভারী থাকবে বলেই মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞেরা। বেগ পেতে হতে পারে কাবুলকে। যদিও সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ-ও মনে করছেন, কৌশল দিয়ে পাক সেনাকে নাকানিচোবানি খাওয়াতে পারে কাবুল। তাই যুদ্ধ শুরু না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে এখনই হলফ করে কিছু বলা যাবে না।