Donald Trump wants to destroy China through Tariff, know US President’s secret plan dgtl
Trump’s Tariffs Effect
শুল্কবাণ, ইউয়ানের মূল্যবৃদ্ধি থেকে তাইওয়ান তাস! প্রতিশোধ নিতে তিন অস্ত্রে ড্রাগন বধের ছক কষছেন ট্রাম্প
চিনকে ধ্বংস করতে শুল্কের মাত্রা উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ড্রাগনের উপর পুরনো শত্রুতার প্রতিশোধ নিতে চাইছেন তিনি, মত বিশ্লেষকদের।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১২:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
শুল্কযুদ্ধের আবহে চিনকে ধ্বংস করার খেলায় মেতেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই বেজিঙের পণ্যে ২৪৫ শতাংশ কর চাপিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবেন, তা বোধহয় ঈশ্বরেরও অজানা। ট্রাম্পের এ-হেন আচরণে তীব্র হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা, মত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
০২১৯
চলতি বছরের এপ্রিলে নতুন পারস্পরিক শুল্কনীতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তার পরই দুনিয়া জুড়ে হাহাকার পড়ে যায়। হু-হু করে নামতে শুরু করে বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারের সূচক। বাদ যায়নি আমেরিকাও। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে পরবর্তী সময়ে কিছুটা নমনীয় ভাব দেখান যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট। ব্যতিক্রম একমাত্র চিন।
০৩১৯
বেজিঙের ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো তো দূরে থাক, উল্টে যত সময় গড়িয়েছে, তা আরও বাড়িয়েছেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞদের অনেকের দাবি, ড্রাগনভূমির সঙ্গে পুরনো শত্রুতা রয়েছে তাঁর। সেই হিসাব কড়ায়-গন্ডায় শোধ করতে চাইছেন তিনি। চিনের আর্থিক ‘সুপার পাওয়ার’ হওয়ার গুমর ভাঙাই ট্রাম্পের এখন একমাত্র লক্ষ্য।
০৪১৯
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ড্রাগন-বিদ্বেষের সূত্রপাত ২০০৮ সালে। সে বছর মন্দার কবলে পড়ে পশ্চিমি দুনিয়া। আমেরিকার শেয়ার বাজারে নামে ধস। সে সময় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে সে ভাবে অবতীর্ণ হননি ট্রাম্প। কিন্তু রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসায়ী হিসাবে আটলান্টিকের পারে যথেষ্ট পরিচিতি ছিল তাঁর।
০৫১৯
মন্দার সময়ে বিপুল আর্থিক লোকসান এড়াতে চিনে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন ট্রাম্প। ২০০৮ সালে ড্রাগনভূমির রিয়্যাল এস্টেট সংস্থা ‘এভারগ্র্যান্ড’-এর সঙ্গে একটি চুক্তি করেন তিনি। ঠিক হয়, কোয়াংজ়ু প্রদেশে বিলাসবহুল অফিস টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করবে তাঁর সংস্থা। কিন্তু, এর জন্য সরকারি ভাবে বেজিঙের অনুমতির প্রয়োজন ছিল।
০৬১৯
পশ্চিমি দুনিয়া যখন মন্দায় ধুঁকছে, তখন দুরন্ত গতিতে ছুটছে চিনের অর্থনীতি। আর তাই বিদেশি বিনিয়োগে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করে ড্রাগন সরকার। সেই নীতি মেনে পত্রপাঠ ট্রাম্পের আবেদন খারিজ করে তারা। ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ১৩০ বার একই অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয় তাঁকে।
০৭১৯
বিপদের দিনে চিন এ ভাবে পায়ের তলার জমি কেড়ে নেওয়ায় বেজায় চটে যান ট্রাম্প। প্রথম বার এর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ আসে ২০১২ সালে। সে বছর ব্রহ্মাণ্ডসুন্দরীর প্রতিযোগিতায় সেরার মুকুট পায়নি চিন। তবে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’য়ের অভিযোগে বিদ্ধ হয় বেজিং। প্রতিযোগিতা জিততে বিচারকদের ড্রাগন মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েছিল বলেও পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় একাধিক প্রতিবেদন।
০৮১৯
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই সুর চড়ান ট্রাম্প। বলেন, ‘‘এই ধরনের প্রতিযোগিতায় প্রথম ১৫-র মধ্যে আসার যোগ্যতা নেই চিনের।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পর মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রথম বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। কুর্সিতে বসেই বেজিঙের ‘এক চিন’ নীতির গোড়ায় কুড়ুল মারেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।
০৯১৯
প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাইওয়ানকে পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে মান্যতা দেন ট্রাম্প। কথা বলেন, সেখানকার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে। প্রশান্ত মহাসাগরের সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপপুঞ্জকে বরাবরই নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে দাবি করে এসেছে বেজিং। ট্রাম্প জানান, ২০২০ সালের কোভিড অতিমারির জন্য মূলত দায়ী ছিল ড্রাগনভূমির উহান গবেষণাগারের ভাইরাস। একে ‘চিনা ভাইরাস’-এর তকমা দেন বর্ষীয়ান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
১০১৯
ট্রাম্পের প্রথম শাসনকালে কোভিড অতিমারিতে আমেরিকায় চলে মৃত্যুমিছিল। ওই সময়ে অনেকেই ‘চিনা ভাইরাস’কে জৈব হাতিয়ার বলে সন্দেহ করেছিলেন। কিন্তু, পরবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হওয়ায় ধীরে ধীরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। উল্টে নানা রকমের মামলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। এতে বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতার ‘রাজনৈতিক মৃত্যু’ হতে চলেছে বলে নিশ্চিত ছিল চিন।
১১১৯
কিন্তু, বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের তথা মার্কিন শিল্পপতি ইলন মাস্ক রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ হতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। সবাইকে চমকে দিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প। এর জন্য অনেকেই মাস্ককে কৃতিত্ব দেন। ভোটে ট্রাম্পের প্রচারের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ‘সুপার পাওয়ার’ দেশের প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসার ফের সুযোগ মেলায় এ বার পুরনো হিসাব চুকিয়ে ফেলতে চাইছেন তিনি, মত বিশ্লেষকদের।
১২১৯
আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, প্রতিশোধ নিতে চিনা মুদ্রা ইউয়ানকে শক্তিশালী করতে চাইছেন ট্রাম্প। বর্তমানে ইচ্ছাকৃত ভাবে ডলারের নিরিখে ইউয়ানের দাম কম রেখেছে ড্রাগন সরকার। কারণ, বেজিঙের আমদানির চেয়ে রফতানির পরিমাণ অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে ইউয়ান শক্তিশালী হলে সমপরিমাণ পণ্য বিদেশে পাঠিয়ে কম ডলার রোজগার করতে পারবে চিন।
১৩১৯
একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক, মূল্যহ্রাসের জেরে এক ডলারে মিলছে সাত ইউয়ান। ফলে সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্য বিদেশে রফতানি করে সাত হাজার অর্থ রোজগার করতে পারছে চিন। কিন্তু, এক ডলারের মূল্য ছ’টি ইউয়ান হয়ে গেলে ওই পণ্য রফতানি করে ড্রাগন সরকার পাবে ছ’হাজার। অর্থাৎ, মুদ্রা যত শক্তিশালী হবে, ততই ভিতর থেকে দুর্বল হবে বেজিঙের আর্থিক কাঠামো।
১৪১৯
অর্থনৈতিক ভাবে ‘সুপার পাওয়ার’ হয়ে উঠতে এত দিন ত্রিস্তরীয় মডেল অনুসরণ করে এসেছে চিন। মার্কিন শিল্পপতিদের সস্তায় পণ্য নির্মাণের লোভ দেখিয়ে ড্রাগনভূমিতে কারখানা খুলতে বাধ্য করেছে সেখানকার সরকার। পশ্চিমি প্রযুক্তি চুরির অভিযোগও রয়েছে চিনের বিরুদ্ধে। আর এ ভাবেই দশকের পর দশক ধরে আমেরিকার অর্থনীতিকে ধাক্কা দিয়ে এসেছে বেজিং।
১৫১৯
বিশ্ব ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চিনের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) পরিমাণ ১৮ লক্ষ কোটি ডলার। অন্য দিকে, আমেরিকার অর্থনীতি ২৫.৫ লক্ষ কোটি ডলারের। ফি বছরে প্রায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বেজিঙের আর্থিক সূচক। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এটি বাড়ছে মাত্র ২.৮ শতাংশ। এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে আর্থিক দিক থেকে ড্রাগনের কাছে হেরে যাবে ওয়াশিংটন।
১৬১৯
বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই তথ্যই চিন্তা বাড়িয়েছে আমেরিকার। কারণ, চিনের কাছে ৮০ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন বন্ড রয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় টাকার অঙ্কটা ৬৬ লক্ষ কোটি। এই বন্ড দুনিয়ার বাজারে বিক্রি করে বিপুল অর্থ ঘরে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেজিঙের। কিন্তু ট্রাম্পের নীতির জেরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ওই বন্ডের সুদের হার। এতে ড্রাগনের সমস্যা বাড়বে বলে মনে করেন তাবড় আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
১৭১৯
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কোষাগার ‘ইউএস ট্রেজ়ারি’ জানিয়েছে, নতুন শুল্কনীতি ঘোষণার আগে বন্ডগুলির সুদের হার ছিল ৪.২৫ শতাংশ। কিন্তু, সেটাই এখন বেড়ে পাঁচ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড এ ভাবে অগ্নিমূল্য হতে থাকলে সেটা বিশ্ব বাজারে বিক্রি করা চিনের পক্ষে বেশ কঠিন হবে। আর ট্রাম্প ঠিক সেটাই চাইছেন।
১৮১৯
বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চিনের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ছুতো খুঁজছেন। আর তাই একের পর এক শুল্ক চাপিয়ে বেজিংকে যুদ্ধের ময়দানে টেনে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁরা। এক বার নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে ড্রাগনের হাতে থাকা ডলার মূল্যহীন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি, ইউরোপ এবং আমেরিকা-সহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশের সঙ্গে ড্রাগনের বাণিজ্যে পড়বে তালা।
১৯১৯
এর জন্য সুচতুর ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমাগত বন্ধুত্ব বৃদ্ধির চেষ্টা করে চলেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতেও আপত্তি নেই তাঁর। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এ ব্যাপারে ভারতকে পাশে পাবে তারা। কারণ, বেজিঙের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত রয়েছে নয়াদিল্লির। শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাফল্য পান কি না, তার উত্তর দেবে সময়।